মা-বাবার,,,, পছন্দমতোই বিয়েটা করে ফেললাম। আমি যখন বাসর ঘরে ঢুকতে যাবো, ঠিক সেই মুহুর্তে দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে গেলাম। বুকের ভেতর হার্টবিটটা যেন ক্রমশ বাড়তেই লাগলো। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ে মানুষের কাছে যাবো..! তাও আবার একই ঘরের মধ্যে..! ভেবে কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগলো আমার..!
ভাবিরা, বন্ধুরা আমার অবস্থা দেখে আমাকে জোর করে ঠেলে ঢুকিয়ে দিলো বাসর ঘরে। তারপর ওরা বাহির থেকে দরজা টেনে দিলো। দেখি লাল বেনারসি পরে মাথায় ঘোমটা টেনে বসে আছে আমার বৌ। আমি আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। কাছে যেতেই বৌ আমাকে সালাম দিলো। সালামের উত্তর দিতে গিয়ে গলাটা আমার আটকে গেল! ভয়ে যেন গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে..! এমনসময় নতুন বৌ আমার দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বললো নেন পানি খান আসলে এই মুহুর্তে আমার পানির খুব প্রয়োজন ছিলো। আমি ঢকঢক করে একগ্লাস পানি খেয়ে নিলাম। আস্তে করে বললাম থ্যাংকস বৌ নরম সুরে বললো থ্যাংকস বলতে হয়না। বলেন শুকরিয়া। আমিও তার বাধ্যগত হয়ে বললাম শুকরিয়া দরজাটা লক করে আসেন। আমি আস্তে আস্তে গিয়ে রুমের দরজাটা লক করে আসলাম। তারপর বৌ আমাকে প্রশ্ন করলো আপনার কি অজু করা আছে..? না যান অজু করে আসেন।
আমি মনে মনে বিবাহিত বন্ধুদের গালি দিলাম। বাসরঘরে যে অজু করে ঢুকতে হয়, যেই শালারা বিয়ে করছে সেই শালারা তো আমাকে বলে দেয়নি..! তাহলে তো বৌয়ের কাছে ছোট হতে হতোনা..! আমি ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে আসলাম। তারপর বৌ আমায় বললো চলেন দুজনে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আমাদের নতুন জীবনের শুরু করি। নামাজ পড়া শেষ করে দুজনে খাটের উপর বসলাম। তারপর সে আমাকে বললো আপনি কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন..? না এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন। সজ্ঞানে এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করবেনা। আচ্ছা ঠিক আছে। মনে মনে ভাবছি, বৌ তো দেখি আমাকে হুকুম করেই যাচ্ছে। করুক, খারাপ কিছু তো বলছেনা! এমন সময় বৌ বললো আজ সারারাত দুজনে গল্প করবো। এবার আপনার ছোটবেলার গল্প বলেন।
তারপর আমি বলবো মহা বিপদে পড়ে গেলাম। কি গল্প বলবো এখন! আমি বললাম কি গল্প বলবো..!? এমনসময় বৌ আমাকে এমন প্রশ্ন করে বসলো, যার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা। বললো আপনি প্রেম ট্রেম করছেন কখনো…? এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবো..!? ভাবলাম, কেবল নামাজ পড়ে আসলাম। মিথ্যা কথা কি করে বলি! তাই সত্য কথাই বৌকে বলতে লাগলাম“সত্যি কথা বলতে কি প্রেমের কথা মনে পড়লেই আমার হাসি পায়। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়তাম, পাড়ার একটি মেয়েকে আমার ভাল লাগতো। নাম রেশমি। ভীষণ মায়ার চেহারা ছিলো ওর। ও পড়তো ক্লাস সেভেনে। লুকিয়ে লুকিয়ে রেশমিকে দেখা ছাড়া আমার কোনো কাজ ছিলোনা। স্কুল শেষে স্কুলের গেটে দাড়িয়ে থাকতাম ওর জন্য। রেশমি ওর বান্ধবীদের সাথে বাড়ি যেত, আর আমি পিছে পিছে হাঁটতাম।
কোনোদিন মুখফুটে বলতে পারিনি ভাললাগার কথা। মনেমনে কত যে প্ল্যান করেছিলাম ভাললাগার কথা রেশমিকে বলবো বলে। সে সাহস আর হয়ে ওঠেনি আমার। একদিন জানতে পারলাম রেশমি ওর খালাতো ভাইয়ের সাথে প্রেম করে। মনেমনে একটা আঘাত পেয়ে সেখান থেকে কেটে পড়লাম। ক্লাসের সবথেকে সুন্দরী মেয়ে সুলতানা। একসময় ওকে আমার ভাল লেগে যায়। একটা ক্লাসও মিস করতামনা সুলতানার জন্য। সুলতানা সবসময় ক্লাসের ফার্ষ্ট বেঞ্চে বসতো বলে আমিও সবার আগে ক্লাসে যেতাম শুধু ফার্ষ্ট বেঞ্চে বসার জন্য। ক্লাসে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে শুধু সুলতানাকে দেখতাম। সুলতানাকে শুধু আমি না আরো অনেক ছেলেরাই পছন্দ করতো। যখন অন্য ছেলেরা আমার মতো সুলতানাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো, মনে মনে ওদের উপর ভীষণ রাগ হতো। ওরা দেখবে কেন..!? শুধু আমিই দেখবো।
যখনই আমার সুলতানার চোখে চোখ পড়তো, সুলতানা মিটমিট করে হাসতো। তখন একটা ভাললাগা আমার মনটাকে নাড়িয়ে যেতো। ভাবতাম সুলতানাও বুঝি আমাকে পছন্দ করে..! একবার মনে মনে প্ল্যান করলাম, একটা চিঠি লিখে সুলতানাকে দিবো। সারারাত জেগে একটি চিঠি লিখেও ফেললাম। দুঃখের বিষয় বুকপকেট থেকে চিঠিটা বের করে সুলতানাকে দিতে সাহস হয়নি আমার। একদিন শুনলাম সুলতানার বাবা ট্রান্সফার হওয়াতে ওরা সবাই চলে গেছে চিটাগং। মনের মধ্যে আরেকটা ধাক্কা খেলাম। স্কুল লাইফ শেষ করে যখন কলেজে লাইফে পা দিলাম। ক্লাসের একটি সুন্দরী মেয়ে আমার মন কেড়ে নিলো।
নাম জিনিয়া। ভাবলাম স্কুল লাইফে যা হবার হয়েছে। এই মেয়ের সাথে আমার প্রেম করতেই হবে! কিন্তু সমস্যা তো ঐ একটাই। আল্লাহ আমাকে সেই সাহস দেয়নি যে, কোনো মেয়েকে খুব সহজভাবে বলে দিবো “আমি তোমাকে ভালবাসি”!! হা..হা..হা…! কলেজ লাইফে এসেও আরেকটি ধাক্কা খেলাম। আমি আসলে অনেকটাই বোকা..! তা না হলে কি করে ভাবলাম শহরের একটি মেয়ে অজর পাড়াগাঁও থেকে উঠে আসা আমার মতো একটি মফস্বলের ছেলের সাথে প্রেম করার জন্য এখনো নিজেকে সিঙ্গেল রেখেছে..!?একদিন দেখলাম কলেজ শেষ করে জিনিয়া একটি ছেলের সাথে রিক্সায় উঠে রিক্সার হুট টেনে দিলো..! এভাবে প্রায় প্রতিদিন দেখতাম ছেলেটিকে জিনিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে। তারপর জিনিয়াকে নিয়ে রিক্সায় চড়ে যেতে! পরে জানতে পারলাম ছেলেটিকে জিনিয়া ভালবাসে। বুকের মধ্যে ছোট একটি ব্যাথা অনুভব করতাম। তারপর আর কোনো মেয়ের দিকে নজর দেইনি। আসলে আমার ভাললাগাগুলো ভাললাগা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো। কখনও ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়নি।”
বৌ আমার গল্প শুনে হেসে কুটিকুটি হয়ে গেল। তারপর হাসতে হাসতে বললো আপনি তো আসলেই বোকা..! আসলেই আমি বোকা ভাগ্যিস বোকা ছিলেন। তানা হলে আমার ভালোবাসার ভাগ কত মেয়েই না আপনার কাছ থেকে নিয়ে নিতো..! আসলেই তো..! আমার ভালোবাসার ভাগ যদি সত্যিই অন্য কোনো মেয়েকে দিতেন, আপনার ঠ্যাং ভাঙতাম আমি। আপনার কপাল ভালো। কি? জ্বী! আমি আজ পর্যন্ত কোনো ছেলের সাথে প্রেম করিনি শুধু আপনাকে ভালোবাসবো বলে। আমার সব ভালোবাসা শুধু আপনার জন্য রেখে দিয়েছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সবসময় মনের মতো একজন স্বামী চেয়েছি। আল্লাহ আমার কথা রেখেছেন।আমি অনেকটা আবেগের সুরে বললাম আল্লাহর কাছে লাখোকোটি শুকরিয়া, বিয়ের আগে তিনি কোনো মেয়েকে ভালোবাসার সুযোগ করে দেননি।
হুমম… এখন থেকে শুধু আমাকেই ভালোবাসবেন। আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু তুমি আমাকে আপনি আপনি করছো কেন..? আপনি তো তুমি করে বলার অনুমতি দেননি। স্বামীকে তুমি করে বলার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয়..? এখন থেকে আর আপনি নয়। শুধু তুমি আচ্ছা, তুমিবৌয়ের হাতটি ধরার জন্য মনটা কেমন যেন আনচান করতে লাগলো। সাহস করে বলেই ফেললাম তোমার হাতটা কি একটু ধরতে পারি..? বৌ আবার হেসে দিয়ে বললো তুমি এতো বোকা কেন হুম? বৌয়ের হাত ধরার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয়..?
সাহস করে বৌয়ের হাতটা ধরেই ফেললাম। তারপর বললাম আমি তোমার কাছে সারাজীবন বোকাই থাকতে চাই। আজ বোকা বলেই তোমার মতো একজন জীবন সঙ্গিনী পেয়েছি। বৌ আমার হাত শক্ত করে ধরে রইলো। আমি মনেমনে আল্লাহকে লাখো কোটি শুকরিয়া জানালাম, তিনি আমাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহারটি দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ্!!