এক হাজার টাকার বাসর রাত

এক হাজার টাকার বাসর রাত

সিগারেটের শেষ টানটা দিয়ে ফিল্টারটি মাটিতে ছুড়ে ফেলল অভি।পা দিয়ে পিষে আগুনটা নিভেয়ে হাঁটতে শুরু করলো।মনের মাঝে একটাই চিন্তা যে ভাবেই হোক তাকে টাকা জোগাড় করতে হবে।মনে মনে ধারনা করে নিলো ছিনতাই করবে।কিন্তু জীবনে কলেজে বন্ধুদের জন্য মারামারি করলেও কখনো ছিনতাই বা চুরি করেনি।তবুও সে আজকে নিরুপায়।কেননা আঁকার জন্মদিন আজকে।পই পই করে বলে দিয়েছে যে ভাবেই হোক তাকে আসতে হবেই।

তাই বলেত আর খালি হাতে যেতে পারেনা।এদিকে হোস্টেলে থাকে টাকা যা বাড়ি থেকে দিয়েছে সব খরচ হয়ে গিয়েছে।ধার কারো কাছেই পাবেনা।ম্যাসের অবস্থাই এমন কেউ ধার দিতে চায়না সবাই নিতে চায়।অনেক আগেই অভির কিছু ফ্রেন্ড বলেছিলো রাত্রে বেলা দুই একটা দান মারলেই খরচ চলে আসে সারা মাস ভালোই থাকা যায়।

অভি তাই বাধ্য হয়েই এই ছিনতাইয়ের পথে আসলো।পকেটে একটা ছুরি ম্যাসের এক বন্ধুর থেকে যোগার করেছে।ইলেকট্রিক খাম্বার নিচে দাঁড়িয়ে আছে অভি।কিছু দূর থেকে দেখতে পায় একটা লোক আসছে।অনেক রাত্রি রাস্তায় লোকজন ও নেই এইবার ই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে ভেবে নেয় অভি।

লোকটা কাছে আসতেই অভি বলে উঠে এই দ্বারা।লোকটাও দাঁড়ায় মধ্যবয়সী একজন লোক দেখে ভদ্রলোক মনে হচ্ছে।অভি বেয়াদবি করবেনা ভেবে নেয়।বলে যা আছে বের কর।অভি লোকটার সামনে ছুরি ধরে আছে।লোকটা আর কিছু বলেনা।আশেপাশে একবার তাকিয়ে দেখে জনমানব শূন্য।অভির পাশে থাকা অভির বন্ধু বলে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে লাভ নাই হ্লা যা আছে বাহির করো।অভি দমক দেয়।বলে তোর বাবার বয়সী বেয়াদবি করবি না।

লোকটার হাতে থাকা র‍্যাপিং করা একটা গিফট বক্স,অভির ফ্রেন্ড ছো মেরে ওইটা নিয়ে নেয়।বলে দোস্ত তোর আর কষ্ট করে র‍্যাপিং খরচ লাগবেনা।র‍্যাপিং করেই এনেছে।লোকটা মোবাইল,হাতের ঘড়ি মানিব্যাগ সব দিয়ে দেয়।বলে বাবা কালকে আমার মেয়ের জন্মদিন এই গিফটা নিয়োনা তোমরা।অভি লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে জল ছলছল করছে।

সে কারো মুখে হাসি ফুটাতে ছিনতাই করতে এসেছে আর কেউ কারো মুখের হাসি ধরে রাখতে অনুরোধ করছে।অভি কিছু বলেনা সে এখন নিষ্ঠুর হয়ে গেছে।আঁকার মুখে হাসি ফুটাতে।লোকটিকে একটা ধমক দেয় অভির বন্ধু বলে সোজা যাবি পিছনে তাকাবি না চিৎকার করবিনা।করলেই এখানে শেষ।লোকটা আর কিছু বলেনা চোখের কোনের জল মুছে হাটা শুরু করে।

অভি কিছু একটা চিন্তা করে লোকটিকে পিছন থেকে ডাক দেয়।লোকটির কাছে গিয়ে বলে আংকেল আমি আপনার ছেলের বয়সী আমাকে ক্ষমা করবেন।আমি আজকেই প্রথম এই রাস্তায় তাও একজন কে ভালোবাসি তাই।কেননা কালকে তার জন্মদিন আর জন্মদিনে গিফট দেওয়ার মত টাকা ছিলোনা তাই বাধ্য হয়েছিলাম এই কাজ করতে।কিন্তু কারো মুখের হাসি কেড়ে নিয়ে অন্য কারো মুখে হাসি ফুটানো যাবে তবে তা ক্ষণিকের জন্য।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আমাকে মাফ করে দিবেন।

লোকটি বলে খুশি হলাম তোমার কথা শুনে। লোকটির সব কিছু ফিরিয়ে দিয়ে অভি বলে এইটাই জীবনের প্রথম ছিলো আর এইটাই শেষ যদি তাতে আমার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েও ফেলি।লোকটি বলে না বাবা হারাবে না দোয়া করি।যদি তুমি কিছু মনে না করো এই ১০০০ টাকা রাখ তোমার ভালোবাসার মানুষকে কিছু কিনে দিও।অভি নিতে অস্বীকার করে।লোকটি বলে ধার হিসাবেই না হয় নাও একসময় শোধ করে দিও।অভি আর না করেনা আঁকার কথা ভেবে পরের দিন অভি আর অভির বন্ধু রনি বসে আছে।সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে অভিকে।তার ভালোবাসার মানুষ কত ভালো,কত কষ্ট করে লেখাপড়া করে ইত্যাদি।অভিকে আঁকা তার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।সবার ই অভিকে পছন্দ হয়। এখন অপেক্ষা করছে আঁকার বাবার আসার।একটু পর তিনিও আসেন।কিন্তু অভি আর রনিকে দেখে চমকে যায়।অভিও রনির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে কি ইনিই আঁকার বাবা?অভি লজ্জায় শেষ কি হবে এখন কি ভুল না করে ফেলল?

আঁকার বাবা বলে উঠে তোমরা এখানে।অভির মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে বুকের ভিতর থেকে প্রাণটা বের হয়ে আসবে।গলা থেকে আওয়াজ বের হচ্ছেনা।আঁকার বাবা বলে পানি দাও ওদের।অভি ঢকঢক করে পানি খেলো।ভয়ের চাইতে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।আঁকা জিজ্ঞেস করে বাবা তুমি অভিকে চিনো?আঁকার বাবা বলেন হ্যাঁ চিনিত।খুব ভালো ছেলে কালকে তোর জন্মদিনের গিফট কিনছিলাম তখন ওরাও সেই দোকান থেকে গিফট কিনতে ছিলো।তোকে দেওয়া এই গিফট তো অভিই পছন্দ করে দিয়েছে।

অভি এবার মাথাটা উঁচু করে লোকটার দিকে তাকায়।সত্যি কতটা ভালো মানুষ তিনি।জন্মদিনের অনুষ্ঠানের শেষে যখন সবাই চলে যায় অভি তখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আঁকার বাবার কাছে গিয়ে বলে সরি আংকেল।আঁকার বাবা তখন বলে আমার মেয়েটাকে কখনো কষ্ট দেয়নি আর ওর কোন চাওয়া অপূর্ণ রাখিনি।তোমার কাছে একটাই অনুরোধ ওকে কখনো কষ্ট দিও না।অভি মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।

এর প্রায় ৪বছর পরে অভি পড়াশুনা শেষ করে একটা চাকরী করে।আঁকার বাবা মা আর অভির মা বাবা মিলে তাদের বিয়ে দেয়।বাসর ঘরে বসে আছে আঁকা।অভি একটু লেট করেই যায়।অভিকে সালাম করে আঁকা।অভি তাকে মানিব্যাগ থেকে ১হাজার টাকার একটা নোট বের করে দেয়।আঁকা বলে এতদিন জানতাম ঈদে সালামি পাওয়া যায় কিন্তু বাসর ঘরে বরকে সালাম করলে সালামি দেয় জানতাম না তাও এক হাজার টাকা।আমি তো জানতাম কি কি দেনমহরের অর্ধেক দিতে হয়।

অভি বলে পাগলী এইটা তোমার সেইজন্য দেওয়া না।আঁকা জিজ্ঞেস করে তবে কিসের জন্য দিলে?অভি আঁকাকে সেই জন্মদিনের গল্পটি বলে।গল্প শেষে আঁকা বলে যদি বাবা রাগ করে বিয়ে না দিত বা মেনে না নিত তবে।অভি বলে কি আর হত আমার যায়গায় আজকে এখানে অন্য কেউ বর সেজে থাকত।আঁকা ফাজিল বলে অভিকে মারতে শুরু, সেই মার কখন শেষ হয়,তা না হয় আরেকদিন বলব।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত