“একটা সময় তোমাকে দেখার বাহানায় শত রাত করেছি অপেক্ষা, আজ হঠাৎ করে তোমাকে এভাবে দেখবো আমি কল্পনাও করিনি” রুদ্রের এমন কথা শুনে তনুশ্রী যেন একটুও বিচলিত হলোনা। বরং নরমালি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলো।
– কিছু কিছু কাজ মানুষের কল্পনা থেকেও গভীর। যা আমরা কল্পনার মধ্যেও স্থাপন করতে পারিনা।
– তা আজ হঠাৎ এদিকে।
– গোল এই পৃথিবীতে বারবার ঘুরেফিরে একই জায়গায় আসতে হয়। যেমন ফিরে আসে পাখিরা, সন্ধ্যায় নীড়ে।
– তা অবশ্য ঠিক বলেছ। মানুষ বড্ড ব্যস্ত স্বভাবের, কোথায় রাত কোথায় কাত কেউ নিজেও জানেনা।
– মানুষ গিরগিটির থেকেও ভয়ানক।
– তুমিও কি গিরগিটির তালিকায় পড়ো তনুশ্রী।
– আমরা সবাই, কেউ স্বভাবে আর কেউ অভাবে।
– ব্যস্ত শহরে কেউ নেয়না কারো খোঁজ। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
– দিন শেষে নিজেই নিজের। যেখানে অন্ধকারে নিজের ছায়া-ই পাশে থাকেনা, সেখানে তুমি আর আমি তো অনেক দূর।
– বড্ড বদলে গেছো তুমি তনুশ্রী। সেই তনুশ্রী আর এই তনুশ্রীর মাঝে রাত দিন ব্যবধান।
– বললাম না রাজ, আমরা স্বভাবইত বদলানো জাতি।
– তনুশ্রী, মনে পড়েনা আমায়।
– মনে পড়ে বলেই এই পথে আসা।
– তোমার কাছে তো কুয়াশার মতো সবকিছু।
– একটা সময় ছিলো, কুয়াশার মতো সবকিছু, রোদের ঝলকানিতে সব বিলীন হয়ে য়ায়।
– তা আজও কি কুয়াশা ভেবে এই পথে চলে এসেছে।
– বাদ দাও এসব, কি করো আজকাল।
– ছোটকাটো একটা চাকরী। তুমি কি করো।
– স্মৃতি খুঁজি, হারানো কিছু স্মৃতিচারণ।
– তোমার স্বামী কি করেন?
– ব্যস্ততাকে আপন করে পথচলে সে। ব্যস্ততাই তাঁর এখন আপন।
– আর তোমাকে?
– টাক পয়সা, বাড়ি, গাড়ি সব দিয়েছে আপন করে নেওয়ার জন্য।
– তাহলে বেশ সুখেই আছো।
– অভাবে আছি।
– কীসের।
– ভালবাসা, আর সুখের।
– তুমি।
– হুমম। টাকা দিয়ে সবকিছু পাওয়া গেলেও, ভালবাসা আর সুখ পাওয়া যায়না।
– সত্যিই কি পাওয়া যায়না।
– বড্ড একা লাগে।
– যার স্বামীর সঙ্গী ব্যস্ততা। তাঁর স্ত্রীর একা লাগবে এটাই স্বাভাবিক।
– সঙ্গ চাই।
– টাকা থাকলে খুঁজে নেওয়া যায়। তোমার টাকা আছে সঙ্গী খুঁজে নাও।
– সঙ্গী হিসাবে তোমাকে চাই।
– আমার থেকে ভালো কাউকে পাবে।
– ফিরবে কী।
– বদলে গেছি।
– একসময় না বলতে, আমায় পাগলের মতে ভালবাসো। আমি চাইলে আমার জন্য জীবনও দিতে পারবে।
– তুমিই তো বললে, মানুষ স্বাভাবিক ভাবে বদলে যায়। মানুষ স্বভাবতই বদলানো জাতি।
– শুধু আমাকে একটু সঙ্গ দাও।
– সন্ধ্যার পর পরই কেউ একজন আমার জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। আমার শরীরে ভেজা ঘামের গন্ধ
নেওয়ার জন্য। ঘামে ভেজা শরীরে নিজেকে জড়ানোর জন্য। আমার ভেজা শরীরে সে সকল সুখ খুঁজে নেয়। তাঁর ভালবাসা পবিত্র। আমি তাঁর পবিত্র ভালবাসা অপবিত্র করতে পারবো না।
– এসময় তো তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে।
– আজ কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর অপেক্ষা করে।
– শেষ বারের মতো একবার জড়িয়ে ধরবে তোমার এই বুকে ।
– এই বুকে এখন শুধু আমার স্ত্রী প্রিয়াংকার থাকার অধিকার আছে। সে আমার এই জায়গা দখল করে নিয়েছে।
– তোমার হাতটা ধরতে পারি।
– কেউ একজন অপেক্ষা করে আছে, এই হাতে ভাত খাওয়ার জন্য। আজ তাহলে আসি। গোল এই পৃথিবীতে হয়তো আবার কোনো একদিন দেখা হবে।
ভালো থেকো।
বলেই রুদ্র বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো।
বাসায় তাঁর স্ত্ররী প্রিয়াংকা তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে।