অবন্তির রাগের যথেষ্ট সুনাম আছে তার বন্ধু মহলে। তার বন্ধুরা বলে অল্পতে রেগে যাওয়া তার বদ-অভ্যাস। বদ অভ্যাসও মাঝে মাঝে ভালো অভ্যাসে কাজে দেয়। অবন্তি রেগে গেলে সে ভারি ভারি কথা বলে। এই “ভারি” কথার মূল অর্থ হচ্ছে অপমান সুচক কথা। অপমান সুচক কথায় অহংকারের শব্দ মিশ্রিত থাকে। অংহকার তারা করে যাদের অনেক টাকা আছে। অবন্তির বাবার অনেক টাকা। অনেক টাকার দাম্বিকতা তাকে স্পর্ষ করেনা যা করে তা হচ্ছে “রাগ” অবন্তি রেগে থাকলে কটু কথা বের হয়। রূপবতী রাগী মেয়েদের মন কোমল হয়। রাগ কমলে মায়া বাড়ে। অবন্তি সচারাচর এই মায়া দেখাতে চায় না। দেখালেও আড়াল থেকে দেখায়।
এত কথার পিছনে কারন হচ্ছে তার ট্রেনের কম্পার্টম্যান্টে তার সিটের অপর পাশে বসে থাকা মাস্তান টাইপ ছেলেটি। ছেলেটির নাম রিয়াদ।
অবন্তির সাথে তার পরিচয় হয়েছে ঘন্টা ক্ষানিক হলো। ট্রেনে করে সে ঢাকায় যাচ্ছে বান্ধবীর বাসায় ছুটি কাটাতে। ট্রেনে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রেখে ছিল। পুরো কামরা নিজের নামে। তার বাবার যথেষ্ট টাকা আছে। জার্নিতে সে একা থাকতে পছন্দ করে। হুট করে রিয়াদের এমন করে ঢুকে পরবে সে ভাবেনি। ইচ্ছে হচ্ছে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিতে। তার উপর এমন অভদ্র ছেলে আর একটিও দেখেনি। ট্রেনের কামরায় ঢুকে স্যরি বলে নিজের মতো বসে আছে। অবন্তি রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে বলল
– আপনি জানেন আমি আপনাকে চাইলে পুলিশে দিতে পারি?
রিয়াদ লক্ষ করল অবন্তি যখন রেগে যায় তখন তার নাক ফুলে যায়। ভ্রু কুচকে যাওয়ার কারনে তার কপালের নীল টিপটিও বেঁকে যাচ্ছে। রিয়াদ কিছুক্ষন চুপ থেকে উত্তর দিলো
– জ্বি
– আমি চাইলে এমনও কাজ করতে পারি যাতে আপনার সারাজীবন জেলে কাটাতে হয় _ এই হচ্ছে অবন্তির অহংকারের বহিঃপ্রকাশ। যদিও এই অবন্তি নামের রাগী মেয়েটির মন মায়ায় ঘেরা।
– হুম, জানি
– কিভাবে জানলেন?
রিয়াদ শান্তভাবে উত্তর দিলো
– কারন আপনার বাবার অনেক টাকা।
অবন্তি ভ্রু কুচকে জানতে চায়লো
– আমার বাবার অনেক টাকা কথাটা কে বলল?
– এই নিয়ে তিনবার বলেছেন।
– ভুল বলেছি?
– না
– ইডিয়ট
– জ্বি ধন্যবাদ
অবন্তি কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রয়লো। এই মূহুর্তে তার কি করা উচিত তার মাথায় আসছে না।
রিয়াদের চেহারা ফ্যাকাসে। ভাবলেশহীন মানুষের মতো। চেহারায় এক রকম গাম্ভীর্যের ভাব। চুল গুলো উশকো খুশকো। পরনের পোশাক দেখতে কেমন জানি অগোছালো ভাব বুঝে নেয়া যায়।
অবন্তির মতো রূপবতী মেয়ে তার মতো অগোছালো ছেলেকে ট্রেনে আশা করেনি হয়তো। তাছাড়া বিশাল টাকা ওয়ালা বাবার মেয়েদের পছন্দের কো মাপকাঠি নেই।
অবন্তি বুঝে উঠতে পারছে না সে কি করবে। এত রাতে কাউকে ডাক দিবে? নাকি সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। তারপর গার্ডকে ডেকে পুলিশে দিবে। কিন্তু এইভাবে বসে থাকা যায় না। অবন্তির রেগে থাকা স্বভাব বলছে তাকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। এমন শিক্ষা যাতে এই কাজ দ্বিতীয়বার করার সাহস না পায়।
– এই জ্বি মিস্টার …
– জ্বি বলুন
– আপনার ক্ষেত্রে অবশ্য মিস্টার ডাকা উচিত হয়নি_ অবন্তির সুক্ষ অপমানের নমুনা
– কেনো ?
– আপনার মতো অশিক্ষিত মাস্তানের সাথে ভদ্র ভাষা মানায় না
– ও আচ্ছা
– আপনি নিজেকে কি ভাবেন?
– সাধারণ
– আপনার মতো ছেলেদের আমার চেনা আছে। তারা মেয়েদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। খারাপ কিছু ঘটিয়ে অর্থ লাভের ধান্দা আটে
রিয়াদ চুপ করে আছে। এমন অপমান সে আগে কখনো হয়নি। রূপবতী মেয়ের মুখ থেকে বাজে কথাও প্রশংসার মতো শোনায়। তবে আজ একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। যা করার শান্ত মাথায় করতে হবে।
অবন্তি রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল
– এই যে
– হুম
– আপনি হুট করে ঢুকার কারণটা বলুন
– বলা খুব জরুরি?
– বলে অবশ্যই লাভ নেই আমি আপনাকে পুলিশে দিচ্ছি। সকালটা হতে দিন
– ও
অবন্তি কিছুটা অবাক হলো। পুলিশের কথা শুনে মানুষ ঘাবড়ে যায়। অথচ রিয়াদ ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে।
– পুলিশের কথা শুনে আপনার ভয় করছে না?
– না
– কেনো?
– আমি অভ্যস্থ
– এর আগে কয়বার গিয়েছেন?
– বেশ কয়েকবার
– কি অপরাধে?
– শেষবার গিয়েছি খুনের অপরাধে
– খুন?
– হ্যাঁ
রিয়াদ খুনের কথা বলেছে অবন্তিকে ভরকে দিতে।
– আপনি কি করেন?
– টাকার বিনিময়ে খুন করি
– এখানে কেনো উঠেছেন?
– খুন করতে
– কাকে?
– আপনাকে
অবন্তির চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তার নিজের কানে শোনা কথা তার বিশ্বাস হচ্ছে না
– আমাকে কেনো খুন করবেন?
– খুন করলে টাকা পাবো
– কে দিবে? কে আমাকে খুন করতে বলেছে?
– নাম বলা যাবে না। খুনিদের এটা ধর্ম। যে খুন করার অর্ডার দেয় তার নাম বলা যায় না।
– আমাকে খুন করবেন কেনো? আমার তো কেনো শত্রু নেই
– আপনার বাবার শত্রু আছে
– আমার বাবা ভালো মানুষ
– জানি, তবে তার অনেক টাকা। যার অনেক টাকা তার শত্রুর অভাব হয় না।
রিয়াদের কিছুটা খারাপ লাগছে। রুপবতী মেয়েদের হাসির দৃশ্য সুন্দর, কান্না না, মেয়েটি কাঁদছে।
– কান্না থামান
– কেনো? আপনার কষ্ট হচ্ছে?
– খুনিদের দুঃখ কষ্ট বলতে কিছু নেই।
– আমাকে খুন না করে বসে আছেন কেনো?
– সময় হলে করবো
– সময় কখন হবে?
– সুর্য উঠার ক্ষানিক আগে।
অবন্তি জানালার দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। একটু পর সে মারা যাবে কথাটি ভাবতেই তার চোখে জল আসছে। পরিচিত মুখ গুলো বার বার ভেসে আসছে ।
– আপনার কোনো শেষ ইচ্ছা আছে?
অবন্তি ঘৃণার দৃষ্টি নিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল
– হ্যাঁ আছে, খুন করার আগে আপনার গালে চড় বসানো।
– সময় হলে পুরন করা হবে
রিয়াদের খারাপ লাগছে অবন্তিকে দেখে। এইভাবে বলা ঠিক হয়নি। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসে ছিল সে। আজ ঢাকা ফেরার কথা। সকালে ট্রেন মিস করাই বাধ্য হয়ে উঠতে হয়েছে ট্রেনে। অবন্তির কথা সহ্য করতে না পেরে এই রসিকতা। মৃত্যুর ব্যাপারটা রসিকতা না। এই সিরিয়াস বিষয় নিয়ে রসিকতা মানায় না। সে এমনটি করেছে কেবল নিজেকে শান্ত রাখার জন্য। সকাল হলে সব বলে দিবে।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ট্রেন চলছে। মাঝে মাঝে হুইসেলের শব্দে বিচলিত হচ্ছে অবন্তি। ট্রেনের জানালার চারকোনার ফাঁক দিয়ে রূপালী চাঁদ দেখা যায়। রিয়াদ সেই চাঁদ আর অবন্তির মাঝে তফাত খোঁজায় মন দিলো। রূপবতী মেয়েদের খুন করা যায় না শুধু ভালবাসা যায়।
অবন্তির চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। তার চোখের দৃষ্টি স্থির। আসন্ন মৃত্যুর কথা জেনেও তার কোনো ভয় হচ্ছে না। এর কারন কি? মৃত্যুকে সে স্বাভাবিক ভাবে ধরে ধরে নিয়েছে? নাকি নিয়তির উপর ছেড়েছে?
ট্রেনের যান্ত্রিক শব্দ ভেদ করে তার বাঁচার আর্তনাদ হয়তো কারো কানে পৌছাবে না। তার পরেও তার খুব করে কথা বলতে ইচ্ছা করছে। বিশেষ করে ধ্রুবর সাথে। ধ্রুব বলেছিল তাকে পৌছে দিতে। না বলার কারণ আছে। অবন্তি ধ্রুবকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করে রেখেছে। খুব সুন্দর এবং গুছিয়ে। এখন তার কিছুই হবে না। ক্ষানিক পর সে মারা যাবে। ধ্রুব তার চেহারাটাও দেখতে পারবে না। আচ্ছা মৃত অবন্তির চোখ জোড়া কি ধ্রুব দেখে চিনবে? কথাটি ভাবতেই অবন্তি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল
রিয়াদ শান্ত স্বরে বলল কাঁদা যাবে না। কথাটা বলেই অবন্তির জন্য মায়া হলো খুব।
অবন্তির চোখের পাতা নেমে আসে। পুরো শরীরে ক্লান্তে ভর করেছে। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। ভয়ের কারণে মস্কিষ্ক দূর্বল হয়ে পড়েছে। চোখের পাতা খোলা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে অবন্তি। মনে ভ্রান্ত ধারনা থেকেই যায় চোখ বন্ধ হলে হয়তো আর পৃথিবীর আলো দেখা হবে না তার
চাঁদ তখন কিছুটা দূরে সরে এসেছে। রিয়াদ অবন্তির সিটের সামনে এসে বসলো। জানালার ফাঁক থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসা চাঁদের আলো তখনও ঘুমন্ত চেহারার উপর পরছে। অবন্তির ফেসবুকের কভার ফোটোটে সে এই চোখ দেখেই প্রেমে পড়েছিল। মনে যেমন ছবি একেঁছিল অবন্তি তার চেয়ে সুন্দর। কি নিষ্পাপ সে চেহারা।
রিয়াদের নিজের উপরই রাগ উঠে। কি দরকার ছিল ঘাব্ড়ে দেওয়ার ! সত্য কথাটুকু বলেই হতো। সে খুনী কিংবা মাস্তান না। দেশের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র সে। তার আরেকটি পরিচয় অবন্তি জানে। যা বললে সে তাকে জড়িয়ে ধরবে। কিংবা রেগে রিয়াদকে ট্টেন থেকে ফেলে দিবে। যদিও ফেলে দেয়ার সম্ভাবনা কম।
প্রথম দর্শনে প্রেমে পরে গেছে এমন গল্প অনেক শুনেছে সে বন্ধুদের মুখে। প্রতিবারই ভাবতো ধুর ছায়! প্রথম দেখাই কেউ প্রেম পরে নাকি? তার সে ভুল ধারনের অবসান ঘটেছে ফেসবুক কভারে একটি মেয়ের চোখ জোড়া দেখে। তার পরের গল্প গুলো সুন্দর।
অবন্তি প্রথম দর্শনে প্রেমে পরে যাওয়ার মতো মেয়ে তা তাকে নিজ সামনে দেখে বুঝে নেয়া যায়। কি মায়াবী চেহারা। কপালে টিপ, দুই চোখে টানা করে কাজল দেওয়া। মাথার চুলগুলো পেছনে খোপা করে বাধা। ঠোঁটে গোলাপী লিপস্টিক। হাত ভর্তি কাচের চুড়ি। দেখতে একদম স্বর্গ থেকে নেমে আসা পরীর মতো।
ভালোবাসা ব্যাপারটি রিয়াদ কখন উপলব্ধি করেনি এত তীব্র ভাবে। সে ভেবেছিল তাদের দেখা হবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই মেয়েকে না পেলে তার জীবন অর্থহীন। অবন্তিকি কি তার ভালোবাসার কথা গুলো বুঝতে পারবে। হয়তো শুনবে, সে হলে শুনত না। রিয়াদ তার ব্যাগে গুজে রাখা ডায়রিটি হাতে নেয়। অবন্তির পাঠানো কুরিয়ারে দেয়া ডায়েরী। কিছু একটা লিখে বন্ধ করে রিয়াদ। এই ডায়িরীতে তাদের অনেক কথা লেখা আছে। এমন একটি ডায়েরী অবন্তির কাছেও আছে।
ডায়েরী বন্ধ করে রিয়াদ জানালার ফাঁকে আকাশে ভেসে থাকা চাঁদটিকে দেখতে থাকে। তার চেহারায় হাসি। সে ঠিক করেছে সুর্য উঠার আগেই পাশের কোনো স্টেশনে ডায়েরীটি রেখে নেমে যাবে। ভালোবাসার কথাটুকু রেখে দিয়ে। বিধাতা চায়লে তার ভালোবাসার কথা হয়ত অবন্তি দেখবে। প্রাণপন খুঁজবে ধ্রুবকে। কিন্তু পাবে না। অবন্তির বিশেষ পরিকল্পনার শাস্তি এটি।
সুর্য তখন পুব আকাশে উকি দিচ্ছে। অবন্তি চোখ খুলে কিছুটা অবাক হলো। রিয়াদ তার পাশের সিটে ঘুমন্ত অবস্থায় শুয়ে আছে। মুহূর্তেই তার মাথায় অনেক গুলো চিন্তা খেলে গেলো।
সে কি ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছে? নাকি তাকে মারা হয়নি। না রিয়াদের চেহারা দেখে মনে হয়নি সে তাকে ছেড়ে দিবে। হয়তো ঘুমিয়ে পরাই মারতে পারেনি।
অবন্তি প্রথমে ভাবল ট্রেন থামাবে। পরক্ষণে সে চিন্তা বাদ দিল। ট্রেন থামতে দেখে হয়তো রিয়াদ উঠে যাবে। রিয়াদ উঠলে তাকে নির্ঘাত মেরে ফেলবে।
খাবার টেবিলের দিকে চোখ যেতেই তার দৃষ্টির গেলো টেবিলে পরে থাকা ছুড়িটি দেখে। গতকাল ফল খাওয়ার সময় ছুড়িটি আনিয়ে ছিল ট্রেনের বয়কে দিয়ে।
অবন্তি ঘামাচ্ছে। নিজেকে বাঁচানো উপায় এখন। কাজটা করলে হয়ত সে ও ফেসে যাবে। কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর জন্য আর কোনো উপায় নেয়। তার বাবার অনেক টাকা। বড় বড় লোকের সাথে তার উঠা বসা। তিনি নিশ্চয় তাকে বাচিয়ে নিবেন। কাঁপা কাঁপা হাতে ঘুমন্ত রিয়াদের দিকে অবন্তি এগিয়ে যায়। তার স্থির দৃষ্টি রিয়াদের বুকের দিকে। কেবল একটি আঘাত। খুনিদের বেচে থাকার অধিকার নেই। তাকে যে করেই হোক বাঁচতে হবে।
অবন্তি মারতে গিয়ে লক্ষ করল রিয়াদের ডান হাতে একটি ডায়েরী। থমকে যায় সে, আলতো করে হাতে নেয় ডায়েরীটি। নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করতে পারেনা সে। ডায়েরীর পেইজ উল্টায়, তার চোখ ছলছল। এমন একটি ডায়েরী তার ব্যাগেও আছে।
রিয়াদের যখন চোখ খুলল তখন সূর্যের আলো জানালার ফাঁকে পুরোপুরি পড়ছে। সে অবাক হয়ে দেখল অবন্তি এক হাতে ডায়েরী অন্য হাতে ছুরি নিয়ে বসে আছে। অজান্তেই নিজের মাথায় হাত দিলো সে। অবন্তির কথা ভাবতে ভাবতে কথন চোখের পাতা জোড়া লেগে এসেছে খেয়াল ই করেনি
– কি অবস্থা মাস্তান সাহেব_ মুচকি হেসে জানতে চায় অবন্তি। এই হাসি কেবল সে ফোনে শুনেছে রিয়াদ। চোখের সামনে দেখে মুখ হাসি ফুটলো
– খুন করবে? _ হেসে জানতে চায় রিয়াদ
ডায়েরীটি চোখে না পড়লে হয়তো করেই দিতাম_ হেসে বলে অবন্তি
কিছুটা সময় নীরবে কেটে গেছে, অবন্তির চোখে আনন্দ অশ্রু। রিয়াদের ঘাড়ে মাথা রেখে কাঁদছে সে।
রিয়াদ তার সামনের যাকে দেখছে তার স্বপ্ন বুনছিল অনেক আগের। অবন্তির কান্নার অশ্রু স্ফটিক এর মত গাল বেয়ে মুক্তোর দানার মত ঝরছে ।
অসহ্য নীরবতা ভেঙ্গে সে বললো ,
– মাস্তান না মেরে প্রেম করছে??
– তো কি করবো ?? _ হেসে বলে রিয়াদ
– আমি তোমাকে একটু পর খুন করবো। খুন করার আগে তোমার শেষ ইচ্ছা বলো
অবন্তির কথায় রিয়াদ হাসে। হাসি থামিয়ে বলে
– ইচ্ছে নয় , দুটো সাজেশন দিতে চাই
– বলো শুনি
– রাগ কন্ট্রোল করো। রাগের মাথায় কম্পার্টম্যান্টের নাম, যাওয়ার সময় না বলল আমাদের প্রথম দেখা এইভাবে হতো না।
– দ্বিতীয় সাজেশন?
_ হেসে জানতে চায় অবন্তি
– তোমার কপালের টিপ , বেঁকে আছে সে প্রথম দেখা থেকেই
অবন্তি মুচকি হেসে জানালার বাহিরে তাকায়। পাশে বসে থাকা মানুষটিকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। ধ্রুব নাম অবন্তির ই দেয়া। রিয়াদের নাম তার মাথায় আসেনি। অবন্তির চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে। তার এক হাত রিয়াদের হাতে শক্ত করে ধরা। এই হাত কখনো না ছাড়ার জন্য ধরা .
রিয়াদ সে হাতে তার আরেকটি হাত রেখে অবন্তির চেহারা নিজের দিকে ফিরায়। কপালের টিপ ঠিক ঠিক মাঝখানে বসিয়ে কপালে চুমু রেখা এঁকে দেয়া। দুজন দুজনকে ভালোবাসার মায়ায় জড়িয়ে ধরে গভীর মমতায়
তাদের ভালোবাসার সুন্দর সকালটাতে ওদের কারোই জানা নেই, একদল নিষ্ঠুর পাপিষ্টরা ক্ষমতার লোভে তাদের বিবেক হারিয়ে সামনের রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে রেখেছে। অনেকের হাতে পেট্রলবোমা। ট্রেন ফিসপ্লেটে এসে ক্রেক করে এক্সিডেন্ট করলেই ছুড়ে মারবে। আগুনে ছেয়ে যাবে পুরো ট্রেন। ছায় হবে মানুষ গুলো।
অবন্তিরর একটু ভালোলাগার গল্প , রিয়াদের একটু অভিনয়ের গল্প আর কারোই হয়তো জানা হবে না,
জানা হবে না যে আরেকটু সময় পেলে হয়তো পৃথিবীর বুকে আরেকটা ভালোবাসার গল্প জন্ম নিতো খুব সুন্দর ভাবে।
ভোরের রোদের স্নিগ্ধতায় ভেসে ট্রেন চলছে। মাঝে মাঝে হুইসেলের শব্দ। সেই ট্রেন এগিয়ে চলেছে নিয়তির নিষ্ঠুর এক পরিণতির দিকে…
পরের দিন সকল দৈনিক পত্রিকায় খবর এলো ট্রেন দূর্ঘটনার। হ্যাড লাইনের সাথে জুড়ে দেয়া দুটো ডায়েরীর ছবি। ভালোবাসার মানুষ দুটো হারিয়ে গেলেও হারিয়ে যায় নিই অনুভুতির কথা গুলো….
(সমাপ্ত)