মেসেজের রিপ্লাই দিতে এতো সময় লাগে? কোন মেয়ের সাথে চ্যাট করছো শুনি?
–কোন মেয়ে মানে? এখানে অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে আসছো কেনো মিহি?
ভাললাগছেনা তাই গল্প লিখছিলাম, এজন্য রিপ্লাই দিতে দেরি হচ্ছে…!!
–গল্প লিখছো না’কি কোনো মেয়ের সাথে লুতুপুতু চ্যাট করছো সেটা আমি ভালো করেই বুঝি মেহরাব,
যাইহোক… সেদিন দেখলাম তোমার গল্পে কোনো একটা মেয়ে কমেন্ট করছে,
আর তুমিও মেয়েটার সাথে খুব ঢঙ করে কথা বলছো কমেন্ট বক্সে… কে মেয়েটা?
আম্মুর বকা খেয়ে সেই মেজাজ খারাপ ছিলো, ভাবছিলাম ফেসবুকে ঢুকলে কিছুটা শান্তি পাবো।
কিন্তু এখানেও আরো বড় অশান্তি আছে সেটা ভুলেই গেছিলাম, প্রত্যেকটা টপিকে মিহির এরকম আচরণ সহ্য করা কষ্টকর।
— তোমার মন এতোটা ছোট কেনো বলতে পারো মিহি?
–কি বললা? আমার মন ছোট?
–হ্যা… ফালতু থার্ড ক্লাস মেয়েদের মতো তোমার মন। কেনো ও কমেন্ট করলো?? কেনো ওর সাথে চ্যাট করো??
কেনো ও ফোন করে?? কেনো ওর রিপ্লাই দিলা?? এই টাইপের মন-মানসিকতা চেঞ্জ করো মিহি…!!
–তুই আমাকে ফালতু থার্ড ক্লাস মেয়ে বললি? তুই নিজে ফালতু থার্ড ক্লাস ছেলে, কুত্তার কুত্তা, তোর পুরো বংশ ফালতু বুঝলি?
এমনিতেই মেজাজ প্রচন্ড খারাপ ছিলো, তার উপর আবার মিহির এসব কথা মেজাজটা আরো খারাপ করে দিলো,
মিহির লাস্ট মেসেজটা সিন করে বের হয়ে আসলাম ফেসবুক থেকে… মনে মনে বললাম- “জীবনে আর যাই করিস ভাই,
কিন্তু কোনো রাগি মেয়ের সাথে কখনো রিলেশন করিস না, তোমাকে প্রতিদিন হাজারভাবে গালি দিবে, হাজারভাবে ঝাড়ি দিবে,
কিন্তু মুখ ফসকে যদি তুমি জাস্ট “ফালতু মেয়ে” বলে ফেলো, তাহলেই শেষ…!!
৪মিনিট পর মোবাইলে একটা কল আসলো, মিহির কল… নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে থাকলাম ধরবো কি’না?
ধরলে কি আবারো ঝাড়ি দিবে? এসব চিন্তা করতে করতে ফোনটা ধরে বললাম-
–হুম গালি স্টার্ট করো।
ওপাশ থেকে আমার কথার কোনো উত্তর পেলাম না… স্রেফ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করার আওয়াজ আসছে…
আমি আবারো বললাম-
–মিহি তুমি কান্না করছো? কি আজব, কান্না তো আমার করার কথা, তুমি কান্না করছো কেনো?
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে মেয়েটা বললো-
–তুই আর জীবনেও আমাকে কল করবিনা, কোনো মেসেজ করবিনা, কোনোভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবিনা বুঝলি?
আজ থেকে তোর আর আমার সব সম্পর্ক শেষ…।
— শুনোওওও… হ্যালো, হ্যালো।
উফফ ফোনটা কেটে গেলো… তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ঢুকলাম, ঢুকে দেখি মিহির নামটা কালো হয়ে গেছে,
আমি তাড়াতাড়ি মিহির নাম্বারে কল করলাম, কিন্তু বার বার বলছে “নাম্বারটি ব্যাস্ত আছে”…
মানে আমার নাম্বারটা ব্ল্যাক লিস্টে দিয়ে দিছে।
মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হলো, কোন দুঃখে যে রিলেশন করতে গেলাম, তাও আবার এই টাইপের রাগি মেয়ের সাথে।
ওনি প্রতিদিন হাজারটা গালি দিবেন তাতে কিছুই যায় আসেনা, কিন্তু তুমি কিছু বলতে পারবেনা… তুমি কিছু বললেই ব্রেক-আপ ।
মিহির সাথে যোগাযোগ অফ হওয়ার ২দিন হয়ে গেলো, কেনো জানিনা এই ২দিন খুব ভালো লাগছিলো…
একদম স্বাধীন পাখির মতো, ইচ্ছামতো সবার সাথে চ্যাট করছি, কমেন্টের রিপ্লাই দিছি,
কেউ এসে আর ইনবক্সে বলেনি “কেনো চ্যাট করছো ওর সাথে? কেনো রিপ্লাই দিলা ওই মেয়েটার??
মনে মনে বললাম- যাক… প্যারা নামক জিনিসটা লাইফ থেকে তাহলে চলে গেলো…
ভালোই হইছে, বাকি জীবনটা স্বাধীন পাখির মতো পার করতে পারবো ।
.
মিহি চলে যাওয়ার ৪দিন হয়ে গেলো, এই ৪দিন একদম স্বাধীন ভাবে পার করলেও আজকে কেনো জানিনা আমার ভালো লাগছেনা…
কেনো জানিনা বার বার মিহির কথা মনে পড়ছে, “ওই মেয়েটার সাথে চ্যাট করো কেনো? ওই মেয়ের রিপ্লাই দিবা কেনো?
এই কথাগুলো বড্ড বেশি মিস করছি… ওর রাগি ভয়েসটা কেনো জানিনা বার বার শুনতে ইচ্ছা করছে…
অন্য কোনো নাম্বার থেকে কি কল করবো? হুম করা যেতে পারে,
আমার বন্ধ থাকা একটা নাম্বার চালু করে মিহির নাম্বার ডায়েল করতে থাকলাম,
যখন-ই কল দিতে যাবো ঠিক তখন-ই আমার হাতটা কেঁপে উঠলো… কেনো আমি কল করবো? কেনো আমাকেই কল দিতে হবে?
কেনো প্রতিবার ছেলেদেরকেই রাগ ভাঙাতে হবে…?
ওনি প্রতিদিন খারাপ কথা বলতে পারেন আর আমি একদিন খারাপ কথা বললেই অপরাধ?
ফোনটা হাত থেকে রেখে দিলাম, প্রতিটা রিলেশনে ছেলেদের এরকম হার মানা উচিত না…
প্রত্যেকবার “বাবু আই এম সরি” ছেলেদের বলা উচিত না…!!
একটা জিনিস সবসময় মনে রাখবেন, “সন্দেহ” নামক জিনিসটা যেখানে ঢুকে পড়ে,
“ভালোবাসা” নামক শব্দটা সেখানে অসহায় হয়ে যায়…!!
৭টা দিন হয়ে গেলো মিহি চলে গেছে, লাস্ট ২দিন ফেসবুকে ঢুকিনি… কোনো গল্প লিখিনি, বড্ড বোরিং লাগছে সবকিছু…
বার বার মিহির নাম্বারে কল দিতে গিয়েও দিতে পারছিনা, মেসেজ বক্সে অনেক কথা টাইপ করে শেষ অবধী সেন্ড বাটন চাপতে পারছিনা…
“ইগো” নামক জিনিসটার কাছে বার বার কেনো জানিনা হেরে যাচ্ছি, প্রত্যেকবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে, কেনো আমি?
কেনো আমাকেই কল দিতে হবে? কেনো প্রত্যেকবার ছেলেরাই..??
রাত ১২:৩০ মিনিট… বিছানায় শুয়ে শুয়ে আরো একটা নির্ঘুম রাত কাটানোর যখন প্ল্যান করছিলাম,
ঠিক তখন-ই মিহির নাম্বার থেকে কল আসলো, মিহির নাম্বারটা দেখে কতোটা খুশি হয়েছিলাম তা বুঝানো সম্ভব না…
কিন্তু একটু ভাব নিতে হবে, এতো খুশি হইছি সেটা মিহিকে বুঝতে দেওয়া যাবেনা, ছেলেদের ও গুরুত্ব আছে সেটা মিহিকে বুঝাতে হবে…
খুশি ভাবটা কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়ে কলটা ধরলাম-
–কি ব্যাপার? কল কেনো করলে?
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মিহি বললো-
–তেমন কিছু না মেহরাব… ব্যাস মন চাইলো তাই কল দিলাম…!!
–ওও, আচ্ছা ঠিক আছে… কিন্তু এর পর আর কল দিওনা, আমাদের মধ্যে ব্রেকআপ হয়ে গেছে…!!
কথাটা বলার পর ওপাশ থেকে মিহির আর কোনো আওয়াজ শুনতে পেলাম না,
নিজের মাথায় নিজেই থাপ্পড় মেরে মনে মনে বললাম “ধুত্ত… হয়তো বেশিই বলে ফেলছি।
চুপচাপ ফোনটা কানে ধরে বসে আছি, মিহিও কোনো কথা বলছেনা… প্রায় ৩মিনিটের নীরবতা ভেঙে কান্না কান্না কন্ঠে মিহি বললো-
–বাবু আই এম সরি !!
— সরি ফর হোয়াট?
— সবকিছুর জন্য সরি মেহরাব, আমি অনেক খারাপ তাইনা? আমি যতোই খারাপ হই প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা,
এই ৭দিন ৭বছরের মতো মনে হইছে আমার কাছে, আমি ভালো করেই বুঝে গেছি তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবনা !!
মিহির কথাটা শুনে মুচকি মুচকি হাসতে থাকি, আরেকটু ঢং করতে হবে, এতো তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া যাবেনা…
মিহির কথা শুনে আমি জাস্ট ছোট করে বললাম-
–হুম !!
–হুম? জাস্ট হুম? সরি তো… মাফ করে দাও প্লিজ…!!
–প্লিজ এভাবে মন খারাপ করে সরি বলিওনা মিহি, তোমাকে এভাবে দেখতে খারাপ লাগে…!!
–তাহলে বলো মাফ করছো !!
–হুম মাফ করছি !!
–আই লাভ ইউ !!
আই লাভ ইউ শুনে আমি কিছু বললাম না… মিহি আবারো বললো-
–ওইইই, আই লভ ইউ তো…
আমি আবারো মুচকি হেসে ছোট করে বললাম-
–হুম…!!
–হুম? আই লাভ ইউ বললে হুম বলতে হয়?
–তো? আই লাভ ইউ বললে কি বলতে হয়?
–ওই মেহরাবের বাচ্ছা, ঢং করিস না? এর আগে যখন আই লাভ ইউ বলতি তখন আমি কি বলতাম?
আই লাভ ইউ ২ বল তাড়াতাড়ি !!
— ওকে ওকে, আই লাভ ইউ ২…!!
.
তারপর কেটে যায় ১ঘন্টা… ৭দিনের না বলা জমানো কথাগুলো যেনো শেষ হতেই চাচ্ছেনা,
মনে হচ্ছে অনেক বছর পর মিহির কন্ঠটা শুনছি… আরো ১ঘন্টা কথা বলার পর মিহিকে বললাম-
–অনেক রাত হয়ে গেছে মিহি, ঘুমাতে যাও !!
–হুম, আগামিকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে কল করবা হুম?
–হুম করবো !!
–আচ্ছা বাই দ্যা ওয়ে, আমি চলে যাওয়ার পর ৩-৪দিন দেখলাম নতুন একটা মেয়ের সাথে কমেন্ট বক্সে খুব ঢং করছো…
কে ওই মেয়েটা? ওর সাথে এতো ভাব কিসের হুম?? নতুন করে ওর সাথে প্রেম করছো না’তো?
শুনো… সব গুলো মেয়েকে ব্লক দিবা ওকে? কোনো মেয়েকে যেনো তোমার আইডিতে না দেখি, বুঝা গেলো…??
কথাগুলো শুনে অসহায় দৃষ্টিতে মাথার উপর ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে তাকালাম…
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মনে মনে বললাম- নাহহহহ, এই মেয়েটা কখনো ঠিক হবেনা…!!