রান্নাটা কেমন হয়েছে..?? খাওয়া শেষ হতেই বউ আমাকে কথাটা বললো। রান্নাটা কিন্তু অনেক ভালো হয়েছে। পেট ভরে খেয়েছি। তারপরেও বউ কে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করেই বললাম ভালো হয় নি দেখলাম বউয়ের মুখটা মলিন হয়ে গেছে। যদিও ভালো হয়নি বললাম রাগানের জন্য কিন্তু জানি মেয়েটা রাগবে না।
খুব নরম স্বভাবের মেয়ে। বর্তমানে আপন বলতে ওর আমি ছাড়া কেউ নেই। বাবা মা একসাথে এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পর আমি ওকে বিয়ে করেছিলাম। আমাদের বিয়ের প্রায় ৬ মাস হলো। ওর নাম অরুনিমা আমার কথাটা শুনেই বউ মলিন মুখটা নিয়ে রুমে চলে গেলো। আমি নিশ্চিত মেয়ে টা এখন রুমে গিয়ে কান্না করবে। যাই হোক পরে দেখা যাবে। অফিস চলে গেলাম। অফিসে গেলে অন্যদিন কয়েকবার ফোন দিত। আজ সারাদিনে একবারো ফোন দেয় নি অরুনিমা। একটা মেসেজও দেয়। মেয়েটা এরকমই। রাগ করলে তা প্রকাশ করবে না। কথা বলা বন্ধ করে দিবে। নাহ্,, পাগলি বউটা অনেক রাগ করেছে। ওর রাগ ভাঙ্গাতে হবে। ওর আবার বাচ্চাদের মত Dairy milk খুব পছন্দ। তাই যাওয়ার সময় একটা কিনে নিলাম। রাগ ভাঙ্গানো বলে কথা। বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপার অনেক্ষণ পর দরজাটা খুললো অরুনিমা। তাই বললাম দরজাটা খুলতে এত সময় লাগে!! না মানে কথাটা বলতে বলতে দেখলাম ওর হাতে হালকা করে ব্যান্ডেজ করা।
বিদ্যুৎ শখ খাওয়ার মত করে চমকে উঠলাম আমি। আমি দেখে ফেলেছি দেখেই ও হাটতা পেছনে লুকিয়ে ফেললো ঝট করে বললাম হাতে কি হয়েছে?? কিছু বলছে না আবার বললাম হাতে কি হয়েছে?? কিছু বলে না এবার একটু ধমকের সুরে বললাম হাতে কি হয়েছে দেখি..!! চমকে গেলো অরুনিমা। ভয়ে ভয়ে হাতটা দেখালো আমাকে। সম্ভবত হাতটা পুরে গেছে। হাতটা নেড়ে দেখলাম অনেকটা পুরে গেছে কি করে হলো এটা?? চুপ করে আছে। মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই জোরে চিৎকার করে আবার বললাম কেমনে হলো এরকম হুমম?? ভয় পেয়ে অরুনিমা ঝট করে বলে ফেললো মোবাইলে নিয়মকানুন দেখে রান্না করছিলাম। হঠাৎ করে হাতে গরম তেল ছিটকে পরে গেছে। তোমাকে কে নিয়মকানুন দেখে রান্না করতে বলছে? তুমি তো বলেছো রান্না ভালো হয় নি তাই আমি একটা থাপ্পড় দিবো । আমি বলেছি তাই বলে এসব করতে যাবে..!! । কি থেকে কি হয়ে গেলো না..!! চলো ঘড়ে চলো ঘড়ে গিয়ে ওকে বিছানায় বসালাম । তারপর বললাম হাতের ব্যান্ডেজ টা কে করে দিয়েছে..?? পাশের বাসার আন্টি টা ঔষধ খাইছো ব্যথার.?? না। তুমি থাকো আমি ঔষধ নিয়ে আসি বাইরে আসলাম ঔষধ আনতে। পাগলী বউ একটা। কি থেকে কি করে ফেললো। আসলে ভুলটা আমারি হয়েছে।
কেনো যে তখন বলতে গেলাম। ঔষধ নিয়ে বাসায় ফিরতেই দেখলাম বউ মনমরা হয়ে বসে আছে আমি কাছে যেতেই করুণ সুরে বললো তুমি কেনো আমাকে বিয়ে করছিলা আমি ঠিকমত রান্না পারি না। তোমার কেয়ার করতে পারি না। তুমি অন্য কাউকে বললে অনেক সুখী হতে কথাগুলো শুনেই বুঝতে পারলাম বউটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। আর কষ্ট দেওয়া যাবে না। তাই কাছে গিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর বললাম ধুরর পাগলি। কে বলেছে তুমি আমার কেয়ার করো না। তুমি আমার অনেক খেয়াল রাখো। টত খেয়াল রাখো যে নিজের প্রতি বেখেয়াল হয়ে যাও আর তোমার রান্নাটাও অনেক সুন্দর । আমি তোমাকে রাগানোর জন্য বলি ভালো হয় নি সত্যি..!! হুম সত্যি তুমি কেনো এরকম করো। তুমি তো জানো আমি তোমার প্রতি কখনো রাগ করতে পারি না হুমম জানি তো। আর কখনো এরকম করবো না। লক্ষী বউ আমার আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম পাগলি বউটাকে।
রাত ১২ টা : ঘুম ধরছে না। বউটার কথা বার বার ভাবছি। হঠাৎ করে বউ বললো এই!! উমম.?? আমার কানের কাছে এসে অরুনিমা বললো আজকে বাসায় ডাক্তার আংকেল এসেছিলো কি বলেছে ডাক্তার আংকেল?? বলেছে জামাইকে Dairy milk বাদ দিয়ে চাটনি আনতে বলবে কথাটা কয়েক সেকেন্ড ভাবলাম । তারপর বললাম তারমানে তুমি আমি কথাটা বুঝে ফেলেছি দেখেই বউটা লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো। আর কিছু বললাম না। মুখ টা তুলে বউটার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু একে দিলাম তারপর বললাম পাগলি বউ আমার হুম তোমার জন্য পাগলি।
সমাপ্ত