খুব ভালবাসি আমার এই পাগলটাকে

খুব ভালবাসি আমার এই পাগলটাকে

আম্মু:এই অভি!!!ওঠ!! অনেক বেলা হলো ওঠ এখন।।

আমি:কি হলো সকাল সকাল ডাকছ কেন!!

আম্মু:আরে আজকে তো তোর কলেজে যেতে হবে ভুলে গেলি নাকি।।

আমি:কি!!(এই যাহ ভুলে গেছি। আজ প্রথম কলেজে যাবো তাও আবার দেরি হয়ে গেল)

আম্মু:তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে গুছিয়ে নে।

আমি:আচ্ছা।আমি ফ্রেস হতে যাচ্ছি।

যেতে যেতে আমার পরিচয়টা দিয়ে ফেলি।আমি আল ইমরান(অভি)।ইন্টার ১ম বর্ষ।আজকে আমার কলেজের প্রথম দিন আর আজকেই দেরি হয়ে গেল।তো তাড়াতাড়ি গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।দেরি হয়ে গেছে তাই খুব তাড়াতাড়ি যাচ্ছিলাম। তাই কলেজে ঢুকেই এক মেয়ের সাথে লেগে গেল ধাক্কা।শুনেছিলাম যে:সিনেমাই ধাক্কা লাগলেই গান শুরু আর বাস্তব জিবনে ধাক্কা লাগলেই গালাগালি শুরু আজকে তার চাক্ষুস প্রমান পেলাম।

মেয়েটা:এইযে আপনি কি অন্ধ নাকি চোখে দেখেন না। মনে হয় ওরও কলেজে আসতে দেরি হয়ে গেছে তাই খুব রেগে আছে) (আমিও রেগে ছিলাম তাই সমস্ত রাগ মেয়েটার উপরেই ঝেড়ে দিলাম।)

আমি:সেম টু ইউ।আপনি কি চোখে দেখেন না হ্যা!!আপনি যে গতিতে যাচ্ছেন সেই গতিতে যদি গাড়ি চালাতেন তাইলে পুলিশ আপনার নামে একটা বড় চালান কেটে দিত।হু!!যত্তসব!!!হ্যান্ডসাম ছেলে দেখেছে কি তাদের সাথে কথা বলার সুযোগ খুজে।

মেয়েটা:হুউউউ!!আপনার সাথে কথা বলতে আমার বয়েই গেছে।

আমি:তাইলে এখনো কথা বলছেন ক্যানো।

মেয়েটা:আল্লাহ সকালে যে কার মখ দেখে উঠেছিলাম।।

আমি:যেভাবে মেকাপ করেছেন সকালে মনে হয় আয়নাই আপনার নিজের চেহারাই দেখেছেন।

মেয়েটা:ধুর!!!যত্তসব।

আমি:ধুর।

এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে তার উপর আবার মেয়েটার সাথে ঝগড়া করতে গিয়ে আরো দেরি হয়ে গেল।যাই হোক মেয়েটা কিন্তু দেখতে হেব্বি।তো তারপর ক্লাসে গেলাম।আমরা ৩বন্ধু একই কলেজে পড়ি।তো কলেজ শেষে আমরা একটা গাছতলায় বসলাম।আমি তখন ওই মেয়েটার কথা ভাবছি। হঠাৎ মাসুদের কথাই ঘোর কাটল।

মাসুদ:ওই কি রে কি ভাবছিস??

আমি:ওই মেয়েটার কথা।

তাসফির:কোন মেয়েটা??

আমি:ও তোদের তো বলাই হইনি। তারপর ওদেরকে সব খুলে বললাম।

আমি:ওই মেয়েটার কথা মাথা থেকে বের করতে পারছি না।ওর মায়াভরা চোখ,,,ওর রাগি লুক,,,জানিস ওকে রাগলে খুব সুন্দর দেখাই।

মাসুদ:ওওও।ভাই তুমি গ্যাসো।।

আমি:মানে??

তাসফির:ভাই এখন বুঝলি না তুই প্রেমে পড়ে গেছিস।।

আমি:ধুর।।তুইও না।।

মাসুদ:ভাই নামটা কি,,,কোন ইয়ার কিছু তো বল???

আমি:জানি না,,,,শুধু জানি যে ও এই কলেজে পরে। (কথা বলতে বলতে দেখি সেই মেয়েটা।বন্ধুদের দেখালাম তারপর ওর কাছে গেলাম)

আমি:এই যে শুনছেন??

মেয়েটা:জ্বি বলেন।

আমি:আমাকে চিনতে পেরেছেন??

মেয়েটা:না।

আমি:এইটুকু সময়ের ভিতরেই ভুলে গেলেন।ওই যে সকালে ঝগড়া করলেন।

মেয়েটা:ও হ্যা।তা এখন কি চাই??

আমি:আসলে আমি সকালের ব্যাবহারের জন্য দুঃখিত।তখন খুব রেগে ছিলাম।তাই একটু বেশি বলে ফেলেছিলাম।sorry!!

মেয়েটা:ইটস ওকে।আমিও একটু বেশি বলে ফেলেছিলাম।sorry…!

আমি:ইটস ওকে।হাই!!আমি আল ইমরান,,,আপনি??

মেয়েটা:আমি ইশা।আপনি কি এই কলেজে পড়েন??

আমি:হুম।ইন্টার ১ম বর্ষ।

ইশা:ও।আমিও।

আমি:ও।আমরা কি বন্ধু হতে পারি??

ইশা:হুম।তাইলে আজ থেকে আমরা বন্ধু।

আমি:তাহলে আমরা একে অপরকে তুমি করে বলি।

ইশা:ওকে,,,,বাই।

আমি:বাই।

এভাবেই আমাদের কথা বলা শুরু হলো।সেদিনের মত বাড়ি চলে আসলাম।তারপর সারা রাত শুধু ওর কথাই ভাবলাম।ওর জন্য এক অদ্ভুত ভালালাগা কাজ করত। পরেরদিন কলেজে গেলাম গিয়ে দেখি আমার প্রানপ্রিয় বন্ধুগুলো সব আড্ডা দিচ্ছে।

আমি:কি রে কি খবর তোদের?

মাসুদ:ভালই।আমাদের খবর ছাড় তোর খবর কি??সেই মেয়েটার কোনো খোজ পেলি??নাম কি??

আমি:হুম।ওর নাম ইশা।

মাসুদ:ইমরান,,,,ইশা হুম নামটা খুব মিলেছে দেখছি।।

তাসফির:ওই দেখো মিয়া চইলা আইছে।(পিছনে তাকিয়ে দেখি ইশা আসছে।বন্ধুদের বিদায় দিয়ে ওর কাছে গেলাম)

আমি:হাই।

ইশা:হাই।কেমন আছো??

আমি:ভাল।।।তুমি???

ইশা:ভাল।

আমি:ইশা তোমার নাম্বারটা দেওয়া যাবে??

ইশা:হুম।০১৭।

আমি:আচ্ছা।থ্যাংকস।

ইশা:ওয়েলকাম।চলো ক্লাসে যাই।

আমি:হুম।চলো। ক্লাস করে সেদিনের মত বাড়ি চলে আসলাম।রাতে ইশাকে কল করলাম।ওই দিক থেকে মেয়ের কন্ঠ শুনতে পেলাম।এটা ইশার কন্ঠ বুঝলাম।

ইশা:হ্যালো।কে বলছেন??

আমি:জানু তুমি আমাই চিনতে পারছ না।(একটু মজা করলাম)

ইশা:কে আপনি আমাই জানু বলছেন।।(রেগে গিয়ে বলল)

আমি:ওরে আমার রাগি পরি এত রাগো কেন।আমি ইমরান।

ইশা:ও তুমি।

আমি:হ্যা।তোমার সাথে একটু মজা করছিলাম।sorry!!

ইশা:ওকে নো প্রব্লেম।বাই

আমি:বাই।।

এভাবেই আমাদের কথা চলছিল।কথা বলতে বলতে কখন আমরা ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম তা আমরা নিজেও জানি না।আমরা এখন বেষ্ট ফ্রেন্ড।আমরা একে অপরকে না দেখে না কথা বলে থাকতে পারতাম না।আমি এখনো আমার মনের কথা ইশাকে বলিনি কারন ভয় পাচ্ছিলাম যদি ইশা সাথে আমার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাই।কিন্তু ইশা আমার সাথে কোন মেয়ের কথা বলা সহ্য করতে পারত না আর আমিও কোন ছেলের সাথে ওর কথা বলা সহ্য করতে পারতাম না।এর মধ্যেই ইশাকে অনেক ছেলে প্রোপজ করেছে কিন্তু ও সবাইকে না করে দিত আমিও ভয় পেতাম যদি ও কাউকে হ্যা করে দেই তাহলে তো আমি ওকে হারিয়ে ফেলব।তাই আমি ঠিক করেছিলাম খুব তাড়াতাড়ি ওকে আমার মনের কথা বলব।) দেখতে দেখতে ১বছর কেটে গেল।আমরা এখন খুব ভাল বন্ধু।তাই আমরা একে অপরকে তুই করে বলি। কিন্তু এখনো আমি ওকে আমার মনের কথা বলতে পারিনি। তো একদিন আমি একটা মেয়ের সাথে কথা বলছিলাম।কথা শেষে পিছনে তাকিয়ে দেখি ইশা রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই,,,,,

ইশা:ওই মেয়েটা কে??

আমি:কে আবার আমাদের কলেজের।১ম বর্ষের।দেখতে খুব সুন্দর তাই না।(ওকে রাগানোর জন্য বললাম)

ইশা:কিইই বললি তুই?? তুই ওর সাথে আর কথা বলবি না।(রেগে গিয়েছে)

আমি:আমি ওর সাথে কথা বলছি তাতে তোর সমস্যা কি??

ইশা:অনেক সমস্যা।।আমি বলছি তুই ওর সাথে আর কথা বলবি না।

আমি:আমি কথা বলছি তাতে তোর কি??

ইশা:আমার কি মানে তুই কিছু বুঝিস না।(এখনি বুঝি কেদে দেবে)

আমি:না বুঝি না।মেয়েটা দেখতে সুন্দর আমার পাশে ভালই মানাবে। (এই যাহ এইবার মনে হয় একটু বেশিই হয়ে গেল।ইশা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিল।)

আমি:এই পাগলি কাদছিস ক্যান??

ইশা:আমি তোকে ভালবাসি তুই এইটা বুঝতে পারলি না।

আমি:বুঝি তো সেই জন্যই তোর মুখ থেকে কথাটা শোনার জন্য এত কিছু করলাম।আমিও তোকে খুব ভালবাসি (ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম)

ইশা:তুই একটা শয়তান আমাকে এত কাদালি কেন??বল আর কোনদিন কাদাবি না??

আমি:এই যে কান ধরলাম আর কোনদিন তোকে কাদাব না মাঝে মাঝে একটু জ্বালাব।

ইশা:তুই একটা শয়তান(এখনো আমাই জড়িয়ে ধরে আছে।)

আমি:হুম কিন্তু শুধু আমার এই পাগলিটার জন্য।আর আমার এই রাগি পরিকে কাদলে একটুও ভাল দেখা যাই না।এইবার একটু হাসতো।

ইশা:খুব ভালবাসি আমার এই পাগলটাকে।(ইশা মিষ্টি করে হেসে বলল)

আমি:আমিও খুব ভালবাসি আমার এই রাগি পরিকে।(তারপর ওর কপালে একটা ভালবাসার চিহ্ন এঁকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলাম) এভাবেই শুরু হলো আমাদের ভালবাসা।খুব ভালবাসতাম আমরা একে অপরকে।এক দিনও কথা না বলে না দেখে থাকতে পারতাম না।সেদিন বাড়ি চলে আসলাম।খুব খুশি ছিলাম।আম্মু জিজ্ঞেস করল কিন্তু কিছু বললাম না।আম্মুতো তাই কিছু বুঝল কিন্তু কিছু বলল না।আমি আমার ঘরে চলে গেলাম।হাসি,,,,কান্না,,,,রাগ,,,,অভিমান এর মধ্যে আমাদের ভালবাসা ভালই চলছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলাম।৭দিন কলেজে যেতে পারলাম না।এই ৭দিন ওকে না দেখে থাকতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে।ওরো মনে হয় কষ্ট হয়েছে।ফোনেও কোনরকম যোগাযোগ করতে পারিনি।সুস্থ হওয়ার সাথে সাথেই কলেজে গেলাম গিয়ে দেখি ইশা।ওকে দেখে আমার এত দিনের সব কষ্ট ভুলে গেলাম।কিন্তু ওর মন খারাপ ছিল।ওর কাছে গেলাম আমাকে দেখে মনে মনে খুশি হলো কিন্তু অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।মনে হয় রাগ হয়েছে।

আমি:ইশা,,,,ওই আমার রাগি পরি আমার সাথে কথা বলবি না।

ইশা:না তোর সাথে আমার কোন কথা নেই।

আমি:ক্যান।।তোর যত রাগ আছে আমার উপর ঝেড়ে ফেল কিন্তু আমার সাথে কথা বল।তুই জানিস না তোর সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারব না।

ইশা:আর তুই জানিস না আমি তোর সাথে কথা না থাকতে পারি না।এতদিন কই ছিলি এত কল,,,,মেসেজ করলাম কোন রিপ্লে দিলি না কেন?? (পাগলিটা খুব রাগ করেছে)

আমি:খুব অসুস্থ ছিলাম আমারও তোকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হয়েছে।আমি তো ভাবলাম তোর সাথে মনে হয় আর কোনদিন আর দেখা হবে না।(মাথাই একটু দুষ্টু বুদ্ধি কাজ করছিল তাই এই কথাটা বললাম)(আর যা ভেবে কথাটা বলেছিলাম তাই হলো) ইশা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলল।

ইশা:আর কোনদিন এমন কথা বলবি না।তোকে ছাড়া আমি বাচব কিভাবে।আমাকে কাদাতে তোর খুব ভাল লাগে তাই না।

আমি:আমার এই পাগলিটাকে জড়িয়ে ধরতে খুব ইচ্ছা করছিল তাই তো এই কথা বললাম

ইশা:কিইইই!!! (ও আবার রেগে গেল এইবার আমাকে মারতে শুরু করল) (আমি ওকে এবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম এইবার ওর সব রাগ ভেঙে গেল)

ইশা:প্রয়োজন হলে তোকে সারা জীবন এইভাবে জড়িয়ে ধরে রাখব কিন্তু এমন আমাকে আর কাদাবি না বল।(কাদতে কাদতে বলছে)

আমি:আর কোনদিন তোকে কাদাব না।খুব ভালবাসি আমার এই রাগি পরিকে।

ইশা:আমিও খুব ভালবাসি আমার এই পাগলটাকে।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত