পূর্ণতা

পূর্ণতা

আগামী পরশু জারিফের বিয়ে মাত্র সেটা ফোনে জানালো তোর্সা কে। এটা শোনার পর কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো তোর্সা, যার জন্য সেই সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে ছুটে আসলো এতো ঝামেলা এতো অপেক্ষার পর, আজ সে কিনা বলে অন্য কাউকে বিয়ে করবে, সেটা কি মেনে নেওয়া সম্ভব। মাথায় যেনো কিছু কাজ করছে না কি বলবে সে জারিফ কে,, জারিফ যখন বিয়ের কথা বললো তখন কিছু বলতে পারেনি তোর্সা,,,ফোন টা হাত থেকে পরে গিয়ে কল কেটে যায় তোর্সা আবারো ফোন দিলো জারিফ এর ফোনে।

হ্যালো কিছু না বলে কল কেটে দিলে যে । কেটে গিয়েছিলো,,, তোমার অস্ট্রেলিয়ার নাম্বারে অনেকবার কল দিয়েছি গত দুদিন ধরে কিন্তু বন্ধ পেলাম,ভাবছিলাম তোমার ভাইয়া নাম্বারটাও বুঝি চেঞ্জ করে দিয়েছে, তো বাংলাদেশে কবে এলে? প্লেনে ছিলাম তাই ফোন অফ ছিলো, গত কাল এসেছি আর আজই এই সিম টা নিয়ে তোমাকে প্রথম কল দিয়েছি,, আমার নাম্বার ভাইয়া চেঞ্জ করতে পারবে আমাকে তো না। ওহ আচ্ছা কেমন আছো,,, এখনো কি দেখতে আগের মতোই আছো নাকি আরো সুন্দরী হয়েছো,,? জানি না আমি কেমন আছি, আর এখন আমার কেমন থাকা উচিত সেটাও জানি না,, বিয়ে করছো আমাকে কিছু না বলেই? কি করবো বলো বুঝে গেছি তো তুমি আমার হবে না,, আর এদিকে মাও শুনতে চায় না কিছু এক মাত্র ছেলে আমি, বাবা নেই মায়ের কথা আর ফেলতে পারিনি,,,যদিও ভেবেছিলাম দ্বিতীয় বার আর কোনো রিলেশনে জড়াবো না কিন্তু মায়ের জন্য সেটাও হলো না পারলাম না তাকে উপেক্ষা করতে। এখন আমি তো এসে গেছি দেশে তারপরও কেনো তুমি এতো বড় সিদ্ধান্ত নিলে,,,একবারও আমার কথা ভাবলে না তুমি, আমি কি ভাবে বাঁচবো তোমাকে ছাড়া?

এটা আমাকে না বলে তোমার ভাইয়া কে বলো,, তুমি কি চাইছো আমি প্রতিনিয়ত তার কাছে ছোট হয়। প্লিজ তোর্সা সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না,,, আমি কারো কাছে মাথা নত করতে শিখিনি। একবার যা হয়ে গেছে তারপর আর এটা হয় না,,, আর ইফতির সাথে তোমাকে খুব দারুন মানিয়েছে ছবিতে দেখলাম তো, অনেক ভালো থাকবে তুমি ওর সাথে,, আর সে ঠিক তোমার ভাইয়ার মনের মতো অস্ট্রেলিয়া সিটিজেন আর কি চায়,,অর্থ প্রতিপত্তি সব আছে। আমার মতো সামান্য বেতনের সরকারি চাকরিজীবী না, আর জানোই তো দুই নাম্বারী আমি করতে পারি না,, তাই অন্য সবার মতো আমি কোটিপতি ও হতে পারবো না,তাই তোমার ভাইয়ার চয়েজের মধ্যেও আমি পরি না । আমি তো তোমাকে ওভাবেই ভালোবাসি,,আর তোমার সততা কেই তো বেশি পছন্দ করি, আমি তো কোটি কোটি টাকা চায় না,,শুধু তোমার ভালোবাসা চায় তাহলে কেনো আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো জারিফ। তোর্সা বিয়ে মানে দুই টা মানুষের মিলন না শুধু, দুই টা পরিবারেরও মিলন,,আর এভাবে সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কখনো আমরা সুখী হতে পারবো না,, তার থেকে ভালো তুমি তোমার বাবা মা ভাইয়ের কথায় মেনে নাও। ওহ তাহলে এটাই তোমার সিদ্ধান্ত,,,আচ্ছা জারিফ তুমি কিপারবে যাকে বিয়ে করছো তাকে ভালোবাসতে। জানি না পারবো কি না তবে চেষ্টা করবো তার অধিকার দিতে। ওহ তাই… আমাকে দাওয়াত দিবে না? আসবে তুমি? না এসে পারি আমি,,তোমার বিয়ে বলে কথা, তুমি তো আমার বয়ফ্রেন্ড এর আগে বন্ধু আসতে তো আমাকে হবেই। ওকে এসো তাহলে।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজের চোখের পানি ধরে রেখেছিলো তোর্সা আর পারলো না,, নিজের রুমে বসে দুচোখের পানি অঝোরে ফেলে যাচ্ছে আর স্মৃতির পাতা উল্টাচ্ছে,,, কতো সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো,, মনে হচ্ছে এই তো সেদিন জারিফ এর সাথে পরিচয় হলো তবুও চার বছর হয়ে গেলো,, তোর্সার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর ঢাকা চাচাতো বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলো,,নিজের কোনো বোন নেই শুধু একটা বড় ভাই ছাড়া সেও অস্ট্রেলিয়া থাকে,, তাই চাচাত বোনের বাসাতেই গিয়েছিলো,, বাসে করে ফিরছিলো ও, গাড়ি শেরপুর আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো নামতে যাবে কিন্তু পায়ের নিচে কি যেনো পরলো তাকিয়ে দেখে একটা ফাইল তোর্সা সেটা হাতে তুলে নিলো,,, দেখে ফাইলের ভিতর কিছু সার্টিফিকেট একটা এডমিড কার্ড একটা ভোটার আইডি কার্ড, বাসের অনেকেই নেমে গেছে ততক্ষনে যে দুই একজন ছিলো তাদের কে দেখানো হলো সবাই বললো ওটা ওদের না,,, ব্যক্তিটির নাম জারিফ আদনান বাসা ময়মনসিংহ,,সম্ভবত সে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ফেলে গেছে ফাইল টা।

তোর্সা ফাইল এর ভিতর আরো ভালো করে দেখলো,, ছোট একটা টোকেন দেখতে পেলো তাতে লেখা জারিফ আদনান আর নিচে একটা নাম্বার।তোর্সা এর কিছু না ভেবে সেই নাম্বারে কল দিলো,,ওপাশ থেকে একটা ভারী সুন্দর পুরুষ কন্ঠে সালাম দিলো। তোর্সা বললো আপনি কি জারিফ আদনান ? হুম জারিফ আদনান বলছি,, আমি বাসের মধ্যে আপনার ফাইল টা পেঁয়েছি,, কিহ আপনি পেয়েছেন ফাইল টা,,, আপনি এখন কোথায় ম্যাম,, ওগুলো আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দিবো। আস্তে আস্তে,,, এতো গুরুত্বপূর্ণ তাই এভাবে ফেলে গেছেন ভাগ্যিস ফোন নাম্বার ছিলো এর ভিতর,, যা হোক প্রথমত আমি এখন শেরপুর আর এটা আমি কাউন্টারে রেখে যাচ্ছি আপনি এসে নিয়ে যাবেন। ওকে ঠিক আছে আপনি কাউন্টারে বলে দিন আমি এখনি বাস ধরে শেরপুর আসছি,,। ওকে ঠিক আছে। বলে ফোন রেখে তোর্সা বাসায় চলে এলো। তারপর বেশ কয়েকদিন পর সেই নাম্বার থেকে আবার কল এলো।

হ্যালো কে বলছেন? ও পাশ থেকে ঝলমলে উচ্ছসিত কন্ঠে বলে উঠলো,,, আমি জারিফ আদনান ওই যে সেই ফাইল এর মালিক। ওহ আচ্ছা আচ্ছা তো আপনার ফাইল কি পেয়েছিলেন সেদিন? হুম আর তার জন্যই আজ আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য ফোন দিলাম আপনি সেদিন ফাইল এর ভিতর এর নাম্বার খুঁজে ফোন না দিলে যে কি হতো। কিছুই হতো না ওখানে আপনার ঠিকানা ছিলো যে কেউ পেলে পৌঁছে দিতো তবে একটু দেরি হতো এই আর কি, যা হোক এর পর থেকে সাবধানে চলবেন। হুম অবশ্যই। সেদিন ওই পর্যন্তই কথা শেষ, তারপর থেকে ছেলে টা মাঝে মাঝেই ফোন করে খোজ খবর নেয়, এক সময় এমন হলো জারিফ প্রতিদিন ফোন করতে লাগলো,, তোর্সাও না করতে পারে না,, ওরও যে কন্ঠটা শুনতে খুব ভালো লাগে কেমন হাসি হাসি মাতাল করা একটা বিষয় আছে ছেলেটার কণ্ঠের মধ্যে, এখন যেনো ওর সাথে কথা না বললে ভালোই লাগে না, এভাবে কথা বলতে বলতে কখন যে ওকে ভালো লেগে গেছে বলতেই পারবে না তোর্সা। ও যা ভাবছে জারিফ ও কি সেটা ভাবছে নাকি জারিফ শুধুই বন্ধু ভেবে ওর সাথে কথা বলে।

তোর্সা এখন অনার্স ফাস্ট ইয়ার এ ভর্তি হয়ে গেছে। এর মাঝে একদিন জারিফও জানালো যে ওর সরকারি চাকরি হয়ে গেছে যেটার ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলো ঢাকা। তোর্সা আমার চাকরি হয়ে গেছে। ওয়াও তাই নাকি জয়েন কবে থেকে করবে? এই তো সামনের মাসের ৩ তারিখ থেকে।,,ট্রিট নিবে না? না এখনি না আগে বেতন পাও তার পরে নিবো ট্রিট। ওকে ঠিক আছে তাহলে আমি সামনের মাসে শেরপুর আসছি দেখাও হয়ে যাবে সেই সাথে তোমার আমার। ওকে এসো তাহলে। আস্তে আস্তে ওদের দেখা করার নির্ধারিত দিন চলে এলো,,দুজনেই এখন মুখোমুখি বসে আছে রেষ্টুরেন্টে কেও কোনো কথা বলছে না,, আর তোর্সা তো লজ্জাই জারিফ এর মুখের দিকে তাকাতেই পারছে না। জারিফই আগে কথা বললো কি হলো কথা বলবে না, তোমার সাথে কথা বলার জন্য সেই ময়মনসিংহ থেকে ছুটে এলাম আর তুমিই চুপ করে আছো?  হুম বলছি তো ।

কই বলছো,,আপনি কেমন আছেন? আপনি আমি আপনি হলাম কবে থেকে??  না মানে আপনি তো আমার থেকে বড় তাই তুমি আসছে না সামনা সামনি, আর ওটা তো ফোন বলেছি তাই কিছু মনে হয়নি। তোর্সা আমরা বন্ধু আর বন্ধুত্বের মাঝে কোনো আপনি নয় বুঝলে। ওকে এর পর থেকে চেষ্টা করবো। চেষ্টা করবো না বলতে হবে বুঝলে। হুম আচ্ছা কি খাবে বলো,, তুমি তো মিষ্টি পছন্দ করো তাহলে মিষ্টির অর্ডার করি? তোমার যা ইচ্ছা,,। জারিফ তিন চার রকমের মিষ্টি অর্ডার করলো, ওয়েটার দিয়ে গেলো। ওহ হ্যালো আমি মিষ্টি পছন্দ করি তার মানে এই না যে দোকান সুন্ধ সব মিষ্টি খেয়ে ফেলবো এতো মিষ্টি কে খাবে শুনি? কেনো তুমি খাবে। আমি এতো খেতে পারবো না। তুমি খাও, ওকে আগে তুমি যতো টা পারো খাও,,সেদিন দেখা হবার পর যে যার বাসায় চলে গেলো কিন্তু এর পরে ওরা আরো অনেক ক্লোজ হয়ে গেলো,, দিনে ফোনে কথা বলা আর রাত অর্ধেক পর্যন্ত জেগে ফেসবুক এ চ্যাটিং করা,, এভাবেই কেটে গেলো আরো ছয় মাস কিন্তু জারিফ তোর্সা কে কিছুই বলে না মুখ ফুটে,,, তখন তোর্সা নিজেই জারিফ কে বললো।

আমি তোমার জন্য যা ফিল করি তুমিও কি তাই ফিল করো? তুমি কি ফিল করো? বুঝতে পারো না তুমি? কি কি বুঝবো আমি ( জারিফ এর গলা কেপে উঠলো একটু) ভালোবাসি তোমাকে জারিফ, তোমার সাথে সারাজীবন কাটাতে চায়। জারিফ কিছুক্ষণ এর জন্যে চুপ করে গেলো। কি হলো কিছু বলো জারিফ আমিও একই রকম ফিল তোর্সা কিন্তু আমি এখন রিলেশনে জড়াতে পারবো না,। কেনো? আমার উপর এখন অনেক দায়িত্ব, আমার একটা ছোট বোন আছে এবার ফাইনাল ইয়ারে পড়ে ওকে বিয়ে দিতে হবে তাছাড়াও আমি সবে মাত্র চাকরি পেয়েছি, নিজেকে দার করাতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে, আমি তোমাকে এখন চাইলেও আপন করে নিতে পারবো না তোর্সা,, জারিফ আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য। কতো দিন? যতো দিন তুমি চাও,, মুখে বলা আর কাজে করে দেখানোর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে তোর্সা। তাহলে তুমি এই সম্পর্ক চাও না? এখন আপাতত চায় না। ওকে তাহলে তুমি আমাকে আর ফোন করো না,,, প্রেমে পড়ার খুব জ্বালা জানো তো, আমি তোমার সাথে কথা বললে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না, তাই আমার কিছু টা সময় লাগবে নিজেকে কন্ট্রোল করতে কিন্তু তুমি ফোন করতে থাকলে সেটা পারবো। তোর্সা তুমি কথা না বললে আমার খুব কষ্ট হয়। আমারো হবে কিন্তু কিছু করার নেই। ওকে তুমি যাও চাও তাই হবে।

এর পর দুদিন জারিফ কোনো কল বা মেসেজ কোনোটাই করেনি,, তোর্সাও করেনি,, কিন্তু দুই দিন পর সেদিন রাতে ও কল করে তোর্সার ফোনে। হ্যালো কল দিলে যে আজ? তোর্সা আমি আর থাকতে পারছিলাম না তোমার সাথে কথা না বলে,,, বুঝে গেছি তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না,, খুব ভালোবাসি তোমাকে। আর একটা সুযোগ দিবে কি আমাকে? আমি জানতাম তুমি ফিরবে, আমারও খুব কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু কি করবো বলো তুমিই তো ফিরিয়ে দিয়েছিলে তাই ফোন করতে সাহস পাইনি। কিন্তু তোর্সা এখন তো তোমাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না,,, আগে নিপু কে বিয়ে দিতে হবে ততদিন তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে,, এখন আপাতত আমরা পরিবারের মতামত নিয়ে এনগেজমেন্ট করে রাখতে পারি । তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো, জারিফ আমি তোমার জন্য সারা জীবন অপেক্ষা করতে পারবো।তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে ওদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো। কিন্তু এই সম্পর্কে তোর্সার ভাইয়া ইসতিয়াক মাহমুদ কিছুতেই খুশি না ,,তবুও উনার বাবার মুখের উপর কিছু বলতে পারেন না তাই মেনে নিলো চুপচাপ তখনকার মতো, বিয়ে তো আর হয়ে যাচ্ছে না এখনি। তোর্সা ফোন বেজে চলেছে জারিফ ফোন দিয়েছে, কিন্তু ও তখন ক্লাসে ছিলো তাই ফোন টা সাইলেন্ট করে রেখে দিলো,,,পরে ক্লাস শেষ এ ব্যাক দিলো জারিফ কে তোর্সা ফোন ধরছিলে না কেনো? ক্লাসে ছিলাম।

জানো একটা গুড নিউজ আছে কি গুড নিউজ? নিপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আগামী ১২ তারিখে  ওয়াও তাই নাকি,, তাহলে তো বেশি সময়ও নেই হাতে দশ দিন মাত্র? হ্যা এর মধ্যেই সব গুছিয়ে নিতে পারবো ইনশাআল্লাহ, ছেলে কি করে? ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার,, বাসা ময়মনসিংহতেই ,, ও এখন ঢাকাতে আছে ওখানেই জব করে। খুবই ভালো সংবাদ। তুমি আসবে না বিয়ে তে? জানি না গো আব্বু আম্মুর উপর ডিপেন্ড করছে,, আর বিয়ের আগে শ্বশুর বাড়ি যাওয়া কি ভালো কথা নাকি  আমাদের পরিবারের সবাই অন্য মাইন্ডের কেউ কিছু মনে করবে না যদি পারও তাহলে এসো প্লিজ। সে দেখা যাবে,, সময় আছে এখনো, ওকে কি করছো ডিয়ার? এই তো ফেসবুক এ গল্প পড়ছিলাম, তুমি তো বিজি ম্যান হয়ে গেছো সময়ই পাচ্ছো না কথা বলার তাই আমি একা আর কি করবো এ ছাড়া। জানো তো কাল বাদে পরশু নিপুর বিয়ে একহাতে সব কিছু সামলাতে হচ্ছে বড় ভাই বলে কথা। আহারে খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি? হুম হচ্ছে তো সোনা, তুমি আসো আর একটু কষ্ট কমিয়ে দিয়ে যাও। কি ভাবে? বেশি না একটু আদর করে দিলেই হবে,, ইশ পারবো না পারতে হবে ডিয়ার,,, বাই দ্যা ওয়ে তুমি কি কাল আসছো আন্টি আংকেল এর সাথে? না মনে হয় যাওয়া হবে না গো। না আসলে নিপু কিন্তু খুব কষ্ট পাবে। শুধু কি নিপুই ?? না সাথে নিপুর ভাইয়াও। তাই আচ্ছা দেখি ভাইয়া যেতে নিষেধ করছে ,, আব্বু আম্মু কে বলে যদি রাজি করাতে পারি তাহলে আসবো। ওকে ডিয়ার অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাও। হুম তুমিও ঘুমাও।

আজ জারিফ এর বোন নাফিজা ইসলাম নিপুর গায়ে হলুদ, জারিফ খুবই ব্যস্ত ও বাড়ি থেকে গায়ে হলুদ দিতে এসেছে তাদের ঠিক মতো আপ্যায়ন হলো কি না, সব দিক ঠিক আছে কি না সব দেখে বেড়াচ্ছে কিন্তু তার মাঝেও বার বার গেটের দিকে চোখ যাচ্ছে, এই বুঝি তোর্সা এলো, আবার একটু ভয় কাজ করছে যদি না আসে।। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হলো তোর্সা এসেছে ওর বাবা মার সাথে,, পিংক কালারের গাউন এর উপর সেইম কালারে হেজাব ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দেওয়া আর চোখে চশমা,,, চোখ ফেরানো যাচ্ছে না ওর দিকে থেকে যেনো। কি রে ভাইয়া তুই ভাবি কে হা করে দেখবি নাকি আন্টি আংকেল এর সাথে কথা বলবি( পাশ থেকে নিপু বলে উঠলো কথা টা) ধুর কি যে বলিস না আমি ওকে কেনো দেখতে যাবো। সত্যি আজ ভাবি কে যা সুন্দর লাগছে না। তোর এতো পাকনামি করতে হবে না তুই আবার হলুদ স্টেজ থেকে উঠে এলি কেনো হুম যা ওখানে গিয়ে বোস? হুম যাচ্ছি আগে কথা বলি ভাবির সাথে। তুই যা ও ওখানেই যাবে ছেলে পক্ষের লোকেরা কি বলবে এভাবে ছুটে বেড়ালে বল তো। হুম যাচ্ছি বলে নিপু আবার হলুদ এর স্টেজে গিয়ে বসলো। জারিফ তোর্সার দিকে আড় চোখে তাকালো চোখে চোখ পড়তেই তোর্সা চোখ নামিয়ে নিলো। তখন জারিফ ওর আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলা শুরু করলো। আন্টি আংকেল কেমন আছেন আপনারা। হ্যা বাবা ভালো আছি তোমরা কেমন আছো? আমরাও ভালো আছি।।ততক্ষণে জারিফ এর আম্মু সেলিনা বেগম এসে কথা বলতে লাগলো উনাদের সাথে। তোর্সা গিয়ে উনাকে সালাম করলো।

থাক মা সালাম করা লাগবে না, কেমন আছিস? ভালো আছি আন্টি আপনি কেমন আছেন? আন্টি কি রে হ্যা দুদিন পর তো আমার ঘরের বউ হবি আম্মু বলবি জারিফ নিপুর মতো। আর এসব আপনি আজ্ঞা আমার সাথে করিস না বুঝলি পাগলি মেয়ে তোর্সার চিবুকে হাত দিয়ে বললো সেলিনা বেগম। তোর্সা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। লজ্জা পেলে তো হবে না মা,, আর আমার কাছে লজ্জা কিসের হুম? আচ্ছা আম্মু বলবো এখন থেকে।  ভাই সাহেব, আপা চলেন একটু বিশ্রাম করবেন অনেক দূর থেকে জার্নি করে আসলেন। তোর্সার আব্বু আম্মুর উদ্দেশ্যে বললো সেলিনা বেগম। এতো দূর আর কই মাত্র দুই ঘণ্টার রাস্তা ( তোর্সার বাবা) তবুও কম কি। তারপর সেলিনা বেগম ওদের সবাইকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসালো। আর তোর্সা ওভাবেই নিপুর কাছে গেলো। কেমন আছো আপু? আমি ভালো আছি ভাবি তুমি কেমন আছো তোর্সা কে জড়িয়ে ধরে বললো নিপু। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। আর তোমাকেও। তোর্সা নিপু কে হলুদ লাগিয়ে রুমে গেলো ফ্রেশ হতে এখনো জারিফ এর সাথে তেমন কথা হয়নি তোর্সার, জারিফ সব সময় কাজেই ব্যাস্ত ছিলো।

রাত এগারোটা বাজে সবাই খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পরেছে, আর এদিকে নিপু আর তোর্সা গল্প করছে তখনো বসে বসে,সে সময় জারিফ উপস্থিত হলো সেখানে। তোর্সা নরে চড়ে ঠিক ঠাক হয়ে বসলো জারিফ কে দেখে ওকে দেখে কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে ওর। কি রে তোরা এখনো ঘুমাসনি ? তুইও তো ঘুমাসনি ভাইয়া। আমার ঘুমানো এখনো দেরি আছে বাবুর্চি রা মসলা পাতি বাটছে ওখানে আমার তদারকি করা লাগছে কখন কি লাগে,, তোদের ঘরে লাইট জ্বলা দেখে ভাবলাম ঘুমাসনি তাই এলাম। ভাইয়া তোরা কথা বল আমি এখনি আসছি বলে নিপু উঠে চলে গেলো। আপু আমিও আসি তোর্সা বলতে বলতে নিপু চলে গেলো। তোর্সা মাথা নিচু করে বসে দু হাতের আঙ্গুল চটকাচ্ছে খোলা চুল গুলো এসে মুখ ঢেকে গেছে। জারিফ পাশে বসে হাত দিয়ে চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিলো তোর্সা কেপে উঠলো ওর হালকা ছোয়ায়। কেমন আছো? ভালো আছি মৃদু স্বরে বললো তোর্সা। কি হলো মাথা নিচু করে আছো কেনো আমার দিকে তাকাও ডিয়ার।

আমি নিপু আপুর কাছে যাচ্ছি দেখি কই গেলো বলে তোর্সা খাট থেকে নেমে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু জারিফ ওর হাত ধরে একটা হ্যাঁচকা টানে বুকের ভিতর নিয়ে নিলো। কোথায় যাচ্ছো তোর্সা মনি,? ছেড়ে দাও নিপু আপু চলে আসবে। আসবে না আমার বোনের কি তোমার মতো মাথা মোটা যে এখনি চলে আসবে দেখলে না আমাদের কে কথা বলার কেমন সুযোগ করে দিয়ে গেলো আর তুমি পালাতে চাচ্ছো। আমার মাথা মোটা? না তো বলেছি নাকি,, আচ্ছা সরি এবার আমার দিকে একটু ভালো ভাবে তাকাও তো তোমাকে মন ভরে দেখি। দেখার সময় সামনে অনেক পরে আছে এখন ছেড়ে দাও না প্লিজ। আর একটু থাকো না বুকের মাঝে ভালো লাগছে তো। আমার ভয় লাগছে,,, তোর্সা মাথা নিচু করে বললো। এই পাগলি ভয় কিসের আমিই তো না কি, বলে ওর কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিলো। তোর্সা জারিফ এর বুকে মুখ লুকালো লজ্জায়। তোমার এই লজ্জা মাখা মুখ টা দেখতে না খুব ভালো লাগে ইচ্ছা করে আজই বিয়ে করে ফেলি আর মন ভরে আদর করে দিই,, আর কটা দিন মাত্র নিপুর বিয়ে টা ঠিক মতো হয়ে যাক তারপর আমাদের পালা,, তখন শুধু আদ।

ততক্ষণে তোর্সা জারিফ এর মুখ আটকে ধরলো থাক আর বলতে হবে না মুখে তো কিচ্ছু আটকায় না,, অনেকক্ষন হলো এবার যাও। কি এমন বললাম তোর্সা মনি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো জারিফ, কিছু না এখন যাও তো। ওকে যাচ্ছি,, আর ঘুমিয়ে পরো তুমি অনেক রাত হলো। হুম ঠিক আছে তুমিও বেশি রাত জেগে থেকো না। নিপুর বিয়ে হওয়া অবদি তো সব ঠিকই ছিলো কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো তারপর থেকে জারিফের বাসা থেকে আসার সপ্তাহ খানেক পরই তোর্সার ভাইয়া ইসতিয়াক মাহমুদ ও তার বন্ধু ইফতি আহমেদ অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে আসে, আর ইসতিয়াক ওর আব্বু আম্মু কে বোঝাতে থাকে এই সম্পর্ক টা মোটেই এগোনো ঠিক হবে না, ওর এর থেকে অনেক ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারবো আমরা, তোর্সা কে আমার বন্ধু ইফতি অনেক পছন্দ করে, আর ইফতি কে আমারো খুব পছন্দ, ওকে কাছ থেকে চিনি খুব ভালো ছেলে টা, সব থেকে বড় কথা ও অস্ট্রেলিয়া সিটিজেন,, আর ওর সাথে বিয়ে হলে তোর্সা খুব সুখে থাকবে।

কিন্তু তোর্সার তো এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে ওদের কি বলবো আর তোর্সা জারিফ কে ভালোবাসে ও কি ইফতি কে বিয়ে করবে?(তোর্সার বাবা) বাবা আমি তোর্সা কে এবার নিতে এসেছি ওখানে গেলে ইফতির সাথে মিশলে ওই ছেলে টা কে ভুলে যাবে তোর্সা। আর আগেই ওকে কিছু বলার দরকার নেই আমি আগে ওকে দেশের বাইরে নিয়ে যায় তখন বুঝিয়ে বলবো আর তুমি এদিক টা ম্যানেজ করো,, আর যদি না পারো তো ওটাও আমিই দেখবো আমার বোনের ভালোর জন্য আমি সব করতে পারি। এসব করা কি ঠিক হবে বাবা ( তোর্সার মা) মা তুমি এতো চিন্তা করো না তো আমি সব ঠিক করে দিবো আমার বোনের ভালো টা আমাকেই দেখতে হবে। তোর্সা প্রথমে ওর ভাইয়ার সাথে যেতে রাজি হয় না, কিন্তু ওকে বলা হয় ওখান থেকে পড়াশুনা টা শেষ করে দেশে থাকবে ইচ্ছা হলে, আর এক বছর পর তুমি দেশে এসে জারিফ কে বিয়ে করো প্রয়োজনে, কিন্তু এখন আমি আসছি আমার সাথে যেতে হবে তোমাকে, তোর্সা জারিফ কে সব জানায় জারিফ বলে তোমার ভাইয়া যা বলছে তোমার ভালোর জন্যই হয় তো বলছে, এখনো তোমার ব্যাপারে কোনো ডিসিশন নেওয়া অধিকার আমার হয়নি, তাই তারা যা বলছে মেনে নাও তুমি, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো,, তবে কেনো জানি আমার খুব ভয় লাগছে তোমাকে না সারা জীবনের মতো হারিয়ে ফেলি। এভাবে কেনো বলছো জারিফ আমি বেঁচে থাকতে এমন টা কখনোই হবে না,, আমি ফিরে আসবো।

তোর্সা যাওয়ার আগে জারিফ এর সাথে দেখা করতে চায় কিন্তু ইসতিয়াক বলে ও এয়ারপোর্ট এ আসবে ওখান থেকে একবারে দেখা করবে কিন্তু জারিফ সেখানে আসে না,, কারণ তার আগেই ওকে আসতে মানা করে দেওয়া হয়, তোর্সা অনেক বার ফোন করে ওর নাম্বারে কিন্তু জারিফ ফোন ধরে না, আসার সময় তোর্সার এনগেজমেন্ট এর আংটি খুলে রাখে ওর আম্মু বলে দেশে এসে আবার পরিস তখন ওর কিছুটা খটকা লাগে কিন্তু তার আগেই ইসতিয়াক ওকে নিয়ে যায় দেরি হচ্ছে এই কথা বলে। পরে অস্ট্রেলিয়া এসে ও যখন জারিফ কে ফোন করে তখন জানতে পারে জারিফ এর সাথে ওর বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে,, তোমার এনগেজমেন্ট এর আংটি ফেরত দিয়ে গেছে তোমার আব্বু। তা ছাড়া তোমার ভাইয়া আমাকে অনেক কথায় ফোন বলেছে যে গুলা তোমার না জানায় ভালো শুনলে মন খারাপ হবে শুধু শুধু জারিফ ভাইয়া যায় বলুক আমার দেশে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে না তুমি? আমি একবছর পরই ফিরে আসবো, আর আমি দেশে আসলে আব্বু আম্মু কে ঠিক ম্যানেজ করতে পারবো, তুমি ভাইয়ার কথায় কিছু মনে করো না প্লিজ। ওকে তোর্সা আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।

এক বছরের কথা বললেও এক বছর পর তোর্সা দেশে যেতে পারে না ওর ভাইয়া দেশে যাওয়া আটকে দেয়, ও ওর ভাইয়া কে লুকিয়ে জারিফের সাথে ঠিক যোগাযোগ রাখে, ইফতি ছেলেটা সত্যিই ভালো তোর্সার সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়,অনেক ঘুরে ওই দেশে ওরা আর ছবিও তুলে সেটা শুধু বন্ধু হিসেবে, ওদের কিছু ছবি ইসতিয়াক জারিফ কে পাঠিয়ে দেয় বলে আমার বোন ইফতির সাথে খুব ভালো আছে, তুমি আর যোগাযোগ করো না ওর সাথে, যদিও জানি সেটা করবে না, ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেই কারণ তুমি আমার বোনের টাকার লোভে এখনো ওর পিছে পরে আছো, শোন আমি সেটা হতে দিবো না ওকে ছেড়ে দাও প্রয়োজনে আমি তোমাকে টাকা দিবো,, শোনেন ভাইয়া আপনি তোর্সার ভাইয়া তাই কিছু বললাম না কিন্তু মনে রাখবেন জারিফ আদনান টাকার লোভী না,, যদি তাই হতো তাহলে আমার জায়গা থেকেই আমি অনেক টাকা কামাতে পারতাম আল্লাহ এমনিতেই আমাকে যা দিয়েছে আমি তাতেই সন্তুষ্ট। ইসতিয়াক এর এই কথা গুলো জারিফ এর খুব ইগো তে লাগে, তাই তারপর থেকে তোর্সার সাথে যোগাযোগ অফ করে দেয়। এদিকে তোর্সা জারিফ এর সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে পাগল প্রায় হয়ে যায় অনেক বুঝিয়ে অনেক ঝামেলা করে অবশেষে দেশে আসতে পারে দুই বছর পর আর এসে শোনে জারিফের বিয়ে। সারা রাত এগুলো ভাবতে ভাবতেই চলে গেলো সকালের দিকে চোখ টা একটু লেগে এসেছিলো,, দশ টার দিকে ঘুম ভাঙলে ওর আম্মু নাস্তা করতে ডাকে ও নাস্তার টেবিলে গিয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে।

আব্বু আম্মু তোমরা আমার সাথে এই প্রতারণা করতে পারলে,, একবারও আমার কথা ভাবলে না আমি জারিফ কে কতো টা ভালোবাসি? আমরা তোর ভালোর জন্যই তোর সুখের জন্যই তো এসব করলাম। তোমরা বুঝলে না আমার সুখ কোথায় টাকাতেই কি সুখ আসে মানুষের? মা তুই একটু খাবার খেয়ে নে পড়ে কথা বলবো এই ব্যাপারে আমরা,, রাতেও কিছু খাসনি। (তোর্সার মা ) আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই তোমরাই খাও বলে উঠে চলে যাচ্ছিলো তোর্সা ওর আব্বু মেয়ে কে আদর করে ধরে নিয়ে এসে আবার চেয়ারে বসালো। আম্মু তোমার বিয়ে আমরা জারিফের এর সাথেই দিবো কিন্তু তুমি খেয়ে নাও এমন রাগ করে থেকো না।,, তোমাদের আর সেটা করা লাগবে না আব্বু জারিফ এর বিয়ে কাল তোমাদের মেয়ে কে তাদের কোনো প্রয়োজন নেই বুঝলে। সে আমরা দেখবো এখন একটু খা মা.. অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তোর্সা কে খাওয়ালো ওর আব্বু। আব্বু আমি ময়মনসিংহ যাচ্ছি এখন জারিফ দের বাসায়। কেনো ? কেনো সেটা তোমাদের না জানলেও চলবে বলে বেরিয়ে গেলো তোর্সা। ওকে আর বাঁধা দিয়ো না, ওকে ওর মতো বুঝতে দাও এখনসব, তোমার মেয়ে ছোট নেই বললো তোর্সার মা।

তোর্সা জারিফ দের বাসায় তাও আবার ওর বিয়ের আগের দিন,, ওকে দেখে সেলিনা বেগম আর নিপু অবাক হয়ে যায়,, ওরা ভাবতেও পারেনি তোর্সা এমন দিনে এসে হাজির হবে। ভাবি তুমি?? হ্যা আসলাম তোমার ভাইয়ার বিয়েতে তা বিয়ে বাড়ি এতো শুনশান নিরব কেনো কোনো মানুষজন নেই? ভাইয়া কোনো অনুষ্ঠান করতে দেইনি ইনফ্যাক্ট বিয়েতেই রাজি হচ্ছিলো না মা অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে। হ্যা মা আমার ছেলে তো মরতেই বসেছিলো তোমার সাথে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার পর অনেক কষ্টে সেই ডিপ্রেসন থেকে বেরিয়ে এসেছে, হয় তো মরেই যেতো যদি আমি আর নিপু না থাকতাম,। তোমার কাছে একটাই অনুরোধ মা তুমি আমার ছেলের ঘর আলো করে এলে না ওকে এবার সংসারী হতে দাও, এমন কিছু করো না যাতে ও বিয়ে টা না করে। আম্মু ভয় পাচ্ছো কেনো আমি তোমার ছেলের বিয়ে ভাঙতে আসিনি একবার তোমাদেরকে শেষ দেখা দেখতে এসেছি,, আর কখনো আসা হবে কি না। আমি জানি তুমি কখনোই আমার ছেলের ক্ষতির কারণ হবে না।

বেশ রাত করে জারিফ বাসায় ফিরলো ফ্রেশ হয়ে আলমারি থেকে টিশার্ট পড়ার জন্য বের করছিলো রুমে কারো ঢোকার আওয়াজ শুনে ভাবলো নিপু। নিপু সৈকত (নিপুর বর ) কি কাল আসবে আজ তো এলো না। বিয়ে নিয়ে খুব এক্সসাইটেড আছো দেখছি। জারিফ পিছন ফিরে তোর্সা কে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো হাত থেকে টিশার্ট টা পরে গেলো। তোর্সা কে দেখেই মনে হচ্ছে খুব কান্না কাটি করেছে,, ওকে দেখে জারিফ এর বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো। তুমি? কাকে আশা করেছিলে? জারিফ শান্ত কন্ঠে বললো, না তুমি আসবে সত্যি ভাবিনি । বলে দ্রুত টিশার্ট নিচ থেকে তুলে পরে নিলো। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তাই,, কেমন আছো? খুব ভালো আছি,,, সত্যি কি তাই? হুম সত্যি,, কিন্তু তুমি এতো শুকিয়েছো কেনো? কই ঠিক আছি তো অনেক দিন পর দেখছো তো তাই এমন মনে হচ্ছে। ভাইয়া আম্মু তোকে খেতে ডাকছে ভাবি তুমিও এসো । নিপু এসে বললো। আপু এখন থেকে আমাকে আর ভাবি বলো না তোমার নতুন ভাবি কাল আসবে তাকে ডেকো। আসলে অনেক আগের অভ্যাস তো আচ্ছা আপু বলবো এখন থেকে এখন এসো। তোর্সা চলে গেলো রুম থেকে। জারিফ নিজের রুমেই বসে পরলো।

অনেক রাত প্রায় একটা বাজে সবাই ঘুমিয়ে গেছে,, কিন্তু তোর্সা আর জারিফ এর চোখে ঘুম নেই কাল থেকে চিরো কালের জন্য দুজন দুজন কে হারাবে। এতো দিন তবুও কোথায় যেনো একটু আশা ছিলো দুজনার মনে কিন্তু তা আর এখন দেখতে পাচ্ছে না কেউ। তোর্সার ফোন থেকে হঠাৎ একটা মেসেজ এলো জারিফ এর ফোনে,,ঘর খোলো আমি দরজার সামনে দাড়িয়ে জানি তুমিও ঘুমাওনি। দরজা না খুললে কিন্তু দরজায় ধাক্কা দিবো আর তাতে সকলে শুনতে পাবে। একটু পর দরজা খুলে দিলো জারিফ, তোর্সা সোজা গিয়ে বিছনার উপর বসলো জারিফ দ্রুত দরজা লক করে দিলো কেও দেখে ফেলতে পারে সেই ভয়ে।

তুমি এতো রাতে এখানে কেনো,, মা অথবা নিপু দেখলে কি ভাববে বলো তো প্লিজ নিজের ঘরে যাও তোর্সা। তোর্সা এবার কান্না করতে করতে জারিফ কে জড়িয়ে ধরলো,, জারিফ ওকে জড়িয়ে নিতে গিয়েও নিলো না চোখ বন্ধু করে ফেললো। তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না জারিফ প্লিজ তুমি বিয়ে টা করো না,,  তোর্সা সেটা এই মুহূর্তে কি করে সম্ভব বলো কাল বিয়ে আজ কি করে নিষেধ করবো ওদের,, ওই মেয়ে টার কি হবে তাহলে। আমার কি হবে সেটা একবারও ভাবলে না। আমার আম্মু ওদের কাছে ছোট হয়ে যাবে।  আমাকে তুমি ভালোবাসো না জারিফ? হুম নিজের থেকেও বেশি। তাহলে ? তোমার ভাইয়া আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে না। তাতে কি আমি তো ভালোবাসি তোমাকে। তোর্সা মাথা ঠাণ্ডা করো আর রুমে যাও প্লিজ ডিয়ার। তোর্সা জারিফ কে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে,, নিজেকে শক্ত করে বললো ওকে যাও আমি আর ফিরে আসবো না তোমার জীবনে কিন্তু আমার শেষ একটা কথা রাখতে হবে তোমাকে। কি বলো।।

আমাকে আজ কিছুক্ষণের জন্য হলেও তোমার বউ এর অধিকার দিতে হবে,, আমাকে ঠিক ওভাবে আদর করবে যে ভাবে তোমার বউ হলে করতে। তোর্সা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো কি বলছো মাথা ঠিক আছে। হ্যা আমি ঠিক আছি প্লিজ টাস মি বলে নিজের ওরনা টা ফেলে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো জারিফ কে। তোর্সা সোনা আমার কথা শোন এগুলা পাপ অন্যায় তুমি না গুড গার্ল,, বলে ওরনা টা তুলে তোর্সার গায়ে জড়িয়ে দিলো। কিসের অন্যায় কিসের পাপ আমি তো সেই এনগেজমেন্টের পর থেকেই তোমাকে নিজের স্বামী ভাবি আর নিজের স্বামীর কাছে কিসের পাপ আমি তোমার ভালোবাসায় পূর্ণ হতে চায় জারিফ সেটা একদিনের জন্য হলেও কথা দিচ্ছি আর তোমার সামনে আসবো না কখনো। এবার জারিফ তোর্সা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো,,, ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে এলো মেলো চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে বললো এভাবে বলো না প্লিজ,, তোমাকে ছাড়া আমি কি ভাবে বেঁচে আছি তা শুধু আমি জানি আর আল্লাহ জানে,, কেনো আমাদের ভাগ্যটাই এমন হলো বলতে পারো।

কাল এই সময় তোমার বউ কে বুকের ভিতর রাখবে তাকে খুব আদর করবে তাই না জারিফ? তোর্সা এভাবে বলো না, আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে আদর করতে পারবো না। তাহলে কেনো আমাকে আদর করছো না? আমি তোমার জীবন নষ্ট করতে পারবো না তোর্সা তোমাকে আমি ভালোবাসতে পারি কিন্তু আদর করার অধিকার আমার নেই,, আজ তুমি আবেগে এই কথা বলছো কাল ঠিকই এইভুলের জন্য আফসোস করবে,, তুমি এখন রুমে যাও সোনা। পাগলামি করো না,, তুমি আমার ভাগ্যে নেই। তোর্সা চলে যাচ্ছিলো দরজা খুলতে যাবে তখন জারিফ আবার ওর হাত টা দিয়ে নিজের দিকে করে নিয়ে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাদতে লাগলো,, তোর্সা আরো শক্ত করে ধরলো ওকে। তারপর জারিফ ওর কপালে আর একটা চুমু দিয়ে নিজেই দরজা খুলে দিলো তোর্সা চুপচাপ চলে গেলো আর কিছু না বলে। সারা রাত ঘুম হয়নি জারিফ এর সকালের দিকে একটু ঘুমিয়ে গিয়েছিলো তাই উঠতে দেরি হয়ে গেলো। ঘুম থেকে উঠে ওর চোখ দুটো যেনো তোর্সা কে খুঁজছে,, পাগলি টা রাতে কি পাগলামি টাই না করলো। ওকেই কি বলবো আমি নিজেও তো নিজের মধ্যেই নেই মনে হচ্ছে,, কি করছি না করছি কিছুই বুঝতেছি না। ভাইয়া কাকে খুঁজছিস? নিপুর কথায় জারিফ চমকে উঠলো,, কই কাওকে না তো,,। নাস্তা করবি আয় আমি দিচ্ছি মা ব্যস্ত আছে,, আর কিছুক্ষণ পরেই তো সব চলে আসবে তুইও খেয়ে নে, তারপর তো রেডি হতে হবে।

তোর্সা নাস্তা করেছে? ভাবি চলে গেছে সেই ভোর বেলায় নাস্তা না করেই। কিহ্ ও চলে গেছে?? হ্যা আমি অনেক বলেছিলাম থেকে যেত কিন্তু বললো আমি নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্যের হতে কি করে দেখবো বলো, তাই আমার চলে যাওয়া টাই বেটার, আমি তো শুধু তোমাদের কে দেখতে এসেছিলাম শেষ বারের মতো, দেখা শেষ এখন চলে যাচ্ছি, পরে আর আটকাতে পারিনি তাকে। আমাকে কিছু না বলেই চলে গেলো নিপু আম্মু কোথায় রে? আম্মু মনে হয় নিজের ঘরে আছে,, রান্না করছিলো এতক্ষণ কিন্তু আমিই একটু রেস্ট নিতে বললাম সেই সকাল থেকে রান্না ঘরে প্রেসার এর রুগী আম্মু। ভালোই করেছিস। আম্মু নাস্তা করেছে? হুম করেছে কিন্তু তুই না খেয়ে কই যাচ্ছিস? খেলাম তো,, আম্মুর সাথে কথা আছে তুই এগুলা তুলে রাখ এখন আর খাবো না। আম্মু আসবো??? সেলিনা বেগম শুয়ে ছিলো ছেলে কে দেখে উঠে বসলো,, আয় তোর আমার ঘরে আসতে আবার অনুমতি লাগে নাকি? না ভাবছিলাম ঘুমিয়ে পরলে নাকি। জারিফ ঘরে গিয়ে সেলিনার বেগমের কোলের উপর মাথা রেখে বসলো সেলিনা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কি রে কিছু বলবি? আম্মু আমার কিছু ভালো লাগছে না কি করবো একটু বলে দিবে প্লিজ, এই বিয়েটা করতে আমার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না।

এখন এসব কি বলছিস তুই,, আর একটু পরে সবাই চলে আসবে,, ওদের বাড়ির সবাই অপেক্ষায় থাকবে তোদের, তুই বিয়ে না করলে মেয়ে টার কি হবে একবার ভাবছিস? ওই মেয়ে টাকে বিয়ে করলে এক সাথে তিনটা জীবন নষ্ট হবে, আমি তো ওকে কখনোই ভালোবাসতে পারবো না,, সারাজীবন কষ্ট পাবে মেয়ে টা তার থেকে ভালো এখন একটু কষ্ট পেয়ে বাকি জীবন টা ভালো থাক। ওই সময় জারিফ এর ফোন টা বেজে উঠলো,, ও না খেয়াল করেই কল টা কেটে দিলো। এসব কি বলছিস, যার জন্য বিয়ে ভাঙতে চাচ্ছিস তার বাবা মা কি তোর সাথে তোর্সার বিয়ে দিবে ? জানি না তবে শেষ চেষ্টা তো করতে পারি,, আবার ওর ফোন বেজে উঠলো এবার দেখে তোর্সা ফোন দিয়েছে কিন্তু আম্মুর সামনে ধরবে না তাই কল কেটে দিলো। কি চেষ্টা করবি? তোর্সা তো রাজি আমার আর কারোর দরকার নেই, আমি বললেই ও চলে আসবে এক কথায়, এবার ওর পরিবার রাজি না হলে ওদের মতের বিরুদ্ধে গিয়েই বিয়ে করবো, দরকার নেই ওদের সাথে আত্মীয়তা করার, তুমি শুধু এই দিক টা সামলাও এই বিয়ে টা ভেঙে দাও প্লিজ। এই সময় জারিফ এর ফোনের মেসেজ টন বেজে উঠলো,, সিন করে দেখে তোর্সার মেসেজ। আর মেসেজ টা দেখে জারিফ এর হার্ট বিট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। মেসেজ টা ছিলো এরকম।

জারিফ সরি গো তোমাকে কল দেওয়ার জন্য, ভুলেই গিয়েছিলাম আজ তোমার বিয়ে,, তুমি তো ব্যস্ত আছো, তাই কল কেটে দিলে,, কিন্তু কি জানো মন টা বড়ই অবুঝ শেষ বারের মতো তোমার ঐ হাস্যোজ্বল কণ্ঠ টা খুব শুনতে ইচ্ছা করছিলো,, তোমাকে কাল বলেছিলাম না আর কোনো দিন তোমার সামনে আসবো না, সত্যি আজ চিরো কালের জন্য তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি তুমি তোমার বউ কে নিয়ে সুখে থেকো,, কিন্তু মরার আগে একটা আফসোস থেকে গেলো আমি তোমার ভালোবাসায় পূর্ণ হতে চেয়েছিলাম, সেটা আর হলো না আমি অপূর্ণই থেকে গেলাম, আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো,, হয় তো একটু খারাপ লাগবে প্রথম প্রথম আমার জন্য কিন্তু দেখো তোমার বউ তোমার সব কষ্ট কে ভুলিয়ে দিবে,, খুব ভালোবাসি তোমাকে তুমি অন্য কারো সাথে সংসার করছো সেটা আমি দেখতে পারবো না তাই চলে যাচ্ছি চিরো কালের জন্য তোমাকে ছেড়ে।

ভালো থেকো অল ওয়েজ বাই ডিয়ার জারিফ মেসেজ টা পড়ার সাথে সাথে তোর্সার ফোনে কল দিতে থাকে কিন্তু রিসিভ হয় না,, ওর চিন্তিত কালো মুখ দেখে সেলিনা বেগম কি হয়েছে জিজ্ঞেস করে। আম্মু সম্ভত তোর্সা সুসাইড করেছে আমার এখনি যেতে হবে তুমি এদিক টা সামলে নিয়ো,, কি বলছিস তুই এটা,, আমার কথা শোন? আম্মু প্লিজ আমাকে বাধা দিয়ো না আজ আর, আমি যাচ্ছি,,। আগে আমার কথা শোন তুই এতো দূর থেকে গিয়ে কিছু করতে পারবি না,, তার আগে তুই ওর আম্মুর ফোনে কল দে আর জানা সব কিছু হয় তো তারা জানে না এখনো, সঠিক সময় ওকে হসপিটালে নিলে হয় তো বেঁচেও যেতে পারে। এটা ঠিক বলেছো আম্মু, আমার তোর্সার কিচ্ছু হবে না জারিফ তোর্সার আম্মুর ফোনে কল দেয় দুই বার বাজার পর রিসিভ হলো। হ্যালো আন্টি তোর্সা কোথায়? ও তো ওর রুমে শুয়ে আছে তোমাদের ওখান থেকে এসেই ঘর আটকে বসে আছে কোনো কথায় বলছে না। আন্টি দ্রুত ওর ঘরে যান ও সুসাইড করেছে। কিহ্ তুই কি করে জানলে। তোর্সা আমাকে মেসেজ করেছিলো ও পাশ থেকে আর কোনো শব্দ আসে না হয় তো লাইন টা কেটে গিয়েছে। তোর্সার আম্মু ফোন টা ফেলেই ওর আব্বু কে ডাক দেই এবং দুজন মিলে তোর্সা কে ডেকেও যখন কোনো সাড়া না পায়, তখন আশে পাশের আরো কিছু লোক ডেকে দরজা টা ভেঙে ফেলে।

দেখে খাটের উপর তোর্সার নিস্তেজ দেহো টা পরে আছে হাত থেকে রক্ত পরে বিছানা ভেসে গেছে পাশে একটা ব্লেড পরে আছে। কারোর বুঝতে বাকি থাকলো না তোর্সা হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো। ওকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে গেলো সকলে মিলে,, ডক্টর নার্স রা ওকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। এদিকে তোর্সার আব্বু আম্মু তো কান্না কাটি করে পাগল হয়ে যাচ্ছে, এক মাত্র আদরে মেয়ের যদি এই অবস্থা হয় কোন বাবা মাই বা ঠিক থাকতে পারে। সেই সময় ইসতিয়াক ফোন করে তোর্সার বাবা রিসিভ করে কয় একবার বেজে যাওয়ার পর। হ্যালো বাবা আম্মুর ফোনে কল দিলাম তোর্সার ফোনে কল দিলাম বাড়ির ল্যান্ড লাইনে কল দিলাম কেও ফোন ধরে না কেনো? শোনো তোমাকে আমি ছাড়বো না যদি আমার মেয়ের কিছু হয়। তোর্সার কি হয়েছে তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো বাবা? তো তোমার সাথে কি ভাবে কথা বলবো তুমি আমার মেয়ে টাকে শেষ করতে লেগেছো,, আমরা জারিফ এর সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলাম তুমি ভ্যাজাল বাঁধালে আজ তোমার বোন সুসাইড করেছে বাঁচবে কি না জানি না। বলতে বলতে কেদে ফেলেন উনি।

বাবা কি বলছো এসব। তুমি কিচ্ছু চিন্তা করো না বোনের কিছুই হবে না দেখছি কি করা যায়। সেই সময় ডক্টর এসে বললো কম পক্ষে তিন চার ব্যাগ রক্ত লাগবে নইলে রুগী কে বাঁচানো যাবে না,, একে তো উনি খুব দূর্বল ছিলেন তার উপর প্রচুর রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে গেছে এখনি বি পজেটিভ গ্রুপের রক্তের ডোনার এর ব্যবস্থা করুন অথবা রক্ত। তোর্সার বাবা একা মানুষ কি করবেন উনি স্ত্রী কে সামলাবেন নাকি রক্ত জোগাড় করবেন,, সেই সময় ইফতি আহমেদ হসপিটালে এসে উপস্থিত হয় । ও তোর্সার সাথে একই ফ্লাইটে দেশে আসছে, ইসতিয়াক ওকে ফোনে সব জানাই আর ও শুনেই চলে আসে দ্রুত হসপিটালে। আংকেল আমার রক্তেই গ্রুপ বি পজেটিভ আমি আপাতত রক্ত দিচ্ছি আপনি এর মাঝে আরো কয় একজন ডোনার জোগাড় করুন। আর না পেলে ব্লাড ব্যাংক এ যোগাযোগ করুন। আচ্ছা ঠিক আছে,, আমি তাহলে তাই করি তুমি এদিক টা দেখো বলে তোর্সার আব্বু রক্ত জোগাড় করতে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পর জারিফ উসকো খুসকো চুল মুখটা শুকনা করে হাজির হলো হসপিটালে। ওখানে এসে দেখে তোর্সার আম্মু OT এর বাইরে বসে আছে জারিফ কে দেখে তিনি কান্নাই ভেঙে পরলো। আন্টি কান্না করবেন না তোর্সার কিছুই হবে না ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহ আছেন,, জারিফ উনাকে সান্তনা দিচ্ছিলো কিন্তু ওর নিজের চোখ দিয়ে কখন জল গড়িয়ে পড়ছিলো বুঝতেই পারছিলো না। আন্টি বাকি রক্তের জোগাড় হয়েছে কি, আমি আংকেল কে ফোন দিয়ে যখন হসপিটালের ঠিকানা জানলাম তখন তিনিই বলছিলো রক্তেই খোঁজে আছেন। তোমার আংকেল এখনো আসেনি ইফতি রক্ত দিচ্ছে, তখন ইফতি ও রক্ত দিয়ে বাইরে আসলো জারিফ ওকে দেখেই চিনতে পারলো,, আর জারিফ এর বিধ্বস্ত চেহারা আর চোখে পানি দেখে ইফতির ও বুঝতে বাকি থাকলো না যে এটা জারিফ। তোর্সার এখন কি অবস্থা ? জারিফ ইফতি কে প্রশ্ন করলো। উনাদের সংগ্রহে রক্ত ছিলো সেখান থেকে এক ব্যাগ দিয়েছে আমি এক ব্যাগ দিয়ে এলাম এখন সেটা শরীরে চলছে আর আংকেল রক্তের জোগাড় করতে গেছেন। তোর্সার আব্বু দুজন ছেলে কে নিয়ে হাজির হলো ওরা একে একে রক্ত দিলো তোর্সা কে।

দুদিন পর তোর্সা কে আই সি ইউ থেকে কেবিনে শিফট করানো হলো তখন একটু সুস্থ কথা বলছে টুক টাক সবার সাথেই, এই দুই দিন জারিফ হসপিটালেই ছিলো তোর্সার বাবা মাও,, ইফতি বার বার এসে খোজ নিয়ে যাচ্ছে। একটু আগে জারিফ জোর করে ওর বাবা মা কে বাসায় পাঠিয়েছে একটু রেস্ট নেওয়া জন্য যেতে চায়নি কিন্তু জারিফ জোর করেই পাঠালো । তোর্সা ঘুমিয়ে ছিলো আর জারিফ পাশেই বসে ছিলো। ও ঘুম থেকে উঠে দেখে জারিফ একা বসে আছে সকালে যখন কেবিনে দেওয়া হলো তোর্সা কে তখন ওর বাবা মা ছিলো তাই এখনো দুজনার কোনো কথা হয়নি তেমন। ওর চোখ তাকানো দেখে জারিফ আর একটু কাছে এসে বসলো। কিছু লাগবে কি ? তোর্সা মাথা ঝাঁকালো। জারিফ কিছুক্ষণ তোর্সার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো এতো টা সাহস কই পাইছিলে তুমি? তোর্সা চুপ করে রইলো কিছু বললো না।

চুপ করে থাকলে হবে না উত্তর দিতে হবে, আমার দিকে তাকাও। কি করে পারলে তুমি এটা একবার ও ভাবলে না আমার কি হতো তোমার কিছু হয়ে গেলে? তো কি করতাম আমি তুমি অন্য মেয়ে কে বিয়ে করছো আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো,, আমি বেঁচে থাকতে সেটা দেখতে পারবো না তাই তো বাধ্য হয়ে এই পথ বাছতে হয়ে ছিলো আমাকে। জারিফ তোর্সার আর এমন কথা আর চিন্তা ভুলেও করো না কিন্তু তাহলে আমিও মরে যাবো বলে দিলাম তোর্সা জারিফ এর এক হাত চেপে ধরলো। এমন বলো না। ওকে বলবো না তুমিও আর এমন করো না সোনা, এখন লক্ষ্মী মেয়ের মতো চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো তো একটু। জারিফ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো আর তোর্সা ওর এক হাত চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ছিলো। তখন ওদের কেবিনে সেলিনা বেগম নিপু আর একটা সুন্দরী মেয়ে ঢুকলো। তোর্সা ওদের দেখে চোখ খুললো। এমন কাজ কেও করে হ্যা,, তোর খুব মাইর পাওনা আছে বুঝলি। পাগলী কোথাকার,, সেলিনা বেগম তোর্সার অন্য পাশে বসতে বসতে বললো।

সত্যি ভাবি তুমি এমন পাগলামি করবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। (নিপু) তোর্সা চুপ চাপ কোনো কথা নেই মুখে শুধু লাজুক লাজুক হাসছে। হ্যা আম্মু ওকে মাইর দাও খুব দুষ্টু হয়েছে নিজে নিজেই কতো বড় কাণ্ড ঘটিয়েছিলো আশপাশের মানুষের কথা একবারও চিন্তা করলো না। ( জারিফ) তোর্সা অপরিচিত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো আম্মু ওটা কে? নিপু বলে উঠলো ওটা আমাদের ভাবি বুঝলে তুমি সেদিন বলেছিলে না নতুন ভাবি কে ভাবি বলে ডাকতে এই সেই আমাদের নতুন ভাবি। তোর্সার মুখ অন্ধকার হয়ে গেলো ও দ্রুত জারিফ এর হাত ছেড়ে দিলো তার মানে জারিফ বিয়ে করেছে সেদিন। তাহলে অফিস নতুন বউ ফেলে রেখে এখানে কি করছে,, ও জারিফ এর দিকে প্রশ্নের দৃষ্টিতে তাকালো। জারিফ দু হাত মাথা ঝাকিয়ে না করলো, বুঝালো আমি কিছু জানি না। তখন ও সেলিনা বেগম এর দিকে তাকালো। তুই ওর কথা ধরিস না নিপু দুষ্টামি করছে, তবে হ্যা এই সেই মেয়ে যার সাথে জারিফ এর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।  জারিফ ও কৌতূহলী দৃষ্টিতে মেয়ে টার দিকে তাকালো।

তখন মেয়ে টি কথা বললো ভাবছেন তো আপনারা আমি এখানে কি করছি,, আমি আসলেই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা থেকে এসেছি,, ওই দিন যদি জারিফ সাহেব বিয়ে করতে যেতো তাহলে আমি আমার ভালোবাসার মানুষ কে হারাতাম,, আমাকে জোর করে মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো, কিন্তু যখন আপনারা যাননি তখন আমার ভালোবাসার মানুষ উপস্থিত হয় আর আমার বাবা লোক লজ্জার ভয়ে বাধ্য হয়ে ওর সাথে আমার বিয়ে দেয়। আমি সত্যি জারিফ সাহেবের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি ওর সাথে সুখে আছি। জারিফ যেনো কথা গুলো শুনে একটু সস্থি পেলো, কয়দিন বেশ অসস্তিতে ভুগছিলো, যে নিজের অজান্তেই কারোর জিবন নষ্ট করলাম না তো কিন্তু মেয়ে টা ভালো আছে শুনে ভালো লাগলো। আজ তোর্সা আর জারিফ এর বিয়ে ইসতিয়াক পরে আর কোনো বাধা দেয়নি ,, আর দিলেও ওর বাবা শুনতো না ওর কথা।

অনেক প্রতীক্ষার পর আজ ওদের বিয়ে হয়ে গেলো। ইফতিও বিয়ে তে এসেছিলো জারিফ কে বলেছিলো ভাই সত্যি আপনি অনেক লাকি কেনো? অনেক ভালো মনের একজন জিবন সঙ্গিনী পেলেন,, আর সব থেকে বড় কথা আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসে কয়জন তার ভালোবাসা কে পায়, আপনি শেষ পর্যন্ত পেলেন। আগলে রাখবে কিন্তু । অবশ্যই ওকে তো আগলে রাখতেই হবে ও যে আমার প্রাণ। বাসর ঘরে তোর্সা বসে আছে নিপু এসে চুল গুলো ছাড়াতে সাহায্য করছে পার্লারের মহিলা রা চুলের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে একদম, অনেক কষ্টে সেগুলো ছড়ানো হলো। ভাবি এবার ওয়াশরুমে গিয়ে মুখের মেকাপ তুলে ফেলো ,, তার আগে শাড়ি টা চেঞ্জ করে নাও একা তো পরতে পারবে না। হুম পারবো না কখনো পরিনি তো। নিপু তোর্সা কে একটা হলুদ সুতি শাড়ি পরিয়ে দিলো।

এবার মুখের মেকাপ টা ধুয়ে এসো আমি গেলাম এখন, ভাইয়া অপেক্ষা করছে বলে মুখ টিপে হেসে চলে গেলো।
তোর্সা ওয়াশরুম থেকে মুখ হাত ধুয়ে এসে দেখে জারিফ নিজের শেরওয়ানি খুলে টিশার্ট পরছে,,, তোর্সার শাড়ি পরা খোলা এলোমেলো চুল এই রকম নতুন রূপে দেখে হা হয়ে গেলো জারিফ আস্তে আস্তে নেশা ভরা চোখে ওর দিকে এগোতে থাকলো। তোর্সা ও পিছতে থাকলো এক সময় ও দেওয়াল এর সাথে আটকে গেলো। এই কোথায় আসছো আর এগোবে না কিন্তু। জারিফ এক হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে তোর্সার মুখের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বললো আসলে কি হবে তোর্সা মনি? ভালো হবে না কিন্তু,, সেদিন তো খুব আদর চাচ্ছিলে আজ কেনো পালাচ্ছো ডিয়ার। সেদিন কি আমার মাথা ঠিক ছিলো নাকি, তোমাকে হারানোর ভয় কাজ করছিলো মনের ভিতর শুধু, তাই কি করছিলাম না করছিলাম কিচ্ছু খেয়াল ছিলো না ।

তাই আজ যে আমার মাথা ঠিক নেই তোমাকে এই শাড়ি পরা নতুন রূপে দেখে,, জানো তো তোমার এই গোলাপী ঠোঁট দুটোর উপর আমার অনেক দিনের লোভ,, বলেই তোর্সার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। তোর্সা চোখ বন্ধ করে আবেশে জারিফ কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। সেদিন আমার কাছে পূর্ণতা চেয়েছিলে না,, আজ তোমাকে পূর্ণতা দিবো, আমার ভালোবাসায় পূর্ণ করবো আজ তোমাকে বলে কোলে তুলে নিলো তোর্সা কে। জারিফ শিশসস ( তোর্সার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে) আজ আর কোনো কথা না আজ শুধু ফিল করবে ভালোবাসা,,,।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত