গতকাল রুদ্র একটা শাড়ি এনে টেবিলে রেখেছে। তন্দ্রা রাতে শাড়িটা দেখেছে কিন্তু হাতে নেয়নি ।পরেরদিন সকালে ঘরের জিনিসপত্র ঠিক করতে গিয়ে তন্দ্রা দেখে টেবিলের উপর শাড়ির পাশে একটা চিঠি। হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।
” প্রিয় তন্দ্রা
প্রতিদিন ইচ্ছে করেই দেরীতে বাড়ি ফিরি, শুধু তোমার রাগ দেখার জন্য। এমনিতে তুমি এত রাগ করোনা। তবে আমি দেরী করে বাড়ি ফিরলে প্রতিদিন তুমি আমাকে তুলোধুনো করো। এটা আমার কাছে বেশ লাগে। তখন ইচ্ছে করে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু তুমি তো জানো! আমি অত রোমান্টিক না। আসলে রোমান্টিক হতে পারিনি। পড়ালেখা আর নিজের চাকরি নিয়েই ব্যস্ত।
তুমি ইচ্ছে করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকো। বিশ্বাস করো , তোমাকে রাগলে এত সুন্দর লাগে যা বলা বাহুল্য। প্রতিটা মেয়েকেই হয়তো রাগলে বেশ লাগে। তা ‘ত’ আর আমার জানা নেই। তবে তোমাকে আমার জানা আছে।
রাগলে তোমাকে এত সুন্দর লাগে যা বলে বুঝানো যাবেনা। ইচ্ছে করে প্রতিদিন তোমাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু অজানা একটা কারণে পারিনা।
প্রতিদিনই দেরী করে বাড়ি ফিরার এই একটাই কারন। তোমার গম্ভীর মুখখানা দেখার জন্য। যে গম্ভীর মুখের আড়ালে লুকিয়ে আছে অদেখা অজস্র ভালবাসা। খুব ভালবাসি তোমায়, তাই নিজের মনের মধ্যেই লুকিয়ে রাখি আমার ভালবাসা।
আমি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি, সকালে সূর্য তোমাকে দেখার আগে আমি দেখি।
আলো আমার ভালো লাগেনা। সারাক্ষণ তোমাকে দেখে। কিন্তু কি করবো বলো। আলো ছাড়া তোমাকে দেখা যায়না। তাই তো আমি সর্বদা আলোর কাছে মাথা নত করি।
বাদ দাও এসব কথা! গতকাল তোমার জন্য যে শাড়িটা এনে টেবিলে রেখেছিলাম। কিন্তু তোমার হাতে আর দেওয়া হয়নি। এখন এই চিরকুট’টা পড়লে হয়তো শাড়িটা হাতে নিবে। নিশ্চয়ই শাড়িটা তোমার পছন্দ হয়নি বুঝি। এরজন্যই এনে তোমার হাতে দেইনি। আসলে কি জানো, আমি কখন একা শাড়ি কিনিনি। মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে গেলে মা’কে সাথে নিয়ে যেতাম। কখন নিজের পছন্দে শাড়ি কিনতে পরিনা। হয়তো তোমার পছন্দ মতো শাড়ি কিনতে পারিনি। তাই তোমার কাছে না দিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিয়েছি।
তবে কথা দিলাম, একদিন তোমার জন্য সত্যিই একটা সুন্দর শাড়ী কিনে দিবো। অভ্যাস হয়ে যাবে। তোমাকে চেনা হয়ে যাবে। তোমার পছন্দ অপছন্দের তালিকাও আমার হবে।
তবে সেটা কখন হবে বলা যায়না।
রুদ্র
চিঠিটা পড়ে মুচকি মুচকি হাসছে তন্দ্রা। বেশ অবাক হচ্ছে রুদ্রের এই চিঠিটা পড়ে।যে রুদ্র তাঁর সামনে ভালোভাবে দাঁড়ায় না। সেও মনের কোণে বউয়ের জন্য ভালবাসা লুকিয়ে রাখে। তন্দ্রার স্বপ্ন ছিলো তাঁর একটা হ্যান্ডসাম, রোমান্টিক বর হবে। আর রুদ্র! যার ভিতরে কোনো রোমান্টিকতা বলতেই কিছু নাই। কিন্তু এখন দেখে রোমান্টিকতার সিন্ধুক রুদ্রের ভিতরে। তন্দ্রাও রুদ্রকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু কেউ প্রকাশ করেনা।
এখন চিঠিটা পড়ে তাঁর শাড়িটা পরার খুব ইচ্ছে হলো তন্দ্রার।
দরজায় টকটক শব্দ করছে। তন্দ্রা তড়িঘড়ি করে গিয়ে দরজা খুললো।
তন্দ্রার দিকে তাকিয়ে রুদ্র পুরাই টাস্কি খেয়ে গেলো। রুদ্র হয়তো ভুল দরজায় টোকা দিয়েছে।
একবার চোখ কচলিয়ে দেখলো। না! এটা তো তন্দ্রাই।
তবুও তন্দ্রাকে উপেক্ষা করে রুমে ঢুকে গেলো রুদ্র।যেন তন্দ্রাকে সে এমন অবস্থায় প্রায়ই দেখে। তন্দ্রাকে সে বুঝতে দেয়নি, যে তন্দ্রাকে দেখে সে টাস্কি খেয়েছে।
খাবার শেষ করে বিছানায় শুয়ে আছে রুদ্র।
দরজা বন্ধের শব্দ পেলো। তাঁর মানে তন্দ্রা রুমে এসেছে।
তন্দ্রা রুমে এসে আয়নার সামনে বসে আছে চুপটি করে। আর বারবার আয়নায় নিজেকে দেখছে।
কোথায় কোনো কমতি হলো নাকি।
বিকাল থেকে কাজ শেষ করে নিজের ইচ্ছে মতো সেজেছে তন্দ্রা। রুদ্রের কিনে আনা শাড়িটাও সে পরেছে। শুধু মাত্র রুদ্রের জন্য।
আর এই রুদ্র কিনা, একবারও কিচ্ছু জিজ্ঞেস করলো না।
তন্দ্রার বড্ড রাগ হলো তাঁর নিজের উপর।মাথা নিচু দিকে দিয়ে বসে আছে তন্দ্রা। এদিকে আর বিছানায় শুয়ে থাকতে পারছেনা রুদ্র। তন্দ্রা যেন রুদ্রকে চুম্বকের মতো টানছে। বার বার বলছে, তুই তন্দ্রার কাছে যা। তাঁকে জড়িয়ে ধর। সে তোর জন্যই এমন করে সেজেছে।
ধীরে পায়ে রুদ্র তন্দ্রার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তন্দ্রা বুঝতেই পারেনি তাঁর পিছনে কেউ আছে।
রুদ্রের খুব ইচ্ছে করছিল পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
কিন্তু একটা অজানা কারণে পারছেনা।
তবুও সকল বাধাকে ডিঙিয়ে তন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরলো।
তন্দ্রা চমকে উঠলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দেখে রুদ্র থাকে জড়িয়ে ধরছে।
বেশ অবাক হলো তন্দ্রা।
কিন্তু তন্দ্রার মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা ভালবাসাটা লাফিয়ে উঠতে শুরু করলো। তন্দ্রাও আবার রুদ্রকে জড়িয়ে ধরলো।
আসলে রাগ, অভিমান লুকিয়ে রাখা যায়, কিন্তু ভালবাসা লুকিয়ে রাখা যায় না। ভালবাসা প্রতিদিন নতুন করে শুরু হয়।
[ ভালো থাকুক ভালবাসা, ভালো থাকুক ভালবাসার প্রিয় মানুষগুলো ]