রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলাম। হঠাৎ সামনে দেখলাম একটা প্লাস্টিকের বোতল পড়ে আছে। কোনদিক বিচার বিবেচনা না করে লাথি মারলাম। ওহহহহহ নো এমনিতে লাথি মেরে বোতল উড়াতেই পারি নি। কিন্তু আজ পুরা রোনালডো হয়ে গিয়েছিলাম। বোতলটা উড়ে গিয়ে সামনের এক আংকেলের টাকে। আহঃ কি ভাল শট করি আমি। আমার তো জাতীয় দলে খেলা উচিত।
আংকেলটাকে দেখেই বুঝতে পারছি যে কপালে শনি আছে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি অনেক মানুষ। অর্থাৎ দৌড় দিলেই গণধোলাই খাবো। কি আর করার। পাপের শাস্তি বহন করতেই হবে। এটা কি হলো? (আংকেল) সরি আংকেল। আসলে বুঝিনি যে আপনার টাকে লাগবে। (আমি) না তুমি সেটা মারবে কেন? সো সরি। প্লিস মাফ করে দিন। শয়তান কোথাকার দুররর!!! তখন থেকে কি ভাঙা রেকর্ডের মত বকবক করছেন। মেরেছি ভালো করেছি। দরকার হলে আবার মারব। শয়তান একটা জানি। আপনাকে বলতে হবে না। মাথায় তো স্টেডিয়াম হয়ে আছে। তাও ফুটবল খেলার মর্যাদা বুঝেন না। ঐ কি বললে? আবার বলো (একটা মেয়ে) আরেশ শালা, এই মালটা আবার কোথা থেকে ডাউনলোড হলো। কি কিউট দেখতে। আমি তো ক্রাশ হয়ে গেলাম। ঝগড়া করার মুডটাই চলে গেল। কখন কি বললাম? (আমি) এইযে একটু আগে কি বলছিলেন?(মেয়ে) ওহহহহহ!!! আসলে স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা চলছে।সেটা দেখতে যাওয়ার জন্য বলছিলাম।
একদম মিথ্যা বলবেন না। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম আপনি আমার বাবার সাথে ঝগড়া করছিলেন। আপনারও বাবা আছে? এটা কি রকম প্রশ্ন? চল তো মা। বেয়াদ পদের সাথে কথা বলে লাভ নেই। (আংকেল) মেয়েটা পিছন ঘুরে এমন একটা লুক দিল যেন খেয়ে ফেলবে। আমার এই ৪৯ নম্বর ক্রাশটাও বৃথা হয়ে গেল। কেন যে ওর বাবার সাথে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করতে গিয়েছিলাম। মেজাজটা যতটা ভাল হয়েছিল তার চেয়ে বেশি খারাপ হয়ে গেছে। বাড়িতে ঢুকতেই মনে হলো,আমাকে বিয়ের জন্য বাড়তি থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। মাত্র তো অনার্সটা শেষ করলাম।এতো তাড়াতাড়ি আমার মত শিশুকে ফাঁসিতে ঝুলাতে কেন চাইছে। বাল্যবিবাহের মামলা করে দিতে মন চাইছে। কিন্তু খালি আমার দাদার কথা চিন্তা করে করলাম না। কারণ এখন বাড়ির সবাই জেলে গেলে মৃত দাদা কষ্ট পাবে। যাই হোক বহু চিন্তা মাথায় নিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম।
বাড়িতে ঢুকতেই ড্যাডের ডাক।ড্যাড তুমি যাই কর।আমি ফাঁসিতে ঝুলবো না,(আমি) ঐ হারামজাদা তোকে না কতবার বলেছি ড্যাড বলে ডাকবি না। বাবা বলে ডাকবি(বাবা) আরে ম্যান এখনকার স্টাইল এসব। ম্যান!!!! দাঁড়া তোর স্টাইল বার করছি। ও মাগো…বাঁচাও গো…আমাকে মেরে ফেলল গো!!!! (আমি)এক দৌড়ে মা’র পিছনে।বাবাও ছুটে আসল মা’র পিছনে। মা’ আমাদের দুজনের দিকেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি হলো ওকে দৌড় করাচ্ছো কেন? (মা) দৌড়াচ্ছে না মম। মারছে। (আমি) ওকে মারছ কেন? এই দাঁড়া!!ঐ একটু আগে কি বললি তুই? (মা) কি বলছি? (আমি) মম বললি কেন? তোকেনা বারন করেছি মম ডাকতে। (মা) তোমরা এ কেমন আজব। (আমি) এমন কেন? দাঁড়া বুঝাচ্ছি (বাবা) সরি ড্যাড সরি মম। (আমি) বলেই আমি মুখে হাত,আবার ভুল। ঠিক হবে না। এখন আগে দৌড় দি। এবার একদম বাড়ির বাইরে এসে থামলাম। কি আজব!!! এত বড় ছেলেকে কেউ মারে। কোন লজ্জা শরম নেই।
দুইঘন্টা হয়ে গেছে। এবার বাড়িতে ঢুকা যাক। দরজাটা ধাক্কা দিয়ে হালকা উকি দিলাম। না পরিবেশ শান্তই মনে হচ্ছে। ভিতরে ঢুকতেই মা সামনে হাজির। কোথায় গিয়েছিলিস? (মা) এইতো ছাদে। (আমি) পাশের বাড়ির মেয়ের সাথে ছাদে গিয়ে লাইন মারা হচ্ছে বুঝি। আরে না কি যে বলো। পাশের বাড়িতে মেয়ে আছে সেটা তো জানতাম না। এখন জানলাম ট্রাই করা যেতে পারে। তো বিয়ে করে নে। দুররর!!! কি যে বল!!! আমার বয়স হয়েছে নাকি বিয়ে করার। এখনো তো আমি বাচ্চা। ওমা তাই? বাচ্চামি বার করছি তোর। কাল তোর বিয়ে তোর বাবা বলেছে। কি করে সম্ভব ম্যান!! ওহহহ সরি ওম্যান!! আমি জানিনা। তোর বাবাকে জিজ্ঞেস কর। কি থেকে কি হলো বুঝতেই পারলাম না,সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।মাথায় খালি একটা কথাই আসছে।বাড়ি থেকে পালাতে হবে।”প্রদীপ বাঁচতে হলে পালা”।
রাত ২.৩০। বাবা মার রুমে গিয়ে একবার দেখে আসলাম দুজনকেই। ছেড়ে যেতে মন চাইছে না। তবুও যেতে হবে। কারণ বিয়ে করবো না আমি। বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালাম।আশেপাশে কেউ নেই। কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। হঠাৎ মনে হলো কেউ এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। ভূত নয় তো। ভয়ে ভয়ে তাকালাম। না একটা মেয়ে। ভাল করে তাকিয়ে দেখতে পেলাম এটাই সেই মেয়ে যার বাবার সাথে আমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু ও এখানে কেন। পালাচ্ছে না তো! আমার মনে লাড্ডু ফাটলো। হাই (আমি) হ্যালো। বকবক করছেন কেন? (মেয়ে) কোথায় যাচ্ছেন? মরতে যাবেন? অবশ্যই,তোমার জন্য মরতে পারি, ও সুন্দরী তুমি গলার মালা পিছনে তাকান। দেখুন কুকুররা ভিড় করছে। এভাবে বলতে পারলেন।
আহারে আপনি সে না যে আমার বাবার সাথে ঝগড়া করছিলেন? পুরানো কথা ছাড়ুন না । কেন ছাড়বো,সেদিন আপনার নাক ফাটিয়ে দিতাম বাবা না থাকলে। আমি বুঝি বসে থাকতাম? কি করতেন শুনি? কিস করতাম। ছি!!! ইয়াক!!! চিপ মেন্টালিটি। হুম জানি। তা আপনি এতরাতে এখানে কেন? পালাচ্ছি,আসোলে কাল নাকি আমার বিয়ে। আমারও সেম। ওহহহ গুডড!! চলুন একসাথেই পালাই। কেন? আমার পা আছে,আমি যেতে পারবো। তাও তো শীতের রাত। কোথায় কি আছে কে জানে। আপনার সিকিউরিটির জন্য বলছিলাম। কি জানি ভাবল কতক্ষন। তারপর একসাথে চলতে শুরু করল। দুজন হাঁটছি।কিন্তু পুরো বাসস্ট্যান্ডে একটাও বাস ও এখন ছাড়বে না। কি করব। ভাবলাম রাতটা দুজনে মিলে হাঁটাহাঁটি করে কাটিয়ে দেবো। দুজনে হাঁটছি,আমার মনে তো অনবরত লাড্ডু ফাটছে। আচ্ছা আপনার নাম কি? (আমি) আপনাকে কেন বলবো? (মেয়ে) না মানে ধরুন আপনাকে গুন্ডারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর নাম ধরে চিৎকার করতে হবে তো।
মেঘা। আপনার? প্রদীপ ওহহহহ! কি?? কি নাম বললেন? প্রদীপ। দেখুন আমি কিন্তু কোন দাগী আসামী না। দাগী আসামি। বাড়ি কোথায় আপনার? রোডে। কেন? ওহহহ!!! তাই বলুন। তা বিয়ে করতে প্রবলেম কি? এমনি। এত্ত তাড়াতাড়ি ফাঁসিতে ঝুলতে চাইছি না। ফাঁসিতে ঝুলার সাথে বিয়ের সম্পর্ক কি? না মানে হবু বউটা নাকি ডাইনি। শাকচুন্নি টাইপের আরকি। কি ডাইনি? দাঁড়ান দেখাচ্ছি চলুন রেজিস্ট্রি অফিসে। রেজু অফিসে কেন? আর আপনার আবার কি হলো? কিছুনা। চলুন এখন আমরা বিয়ে করব। আমি ডাইনি? আমি শাকচুন্নি? আপনাকে কখন বললাম? এই যে বললেন না। আপনার ঐ হবু বউটা আমি.. মেঘা। সত্যি? হ্যাঁ একেই বলে কপাল। কিন্তু আমি তো বিয়ে করছি না। করবি না মানে? করতে হবে। চল রেজিস্ট্রি অফিসে। আমি আর কিছুই বললাম না। আমার মনের সব লাড্ডু একবারে ফেটে গেছে। আগে জানলে বাড়ি থেকে পালাতামি না। রেজিষ্ট্রি অফিসে পৌঁছে গেছি। কিন্তু এত রাতে রেজিস্ট্রি অফিস তো বন্ধ।
রেজিস্ট্রি অফিস তো বন্ধ। (আমি) এখানেই বসে থাকবো। সকালে বিয়ে করে তারপর যাবো। বস এখানে । (মেঘা) জোর করে বসালো। হাতটা শক্ত করে ধরে রাখছে মেঘা। যেন পালাতে না পারি। কিন্তু আমি তো পালাতে যাচ্ছি না। আমাকে যে বিয়ে টা করতে হবে। সকাল হয়ে গেছে। মেঘা আমার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটা কতো কিউট। সারারাত আকাশে চাঁদ ছিল। কিন্তু আমি বসে বসে আমার পাশের চাঁদটাকে দেখেছি। ঘুমালে বাচ্চা বাচ্চা লাগে আমার পরীটাকে। দুএকটা সেলফি তুলতেও ভুলি নি। এমন সুন্দর সময়কে ক্যামেরাবন্দি করাই যায়। নহলে নাতি-নাতনীদের দেখাব কি করে। মেঘার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এখনো রেজিস্ট্রি অফিসের সামনেই বসে আছি। মেঘা উঠে দেখল আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চোখগুলা ফুলে আছে অর্থাৎ সারারাত ঘুমাইনি। মেঘা লজ্জা পেল কিছুটা।
আসলে সরি। কাল রাতে রেগে গিয়েছিলাম। (মেঘা) না। ইটস ওকে। (আমি) আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন। বিয়েটা করলে কিন্তু মন্দ হয়না। অন্তত প্রতিদিন রাতে আকাশে চাঁদ না উঠলে ও আমার পাশের চাঁদটাকে দেখতে তো পারবো। আমি দুষ্টুমির একটা হাঁসি দিলাম। আর মেঘা মুচকি একটা হাসি দিল। যার মানে বিয়েটা হচ্ছে। কেন জানি নিজেকে ফাঁসিতে ঝুলাতে মন চাইছে। একবার ঝুলেই দেখি না কেমন লাগে।
সমাপ্ত