হয় সিগারেট না হয় চুমু? কি বলছো এসব, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না! যদি সিগারেট খাও তবে আমার চুমু পাবে না। আর যদি চুমু চাও তবে সিগারেট খেতে পারবে না। এবার বলো কোনটা চাও?
কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না। বউ আজকাল আমার সিগারেট খাওয়া নিয়ে একটু বেশিই চ্যাঁচামেচি করছে। মিন মিন করে বললাম:-বলছিলাম কি তোমার বোধহয় আজ, মেজাজটা বেশি ঠিক নেই। রাতে বাইরে খেতে গেলে কেমন হয়? এসব বাইরে খাওয়া-টাওয়া দিয়ে কিছুই হবে না। আমাকে এখন, এই মূহুর্তে তোমার মতামত জানতে হবে। আচ্ছা ঠিক আছে, মতামত দেবো। তবে সেটা পাঁচ মিনিট পর। তুমি বাইরের ঘরে গিয়ে বোস আমি আসছি।বাইরের ঘরে বসতে হবে না। আমি পাঁচ মিনিট এখানেই দাঁড়িয়ে আছি। এক্ষুণি ভেবে জানাও কি করবে। হয়েছি কি অদ্রিতা! ব্যাপারটা অনেক জটিল। আর এসব জটিল ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করার ক্ষেত্রে; সিগারেট আমায় ভালো রকমের সাহায্য করে। তোমার সামনে তো আর সিগারেট খেতে পারি না। সেটা একরকম তোমার চুমুকে অপমানিত করা হয়। তাই বলছিলাম কি.. তুমি একটু বাইরে গিয়ে বোস। আমি সিগারেটটা শেষ করেই তোমায় সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি।
কথাটা শুনেই বউ রেগে গেল। টেবিলে ছোট একটা বই ছিল, ওটা দিয়েই সে এলোপাতারি ভাবে মেরে রুম থেকে চলে গেল। ভাগ্যিস এটা রান্নাঘর ছিল না। থাকলে স্টিলের চামচ, কিংবা হাড়ি পাতিল দিয়ে শুরু করে দিত। একটা সিগারেট ধরালাম। খেতে খেতে ভাবছি… সিগারেটের সাথে আমার সম্পর্ক অনেক পুরোনো। সে ভার্সিটি লাইফে যখন উর্মি আমায় ছ্যাকা দিয়ে ব্যাকা করছিল। তখন থেকেই সিগারেট বাবুর সাথে আমার প্রথম সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারপর বিভিন্ন বিপদে সে আমার পাশে থেকেছে। এই যেমন পরিক্ষা পাশে ব্যর্থতা, চাকুরীতে ব্যর্থতা, দ্বিতীয় প্রেমে ব্যর্থতা ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর ‘অদ্রিতা’ মানে আমার বউ; ওর চুমুর সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় একবছর ধরে। ওর চুমুর একটা অসাধারণ শক্তি আছে। যেটার মাধ্যমে আমার মন অতিরিক্ত খারাপ থাকলেও ভালো করা যায়। সারা দিন কম করে হলেও পঞ্চাশ+ চুমু না খেলে, আমার আবার দিনটা ভালো যায় না। অপরদিকে সিগারেট ও কম বেশি ছয়-সাতটা না খেলে কেমন জানি খালি খালি লাগে। ভাবতে ভাবতে সিগারেটের তামাক পুড়ে ফিল্টার পর্যন্ত চলে আসলো। সাথে আমার পাঁচ মিনিট সময় শেষ হয়ে আসলো।
অদ্রিতাকে বললাম, ইয়ে মানে বলছিলাম কি অদ্রিতা, ব্যাপারটাকে ফিফটি ফিফটি করা যায় না? ফিফটি ফিফটি মানে? ফিফটি ফিফটি মানে হলো আমি সারাদিনে যে সিগারেট খেতাম তার অর্ধেক খাবো। আর তোমায় যে চুমু খেতাম, সেটাও না হয় আগের তুলনায় অর্ধেক খাবো। তবুও দয়া করে কোনোটাই একেবারে ছাড়তে বলো না। নাহ্..এসব ফিফটি ফিফটি আমি মানি না। আমার একদম সোজাসুজি কথা। হয় চুমু না হয় সিগারেট। দুইটার যেকোনো একটা আজ তোমার বেছে নিতেই হবে। কি বলবো বুঝতে পারছি না তখনো। আর সাত-পাঁচ না ভেবেই হঠাৎ করেই বলে ফেললাম:- তবে সিগারেট ই থাক!কথাটা শুনার পর বউ অগ্নিমূর্তি হয়ে গ্যালো! আশেপাশে আমায় মারার জন্য যন্ত্রপাতি খুঁজলো। তেমন ভালো কিছু না পেয়ে দৌড়ে রান্নাঘরে গেল। অবস্থা ভয়াবহ দেখে কোনোরকম দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম।
(২)সব মিলিয়ে প্রায় ৫ ঘন্টা ২৮ মিনিট যাবত বাইরে ঘুরোঘুরি করছি। ঘরে যেতে সাহস হচ্ছে না। এই অবধি সিগারেট শেষ করেছি ৬ টা। কিন্তু বউকে একটাও চুমু খাওয়া হলো না। বাসায় থাকলে এতোক্ষণে বিশ ক্রস করতো। ভীষণ খারাপ লাগছে, সিগারেট খাচ্ছি কিন্তু স্বাদ পাচ্ছি না। সিগারেট ও চুমু… দুটোকে দুইধরণের নেশা বলা যায়। একটা তামাকের অন্যটা ভালোবাসার। একটা অপবিত্রতার অন্যটা পবিত্রতার। একটায় ঠোঁট পুড়ে, হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যটায় ঠোঁটে প্রণয় লেগে, হৃদযন্ত্রের স্পন্দন ঘন হয়।
হঠাৎ মনে হল বাড়ি যাওয়া উচিত। পরে যা হবে দেখা যাবে। সেল্ফ ডিফেন্স হিসেবে একগাদা গোলাপ কিনলাম। সাথে কিনলাম বউয়ের পছন্দের চকলেট আইসক্রিম। বাসায় গিয়ে দরজায় নক করতেই বউ দরজা খুলল। তাকে অসম্ভব রকমের বিমর্ষ দেখাচ্ছে। গোলাপ আর চকলেট আইসক্রিমটা তার হাতে দিলাম। অন্যদিন হলে মুচকি হেসে আমায় জড়িয়ে ধরতো; চুমু খেতো। আজ তার কোনোটাই করলো না। নিস্পন্দিত অনুভুতিতে ফুল, চকলেট আইসক্রিম টেবিলে রেখে শুতে চলে গেল।
(৩)রাত দুটোর মতো বাজে। বউ ঘুমিয়ে গেছে। আমার তবুও ঘুম আসছে না। ঘুম না আসলে সাধারণত সিগারেট খাই। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুদ কারণে আজ সিগারেট খেতেও ইচ্ছে করছে না। চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। বউ যেহেতু ঘুমিয়ে গেছে একটা চেষ্টা করলে ক্ষতি কি? বউয়ের খুব কাছাকাছি গেলাম, যখনি চুমু খাবো বলে মুখটাকে বাঁকিয়েছি ঠিক তখনি বউ বলে উঠলো, বলি হচ্ছে কি? আমার কাছে এসেছো কেন? যাও তোমার সিগারেটের কাছে যাও! কথাটা বলেই সে আমাকে সরিয়ে দিল। তারপর শুয়া থেকে উঠে বেলকনিতে চলে গেল। এটা অদ্রিতার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক, তার যখন মন খারাপ হয় ঘন্টার পর ঘন্টা সে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে। অদ্রিতার পিছন পিছন আমিও গেলাম। গিয়ে দেখি সে কাঁদছে। তার হাতে ধরে বললাম কি হলো, কাঁদছো কেন? অদ্রিতা কিছু বলল না। হুট করেই আমায় জড়িয়ে ধরলো। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমি জানো না, সিগারেট খেলে মানুষের হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক জাতিয় খারাপ খারাপ রোগ হয়? তোমার কিছু হলে, আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো?
কথা শুনে বুঝলাম, অদ্রিতার সমস্যা আমার সিগারেট খাওয়া নিয়ে নয়, আমাকে নিয়ে। তার ভালোবাসা হারানোকে নিয়ে। ভাবলাম একদিন না একদিন তো সত্যিই মারা যাবো। সিগারেট খেয়ে হার্ট, মস্তিষ্ক নষ্ট করে দ্রুত মরে যাওয়ার চাইতে অদ্রিতাকে ভালোবেসে দু-একটা দিন বেশি বাঁচলে তো ক্ষতির কিছু নেই। সিগারেটের প্যাকেটটা পকেট থেকে বের করে ছুড়ে ফেরে দিলাম। অদ্রিতাকে বললাম, এই দ্যাখো সিগারেট ফেলে দিচ্ছি। আজ থেকে আর কখনোই সিগারেট খাবো না, এই তোমায় ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম। এবার কান্না থামাও। আর ইয়ে শুরু করো! অদ্রিতা মাথা তুলে মুচকি হেসে বলল, ইয়ে কি? সিগারেট না খেলে যেটা দেয়ার শর্ত ছিল! তারপর অদ্রিতা আমাকে।