আমার মতো অকর্মা

আমার মতো অকর্মা

আম্মাজান’কে বললাম, আমি তোমার ছোট ভাইর মেয়ে ফারিয়াকে বিয়া করবো। কিন্তু আম্মাজান রাজি হচ্ছে না। কারণ আমার মতো অকর্মার সাথে তার ভাইর মেয়েকে বিয়ে দিয়ে, তার ভাই এবং ফারিয়ার জীবন অতিষ্ঠ করতে চায় না। নিজের আপন ভাই বলে কথা। কিন্তু যে করেই হোক ফারিয়াকে আমার বিয়ে করতেই হবে। কারণ আমার আব্বাজান’কে কথা দিয়েছি আমি, তার শশুড়ের সম্পত্তির ভাগ আমি তাকে এনে দিবো।

আমার আব্বাজানের শশুড়ের মানে আমার নানা’র অনেক সম্পত্তি ছিলো। কিন্তু আমার সহজসরল আব্বাজান তার কিছুই পায়নি। সবকিছু থেকে সে বঞ্চিত। কারণ আমার আম্মাজান খুব দয়ালু মানুষ। তাই সে তার ভাগের সমস্ত সম্পত্তি তার ছোট ভাইর নামে করে দিয়েছে। এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলো না। তাই আব্বাজানের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার আম্মাজানের একমাত্র ছোট ভাইর একমাত্র মেয়ে ফারিয়াকে আমি বিয়ে করবো।

কিন্তু আমার আম্মাজান তো রাজি হচ্ছে না। দরকার নেই আম্মাজান’কে রাজি করানোর। যার মেয়ে তাকে রাজি করাতে পারলেই আমাকে আর পায় কে। একদিকে আমার আব্বাজানের হক সে পাবে, অন্যদিকে আমার মনে মনে ভালোবাসার মানুষটাকে আমি আপন করে পাবো। এটা ভাবলেই খুশিতে আমার ড্যান্স দিতে মন চাচ্ছে।

আম্মাজানের ছোট ভাই আমার মামা আবার হবু শশুড়, তাকে আমি এবং আব্বাজান মিলে আমাদের বাসায় দাওয়াত করলাম। মামা আবার দাওয়াত মিস করে না। যেখানে ভালোমন্দ খাবার আছে সেখানে সবার আগে মামা আছে। মামার ভুরি দেখলে মনে হয়, আমাদের গোয়াল ঘরের বিশাল মটকি এটা।

আম্মাজান মামা’কে হঠাৎ আমাদের বাসায় দেখে বেশ অবাক হলেন। এখন আম্মাজানের সামনে তো আর এই বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে না। তাই আম্মাজান’কে বললাম, “আম্মাজান, মামা’কে সাথে করে বাসায় আনার সময় আপনার বান্ধুবী তাসলিমা আন্টির সাথে দেখা হইছে। আপনাকে তাড়াতাড়ি এখনই যেতে বলছে।

আম্মাজান চোঁখ বড় বড় করে বললো, “হঠাৎ কেন ডাকলো, কেনো সমস্যা হইছে নাকি?”
“তা তো জানি না। তবে হাতে কিছু ঔষধের প্যাকেট দেখলাম। ঘরে তো তার আবার বুড়া বাপ আছে।”
“এদিকে আবার তোর ছোট মামা কতদিন পর আমাদের বাসায় আসলো। কোনদিকে যাবো কী করবো বুঝতেছি না।
“আম্মাজান আপনি চিন্তা করবেন না, আমি আর আব্বাজান মিলে আপনার ভাইকে সাইজ করছি। আপনি চলে যান।”

মিথ্যা বলেই আম্মাজান’কে তার চুম্বক এর কাছে পাঠিয়ে দিলাম। চুম্বক বললাম, কারণ ঐ তাসলিমা আন্টি আর আম্মাজান এক সাথে হলে, বাহিরে যদি সিডর শুরু হয়ে যায় তবুও তাদের হুশ ফিরবে না। এতটাই গভীর তাদের আড্ডা। এমনিতেই মেয়েরা একটু বাচাল টাইপের হয়।

আমি আম্মাজানে পাঠিয়ে দিয়ে রুমে এসে দেখি, আব্বাজান মামা’র ঘাড়ে হাত দিয়ে বন্ধর মতো আচরণ করছে এখন। আগে তো এই মামা’র নাম পর্যন্ত শুনলে তার গা জ্বলে যেতো। কারণ শুধু একটাই, ঐ সম্পত্তি।

আমি আর আব্বাজান মিলে মামা’কে মন মতো সাইজ করছি। মানে আদর আস্তিক করে খাওয়াচ্ছি। মামা তো আমাদের এমন সাইজ দেখে বেশ খুশি।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলে, আমি মামা’কে পান বানিয়ে দিচ্ছি। শত হলেও হবু শশুড় বলে কথা। আর এদিকে আব্বাজান তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ শুরু করে দিয়েছে। আব্বাজান বলছে,
“তোমাকে এখানে ডেকেছি একটা কথা বলার জন্য।”
“কী কথা, দুলাভাই?”
“তেমন কিছু না। আমার তো এই একটা মাত্র ছেলে, তাই ওকে ধুমধাম করে ভালো একটা পরিবার দেখে বিয়ে দিতে চাচ্ছি।”
“এটা তো খুশির সংবাদ। দিয়ে দিন বিয়ে।”

“হুম ছেলে যখন বড় হইছে, বিয়ে তো দিতেই হবে। অনেক জায়গা থেকে প্রস্তাব আসছে, কিন্তু আমার পছন্দ হচ্ছে না।”
“কেন দুলাভাই?”
“আসলে নিজেদের ভিতর ভালো সদায় থাকতে, বাহিরের দোকান থেকে কিনতে চাচ্ছি না।”
“মানে,,বুঝলাম না দুলাভাই।”
“মানে তোমার মেয়েটা আমার পছন্দ হয়েছে। আমার ইচ্ছা তেমার একমাত্র মেয়ের সাথে, আমার একমাত্র ছেলেটাকে বিয়ে দেবার।”
মামা এই কথা শুনে মনে হলো, তার পেটের খাবার এখনি বের করে দিয়ে চলে যাবেন। মামা মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বললো,
“কিন্তু দুলাভাই, আপনার ছেলের তো কোনো ভবিষ্যৎ নেই। সারাদিন শুধু আড্ডাবাজি করে বেরায়।”
এবার বাবা একটু রাগের সাথে বললেন,
“কে বললো, ওর ভবিষ্যৎ নেই? কী নেই আমার ছেলের বলো?”
“আছেটা কী বলেন দুলাভাই?”
এবার বাবা গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে বললেন,
“তোমাদের ঐযে উত্তর পাড়ায় জমি আছে, ঠিক ঐখানেই আমার ছেলের দশ বিঘা জমি আছে। এখন তুমি যদি রাজি না হও, তাহলে গতকাল মেম্বার বাড়ি থেকে যে প্রস্তাব আসছে ঐটাতে রাজি হয়ে যাবো।”
মামা’র চোঁখ এবার কপালে। মামা আমার দিকে তাঁকিয়ে আমাকে বললো,
“সত্যি নাকি বাবা?”

আমি একটু ভাব নিয়েই মথা দুলাতে দুলাতে মামা’কে বললাম,
“হ্যাঁ মামা সত্য। বায়না করা হয়ে গেছে। এখন শুধু রেজিস্ট্রি করা বাকি আছে। জমির যে মূল মালিক, তার সাথে রেজিস্ট্রি করার জন্য পাকা কথা চলছে।”

আব্বাজান ও আমার কথার সাথে সায় দিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, এখন শুধু রেজিস্ট্রি করা বাকি। এটা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। দুই একের ভিতর হয়ে যাবে।”

মামা এবার এক পায়ে রাজি হয়ে গেলেন। এদিকে আম্মাজান বাসায় এসে ইচ্ছা মতো রাগারাগি করছেন। আর মামা উঠে এসে তার পিঠ পেতে আমাকে ঠেকাচ্ছেন। অন্যদিকে আব্বাজান মোছের নিচে নিচে হেসে যাচ্ছে। মা’কে আব্বাজান আর মামা মিলেই সাইজ করলো। অবশেষে আমি ফারিয়াকে বিয়ে করলাম।

এখন মামা’র ঘাড়ে বসে বসে শুধু খাচ্ছি আর মামা’র মরার অপেক্ষায় আছি। এখন যদি মামা জানতেও পারে তার সম্পত্তির কথা বলেই তার মেয়েকে বিয়ে করি তবুও কিছু করার নেই। কারণ তার একটা মাত্রই মেয়ে এবং আমিও আমার বংশের নতুন প্রদীপ জ্বালানোর জন্য প্রসেসিং চালিয়ে যাচ্ছি।
সম্পত্তি (রম্য)

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত