ভালবাসার বন্ধন

ভালবাসার বন্ধন

আমার চকলেট দে? না, দিবো না। ঐদিন আমারটা যখন খপ করে নিয়ে গেছিলি। মনে আছে, শিম? আমি তো ছোট, মিমু। দে না চকলেট না, দিবো না এ্যাঁ, এ্যাঁ ঝগড়া হচ্ছে শিমুল আর মিমের মাঝে চকলেট নিয়ে। ওরা ২ ভাই বোন। শিমুল মিমকে মিমু আর মিম শিমুলকে শিম বলে ডাকে। শিমুলের বয়স ৪ আর মিমের ৫, কিন্তু ওদের ঝগড়া দেখলে মনে হয় না ওরা ১ বছরের বড় ছোট। এএ,তোরা থাম,,দাদাভাই আসলে আরো চকলেট দিবো তোদের।(নিলীমা) নিলীমা ওদের বড় বোন,এবার অনার্স কমপ্লিট করেছে।কিছুদিন পর তার বিয়ে। এটা শুনে ওরা শান্ত হয়। কিছুক্ষণ পর তাদের দাদাভাই বাড়ি চলে আসে দাদা ভাই এসে গেছো? (নিলীমা) হুম,কি হয়েছে বল? ওরা আবার ঝগড়া করছে চকলেটের জন্য,কিছু চকলেট নিয়ে আসো। (নিলীমা) আচ্ছা।

আলু ভাই পকেটে টাকা আছে তো, হিহি(একসাথে মিম আর শিমুল বলে উঠে) ওদের কথা শুনে নিলীমাও হেঁসে দেয়। দাদাভাই হলো ওদের পরিবারের বড় ছেলে, নাম তার আলভী। নিলীমা তাকে দাদাভাই বলে ডাকে আর শিমুল ও মিম আলভীকে আলু ভাই ডাকে, সেই জন্মের পর থেকেই। আলভীর বিয়ে হয়েছে ২ বছর হলো, তার বউয়ের নাম পরি। তারা ভালবেসে বিয়ে করেছে। শিমুল আর মিম নিলীমা ছাড়া কারো কথা শুনে না, রাত্রে দুজন নিলীমার সাথে ঘুমায়। দুজন- দুদিক থেকে নিলীমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে, আর নিলীমা ওদের ঘুমন্ত, নিষ্পাপ মুখটা দেখে অবাক হয়ে পড়ে। পরদিন সকালে নিলীমা ঘুম থেকে উঠে তার ভাবির কাজে একটু সাহায্য করতে যায়। হঠাৎ শিমুলের ঘুম ভেঙে যায়, চোখ খুলে দেখে মিম তার উপর পা তোলে ঘুমুচ্ছে। তাই সেও মিমের উপর পা তুলে শুয়ে থাকে। মিমের উপর পা তুলাতে মিমের ঘুম ভেঙে যায়।

ঐ আমার উপর পা তুললি কেন? (মিম) তুই আমার উপর তুলেছিস, তাই আমিও তুলেছি। (শিমুল) দুজনে আবার ঝগড়া শুরু করে দেয়। আলভী তখন অফিস যাচ্ছিল, এদের ঝগড়া শুনে এদের কাছে আছে। আলু ভাই কোথায় যাওয়া হচ্ছে? (মিম) আচ্ছা আমার সুন্দর একটা নাম থাকতে তোরা আমায় আলু ভাই ডাকিস কেন? (আলভী) তোমার নামটা যেন কী? (মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো শিমুল) কথাটি শুনে আলভী অবাক হয়ে যা, তোদের সব মনে থাকে, আমি তোদের ভাই আর আমার নামটা মনে নাই! (আলভী) ভুলে গেছি, হিহি। (মিম ও শিমুল একসাথে) আমার নাম আলভী,আলভী আহম্মেদ শা।

(আলভী) হইছে আর লাগবে না। (কথার মাঝে শিমুল বললো) তোমার নামের শেষে একটা ‘ ভ ‘ আছে তাই তোমায় আলভী ভাই ডাকি না। (মিম) এখানে ‘ ভ ‘ এর দোষটা কোথায়? (আলভী) ভ ‘ বলতে গেলে মনে হয় কোথায় ভোম করে শব্দ হবে, তাই ভয়ে ওটা বলি না। (শিমুল) এদের যুক্তি শুনে আলভী ভাবছে হাসবে নাকি কাঁদবে? আলু ভাই একটা কথা বলি? (শিমুল)আলভী জানে এরা ওকে আলু ভাই বলেই ডাকবে, তাই আর কিছু বলে না। বল। (আলভী) আজকে তোমায় খুশি খুশি লাগছে কেন? (শিমুল) কই না তো, আমি তো সব সময় খুশিই থাকি। (আলভী) তোমার বলতে হবে না, ভাবির কাছ থেকে জেনে নিবো। (মিম) কি জেনে নিবি? (আলভী) আজ তুমি এতো খুশি কেন? সেটাই। (মিম)তোদের ভাবি তোদের বলবে? (আলভী) না বলে যাবে কই মি.আলু হিহিহি। (শিমুল) এদের কাছে থাকলে মাথা গরম হয়ে যাবে, তাই আলভী অফিসের দিকে পা বাড়ায়। আর ভাবে ছোট্ট হলেও ওর ভাই বোন দুটো পাক্কা দুষ্ঠু।

মিম আর শিমুল ওদের ভাবিকে খুঁজে খুঁজে রান্না ঘরে চলে আসে, ভাবি তোমার সাথে একটু কথা ছিল? (মিম) বল কি বলবি। (পরি) বুবুর সামনে বলা যাবে না। (মিম) এটা শুনে নিলীমা হেসে দেয়। কেন রে? আমার সামনে বলা যাবে না কেন? (নিলীমা) সবার সামনে সব কথা বলা যায় না, হিহি।(মিম) এ বাবা, তোরা এত কিছু শিখে গেছিস? (অবাক হয়ে যায় নিলীমা) হুম। (শিমুল) যাও ভাবি ওদের কথাটা শুনে আসো, না হলে কাজ করতে দিবে না। (নিলীমা) পরি ওদেরকে নিয়ে তার ঘরে চলে যায়। পরি বিছানায় বসে আর ওরা দুজন দুপাশে। এবার বলো তোমরা কি বলবা? (পরি) আলু ভাইকে আজ খুশি খুশি লাগছিলো কেন? (শিমুল) পরি জানে যে ওরা আলভীকে আলু ভাই বলে ডাকে। আমি জানি না তো। (পরি) বুঝি বুঝি, হিহি (মিম) কি বুঝিসরে মিমু? (শিমুল) টিভিতে দেখিস না বিয়ের পর একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে, ভালবাসে। (মিম) কথাটা শুনে পরি কি করবে বুঝতে পারে না। সমস্যা কী, ভাই আমাদের ভালবাসে, ভাবিকেও ভালবাসবে।

(শিমুল) ঐ শিম এজন্যই মনে হয় ভাইকে খুশি খুশি লাগছিলো। (মিম) এটা শুনে পরি চুপ হয়ে যায়, হতে পারে। শিমুল) তোমরা বেশি পেকে গেছো। (পরি) হবে হয়তো, হিহি(মিম) মিম আর শিমুল চলে যাচ্ছিলো, এ তোরা দাড়া, (পরি) একটুপর ওদের হাতে দুটো চকলেট এনে দেয়। তাই তো বলি আমার চকলেট কোথায় গেলো? (শিমুল) মানে কি শিম? (মিম) ভাবি কাল আমার চকলেট চুরি করেছে, হিহি(শিমুল) এটা বলেই মিম আর শিমুল দৌড়ে পালায়, আর পরি বসে কিছুক্ষণ হেসে নেয়। তারপর চলে আসে রান্না ঘরে। ওরা সারাক্ষণ এক সাথেই থাকে, তাহলে ঝগড়া করে কেন? (পরি) ওদের ঝগড়া হয় চকলেট নিয়ে, তাছাড়া ওদের যখনি মন চায় তখনি ঝগড়া করে। তবে ওরা দুজন দুজনকে বড্ড ভালবাসে, তাই একটু পর পর মারামারি করে। (নিলীমা) ঐ আমার চকলেট দে শিম। (মিম) না,দিবো না মিমু। (শিমুল) ঐযে ভাবি চকলেট ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে। (নিলীমা) দুজনেই ওদের কথা ভেবে আনমনেই একটু হাসে।

আজ নিলীমার বিয়ে, বুবু বিয়ের পর তুমি কী আমাদের ছেড়ে চলে যাবা? (মন খারাপ করে বলে শিমুল) (নিলীমা কিছুই বলছে না) বুবু তুমি না থাকলে কাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো? বলো না? মিম) কে আমাদের চকলেট এনে দিবে বলো না? (শিমুল) শিমুল আর মিম কথা গুলো বলছে আর কাদঁছে। ওদের কান্না দেখে নিলীমাও কেঁদে দেয়। ওদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে, নারে, তোদের মত মিষ্টি দুটো ভাই বোন থাকতে আমি কোথাও যাবো না। (ওদের কপালে আলতো করে চুমু খায় নিলীমা) আড়াল থেকে এসব দেখে ওদের বাবা মাও কেঁদে দেয়। বিয়ের পুরোটা সময় মিম আর শিমুল নিলীমার পাশে ছিলো। আলভী পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সবার সামনে কাঁদতে পারে না, নিরবে চুপি চুপি কেঁদে নেয়, সবার আড়ালে। নিলীমার সাথে যার বিয়ে তার নাম জুয়েল, বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই। পারিবারিক ভাবে হলেও বিয়ের আগে ওরা দুজন-দুজনকে কিছুটা চিনে নিয়েছে। বিয়েটা ভালো ভাবেই শেষ হলো। চিরচেনা পরিবেশ ছেড়ে চলে যাবে নিলীমা। আলভী আজ নিলীমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ছেলেটা ছোট থেকেই নিজের কষ্টটা আড়াল করে রাখতো, কিন্তু আজ পারলো না। পারবে কি রে? আজ যে তার ছোট্ট বোনটা চলে যাচ্ছে অন্যের ঘরে। যখন গাড়িতে উঠতে যাবে তখন আবার সমস্যা দেখা দিলো। শিমুল আর মিম খুব কাঁদছে, ওদের বুবুকে নিয়ে যেতে যেবে না।

ওরা তো ছোট, ওরা নিলীমার সাথে আমাদের ওখানে চলুক। (জুয়েল) কিন্তু বাবা? (নিলীমার বাবা) কোনো কিন্তু নয় বাবা, ওদের আমরা নিয়ে যাচ্ছি। (জুয়েল) তারপর শিমুল আর মিমকে নিলীমার পাশে গাড়িতে বসানো হল, আর জুয়েল সামনে ড্রাইভারের সাথে বসে আছে। শিমুল আর মিম এখনো কাঁদছে। কষ্টে নিলীমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। একদিনে বাবা – মা,ভাই – বোন কে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট। অন্যদিকে শিমুল আর মিমের কান্না, ওদের কান্না যে নিলীমা সহ্য করতে পারে না। কাঁদতে কাঁদতে শিমুল আর মিম গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ে, যখন জুয়েলদের বাড়িতে পৌঁছালো তখনো তারা ঘুমুচ্ছে। রাত ১০টা, নিলীমা জুয়েলের ঘরে মানে বাসর ঘরে বসে আছে। শিমুল আর মিমকে সেই আসার পর থেকে দেখেনি। ওরা ঘুমুচ্ছিলো তাই ওদের অন্য ঘরে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিলো, তারপর আর কিছু জানে না নিলীমা। ওরা খেয়েছে কিনা সেটাও জানে না, ওরা তো নিলীমাকে ছাড়া খাবে না। হঠাৎ করেই দড়জায় হালকা আওয়াজ হল, নিলীম। নড়েচড়ে বসে।

জুয়েল এসেছে দেখে, নিলীমা জুয়েলকে সালাম করতে বিছানা থেকে নামে। হয়েছে,আমাকে সালাম করতে হবে না। (জুয়েল) নিলীমা তবুও জুয়েলকে সালাম করে বিছানায় গিয়ে বসে। মিম আর শিমুল কোথায়? (নিলীমা) ওদের জন্য চিন্তা করো না, ওদেরকে একটু পর এখানে নিয়ে আসা হবে। (জুয়েল) নিলীমা কিছু বলে না, চুপ করে থাকে। আমরা সারাজীবনই একসাথে থাকবো, ওরা দুজন কয়েকটা দিন তোমার সাথে থাকুক। (জুয়েল) ওরা খেয়েছে? (নিলীমা) হুম, খুব কান্না করে তোমার জন্য। (জুয়েল) নিলীমা আবার চুপ করে থাকে, জুয়েল একটুপর গিয়ে শিমুল আর মিমকে নিয়ে আসে। এই যে ওদের নিয়ে আসলাম, এবার ওদেরকে নিয়ে ঘুমাও। রাত অনেক হয়েছে। (জুয়েল) কথাটি বলেই জুয়েল চলে যায়। শিমুল আর মিমকে নিয়ে নিলীমা শুয়ে পড়ে। আজ নিলীমা অনেক খুশি, কারণ সে জুয়েল এর মত কাউকে জীবনে পেয়েছে। মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে নেয় নিলীমা।

শিমুল আর মিম ওদের বুবুকে দুদিক থেকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। ওরা ঘুমিয়ে পড়লে নিলীমা ওদের কপালে আলতো করে চুমু খায়। আলভীর কথা ভাবতেই নিলীমার চোখে পানি চলে আসে, তার দাদাভাই যে আজ বড্ড কাঁদবে। আসার পর আলভীর সাথে একবার কথা হয়েছিলো ফোনে। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে, তাই আর ফোন দেয় না তার দাদাভাইকে। পরদিন থেকে শুরু হয় বিয়ে বাড়ির ব্যস্ততা। সব কিছু নিলীমাকে কেন্দ্র করে। মিম আর শিমুল সারাটা সময় ওদের বুবুর সাথে থাকে, আলভী একটু পর পর ফোন দিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেয়। এভাবেই কেটে যায় দুটো দিন। আজ বৌ-ভাত, সকাল ১১টার দিকে নিলীমার বাবা- মা, ভাই- ভাবি ও অন্যান্য আত্নীয় স্বজন এসে পরে। বাবা, মা, ভাইকে দেখে নিলীমা অনেক খুশি। সারাটা দিন কেটে যায় হাসি, আনন্দের মাঝে। আজ ওরা চলে যাবে, সাথে মিম আর শিমুলকে নিয়ে যাবে। ওরা যাবে না বলে কান্না করছিলো, ওদেরকে বলে যে ২দিন পর আবার ওদেরকে এখানে নিয়ে আসবে। এতে ওরা শান্ত হয়। বিকাল বেলা হঠাৎ করে শিমুল অসুস্থ হয়ে যায়। তাকে জুয়েলদের বাড়ির কাছের একটা হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শিমুলকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ৩০ মিনিট পর ডাক্তার বের হয়, আমার ভাইয়ের কি হয়েছে ডাক্তার? (আলভী) ডাক্তার কিছু বলছে না, চুপ করে আছে। বলুন আমার ছেলের কি হয়েছে? (শিমুলের বাবা) কিভাবে যে বলি? (ডাক্তার) দেখছেন সবাই ভয় পাচ্ছে,তবুও বলছেন না কেন? বলুন কি হলো আমার ভাইয়ের? (নিলীমা) শিমুলের ক্যান্সার হয়েছে। (ডাক্তার) কথাটা শুনে শিমুলের বাবা-মা সেখানেই বসে পড়ে, সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। কি বলছেন এসব? (জুয়েল) যা সত্যি সেটা বলতেই হবে। আর দেখুন আপনাদের শিমুলের ক্যান্সার ধরা পড়েছে অনেক দেরিতে, বলতে চাচ্ছি একেবারে শেষ পর্যায়। আমাদের আর কিছু করার নেই। (ডাক্তার) কি বলছেন এসব আপনি? (কাঁদতে কাঁদতে নিলীমা বললো) হুম, আপনাদের শিমুল হয়তো আর ১ মাসের মতো বাঁচবে বা তার কিছু দিন বেশি। (ডাক্তার) এরপর ডাক্তার চলে যায়।

নিলীমা মিমকে জড়িয়ে ধরে বসে বসে কাঁদছে, বুবু কাঁদছো কেন? ভাইটার কি হয়েছে? (মিম) (নিলীমা চুপ) বল না বুবু, ভাইটার কি হয়েছে? (কথাটি বলতে গিয়ে মিম কেঁদে দিছে) কিছু হয়নি আমার মিষ্টি ভাইটার, দেখবি একটুপর আবার তোর সাথে ঝগড়া করবে। (নিলীমা) তাহলে তুমি কাঁদছো কেন? (মিম) এমনিরে। (কষ্টে নিলীমার বুক ফেঁটে যাচ্ছে,কিছু বলতে পারছে না) কিছুক্ষণ পর ওরা শিমুলকে সঙ্গে করে জুয়েলদের বাড়িতে চলে আসে। শিমুলের ক্যান্সার, এটা শুনে সবাই নিঃস্তব্ধ হয়ে গেছে। বিয়ে বাড়ির আনন্দটা নিমিষেই মিলিয়ে গেছে। মা একটা কথা ছিলো? (নিলীমা তার শাশুড়িকে বললো) বলো মা। (নিলীমার শাশুড়ি) মা আসলে, (নিলীমা) কি বলবে বলো, আর আজ থেকে আমিও তোমার মা। নিঃসংকোচে বলো। (নিলীমার শাশুড়ি) আমি বলছিলাম ওদের সাথে বাড়ি যেতে, ভাইটা তো আর কিছুদিন থাকবে। ভাইটার সাথে ওর বাকিটা সময় কাটাতে। (নিলীমা কাঁদছে আর বলছে) আচ্ছা মা যাও। (নিলীমার শাশুড়ি) নিলীমা তার শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। কাঁদিস না মা, তুই কাঁদলে ওদেরকে সামলাবে কে? নিলীমার শাশুড়ি) তারপর নিলীমা তার শশুড় – শাশুড়িকে সলাম করে বের হয়।

জুয়েলকে দেখে বারান্দায় চুপটি করে বসে আছে, নিজের খেয়াল রেখো। (নিলীমা) তুমি কোথাও যাচ্ছো? (জুয়েল) আমি ওদের সাথে যাবো, কিছুদিন ভাইটার সাথে থাকবো। (নিলীমা) জুয়েল উঠে এসে নিলীমাকে জড়িয়ে ধরে, আচ্ছা যাও, আর নিজের খেয়াল রেখো। (জুয়েল) তারপর ওরা গাড়িতে উঠে। নিলীমার বাবা চাচ্ছিলো না নিলীমা উনাদের সাথে যাক, পরে সবার কথায় আর কিছু বলে নি। নিলীমারা বাড়ি চলে আসে, এসেই নিলীমা জুয়েলকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। নাহলে যে জুয়েল চিন্তা করবে। রাত ১১ টা, আলভী নিজের ঘরে বসে চুপিচুপি কাঁদছে। একটু পর পরি আসে ঘরে। বাবা মা ঘুমিয়েছে? (আলভী) বাবা মাকে জোড় করে শুইয়ে দিয়ে আসলাম। (পরি) আর ওরা? (আলভী) ওরা নিলীমার সাথেই শুয়ে পড়েছে। পরি) তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আলভী) তুমি ঘুমাবে না? (পরি) ঘুম আসবে না চোখে। (আলভী) আলভীর চোখে পানি দেখে পরি বুঝে যায় আলভী এতক্ষণ কাঁদছিলো, আর কেনই বা কাঁদবে না? তুমি কাঁদলে তো বাবা, মা,নিলীমা দুর্বল হয়ে পড়বে। (পরি) কি করবো বলো তো? এখনো নিজেকে ভালো করে বুঝতে পারেনি ভাইটা, তার আগেই, (হুহু করে কেঁদে উঠে আলভী) পরি চুপ করে আছে, আজ শান্তনা দেওয়ার কিছু নেই।

সবার কথা ভেবেই তো এভাবে চুপিচুপি কাঁদি। (আলভী) রাত অনেক হয়েছে, এবার শুয়ে পড়ো কাল থেকে তো ছোট্ট দুটো ভাই বোনের জন্য চকলেট আনত হবে, ওদের আলু ভাই হতে হবে। (কথাটি বলতে গিয়ে পরি কেঁদে দেয়) আলভী পরিকে জড়িয়ে ধরে, দুজনেই কাঁদছে। পরদিন থেকে শুরু হয় নতুন একটা সকাল। কষ্ট গুলো মনের মাঝে রেখে সবাই শিমুল আর মিমের সামনে হাসি খুশি থাকে। ওদেরকে যে কষ্টটা বুঝতে দেওয়া যাবে না। শিমুল আর মিম প্রতিদিনের মতই চকলেট নিয়ে ঝগড়া করে, রাত হলে তাদের আলু ভাই তাদের জন্য চকলেট নিয়ে আসে। ওরা যখন ঝগড়া করে, দূর থেকে ওদের দেখে কেঁদে দেয় ওদের বাবা মা। ওরা নিলীমার সাথেই থাকে, তাই ওরা ঘুমুলে ওদের কপালে চুমু খেয়ে চুপি চুপি কাঁদে নিলীমা। আলভী রাতের নিরবতায় চুপি চুপি কাঁদে, তাকে শান্তনা দিতে গিয়ে পরিও কাঁদে। আজ তো শান্তনা দিলেও কিছু হবে না। হাসির আড়ালে কষ্টটাকে লুখিয়ে রেখে কেটে যায় দেড় মাস।

হঠাৎ করে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে শিমুল। ওরা বুঝে যায় সময় শেষ প্রান্তে, সেদিনের মতো আজও কাঁদা ছাড়া কিছু করার নেই। শিমুলকে নেওয়া হয় হাসপাতালে, ৪ঘন্টা ICU তে থাকার পর রঙিন পৃথিবী থেকে শিমুল চলে যায় না ফেরার দেশে। শিমুলকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়, তবে এ্যাম্বুলেন্স এ করে। শিমুলের মৃতদেহটা দেখে শিমুলের মা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায়, শিমুলের বাবা আজ কোনো কথা বলছে না। পাথর হয়ে গেছে। শিমুল উঠছে না বলে মিম শিমুলের কাছে ছুটে যায়। এ শিম উঠ না, ঝগড়া করবি না আমার সাথে। আজ থেকে আমার সব চকলেট তোর, উঠ না শিম। (কাঁদছে আর বলছে মিম) ছোট্ট হলেও এতটুকু বুঝতে পেরেছে তার ভাইটা আর কখনো উঠবে না। মিমকে শিমুলের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায় নিলীমা। সন্ধ্যায় শিমুলকে শুইয়ে দিয়ে আসা হয় বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়ের নিচে। যখন শিমুলকে কবর দেওয়া হচ্ছিলো, তখন মিম কাঁদছিলো আর চিৎকার করে বলছিলো, “ভাইটাকে বাশঁঝাড়ের নিচে শুইয়ে দিচ্ছো কেন? ও যে ভয় পাবে?

কাঁদতে কাঁদতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে মিম। আজ বাড়িতে কোনো হৈঁচৈ নেই, নেই কোনো আলো। বাড়িটা একে বারে নিরব হয়ে গেছে। সবাই আজ কাঁদছে, জানালা দিয়ে তাকিয়ে শিমুলের কবরটা দেখছে। আর চোখের জল ফেলছে। রাত ১১টা, নিলীমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে মিম। বুবু, ভাইটাতো অন্ধকারে বাশঁঝাড়ের ওখানে ভয় পাবে। শিম তো ভীতু জানো না, চিৎকার করে কাঁদবে তো। শিমকে এখানে নিয়ে আসো না, নিয়ে আসো না বুবু। আর কখনো চকলেট নিয়ে ওর সাথে ঝগড়া করবো না, আজ থেকে আমার সব চকলেট ওর। বুবু শিমকে নিয়ে আসো না। (কাঁদছে আর বলছে মিম) মিমের চোখ দিয়ে এখন আর পানি পড়ছে না, কাঁদতে কাঁদতে হয়তো চোখের জল শেষ হয়ে গেছে। নিলীমা চুপটি করে আছে, মনে আছে বিশাল কষ্ট। কী বলবে মিমকে? কি বলে শান্তনা দিবে মিমকে? শান্তনা দেওয়ার মতো কিছু নেই যে আজ।

একটু পর মিমও চুপ হয়ে যায়। বুঝতে পারে, তার ভাইটা তার সাথে আর কখনো চকলেট নিয়ে ঝগড়া করবে না। শরীরে পা তুলে ঘুম ভাঙাবে না। আর কখনো তাকে মিমু বলে ডাকবে না। কখনো তার চকলেট নিয়ে নিবে না।চকলেট না দিলে আর কখনো বলবে নাঃ ” আমি তো ছোট, মিমু। দে না চকলেট আজ কেঁটে গেছে বিশটি বছর। এই বিশ বছরে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। আলভী বাবা আর পরি মা হয়েছে। নিলীমার কোল জুড়েও এসেছে চাঁদের ঠুকরো।

ওদের বাবা -মা ৩ বছর আগেই চলে গেছে শিমুলের কাছে। কিছুদিন পর মিমের বিয়ে। বিশ বছরে শুধু একটা জিনিস পাল্টাইনি। আজও প্রতিবছর ওরা কাঁদে শিমুলকে মনে করে। ছোট্ট বেলার অনেক কিছুই মিম ভুলে গেছে। ভুলতে পারেনি সেই হাসি খুশি দিনগুলো, কখনো ভুলতেও পারবে না। সেদিনের স্মৃতি গুলো মনের গহীনে বন্দী করে রেখেছে। আজ চকলেট দেখলেই মিমের মনে পড়ে বিশ বছর আগের সেই সময় গুলো। আজও মিমের কানে বাজে একটি কথাঃ ” আমি তো ছোট, মিমু। দে না চকলেট

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত