–এই উঠ। আর কত ঘুমাবা..??
 –আর একটু ঘুমাতে দাও তো।
 –না একদমই না। উঠ বলছি।
 –আচ্ছা তুমি যাও আমি উঠছি।
 –না এখনই উঠবা তুমি। উঠ বলছি।
নাহ সকাল সকাল বউ এর জ্বালাতনে শান্তিমত একটু ঘুমাতেও পারব না। কেন যে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম!! ব্যাচেলর লাইফটাই ভালো ছিল। অন্তত সকালে শান্তিমত একটু ঘুমাতে তো পারতাম।
–এই তুমি এখনও উঠ নাই!!
 –এই যে উঠে পড়েছি।
বউ এর কথামত উঠে বসলাম। বউ আমার কাছে এসে বলল–
–দেড়িতে অফিসে গেলে তোমার চাকরিটাই যাবে।
বউয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম –
–এইবার তুমি কোথায় যাবা শুনি!!
 –হাত ছাড়ো।
 –না ছাড়বো না।
 –চেঁচাবো কিন্তু।
 –চেঁচাও তাতে আমার কি!!
 –আম্মুউউউউউউউউউউ!!
সাথে সাথে বউয়ের মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।
–এই কি করছ কি তুমি..??
 –হাত ছাড়ো নয়ত আম্মুকে আবার ডাকব।
 –সকাল সকাল এমন ইমোশনাল ব্লাকমেইল!!
 –দিলাম ডাক।
 –এই না না থাক। আমি হাত ছেড়ে দিচ্ছি।
বউয়ের হাত ছেড়ে দিলাম। নয়ত আম্মুকে ডাকবে। আর আম্মুকে ডাকলে আমি শেষ।
–বৌ মা কি হয়েছে..??
 –না আম্মু কিছু হয় নি।
বউয়ের দিকে একটু বিরক্তি নিয়ে তাকালাম। বউ সেটা বুঝতে পেরে বলল-
–এভাবে না তাকিয়ে উঠে রেডি হও। অফিসে যাবা।
আমি আসিফ। একটা ব্যাংকে চাকরি করি । আর উনি হচ্ছেন নিলিমা। আমার স্ত্রী। বাবা মায়ের পছন্দমতই বিয়ে করেছিলাম। আজকে দুই বছর হয়েছে আমাদের বিয়ের। প্রথম প্রথম তো নিলিমা আমার সাথে কথাই বলত না। কাছেও ঘেষতে দিত না। কিন্তু একটা সময় যখন বুঝতে পারল বর্তমানে আমি ছাড়া তাকে ভালোবাসার মত আর কেউই নেই তখন থেকেই আমাকে আপন ভাবতে শুরু করেছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই খুব ভালোবেসে ফেলেছে আমায়।
দুপুরে অফিসে কলিগের সাথে কথা বলছিলাম। হঠাতই নিলিমা ফোন দিল।
–কি করছ..??
 –এইতো একটা কলিগের সাথে কথা বলছি।
 –দুপুরের খাবার খেয়েছ..??
 –না একটু পরে খাব। তুমি খেয়েছ..??
 –হ্যাঁ আমি খেয়েছি।
 –আচ্ছা এখন একটু ঘুমিয়ে থাকো।
 –এক মিনিট। তুমি তোমার কোন কলিগের সাথে কথা বলছ..??
 –ওই যে মেয়ে কলিগটা।
 –মেয়ে!!
 –হ্যাঁ।
 –মেয়ে কলিগের সাথে কথা বলছ অথচ খাবার খাচ্ছ না!!
 –এইতো এখনই খাব।
 –যা ইচ্ছা কর।
 –রাগ করছ কেন পাখি!! তার দুইটা বাচ্চাও আছে।
 –বিবাহিত..??
 –আরে দুইটা বাচ্চা আছে।
 –আচ্ছা তুমি খেয়ে নিও দ্রুত। আমি ঘুমিয়ে যাই।
 –হু খালি সন্দেহ কর।
 –কচু।
মেয়েটা খুব ভালোবাসে আমাকে। তাই আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা করে। আর মেয়েদের সাথে কথা বললে তো হয়েছেই!! আমি মেয়েদের সাথে কথা বললে উনার এলার্জি উঠে যায়।
–নিলিমা
 –কি..??
 –আজকে রাতে আমাকে খায়িয়ে দিবা..??
 –কেন..??
 –এমনি।
 –আচ্ছা দিব।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় ঘুমাতে গেলাম। নিলিমার একটা অভ্যাস প্রতিদিন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে। আমার বুকে মাথা না রাখলে তার ঘুমই আসে না।
–শুনছো!!
 –বল।
 –প্রতিদিন তো আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাও। আজকে আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাই..??
 –চুপ ফাজিল।
 –ফাজলামোর কি দেখলা এখানে..??
 –জানি না। ঘুমাও তো।
 –না ঘুমাব না।
 –তো জেগে থাকো। আমি ঘুমাই।
মুচকি মুচকি হাসলাম। নিলিমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কখন যে নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।
পরেরদিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। সারাদিন বাসাতেই ছিলাম। একটা দিন পেয়েছি বউকে সময় দেয়ার জন্য।
–চল না ঘুরে আসি অজানাতে!!
 –বাসা থাকতে অজানায় যাওয়া লাগবে না এখন।
 –আচ্ছা চল কোথাও ঘুরে আসি।
 –কোথায় যাবা..??
 –চল বাইরে থেকে ফুচকা খেয়ে আসি।
 –ফুচকা!!
 –হ্যাঁ ফুচকা।
 –আচ্ছা তুমি দশ মিনিট অপেক্ষা কর। আমি রেডি হয়ে আসছি।
নিলিমা ফুচকা খেতে খুব পছন্দ করে। দুইবেলা ভাত না খেয়ে থাকতে পারবে কিন্তু ফুচকা না খেয়ে থাকতে পারবে না।
–চল চল আমি রেডি।
 –হ্যাঁ চল।
ফুচকার দোকান বাসা থেকে মিনিট দশেকের রাস্তা। বাসায় থাকলে প্রায় প্রতিদিনই ফুচকা খাওয়া হয়। হয়ত দোকানে গিয়ে খাই নয়ত বাসায় এনে খাই। সাথে অবশ্যই নিলিমা থাকবে।
নিলিমাকে ফোন দিচ্ছি। কিন্তু ফোন ধরছে না। হয়ত ঘুমাচ্ছে। দুপুরবেলা নিলিমার ঘুমানোর অভ্যাস অনেক আগে থেকেই। না ঘুমালে ওর মাথায় সমস্যা হয়।
 কিছুক্ষণ পর নিলিমাই ফোন দিল।
–হ্যাঁ নিলিমা
 –স্যরি ঘুমিয়ে ছিলাম।
 –হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি।
 –কিছু বলবে..??
 –আজকে একটু আগে আগে চলে আসব।
 –কখন..??
 –এইতো ৪:০০ টার দিকে।
 –আচ্ছা ঠিকাছে।
 –তুমি খেয়েছ..??
 –হ্যাঁ খেয়ে ঘুমিয়েছি। তুমি খেয়েছ..??
 –মাত্রই খেলাম।
 –আচ্ছা তাহলে বাসায় আসো।
 –আচ্ছা।
অফিসে তেমন একটা কাজ নেই আজকে। তাই একটু আগে আগেই বের হয়ে যাব। গিয়ে একটু বউকে সময় দেই।
বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ভিজতে ইচ্ছে করছে খুব।
–নিলিমা চল ছাদে যাই।
 –এই বৃষ্টির মধ্যে!!
 –হ্যাঁ চল।
 –ঠান্ডা লাগবে তো।
 –লাগুক চল তো।
 –আম্মু বকা দিবে।
 –আম্মু জানবে না। চল এইবার।
 –উফফফ যখন তখন উনার কি সব ইচ্ছে যে হয় বুঝি না!!
বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ছাদের মাঝখানে গিয়ে দুজন দাঁড়ালাম। সাথে সাথেই ভিজে গেলাম।
–এই শুনো!!
 –হু বলো।
 –মুভিতে দেখ না,বৃষ্টিতে ভিজবার সময় নায়করা কিভাবে নায়িকাদের কোলে তুলে হাটে। খুব রোমান্টিক লাগে তখন।
নিলিমা কথাটা বলে আমার দিকে মাত্র তাকিয়েছে। সাথে সাথে আমি নিলিমাকে কোলে তুলে নিলাম।
–এই কি করছ তুমি!!
 –একটু রোমান্টিক মুহূর্ত অনুভব করছি।
নিলিমা আর কিছু বলল না। আমার গলায় হাত দিয়ে আমার গালে একটা চুমু দিল। তারপর কাঁধে মাথা রাখল।
কিছুকিছু ভালো লাগার মুহূর্ত আছে যা কখনও কারো সাথে বলা যায় না। নিজেকেই অনুভব করে নিতে হয়। অনুভূতিগুলোকে হৃদয় দিয়ে বুঝে নিতে হয়। কারণ ভালোবাসা হচ্ছে এমন একটা বস্তু যেইটা আগলে রাখলে সারাজীবন আপনার সাথেই থাকবে। কিন্তু অবহেলা করলে,জীবনেও আর আপনার সামনে আসবে না।
 
  
 Loading...
Loading...













