শ্যামলাবতী একটা মেয়েকে বিয়ে করছি তার নাম ছিলো জান্নাত।বউকে দেখলে মায়া লাগে বিশেষ করে চোখের মায়া খুব বেশি লাগে। বিয়ের সাতদিন পরে শশুর বাড়িতে বেড়াতে যাই।সেখানে দুইদিন থাকার পরে আবার নিজের বাড়িতে আসি।বাড়িতে আসলে জান্নাত আমাকে নিজের হাতে লেখা একটা ডায়েরী পড়তে দেয়।জান্নাত নিজের জীবনের সব দুঃখ কষ্টের কথা সে ডায়েরী’তে লিখে রাখছে।লিখে রাখছে ভবিষ্যৎ যে ছেলেটার সাথে তার বিয়ে হবে তার সাথে কেমন করে সংসার করবে। কেমন করে সংসারটা গুছিয়ে রাখবে ইত্যাদি সবকিছু গুছিয়ে লিখে রাখছে সে ডায়েরী’তে।
ডায়েরী’টা তখন না পড়ে অালমারি’তে রেখে দিয়। পাঁচ’মাস পরে অালমারি’তে নতুন শার্ট নিতে গিয়ে হঠাৎ ডায়েরী’টা দেখি।হাতে নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠা পড়তে নজর গেলো জান্নাতের জন্ম তারিখ এর দিকে।আজ রাত ১২টার পরে জান্নাতের জন্মদিন।ডায়েরী না পড়ে অপেক্ষা অাছি কখন ১২টা বাজবে কখন জান্নাতকে শুভেচ্ছা জানাবো এ নিয়ে অপেক্ষা করতেছি।রাতের খবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে।আমি না ঘুমিয়ে শুধু ১২টার অপেক্ষা আছি।১২টা যখন বাজে তখন জানালা খুলে দিয়। জানালা খুলতে না খু্লতে জান্নাতের মুখে চাঁদের আলো পড়ে।ইশরে কি সুন্দর লাগতেছে বউটাকে তার উপরে চাঁদের অালো মুখ খানা ঝলমল করতেছে জান্নাতের।
আস্তে আস্তে কানের পাশে গিয়ে আমি বলি-
_হ্যাপি বার্থডে টু ইউ জান্নাত।
>এভাবে আমি তিনবার বলার পরে জান্নাত ঘুম থেকে উঠে বলে-
_আপনি কিভাবে জানেন আজ আমার জন্মদিন?
_তোমার ভালোবাসার ডায়েরী’তে লেখা ছিলো।
_ও আচ্ছা,ধন্যবাদ আপনাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
_তোমার এ জন্মদিনে কি চাও আমার কাছ থেকে।
_কিছুই না,শুধু আপনি আমার হাত ধরে মৃত্যর অাগ পর্যন্ত থাকলে হবে।চলুন ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ি এ দিনে।
>বউটার কথা শুনে আমি পুরাই হাবলু হয়ে গেছি।জান্নাত আমাকে চুপচাপ দেখে বলে-
_কি ব্যাপার কি ভাবছেন?
__না, কিছুই না।
__তাহলে চলুন নফল নামাজ পড়ে নিয়, আমাদের এ সুখের সংসারে কোনোদিন যেনো দুঃখ না আসে।
__হ্যাঁ চলো।
নফল নামাজ আদায় করে ঘুম গেলাম।
ফজরবেলায় আবার নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাবো তখন জান্নাত বাজারে করার জন্য লম্বা একটা লিস্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে-
_যান এগুলো কিনে নিয়ে আসেন বাজার থেকে।
_কেন?এতো জিনিস দিয়ে কি করবে।তাছাড়া আজকে পরিবারের সবাই বাহিরে খাবো নাচবো
গাইবা, বন্ধুরা সবাই মিলে।আজকে তোমার জন্মদিন বলে কথা।
_জানি, তবে এগুলো কিছুই করতে হবে না।তুমি বাজার থেকে এগুলো কিনে নিয়ে আসো আমি নিজের হাতে রান্না করে আজকে আমার মেহমানদের’কে খাওয়াবো। আমার জন্মদিনের উদ্দেশ্য।
>বউটার কথা শুনে সত্যি খুব মায়া লাগছে খুব ইচ্ছা করছিলো জড়িয়ে ধরতে।জড়িয়ে ধরে বলার খুব ইচ্ছা ছিলো-
_তোমাকে বিয়ে করে আমি খুব খুশি। তুমি আমার ঘরের এক টুকরা জান্নাত।তবে জান্নাতকে কিছুই বলি নাই। বাজারে গিয়ে সব জিনিস কিনে তাড়াতাড়ি বাড়িত ফিরে আসলাম।
জান্নাত নিজের হাতে রান্না করে সব কিছু রেডি করে রাখছে।দুপুর ১২টা যখন বাজে তখন আমি জান্নাতকে বলি-
_কোথায় তোমার মেহমান?
_তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে,কিছুক্ষণ পরে আসবে।
_কে দাওয়াত দিয়েছে।
_আম্মা দিয়েছে।
_কাকে দাওয়াত দিয়েছে?
_আহারে এত কথা বলো কেন।দুপুর ২টা বাজলে দেখবে।
দুপুর যখন ২টাবাজে বাড়ির উঠান থেকে দেখতেছি পাশের গ্রামের এতিমখানার ১৫ জন ছেলে পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে মাথা টুপি দিয়ে আমাদের বাড়িতে আসতেছে।বুঝতে আর দেরি হলো না আমার জান্নাতের মেহমান কারা।
জান্নাত নিজের হাতে সবার প্লেটে ভাত তুলে দেয়। বাচ্চা গুলো বিসমিল্লাহ বলে কি সুন্দর করে লোকমা করে করে খাচ্ছে।পাশ থেকে মা বলে-
__বউমা ঐ হুজুর’কে ভাত দাও।
>বাচ্চাটা যখন হুজুর ডাকটা শুনে কি সুন্দর একটা মুচকি হাসি দিয়েছে যা কোটি টাকা সমান। সবাই খেয়ে এরপর দুইহাত উপর করে দোয়া করে আবার এতিমখানা চলে যায়।
জান্নাত সবকিছু শেষে আমাকে বলে-
_অালহামদুলিল্লাহ সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে আর আমার মনের আশাও পূরণ হয়েছে। যা শুধু তোমার জন্য সফল হয়েছে।তোমাকে এত্তগুলি ভালোবাসা আর ধন্যবাদ দিলাম সব নিয়ে নাও।
__ধন্যবাদ আমাকে কেন?আমিতো তোমাকে দিবো এমন একটা পাটি দেওয়ার জন্য। যা হচ্ছে জীবনের স্মরণীয় পাটি প্রতিবছর মনে থাকবে।
__ধন্যবাদ লাগবে না, তুমি শুধু আমার পাশে থাকলে হবে।কি থাকবে না?
__হ্যাঁ অব্যশই।তোমাকে ছাড়াতো আমি নিশ্বাস নিতেও এখন থেকে কষ্ট হবে।
__আচ্ছা ঠিক আছে এখন খেতে এসো।আজ আমার জন্মদিন তুমি নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিবে।কি দিবে না?
__হ্যাঁ অব্যশই খাইয়ে দিবো।
__তাহলে চলো।
এ গল্পটা কাল্পনিক।তবে এমন করে হয়তো কারো জীবনে গড়ছে বলে মনে হয় না হয়ত ভিন্নরকম ভাবে গড়তে পরে।কিন্তু জান্নাতের মতো আমি অনেক মেয়েকে দেখছি যারা বিশেষ কোনো দিনে নিজের হাতে রান্না করে এতিম বাচ্চাদের দাওয়াত করে খাওয়াতে।
এমন মেয়ে গুলোকে আমার অন্তরের গভীর থেকে সবসময় ভালোবাসা ও সালাম রইলো।