মেঘের পরে রোদ

মেঘের পরে রোদ

ছেলেটা আমার বড় চাচা’র ছেলে নাশাদ ভাইয়ার বন্ধু। নাম ইকন। আমার পুরো ছয় বছরের বড়। কিন্তু ওকে যখন আমি প্রথম দেখি, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে, ওকে আমি ভাইয়া ডাকবো না। ইকন একটা এইচ এস সি প্রস্তুতি কোচিংয়ে ক্লাস করায়। বাবা যখন নাশাদ ভাইয়াকে কিছুদিন আমাদের বাসায় থেকে আমাকে বায়োলজি আর ম্যাথ দেখাতে বলে, তখন নাশাদ ভাইয়া বাবাকে জানায় ইকনের কথা। বলে যে ইকন নাকি আমাদের বাসার কাছেই যে “অগ্রদূত কোচিং সেন্টার” আছে সেখানে ক্লাস করায়। বাবা তো মহাখুশি। বাবা আমাকে কোনো কোচিং করাতে রাজি নয়। কোচিং বাবার পছন্দ নয়। প্রথম যেদিন বাবা ইকনকে আমাদের বাসায় থাকবে বলে নিয়ে এলো, সেদিন আমার কি যে খুশি লাগলো! এই ছেলেটা যতবার নাশাদ ভাইয়ার সাথে আমাদের বাসায় এসেছে, ততবার আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে। খুব অল্প বয়সে কোনো মেয়ের মনে যদি কোনো ছেলেকে ধরে, তাহলে সেটা নাকি খুব ভয়ঙ্কর হয়। কথাটা যে সত্যি সেটা আমি অনেক আগেই টের পেয়েছি। যে ছেলেটা কোনো দিন আমার সাথে একটি কথাও বলেনি তার জন্য আমি আমার ভিতর যে টান অনুভব করি সেটাকে কি নামে অভিহিত করা যায় আমি জানি না। এর আগেও যখন নাশাদ ভাইয়ার সাথে সে আমাদের বাসায় আসতো, আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম তার দিকে। শ্যামলা মতন দেখতে ছেলেটা লম্বায় পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি হবে। আমাদের বাসায় এসে যখন দরজার বাহিরে জুতো জোড়া খুলে ভিতরে প্রবেশ করে তখন মেঝেতে তার খালি পায়ের পদচারণের সৌন্দর্য আমি মুখে বলে বুঝাতে পারবো না। ওর ছোট করে ছাঁটা খাড়া জেল করা চুল, লম্বা নাক, বড় বড় চোখ, গোলাকৃতি মুখ সবকিছুই আমাকে খুব করে টানে। এই ছেলেটা যখন এখন থেকে আমাকে নিয়মিত আগামী চার মাস পড়াবে, তখন বড়সড় একটা দুর্ঘটনা না ঘটে থাকতে পারে না। ইকন একটা মেসবাড়িতে থাকে। কারণ ও গ্রামের ছেলে। বাবা বলেছে এখন থেকে সে আমাদের বাসাতেই থাকবে। এখানে থেকে চাকুরি খুঁজবে আর আমাকে এবং আমার ছোট বোন তারান্নুমকে পড়াবে। আমি মনে মনে বলে উঠলাম “ইয়েস, ইয়েস এন্ড ইয়েস” । প্রথম যেদিন ইকন আমাকে পড়াতে বসলো, সেদিনই ওর সাথে ফ্রি হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। একা একা অনেক বকবক করলাম, কিন্তু মাস্টার মশাই আমার খুবই গম্ভীর স্বভাবের মনে হলো। আমার কথাগুলোর কেবল মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিতে থাকলো। ভীষণ বিরক্ত বোধ করলাম আমি।

আমি জানি এই চার মাসে যদি ইকনকে পটাতে না পারি, তাহলে ইকন হয়তো হারিয়ে যাবে আমার জীবন থেকে চিরতরে। কিন্তু সেটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। তাই আমাকে এখনই মিশন টু লাভ এ নামতে হবে। একদম সময়ের অপচয় করা যাবে না।

প্রথম যেদিন ইকন আমাকে পড়াতে নিয়ে বসলো, আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
-ইকন তুমি সবসময় আমাকে খালি পড়াবে নাকি বিনোদনের সুযোগও দিবে?
আমার কথা শুনে দেখি ইকন হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি ভয়ে বুকে দুইবার থুতু দিয়ে নিলাম। ইকন রেগে গিয়ে বললো,
-আমি তোমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। তুমি কি নাশাদকে নাম ধরে ডাকো?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। মুখ কাচুমাচু করে বললাম,
-আচ্ছা, আপনাকেও ভাইয়া ডাকবো।
-না।
-তাহলে?
-স্যার ডাকবে।
বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দুলালাম আমি।
আমার ইকন স্যার এবার বললো,
-যদি মন দিয়ে পড়ো আর আমার কথা শুনো তাহলে বিনোদনের ব্যবস্থাও হবে।
আমি আনন্দে চিৎকার করে বললাম,
-সত্যি ইকন?
-আবার ইকন? তোমার তো আদব কায়দার ভীষণ অভাব।
-সরি স্যার।
সেদিন বায়োলজিটা অল্প দেখিয়ে আমার পড়া শেষ করলো ইকন।

প্রিয় পাঠক, আমি গল্প বলার সময় ওকে কখনও আপনি বলবো আর কখনও বা তুমি। আবার কখনও নাম ধরে বলবো আর কখনও মজা করে মাস্টারমশাই।
এতে আপনারা কিছু মনে করবেন না। আমি অতিরিক্ত পরিমাণে পাজি তো তাই কখন কি বলি খেয়াল থাকে না।
বিকেলে ইকন তারান্নুমকে পড়াতে বসলো। পড়ানোর সময় সে খুব মনোযোগী আর আমি ছাত্রী হিসেবে অমনোযোগী হলেও তারান্নুম মোটেও তা নয়। ইকন যখন ওকে পড়ায় তখন ওরা দুইজনেই বইয়ের গভীরে ডুবে যায়। আর আমি তখন জানালার পর্দা অল্প ফাঁক করে মানুষটাকে দেখি। একটা ছেলে মানুষের চেহারা এতটা মায়াবী হতে পারে তা ইকনকে না দেখলে কোনোদিন বুঝতেই পারতাম না। হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন মেয়েরা মায়াবতী হয়, আর মায়াবতীর কোনো পুরুষবাচক শব্দ নেই। স্যারের প্রতি রাগ হচ্ছে। ইশ! কী এমন ক্ষতি হতো যদি উনি মায়াবতীর একটা পুরুষবাচক শব্দ তৈরি করে যেতেন! তাকে আমি মনে মনে আমার মানুষ বানিয়ে ফেলেছি। সে ছেলে হয়েও নিজের চেহারায় অসম্ভব একটা মায়া ধরে রেখেছে। আমার পড়াশুনার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে গেছে ইকন। আমাকে পড়ানোর সময় তো ওর দিকে আমি ভালো করে তাকাতে পারি না। কেবল বই খাতার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। একদিন একটু তাকিয়ে ছিলাম বলে বলেছে এভাবে হা করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে ও আর আমাকে পড়াবে না। আমি ভয়ে আর ওর দিকে তাকাইনি। যদি সত্যি সত্যি আর পড়াতে না আসে!

ইকনের কাপড়গুলো মা ধুয়ে দেয়। প্রতি শুক্রবার যখন সবার কাপড় ধুয়ে দেয় মা, তখন ইকনেরগুলোও একসাথে ধোয়ার জন্য ডিটারজেন্ট দিয়ে ভিজিয়ে রাখে। কাপড় ধোয়া আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কঠিন কাজ। তাই এই কাজের আশেপাশে কোনোদিন যাইনি আমি। কিন্তু ইদানিং আমার খুব ইচ্ছা করে ইকনের কাপড়গুলো নিজ হাতে ধুয়ে দিতে। তাই চালাকি করে মাকে বলি,
-মা, প্রতি সপ্তাহে কাপড় ধুতে তোমার খুব কষ্ট হয়। এখন থেকে আমি কাপড় ধুয়ে দিব। মা কিছুটা অবাক হলো কিন্তু না করলো না।
ইকনের মোটা মোটা জিন্স আর গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট দুটি ধুতে গিয়ে আমার দফারফা হয়ে গেল। অবশ্য আমি কেবল ইকনেরগুলোই ভালো করে ধুলাম। বাবা-মা, তারান্নুম আর আমারগুলো কোনোমতে পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে ছাদে শুকাতে দিতে গেলাম। ছাদে গিয়ে দেখি আমার মাস্টার মশাই ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে উনার মায়ের সাথে কথা বলছেন ফেনে। ওপাশের কথাগুলো তো আর শুনা যাচ্ছে না। ইকনের কথাগুলো কেবল শুনছিলাম।
-হ্যাঁ মা। আমার চালতা দিয়ে বড় মাছের ঝোল আর শুটকি ভর্তা খেতে খুব ইচ্ছা করে। আন্টি আমাকে অনেক আদর করে, কিন্তু কোনো খাওয়ার কথা তো আর নিজ থেকে বলতে পারি না। তুমি তো জানই আমি একটু লাজুক প্রকৃতির।
আমি আর বাকি কথা শুনার অপেক্ষা না করে ছাদ থেকে চলে এলাম। সেদিনই রমেন কাকাকে বলে বাজার থেকে চালতা আর শুটকি আনালাম । মাছ তো ফ্রিজেই আছে। রাতে আমার মাস্টার মশাইয়ের প্রিয় রান্নাগুলো নিজ হাতে রান্না করলাম। মা তো অবাক। যে আমি কোনোদিন রান্নাঘরের আশেপাশে যাই না আর শুটকি দুই চোখে দেখতে পারি না, সেই আমি নিজ হাতে ইউটিউব দেখে দেখে শুটকি ভর্তা করলাম! আর মাছ দিয়ে চালতার ঝোল বা যে কোনো ধরণের টক আমাদের ঘরে কোনোদিন রান্না হয়নি। সেটাও ইউটিউব দেখে করলাম। আমার জন্য সবচেয়ে তৃপ্তির দৃশ্য ছিল টেবিলে খাবার দেখেই ইকনের অবাক আর তৃপ্তিদায়ক মুখ। খাওয়া শেষে সে মায়ের রান্নার খুব প্রশংসা করছিল। মা যখন বললো যে রান্নাটা আমি করেছি তখন সে প্রথমবার আমার দিকে তাকিয়ে আমার প্রশংসা করলো। পড়তে নিয়ে বসলে তো শুধু গাধা ডাকে আর বকে।
আমি চাই ইকন আমার সাথে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে সব-সময় কথা বলুক, কিন্তু ইকন প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে একদম কথা বলে না। ব্যাপারটা আমাকে নীরব যন্ত্রণা দেয়। আর পড়তে বসলেও খালি পড়ার কথা। স্যার হয়েছে বলে কি অন্য কোনো কথা বলা যাবে না?

দিন দিনই আমি খুব হতাশ হয়ে পড়লাম। ওকে কেমন করে বুঝাবো যে আমি ওকে পছন্দ করি, ওকে চাই। ও তো সব সময় কেমন মুড নিয়ে থাকে। মনে মনে ভাবলাম ওকে নিয়ে একদিন ঘুরতে গেলে কেমন হয়? কিন্তু সে তো জীবনেও যেতে রাজি হবে না। এই ব্যাপারে বান্ধবী সিমি’র পরামর্শ নিলাম। সিমি’র কথামতো মাকে একটা ছোট মিথ্যা বলে ওদের বাসায় বেড়াতে গেলাম। বাবা তখন কি যেন একটা কাজে ঢাকার বাহিরে গেছে। সিমিদের বাসা থেকে ফেরার পথে মাকে ফোন দিয়ে বললাম,
-মা, আমার পা মচকে গেছে। একা একা আসতে পারবো না।
-পা মচকে গেছে বলে একা একা আসতে পারবি না কেন? রিক্সা করে চলে আয়।
মায়ের কথা শুনে কষ্টে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা হলো। বুঝলাম যে, মাকে স্পষ্ট করে না বললে কাজ হবে না। কিন্তু নিজের মুখে বলি-ই বা কি করে। তাই সিমিকে দিয়ে বলালাম। সিমি মাকে বললো,
-আন্টি, ওর তো ডান পা খুব খারাপভাবেই মচকে গেছে পড়ে গিয়ে। আপনি একটু ইকন ভাইয়াকে পাঠান না ওকে নিয়ে যেতে।
সিমি বলার পর মা আর কথা বাড়ালো না। বললো যে পাঠাচ্ছে। আমি তো খুশিতে সিমির গাল দুটো টেনে দিয়ে নাগিন ড্যান্স দিতে শুরু করলাম। সিমি ওর দেওয়া বুদ্ধির জন্য ট্রিট চাইতে শুরু করলো। আমি কোনোকিছু না ভেবেই ওর হাতে একটা পাঁচশো টাকার নোট ধরিয়ে দিলাম। কিন্তু আমার সব আশা-ভরসা ভেঙে দিয়ে আধা ঘণ্টা পর মা নিজেই এসে হাজির হলো সিমিদের বাসায়। আমি সিমির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম। সিমি কাচুমাচু মুখে বললো,
– টাকা ফেরৎ দিয়ে দিব?
আমি দাঁত কটমট করে বললাম,
-লাগবে না।
বাড়িতে এসে মায়ের কাছে জানতে চাইলাম যে, ইকন কেন আমাকে আনতে যায়নি? মা বললো, মা নাকি বলেছিল যেতে। সে নাকি বললো, মেয়ে মানুষ আমি কিভাবে আনবো। আপনি গেলেই ভালো হয়। আচ্ছা সতী-সাবিত্রী তো সতী মেয়েদের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলা হয়। কিন্তু সত ছেলেদের উদাহরণ দিতে গেলে কার নাম বলতে হয় আমার জানা নেই।
পরীক্ষার এক মাস আগে যখন আমার পরীক্ষার শপিং এর সময় এলো, তখন ইকনকে বললাম আমাকে শপিংএ নিয়ে যেতে। ও মুখের উপর বলে দিলো সে মেয়েমানুষ নিয়ে শপিংএ যেতে পারবে না।

আমি তো ওর থেকে কম চালাক না। ওকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব না। ছাদে মায়ের একটা ফুল বাগান আছে। মায়ের অনেক যত্নে গড়া বাগান। এই বাগানের একটি ফুলও যদি কেউ ছিড়ে তাহলে মা তাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। এই কথাটা আমাদের বাসার সবাই জানে। তাই মায়ের বাগান থেকে সবাই দূরত্ব বজায় রেখে চলে। আমি এই সুযোগটা কাজে লাগালাম৷ ছাদে গিয়ে মায়ের একটা গোলাপের চাড়া টব থেকে উপড়ে ফেললাম। গাছটা উপড়েই একটা পৈশাচিক হাসি দিলাম। এবার ইকইন্যা মাস্টারের বাচ্চাকে সাইজ করবো। হঠাৎ শুনি পেছন থেকে ইকনের গলা,
-এত সুন্দর গাছটা উপড়ালে কেন তুমি?
আমি বাংলা সিনেমার ভিলেন মিজু আহমেদের মতো ভাব নিয়ে বললাম,
-এটা আমি না, আপনি উপড়েছেন। আর এই কথাটা মাকে বলে আপনাকে বকা খাওয়াবো। আর যদি আপনি আমাকে শপিংএ নিয়ে যান, তাহলে আপনাকে ফাঁসাবো না।
আমার কথা শুনে ইকন এমন হাসি শুরু করলো যেন আমি কোনো জোকস বলেছি। আমি তো হা হয়ে গেলাম। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
-হাসছেন কেন আপনি?
ইকন ওর মোবাইল থেকে কি যেন একটা বের করে মোবাইলটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি তো মোবাইলে শো করা ভিডিওটা দেখে পুরো চমকে গেছি। আমার গাছ উপড়ানোর ঘটনাটা ভিডিও করা। আমার মুখটা মুহুর্তেই মলিন হয়ে গেল৷
ইকন বেশ মুড নিয়ে বললো,
-পড়ার সময় পায়ে পারা দেওয়া, কলম দিয়ে খুঁচা দেওয়া, খাতার মধ্যে আঁকিবুকি এগুলো করলে সোজা এই ভিডিওটা আন্টির কাছে চলে যাবে।

আমি চেয়েছিলাম তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে, এখন উল্টো সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করলো! রাতে ইকন আমাকে পড়তে নিয়ে বসলো। আমার মুখটা খুব মলিন। কিছুতেই পড়াতে মন বসছিলো না। ইকন জোরে একটা ধমক দিলো আমাকে। ধমক খেয়ে রাগে আমি কলম দিয়ে ওর ডানহাতের উপর ছিদ্র করে ফেললাম। সাথে সাথে রক্ত বের হতে শুরু করলো। মুহুর্তেই মনে হলো এটা কি করলাম! রক্তটা ইকনের হাত থেকে বের হলেও ব্যথাটা আমার লাগছিলো। এটা কি করলাম আমি! ইকন সেদিন আর আমাকে পড়ালো না। নিজের রুমে চলে গেল। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না। ভোরের দিকে কখন যেন চোখ বুজে আসলো। সকাল দশটার দিকে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। মা বললো, ইকন নাকি তার সব কাপড় গুছিয়ে চলে গেছে। আমার পৃথিবীটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল। এটা কী হলো! ইকন চলে গেল! ওকে ফোন করে ফোন বন্ধ পেলাম। পরদিন অগ্রদূত কোচিং সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানলাম ইকন নাকি সেদিনই কোচিংয়ের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। নাশাদ ভাইয়ার সাথেও সে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। নাশাদ ভাইয়া ওর বাড়ির ঠিকানাও জানে না। শুধু জানে ওদের জেলা ময়মনসিংহ।

তার মানে ওকে আমি হারিয়ে ফেললাম! আমার বুক ফেঁটে কান্না আসছিলো। ইকনের রুমটাতে গিয়ে ওর বিছানায় শুয়ে কাঁদলাম কতক্ষণ। এই বিছানায় ইকনের শরীরের গন্ধ লেগে আছে। এরপর নিজের রুম বদলে সেটাকেই আমার রুম করে নিলাম। ইকনের কোনোকিছুই তো আর অবশিষ্ট নেই কেবল এই রুম আর বিছানা ছাড়া। এই বিছানার চাদর আমি কোনো দিন ধুব না বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
প্রায় এক সপ্তাহ খুব খারাপ কাটলো। তারপর মন দিয়ে পড়াশুনা করার চেষ্টা করলাম। পরীক্ষা শেষ হলো, রেজাল্ট হলো। যেদিন রেজাল্ট হলো সেদিন একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো। মেসেজে লেখা ছিল, “আমার আরও আগেই তোমাদের বাসা ছাড়া উচিত ছিল। তোমার পাগলামি প্রশ্রয় দেওয়া আমার উচিত হয়নি। আমি বাকি মাসটা তোমাদের বাসায় থাকলে তুমি পরীক্ষায় নিশ্চিত খারাপ রেজাল্ট করতে”। মেসেজটা দেখে আমি ইয়াহু বলে চিৎকার করে উঠলাম৷ ওই নাম্বারটাতে একনাগাড়ে কল দিতেই থাকলাম, দিতেই থাকলাম। কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না দেখে অস্থির হয়ে উঠলাম। সেই মুহুর্তে আরও একটা মেসেজ আসলো, “তুমি ছাদে যাও তো একটু” । আমি দৌড়ে ছাদে গেলাম। আমার বুক ধকধক করছে। তারপর আরও একটা মেসেজ, “নীচে তাকাও”। আমি দৌড়ে ছাদের রেলিং’র কাছে গিয়ে নীচে তাকালাম রাস্তার দিকে । তাকিয়েই আমার চোখ দুটি ছলছল করে উঠলো।
রৌদ্রের আলোতে আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার চোখ দুটি চিকচিক করতে দেখলাম। তাহলে কি ওই চোখ জোড়াতেও জল?

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত