ভালবাসার মুহূর্ত

ভালবাসার মুহূর্ত

– এইটা কি চা না সরবত? মনে হচ্ছে ফ্রিজ থেকে চিনির সরবত বের করে দিছিস। তুই মানিক দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছিস। আর এইটা রুটি? এত শক্ত কেন? মনে হয় ইট চাবাচ্ছি মুখের ভিতর দিয়ে। বাসি রুটি দিস আমাকে ? যা আজ তোকে কোন টাকা দিব না।

সকালের ব্রেকফাস্ট করছে স্পর্শ। কথাগুলো বলছে দোকানে বসা মানিককে। গত ৩ মাস ধরে এই মানিকের দোকানেই সকালের নাস্তাটা করছে স্পর্শ। এলোমেলো চুল, ময়লা শার্ট প্যান্ট, চোখে চশমা। দেখে মনে হবে কোন বড় মাপের কবি সাহিত্যিক। আসলে তা না।কখনও ভেতর থেকে কোন লাইন বের হয়নি, কবিতা হিসেবে বা গল্পের সূচনা হিসেবে। শুধু মাত্র একটা সময় বাদে। আগে অনেক পরিপাটি হয়েই চলত। তখন মনে হত পৃথিবীর মেধাবী ছাত্রদের একজন স্পর্শ। তবে এই ধারনাটাও ভুল। পড়ালেখা সারাজীবনই খুব বাজে লাগত। ভাগ্য গুণে বা অস্বাভাবিক কোন কারণে বরাবরই রেসাল্ট মোটামুটি করে আসছে স্পর্শ। আসলে স্পর্শ পৃথিবীর কিছু না পারা ছেলেগুলোর একজন। তবে ইদানীং একটা জিনিস খুব ভাল পারে। মানুষকে বকতে। তবে খারাপ ভাষায় না। মুখ দিয়ে খারাপ ভাষা বের হয় না।
মানিকের কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক। তাই চুপ করে শুনে কথাগুলো। বলে না কিছু। স্পর্শকে অনেক ভাল লাগে মানিকের। খুব আদর করে মানিককে স্পর্শ। যে আদর করে তার মুখে ২-১ টা বকা খারাপ লাগার কথা না।

চা এর কাপটা ফেলে রেখে চলে গেল স্পর্শ। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এসে টাকাটা দিয়ে গেল। ভালবাসার মানুষের উপর রাগ করে থাকা খুব কঠিন। মানিককে আদর করে তাই টাকাটা দিয়ে গেল ভালবেসে।

ধানমণ্ডি লেক এর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে স্পর্শ। পছন্দ মতন কাপল খুঁজছে। গত কয়েকদিন ধরেই একটা কাজ করে স্পর্শ। প্রেমহীন জীবনে অন্য কারও প্রেম সহ্য হয় না। তাই এই কাজ করা। হ্যাঁ, পছন্দ মতন কাপল পেয়ে গেছে। লেকের পাড়ে দেয়ালের উপর বসে আছে দুজন। দুজনের মুখই হাসি হাসি। ভালবাসার চরম মুহূর্তে আছে তারা এখন। হাতটা ধরে আছে দুজন দুজনার। একটু নির্জনে বসেছে দুজন। ২ জন যেখানে বসে আছে সেখানে গিয়ে বসল স্পর্শ। মেয়েটার পাশে। দুজনের ভালবাসার আবেগে ব্যাঘাত ঘটল। স্পর্শ পকেট থেকে একটা গ্যাসলাইট আর বিড়ির বের করল। সিগারেট না বিড়ি।
কাপলদের ছেলেটা বলল – এক্সকিউজ মি , ভাইয়া। কি এখানে? আপনি এসে এখানে বসেছেন কেন?
– বিড়ি খাবো ।
– বিড়ি খাবেন ভাল। কিন্তু এখানে কি?
– আমার এখানেই খেতে ইচ্ছা করছে। চারপাশটা অনেক সুন্দর। বিড়ি খাওয়ার জন্য একদম পারফেক্ট . ভাব না আসলে কি খেয়ে মজা বলেন?
– আমরা এখানে বসে আছি আপনি দেখেন নি ?
– দেখেছি। আপনারা বসে আছেন তাতে আমার কি? আপনারা এখানে বসে আছেন মানে তো এই না যে আমি এখানে বসতে পারব না। এটা public place. সবার অধিকার সমান। আপনাদের পাশে বসে আমার বিড়ি খেতে সমস্যা না হলে আপনাদেরও হবে না। চালিয়ে যান।

বিড়িটা ধরাল স্পর্শ। উহহ, কি বিচ্ছিরি গন্ধ। কাপলদের মেয়েটা নেমে আসলো নিচে। ছেলেটার হাত ধরে বলল- চল, এর সাথে ঝগড়া করে লাভ নেই। আমরা অন্য কোথাও বসি।

দুজন একসাথে চলে গেল। যাবার আগে একটা কিছু বলে গেল যা স্পর্শর কান পর্যন্ত যায়নি। স্পর্শ এখন আনন্দে আছে। ওর কাজ সফল। বিড়িটা পুড়ে যাচ্ছে আর স্পর্শ দেখে যাচ্ছে। স্মোক করে না স্পর্শ। শুধু এই কাপলদের বিরক্ত করার জন্যই বিড়ি কেনা। জীবনটা অনেক এলোমেলো হয়ে গেছে। তবুও কিছু জিনিস এখনও মেনে চলছে স্পর্শ। কি কারণে জানে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, নাহ, যে আমার জীবনে নেই তার বারণগুলো কেন মানছি? তবে একটা উত্তরই আসে এই প্রশ্নের , মানো একটু। মানলে কি হয়? ভাল তো বাসই এখনও।
হ্যাঁ, ভালবাসে এখনও। মন থেকে কাউকে ভালবাসলে ভুলা যায় না। পৃথিবীর অসম্ভব কাজগুলোর একটা এটা। হঠাৎ খুব মনে পড়ছে আদ্রিতার কথা। মনে পড়ার পিছনে উপযুক্ত কারণও আছে। গত ২ দিন থেকে কল করছে আদ্রিতা। কিন্তু স্পর্শ ধরেনি। একটা সময় স্পর্শও অনেক কল করেছিল। ধরেনি আদ্রিতা। সব মনে আছে স্পর্শর। কিছু ভুলেনি। এখন আদ্রিতার ফোন কেন ধরবে? ৩ মাস চলে গেল। একবারও মনে করেছে? করেনি। স্পর্শকে ছাড়া থাকতে এত ভাল লাগে, থাকুক। পৃথিবীর সব মানুষের সব গুন থাকে না। থাকে কি? অবশ্যই না। হয়ত স্পর্শর মতন কারও ভিতর কোন গুনই থাকে না।

প্রেমের ৪ দিনের মাথায় আদ্রিতা বলেছিল – জানো আমার মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে, মানুষ এত সুন্দর করে কবিতা লিখে কি করে? কবিতা পড়লে মাঝে মাঝে ভাবি, ইশ, আমি যদি অমন লিখতে জানতাম। অথবা আমার জন্য যদি কেউ লিখত। ওহ, কত্ত ভাল হত তাইনা বল?
– হ্যাঁ, অনেক ভাল হত।
– এই, তুমি আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবা?
– কি বল? তুমি বলছ আর লিখব না? এটা কোন ব্যাপার হল? বল কি টাইপ কবিতা লিখব?
– কি টাইপ মানে? আমাকে নিয়ে লিখবা, কি টাইপ জানো না?
– ও আচ্ছা। বুঝছি। just wait করো। আজ রাতেই পাঠাচ্ছি মেসেজ করে।
– সত্যি লিখতে পারবা তুমি?
– কেন পারব না? ভালবাসার মানুষের জন্য এইটুকু পারব না করতে?

আর কিছু বলার আগেই স্পর্শকে জড়িয়ে ধরল আদ্রিতা। জীবনে প্রথম কোন মেয়ের ছোঁয়া পেল এত কাছ থেকে স্পর্শ। হাত পা জমে যাচ্ছে। কিন্তু ভীষণ ভাললাগার একটা অনুভুতি হচ্ছে। যে অনুভুতি সারাটা জীবন ধরে পেতে ইচ্ছা করে। কখনও মনে হবে না, অনুভূতিগুলো বড্ড পুরাতন।

আদ্রিতা হাসি মুখে স্পর্শকে ছেড়ে দিয়ে বলল -আমার জন্য একটা করে কবিতা লিখবা আর এই মুহূর্ত টা ফিরে পাবা। বল তুমি প্রতিদিন এটা চাও না?
– হ্যাঁ, অবশ্যই চাই। সারাজীবন চাই।

রাতে খাতা কলম নিয়ে বসল স্পর্শ। সাথে কয়েকটা কবিতার বই। নাহ, কিছুই বের হচ্ছে না মাথা থেকে। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরও না। ধুর। যে জীবনে কিছু লিখেনি, তাকে দিয়ে লেখা কি সম্ভব? সব কি সবাই কে দিয়ে হয়? না, হাল ছাড়া যাবে না। আদ্রিতা অনেক খুশি হবে ওর জন্য লেখা একটা কবিতা পেলে।

রাতের বেলা একটা মেসেজ আসলো আদ্রিতার মোবাইল এ। স্পর্শর দেওয়া। একটা কবিতা পাঠিয়েছে। ওহ। অসাধারণ। স্পর্শ এত সুন্দর করে লিখতে পারে? আদ্রিতার কি অনুভুতি হচ্ছে বলে বুঝানো যাবে না। জীবনের অনেক বেশি ভাল লাগার মুহূর্তগুলোর একটা এটা। কেউ ওকে নিয়ে কবিতা লিখেছে।

পরদিন থেকে প্রতিদিন কবিতা পাঠায় স্পর্শ। জড়িয়ে ধরার সময়টুকু স্পর্শর কাছে সবচেয়ে মধুর সময় আর আদ্রিতার কাছে রাতের বেলা কবিতা পড়ার সময়টুকু।

পহেলা বৈশাখ। আজ সারাদিন ঘুরবে দুজন। আদ্রিতা শাড়ি পরে আর স্পর্শ সেই ছাগলের মতন একটা ফুল হাতা শার্ট পরে। এত করে বলল একটা পাঞ্জাবি পরতে। না তিনি শার্টই পরবেন। পহেলা বৈশাখে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটা হাতে নিল আদ্রিতা। ১০ টা মেসেজ। সবগুলো পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধুরা পাঠিয়েছে। সবার আগে স্পর্শর sms টা পড়ল। বাহ, অনেক সুন্দর একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছে। অসাধারণ। ছেলেটা অনেক ভালবাসে আমাকে। কত সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখে আমার জন্য। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ই চোখ পড়ল আর একটা sms এর দিকে। তুলি পাঠিয়েছে। বুকের ভিতরটায় ধক করে উঠল। কি করে সম্ভব এটা? তুলি আর স্পর্শ একই sms পাঠিয়েছে। অসম্ভব এটা। ঘুমের ঘোরে আবল তাবল দেখছে কিনা। তাই আবার চেক করল আদ্রিতা। না ঠিকই তো আছে। তুলি আর স্পর্শ একই এসএমএস পাঠিয়েছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? আদ্রিতা ফোন করল স্পর্শকে। ঘুম জড়ানো গলায় ফোন ধরে বলল- হ্যালো, লক্ষ্মী। কেমন আছো? শুভ নববর্ষ।
– শুভ নববর্ষ।তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব। সত্যি কথা বলবা?
– আমি কখনও মিথ্যা বলি? বল কি জিজ্ঞাসা করবে?
– তুমি কি তুলিকে কোন এসএমএস করছ?
– তুলি? তুলি যেন কে?
– আমার ফ্রেন্ড। কাল আমি যার নাম্বার থেকে কল করেছিলাম তোমাকে। আমার মোবাইল এ টাকা ছিল না।
– নাতো। আমি কেন ওকে এসএমএস দিব? ওর নাম্বার তো আমি সেভ ই করি নায়। আর কল হিস্ট্রি থেকেও নাম্বার দেখি নায়।
– সত্যি তো?
– হ্যাঁ, কেন কি হইছে?
– আচ্ছা তুমি রাখো এখন। আমি পরে কল দিচ্ছি।

আদ্রিতা কল কেটে তারপর তুলিকে ফোন করল। তুলি যা বলল টা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ছিঃ, স্পর্শ এমন? ভাবতেই খারাপ লাগছে। আর একবার কল করল স্পর্শকে।
– তোমার লেখা কবিতাটা অনেক সুন্দর হইছে।
– ওটা তো সবসময়ই। লিখতে লিখতে এখন মান অনেক ভাল হয়ে গেছে। যদিও কষ্ট হয় লিখতে একটু ।তোমার জন্য সব ভুলে যাই।
– হ্যাঁ, আমি রাখি এখন। আর কষ্ট করতে হবে না তোমাকে।

কল কেটে দিল আদ্রিতা। খুব কষ্ট হচ্ছে। এতদিন কাকে ভালবেসেছে আদ্রিতা? ছিঃ, নিজের উপর খুব অভিমান হচ্ছে। চাপা কষ্টগুলো কেঁদে বের করে দিতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু পানি পরছে না চোখ দিয়ে। খুব বেশি কষ্ট পেলে এমন হয় আদ্রিতার। হয়ত কষ্টগুলো আরও বাড়ানোর জন্য।
মোবাইল স্ক্রিনে চোখ পরল। স্পর্শ কল করে যাচ্ছে। ধরছে না আদ্রিতা। এরপরও কি সম্ভব? অবশ্যই না। এরপর থেকে আর কোনদিনই কল ধরেনি আদ্রিতা। অন্য কোনভাবেও যোগাযোগ করতে পারেনি স্পর্শ। কিন্তু গত ২ দিন ধরে কল দিচ্ছে কেন আদ্রিতা? কি দরকার?

বিড়িটা পুড়ে শেষ হয়ে হাতে যখন একটু আঁচ লাগল তখন ফেলে দিল বিড়িটা স্পর্শ। চশমাটা বড় ঝাপসা লাগছে। গ্লাস পুরাতন হয়ে গেছে না চোখের বৃষ্টি? ভাবতে ভাবতে ঝাপসা চোখে খুব পরিচিত কাউকে আসতে দেখছে স্পর্শ। সবুজ রঙের শাড়ি পরে আসছে। চশমা খুলে তাকাল। সবুজ রঙে সবাইকে মানায় না। কিছু কিছু মানুষকে সব কিছুতেই মানায়। আদ্রিতাকেও। তাই দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। পাশে এসে ক্লান্ত মুখে বসল আদ্রিতা। বিশ্বাস হচ্ছে না। আদ্রিতা এখানে। কি করে আসবে? জানবেই বা কি করে স্পর্শ এখানে?

– বাহ, খুব উন্নতি। সিগারেট খাওয়া শুরু করে দিছ। ভাল। খাও। কি আর করবা!!!

কথাগুলো বলে স্পর্শর দিকে তাকাল আদ্রিতা। সেই ভালবাসাময় চোখে। তবে আগে ছিল শুধুই ভালবাসা আর এখন ভালবাসার সাথে ক্লান্তি। আর সেই ক্লান্তি থেকে মুক্তির আকুলতা।

– এটা সিগারেট না। বিড়ি।
– ঐ একই হল। খাচ্ছ তো?
– না। smoking করি না। এমনি কিনেছিলাম। কিন্তু তুমি এখানে আসলে কি করে? জানলে কিভাবে?
– জেনেছি যেভাবে হোক। সব তো সবাইকে বলে বেরাও। জানাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু না। মোবাইল ধর না কেন? কি, নতুন কাউকে পেয়ে গেছ? কবিতা শুনাও না তাকে? আমার সাথে কথা বললে সে রাগ করবে? এই যে পাগলের মত চল, সে একটুও খেয়াল রাখে বলে তো মনে হয় না। বল মোবাইল ধরলা না কেন?

স্পর্শ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কত রাগ ছিল আদ্রিতার উপর। ভেবেছিল, যদি আর কখনও দেখা হয়, কথা হয়, ইচ্ছা মতন কথা শুনিয়ে দিবে।সব রাগ অভিমান ঝাড়বে আদ্রিতার উপর। কিন্তু এখন কি হল? মনে হচ্ছে সামনে সেই ৩ মাস আগের আদ্রিতা বসে আছে। যে প্রতিদিন একটা কবিতার বিনিময়ে একবার করে জড়িয়ে ধরত। চুল আঁচড়ে দিত। শাসন করত। ছাগল বলে ডাকত। একবারও মনে হচ্ছে না টানা ৩ টা মাস মেয়েটা ইচ্ছা করে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। অশ্রু ছল ছল চোখের দিকের তাকিয়ে সব রাগ ভুলে গেল স্পর্শ। নিজের দোষ স্বীকার করে বলল- সরি , ভুল হয়ে গেছে। অনেক অভিমান ছিল তোমার উপর, তাই ধরি নায়। নতুন কেউ, পুরাতন কেউ, সব তুমিই। তুমি ছাড়া কাউকে ভালবাসা সম্ভব না। চেষ্টাও করিনি কখনও। আর খেয়াল রাখার মানুষ রাগ করে চলে গেলে আমি কি করব? এমন এলোমেলো তো থাকবই।
– চুপ, এসব কথা বইলো না। তোমার মুখে এসব মানায় না। তুমি আমাকে কখনও ভালবাসনি। বাসলে এমন করতে পারতা না। কিন্তু আমি কি করব? আমি তো সত্যি সত্যিই ভালবেসেছিলাম তোমাকে। কত চেষ্টা করলাম ভুলে যেতে। পারলাম কই? ঐ ঠিকই চলে আসলাম। যাকে একবার মন থেকে ভালবাসা যায়,তাকে ভোলা যায় না। তুমি বুঝবা না। তুমি কাউকে ভালবাসতে পার না। তোমার কাছে ঐ একটু জড়িয়ে ধরা তাই ই বড়। ভালবাসা না। মানুষের মনও না। আমি সত্যি অবাক হয়েছিলাম তোমার আর তুলির একই এসএমএস দেখে সেদিন। পরে তুলি বলল ঐ এসএমএস ও ইন্টারনেট থেকে পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি নায়। পরে ও আমাক লিঙ্ক দিল। আমি দেখলাম। জানো আমি এত কষ্ট কখনও পাই নায়। যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসি সে আমাকে এভাবে ঠকাবে আমি ভাবতে পারছিলাম না। কিন্তু তুমি? অন্য মানুষের কবিতা নিজের বলে চালিয়ে দিতে আমার কাছে, শুধু একটু জড়িয়ে ধরব এই লোভে। ছিঃ। সত্যি করে বলতো প্রথম দিকের কবিতাগুলো কার লেখা ছিল?
– আমি কয়েকটা বই থেকে মিলিয়ে মিলিয়ে কবিতা লিখতাম। সত্যি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি অনেকগুলো রাত জেগেছি শুধু একটা কবিতা লেখার জন্য। পারি নায়। সবাই সব পারে না। আমিও পারি নায়। কিন্তু বড্ড বেশি ইচ্ছা করত তোমার হাসি মুখটা দেখতে। তুমি একটু খুশি হবে তাই ঐ মিথ্যাটা বলা। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরবা এই লোভে না। হ্যাঁ জানি ব্যাপারটা উচিৎ হয়নি। তারপরও ভালবাসার মানুষটার একটু হাসি মুখ দেখতে কার না ইচ্ছা করে বল? আমি তোমাকে ভালবাসি এখনও। এই ৩ টা মাস আমি কাঁদছি। আর কাঁদতে চাই না। please, লাস্ট বারের মতন মাফ করে দাও। তুমি চলে যাবার পর খুব কষ্ট হত। একদিন খাতা কলম নিয়ে বসলাম। খুব কষ্ট নিয়েই। একটা কবিতা লিখে ফেললাম। জানি না কি করে। পরে আর কখনও চেষ্টা করিনি। পকেটে সেই কবিতা নিয়ে এখনও ঘুরি আমি। যদি কখনও তোমাকে দেখাতে পারি। দেখবে না বল? আমাকে জড়িয়ে ধরতে হবে না, শুধু আমাকে ছেড়ে যেও না।

উত্তরের আশায় চেয়ে আছে স্পর্শ। চোখ দিয়ে পানি পরছে আদ্রিতার। হয়ত কষ্ট হচ্ছে না খুব। আনন্দ হচ্ছে। কষ্ট হারানোর আনন্দ। হারিয়ে যাওয়া প্রিয় কিছু ফিরে পাবার আনন্দ।

– যাব না ছেড়ে। কবিতা বল।

পকেট থেকে কাগজটা বের করল স্পর্শ। ঘামে ভিজে গেছে কাগজটা। আদ্রিতা কিছুই বুঝছে না কি লেখা। কিন্তু স্পর্শ ঠিকই পড়ে যাচ্ছে। হয়ত আগেও অনেকবার পড়েছে নিজের লেখা প্রথম কবিতা।

– “” হারিয়ে যখন যাব আমি
ধরব না আর হাত,
আমায় ছাড়া একলা রাত
হবে তোমার প্রভাত।

জড়িয়ে তোমায় ধরবে না কেউ
দিবে না কেউ চুম,
চুপিচুপি ডাক দিয়ে কেউ
ভাঙাবে না ঘুম।

কাটবে তোমার একলা দিবা
কাটবে একলা নিশি,
আমায় ছাড়াই ঐ আকাশে
দেখবে একা শশী।

নদীর জলে পা ভিজিয়ে
থাকবে একা বসে,
হাতটি থাকবে না কেউ
আর তো তোমার পাশে।

কুড়িয়ে ফুল এনে তুমি
দিবে কারে বল?
দুঃখ তোমার ভুলাবে কে
যখন আঁখি ছলছল।

তোমার কোন কাজে আর
করবে না কেউ বারন,
বল গো হায় তখন তুমি
করবে কারে মিষ্টি শাসন?

একটু হেসে ভাঙাবে কে
বল না তোমার অভিমান?
আবল তাবল বলে আর
কে ভরাবে প্রাণ?

মন খারাপ করে যখন
নীরব থাকবে তুমি,
হাজার বার ভালবাসি বলে
কে করবে আর পাগলামি?

ছেড়ে তোমায় গেলে চলে
আমি চিরতরে,
আমায় ছাড়া তুমি বল
রবে কেমন করে?

কাঁদো যদি তুমি
কে থামাবে তখন?
আমার ছায়া থাকবে না’ক
তোমার পাশে যখন।

নতুন কেউ আসলে কি গো
জড়িয়ে নিবে তারে?
নাকি আমার স্মৃতি বুকে
রাখবে সারাজনম ধরে? “”

অবাক হয়ে কবিতা শুনছে আদ্রিতা। কবিতা শেষ করে তাকাল স্পর্শ আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা একটু কাছে এসে জড়িয়ে ধরল স্পর্শকে। অনেক বেশি ভালবেসে। দুজনেরই মনে হচ্ছে অনেক দিনের চাপা কষ্ট হারিয়ে গেছে। অনেকদিন ধরে এইটুকু স্পর্শের অপেক্ষায় ছিল দুজন। আদ্রিতা জড়িয়ে ধরা অবস্থাই বলল- আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। সত্যি। আমিও তোমাকে ভালবাসব তুমিও আমাকে বাসবে। আর অমন মানুষের কবিতা আমাকে শুনাবা না। এই যে কত সুন্দর লিখতে পার।তুমি আবল তাবল যাই লিখ ভাল লাগবে। এই স্মোক করো নাতো?
– এইটা কিন্তু আমিই লিখছি। নাহ, একদমই করি না। স্মোক করলে কবিতার ৬ নং লাইন এর জিনিসটা আমাকে করতে দিবে না আমি জানি।
– মনে থাকে যেন। আর আমি চলে আসছি আর এমন এলোমেলো, পাগল পাগল থাকবা না। ঠিক আছে? আর শুনো, তোমার তোমার কবিতার নাম দিবা ” অবুঝ অভিমান” ।
– আচ্ছা।

দুজন দুজনকে কতটা ভালবাসে জানে না দুজনের কেউ ই।আদ্রিতা অনেক বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে স্পর্শকে। আশে পাশে কে আছে জানে না, বা তার দিকে খেয়াল নেই। স্পর্শ ভাবছে অন্য কথা। কতক্ষণ আগে যেই কাপল টা কে ডিস্টার্ব করল, তারা না আবার বিড়ি নিয়ে এসে ওদের ডিস্টার্ব করা শুরু করে। এই ভালবাসার মুহূর্তটাকে আর হারাতে চায় না স্পর্শ।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত