অভিমানী মেঘলা

অভিমানী মেঘলা

– এই শোনো?
: শুনতেই তো আছি!
– তুমি এখন কি করবে?
: ঘুমাবো।
– এখনি?
: হ্যা।
– রাতে খেয়েছো?
: হুমম।
– আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না?
: তুমি তো আমাকে প্রমিস করেছো, না খেয়ে থাকবে না।
– আমার না খুব আকাশ দেখতে ইচ্ছা করছে।

: দেখো। নিষেধ করছে কে?
– একা একা দেখার মাঝে আনন্দ নেই।
: আচ্ছা।
– আচ্ছা ঘুমাও
: হুমমম।
– শুভ রাত্রি
: বাই
১০ মিনিট পর।
: হ্যালো।
– এই তোর সমস্যা কি?
: না আপু আমার কোন সমস্যা নাই।
– এই কে তোর আপু?
: আপু এইটা রং নাম্বার ।
– আবির তোর কপালে কিন্তু দুঃখ আছে!
: বুঝবার পারছি।
– তুই ঐ সময় ভাব নিলি ক্যান
: ওমা..! কখন
– যখন বললাম আকাশ দেখতে ইচ্ছা করছে।
: আমার সকালে অফিস আছে।
– আমি কি বেশিক্ষন বলছি? মাত্র ১০ মিঃ ই তো!
: আমার হাতে এতো সময় নাই।
– তুই কিন্তুু বেশি বুঝতেছো।
: তো কি হয়েছে…?
– যা ব্রেকআপ
: অকে।

– মানে
: ব্রেকআপ
– আচ্ছা বাই! আমার ফোন অফ থাকবে।
: আচ্ছা।
(প্রচন্ড ঘুম পাইছে, কাল সকালে অফিস। ইদানীং খুব কাজের চাপ। ব্যাস্ততার ভিতর আছি)
: হ্যালো…
– আমার ফোন কিন্তু সত্যি সত্যি অফ থাকবে।
: থাকুক..!
– ফাজলামি করো না প্লিজ
: দেখ মেঘলা এই মাঝ রাতে আমার ম্যালো ড্রামা একদম ভাল লাগছে না।
– তুমি কি বললে?
: কানেও কি কম শুনো।
– আচ্ছা। এখন খুব বিরক্ত লাগে। লাগবেই তো।
: আসলেই তুমি একটা বিরক্ত।
– হুমম। বুঝছি আমি পুরাতন হয়ে গেছি।
: দেখ মেঘলা, এই মাঝ রাতে তোমার ঝগড়া করতে ইচ্ছা হলো?
– ও আমি তো সব সময় ঝাগড়াই করি।
: রাখতো। আমার ভাল লাগছে না।

ফোনটা কেটে দিলাম। দিন দিন মেজাটা রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে। কোন কিছু ভাল লাগছে না। আজ মেঘলার সাথে এমন ব্যবহার করা বোধ হয় ঠিক হয় নাই। হয়তো মেয়েটা মন খারাপ করে বসে আছে।

আমার সাথে মেঘলার রিলেশন দু বছরের। খুব কেয়ারিং একটা মেয়ে। সব সময় এটা না ঐটা, ঐটা না এটা। সব সময় একটু বাড়াবাড়ি করতো। প্রথম প্রথম আমার খুব বিরক্ত লাগতো। মনে হচ্ছিল আমি কারো অধীনে চলে যাচ্ছি। বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমার স্বাধীনতা। অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকতাম। চিন্তা করতাম কবে মুক্তি পাবো। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম মেয়েটা আমাকে কত ভালবাসে। আর এই বাড়াবাড়ি আমার ভালোর জন্যই করে। মেঘলা কখনওই চায় না আমার খারাপ হোক। এইটা কয়জন বয়ফ্রেন্ডই বা বুঝতে পারে!! আমি মেঘলাকে প্রচন্ড সময় দিতাম। কিন্তুু এখন মোটেও পারছি না। নতুন চাকরি, সপ্তাহে ১ দিন মাত্র ছুটি। ব্যস্ততা দিন দিন গ্রাস করে ফেলছে আমাকে। মেয়েদের চাওয়া পাওয়া খুব বেশি না। যদি তার প্রিয়জন তাকে একটু সময় দেয় ঐটার তার কাছে যথেষ্ট। কিন্তু আমি মেঘলাকে এই বিশেষ চাওয়া থেকে বঞ্চিত করছি।

১০ মি পর…

: হ্যালো
– হুমম।। বলো।
: তোমার না অফ করার কথা ছিল।
– কেন অফ করলে খুশি হতো মনে হয়।
: তা কেন। আমি তো জানি আমার লক্ষ্মীটা ফোন বন্ধ করবে না।
– আসছে….!!!

: কি করো…?
– কিছুনা।
: আজকে আকাশ টা একটু অন্য রকম।
– মোটেও না। ঠিকই আছি।
: না আমার কেন জানি মনে হচ্ছে। একটু বিষন্ন ভাব। মেঘে ঢেকে নিজেকে আড়াল করেছে।
– জ্বি না। তুমি কি আকাশ দেখতেছো।
: না। দেখে কি আর উপায় আছে আপনি তো একা একা দেখতে পারেন না। আচ্ছা আমি যখন থাকবো না…
– দেখ আবির খুব খারাপ হবে কিন্তু। এতখন আমি কিছু বলি নাই। এবার সত্যি সত্যি রাগ করবো।
: এতক্ষন তাহলে মিথ্যা মিথ্যা রাগ করছো? হাহাহাহাহা
– ভাল হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।
: আরে পাগলী মজা করছি।
– রাখেন আপনার মজা। আজকে মুড অফ কেন, বস ঝাড়ি দিছে?
: হুমম।।

– বুঝতেই পারছি। কেন দিলো।
: আর বলো না। একটু ক্রিয়েটিভিটি দেখাতে গেছি এটা তার পছন্দ হয় নাই। তার মতো করেই কাজ করতে হবে।
– থাক মন খারাপ করো না। ঠিক হয়ে যাবে।
: আন্টি বকা দিছে কেন…?
– আমি নাকি সারাক্ষন ফোন নিয়ে বসে থাকি। উল্টা পাল্টা কথা বললে কার না মেজাজ খারাপ হয় বলো। তাই ঝাগড়া করছি।
: ঠিকই তো বলছে…!

– দেখ আবির, আমার মুড ভাল না। উল্টা পাল্টা কথা বলবে না। আম্মু আমাকে বকা দিছে তুমি বুঝলে কিভাবে।
: তোমাকে আমি না বুঝলে কে বুঝবে বলো।
তুমি যে আমার।
– হইছে আর ঢং করা লাগবো না।
: দেখ আকাশ থেকে মেঘটা কেটে গেছে ।
– কই আগের মতই তো আছে।
– না।
: হ্যা।
– বলছি না।
: আরে হ্যা।
– আবির ভাল হবে না বলে দিচ্ছি।
: I LOVE U
– I LOVE U TOO

ভালবাসা খুব দামি একটা শব্দ। সারাজীবন এক সাথে থাকার অঙ্গীকারনামাই হচ্ছে ভালবাসা। ২ টি মনের বোঝাপড়া হয় এই সম্পর্কে। একটু অভিমান, একটু দুষ্টামি, একটু বোঝাপড়া, একটু ঝগড়া সব আছে এই সম্পর্কে।

এই সম্পর্ক ছিন্ন হবার নয়। পূর্নতা পাক পৃথিবীর সমস্ত ভালবাসা। সুখে থাকুক আবির এবং মেঘলা!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত