:এই আপনার সমস্যা কি বলুন তো?
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম।মেয়েটা এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো যেন সে কিছুই করে নি।কিচ্ছু জানে না সে।একেবারে নিষ্পাপ শিশু।চোখ দুটো গোল গোল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।একটু শব্দও করছে না।অদ্ভুত! মেয়েটা কথা বলে না কেন?কানে শুনে না নাকি? আমি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।মেয়েটা তখনও আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।একেবারে আমার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল।আমি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।কেউ কখনও আমার দিকে এভাবে তাকায় নি।একেবারে চোখে চোখ রাখে নি।আমিও কারো দিকে এমন ভাবে তাকাই নি।কোন মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারি না।কেমন জানি ভয় হয়।কথা গুলো আটকে যায় গলায়।বের হয় না।অস্বস্তিতে পড়ে যাই।যেমনটা এখন হল।আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
:আপনাকে কিছু একটা বলেছি।শুনেছেন সেটা?
মেয়েটা তখনও কিছু বলল না। কেবল তাকিয়ে থাকল।আমার অস্বস্তির মাত্রাটা আরেকটু বেড়ে গেল।আমি আড় চোখে একবার মেয়েটাকে দেখলাম।আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।চারপাশ দেখে আবার মেয়েটার দিকে তাকালাম।আরে! মেয়েটা হাসছে।মনে মনে হাসছে মেয়েটা।যা আমি ওর মুখ দেখে বুঝতে পারছি।আমাকে অস্বস্তির মাঝে ফেলে হয়ত মেয়েটা মজা পেয়েছে।খুব মজা পাচ্ছে।আমি বললাম,
:আরে! এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কথা বলতে পারেন না? নাকি কানে শুনেন না? বোবা নাকি?
নাহ্! এইবারেও মেয়েটা কিছু বলল না।হঠাৎ-ই আমি লক্ষ্য করলাম আমার মেজাজটা তিব্র ভাবে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।রাগটা বেড়ে যাচ্ছে।নাহ্! এখানে আর এক মূহুর্তও থাকা যাবে না।মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটা রাগি লুক দিয়ে চলে এলাম।ভার্সিটির গেইট দিয়ে বের হয়ে একটা রিক্সা নিলাম।তারপর সোজা বাড়িতে।মেয়েটা সত্যিই আমার মেজাজটা খারাপ করে দিয়েছে।
অনার্স পরিক্ষা শেষ।রেজাল্টের অপেক্ষায় ছিলাম আমি।রেজাল্ট পাওয়ার আগেই বাবা আমাকে এখানে পাঠিয়ে দেন।তার ইচ্ছা আমি এখানেই মাস্টার্স করি।কত করে বুঝালাম।না! সে তার কথা থেকে বিন্দুমাত্র নড়বে না।একেবারে যা বলছে তাই।তার ভাষ্য অনুযায়ী আমি যদি ওখানে থাকি তাহলে নাকি আমার সমস্যা হবে।খুব বড়সড় সমস্যা হবে।বাবা আবার একজন বড় রাজনীতিবিদ।আমাদের উপজেলার চেয়ারম্যানও তিনি।তবে সেদিকে আমাকে কখনই জড়াতে দেয় নি।না দিলে কি হবে।জড়াব না জড়াব না বলে আমি অনেকটাই রাজনীতির সাথে জড়াতে শুরু করি।বাবা হয়ত সেটা ঠিকই আঁচ করতে পেরেছেন।তা না হলে তিনি আমাকে কখনই এখানে পাঠাতেন না।আমাকে নিজের কাছে রেখে মানুষ করতেন।আমিও ব্যাপারটা বুঝতে পারি।তাই এখানে আসতে বাধা দিলাম না আর।আর যাই হোক! আমাকে যেভাবেই হোক আমার ক্যারিয়ার আমাকে তৈরি করতে হবে। বাবার মত এমন রাজনীতিবীদ কিংবা উপজেলার চেয়ারম্যান হওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই।তাই চলে এলাম এখানে।তাছাড়া অন্য একটা কারনও ছিল।
এখানে আসার পরই কিছু একটা অনুভব করি আমি। আমার কেন জানি মনে হল কেউ আমাকে অনুসরণ করছে।কিংবা আমাকে ফলো করছে।কিন্তু কে করছে সেটা আমার একদমই জানা ছিল না।কেবল মনে হত এক জোড়া চোখ আমার উপর নজর রাখছে।আমার কিছুটা সন্দেহ হল।বাবা রাজনীতি করে। তার শত্রু পক্ষ অবশ্যই আছে।তাদের কেউ নয় তো? আমাকে কিডন্যাপ করবে বা মেরে প্রতিশোধ নিবে।অনেকগুলো চিন্তা আমার মাথায় খেলতে থাকল।আফজাল সাহেবের পাঠানো লোক নয় তো? কেননা এর আগেও আমার উপর এমন হামলা হয়েছিল।একবার তো কিডন্যাপই হয়ে গিয়েছিলাম।
যাক! অতিত আপাতত বন্ধ রাখা হল।বর্তমান নিয়ে চিন্তিত আমি।আমাকে যে করেই হোক সেই অজ্ঞাত জনকে খুঁজে বের করতে হবে।যে আমার উপর নজর রাখছে।তার আগে আমাদের এলাকায় একটা ফোন করা দরকার। আরাফাতকে ফোন দিলাম।ও যা বলল তাতে মনে হল আমার ধারনা ভুল। অন্তত আফজাল সাহেবের কোন লোক আমাকে ফলো করছে না।কারন তাকে নাকি আমাদের এমপি মকবুল সাহেব থ্রেড দিয়েছেন।বলেছেন আমাদের কোন ক্ষতি হলে সে নাকি আফজাল সাহেবকেই দায়ী করবে।আমার বাবাকেও একই থ্রেড দিয়েছে।আফজাল সাহেব ও বাবা উভয়ই এমপি সাহেবের কথা শুনতে বাধ্য।তাই মোটামুটি সিওর হওয়া যায় যে সামনে আমার এমন কোন বিপদ হবে না।বরং আফজাল সাহেব আমার জান বাঁচাতে বাধ্য। যাক বাবা বাঁচা গেল।
একেবারে খুশিতে গদগদ অবস্থা।ফুরফুরে মন নিয়ে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরছিলাম।ঠিক তখনই আমার মনে আবারও কেউ একজন আমাকে ফলো করছে।আমি পিছন ফিরে তাকালাম। নাহ্! কেউ নেই।সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকলাম।পুরো পথে আমার আর একবারও মনে হল যে কেউ আমাকে ফলো করছে।এ আমার মনের ভুল।কিন্তু পরের দিন ভার্সিটি গিয়েই মূল ঘটনার উদ্ভব ঘটল।ভার্সিটি যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষনই আমার সম্পুর্ন অস্বস্তিতে কেটেছে।আমার বারবার মনে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু যখন চারপাশ দেখি তখন তেমন কাউকেই দেখতে পাই না।ব্যাপারটা আমার অস্বস্তির মাত্র একটু বাড়িয়ে দিয়েছে।একটা ক্লাস বাকি থাকতেই ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলাম।পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার বের হওয়াতে একটা মেয়েও বের হয়েছে।আমি সেটা খুব একটা গায়ে মাখলাম না।সোজা লাইব্রেরীতে চলে গেলাম।হুট করেই একটা বইয়ের কথা মনে পড়ে গেল।”মেমসাহেব ” বইটার নাম।বইটা পড়তে হবে।”তাসফি” নাকি এই বইটা পড়ে একেবারে কেঁদেই দিয়েছে।আমাকে বলার সময়ও দেখলাম তার মুখটা বেশ গম্ভির হয়ে আছে।তাই বইটা পড়ার জন্যে আগ্রহ জন্মাল।আমি লাইব্রেরীতে ঢুকতেই দেখলাম মেয়েটা আমার পিছন পিছন লাইব্রেরীতে ঢুকল তখনও আমার ওর উপর সন্দেহ হয় নি।কিন্তু যখন দেখলাম মেয়েটা বই ঘাঁটছে আর আড় চোখে আমাকে দেখছে তখনই আমার একটু সন্দেহ হল।একটু খুঁজতেই আমার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা পেয়ে গেলাম।তখনই মাথায় একটু বুদ্ধি আসল।
মেয়েটাকে একটু পরিক্ষা করা দরকার।তাই আমি ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে বসলাম। হাতের মেমসাহেব বইটা খুললাম।মেয়েটা আমার দেখাদেখিতে বসল না।লাইব্রেরীর এদিক ওদিক কি জানি খুজতে লাগল।আমি ততক্ষনে ‘মেমসাহেব’ বইটার এক পৃষ্ঠা পড়ে পেলেছি। মেয়েটা তখনও এসে বসল না।আমি একটু হতাস হলাম।নাহ্! এই মেয়েটা তেমন কেউ না যে আমাকে ফলো করে।দ্বিতীয় পৃষ্ঠা পড়ার পর আমার হতাশাটা আরেকটু বেড়ে গেল।আমি উঠে দাঁড়ালাম।দাঁড়াতেই দেখলাম মেয়েটা বুক সেল্পের ফাঁক গলে আমাকে দেখছে।আমি যে ওর দিকে তাকিয়ে আছি সেটা হয়ত সে তখনও বুঝে উঠতে পারে নি।আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কয়েকটা তুড়ি বাজালাম। তুড়ির শব্দ শুনতেই মেয়েটা কিছুটা হকচকিয়ে গেল।আমাকে দেখানোর জন্যে কয়েকটা বই এদিক সেদিক করতে ব্যাস্ত হয়ে গেল।একটা বই হাতে নিয়ে কি জানি দেখল।তারপর আমার দিকে একবার তাকিয়ে হন হন করে চলে গেল।আমি মেয়েটার এমন কান্ড দেখে মৃদু হাসি।মনে মনে বলি,”তাহলে এই সেই দু’চোখ! যা আমাকে ফলো করে।আমাকে জ্বালাতন করে।”
ভার্সিটিতে ঢুকতেই আমি কিছুটা চমকে উঠলাম।আরেকটু কাছে যেতেই আমার অবাক হওয়ার মাত্রটা তিনগুণ বেড়ে গেল।নিতু! নিতু এখানে কি করছে? ও তো এখানে থাকার কথা না।তাহলে এখানে কি করছে।আবার আমার সাথে. . .
আমার এখানে আসার দ্বিতীয় কারন হল এই নিতু।বাবার বিপক্ষদল, আফজাল সাহেবের একমাত্র কন্য।
তার এখানে আসার পিছনে নিশ্চই কোন কারণ তো আছে বটেই।তবে সে নিয়ে আমাকে না ভাবলেও চলবে।
আমি ভাবা-ভাবি একদম বাদ দিয়ে দিলাম।অনিচ্ছা স্বত্বেও আজ ভার্সিটি এসেছি।আমার আসার কোন ইচ্ছে ছিল না।তারপরেও চলে এলাম।কেন সেটা আমার জানা নেই।ভার্সিটিতে না আসার কারণ হল “মেমসাহেব।”
‘মেমসাহেব’ উপন্যাসটি আমাকে একেবারে কাঁদিয়ে দিল।রাতে একটুও ঘুমাতে পারি নি।মনের মাঝে কিছু একটার অপুর্নতা অনুভব করি।সারা রাত এমনকি এখনও আমার একটা কথাই মনে হচ্ছে কেন মেমসাহেব কে মরতে হল? কেন সে মরে গেল।গল্পটা আমার হৃদয়ে একেবারে গেঁথে গেল।আমার প্রচন্ড খারাপ লাগতে শুরু করল।তাই ক্লাস করলাম না।ভার্সিটির মাঠ ধরে হেঁটে একেবারে শেষ সীমানায় এলাম।পিছনে শ্যাওলা পড়া দেয়াল।আমি বসে আছি ইটের তৈরি একটা বেঞ্চিতে।কোন মতেই আমার ভালো লাগাতে পারছি না।আমার একটুও ভালো লাগছে।মন চাচ্ছে মেমসাহেবকে টেনে নিয়ে আসি এবং রিপোর্টারের সাথে তার বিয়েটা দিয়ে দেই।কিন্তু সেটাও করতে পারছি না।কেবল খারাপ লেগেই যাচ্ছে।তাই চুপচাপ বসে রইলাম।
রোদের মৃদু আলো প্রখর হতে থাকল।গাছের পাতা গলে এক গুচ্ছ আলো আমার মুখে পড়ছে।সেই জায়গাটা কিছু সময়ের মধ্যেই গরম হয়ে গেল।কিন্তু আমার একটুও খারাপও লাগছে না।আবার ভালোও লাগছে না।আমি জায়গা হতে নড়লাম না।ঠিক আগের জায়গাতেই বসে রইলাম।সূর্যের আলো মুখে পড়ছে।পড়ুক! আমি এখান থেকে একটুও নড়লাম না।আলোর তিব্রতা আরেকটু বেড়ে গেল।এবার পুরো মুখে পড়তে শুরু করল।নাহ্! এবার আর পারলাম না।আমাকে নড়তেই হল।আমি সেখানে থেকে সরে বেঞ্চটার একপাশে গিয়ে বসলাম।সেখানে রোদ নেই।রোদটা এখন আর আমার মুখে পড়ছে না।আমার পায়ের একপাশে পড়ছে।আমি আমার পায়ের দিকে তাকালাম।হঠাৎ-ই দেখলাম পায়ের আলোটার উপর কারো ছায়া পড়েছে।উজ্জ্বল আলোটা আর দেখা গেল না।আমি মুখ উপরের দিকে তুললাম। দেখলাম দু’জোড়া চেনা চোখ। দু’জোড়া লাল টকটকে ঠোটের দেখা আজ অনেক দিন পর পেলাম।মেয়েটা বিনয়ী হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।আমার এই দুই চোখ দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।এই দুই লালা টটকে ঠোট দেখে এখন আর আমার ভালো লাগে না।মেয়েটার মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকাটা একদম ভালো লাগে না আমার।হাসিটাও না।হালকাপাতলা গড়নের মেয়েটাকে দেখলে আগে আমি প্রতিদিন প্রেমে পড়তাম। এখন আর পড়ি না।একদম না! তার দুচোখের ভাষা আগে বুঝতে পারতাম।কিন্তু পারি না।পারার চেষ্টাও করি না আমি।চেষ্টা করাটাই অসহ্য লাগে আমার।সাথে মেয়েটাকেও।
মেয়েটা আমার পাশে বসল।ঠিক আগে আমি যেখানে বসেছিলাম। রোদটা সেখান থেকে এখনও যায় নি।এখনও আছে।মেয়েটার মাথায় পড়ছে।নিশ্চই গরম লাগছে।লাগুক! আমার কি? কি হয় সে আমার? আগের মত হলে ওকে সরিয়ে আমি নিজে বসতাম ওখানে।কিন্তু এখন আমার তেমন কোন ইচ্ছেও হল না।আমি নিজের জায়গাতে বসে রইলাম।খুব মনোরম একটা গ্রান ভেসে আসছে পাশ থেকে।এই গ্রানটার সাথে খুব পরিচিত আমি।অনেক দিন এই গ্রানটা পাই নি।আজ পেলাম।তবে সেটা আমার একদমই ভালো লাগছে না।আমি সেদিকে তাকালাম না।নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।পাশ থেকে নিতু বলে উঠল,
:কেমন আছ?
আমি ওর দিকে তাকালাম না।মৃদু স্বরে হাসলাম।বললাম,
:আলহামদুলিল্লাহ্! ভালো আছি।তুমি?
ও ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল,
:এই যাচ্ছে আরকি।সময় গুলো যে কখন চলে যায় একটু টেরও পাই না।
:সময় স্থির থাকে না নিতু।চলমান।ধরাও যায় না।আবার ছোঁয়াও যায় না।কেবল অনুভব করা যায়।অবুভব করলে অবশ্যই টের পেতে।
:আগের মতই রয়ে গেল।অদ্ভুত! একটুও বদলাও নি তুমি।আমি তো ভেবেছি তুমি আমার সাথে কথাই বলবে না।অথচ তুমি এখনও আমার সাথে কি সুন্দর ভাবে কথা বলছ।
:আমি তোমার মত নই নিতু।আমি তোমার মত হতে পারি নি।এতটা নিষ্ঠুর হতে পারি নি আমি।আমাদের ভালোবাসার প্রতি আমার অগাধ সন্মান ছিল,আছে এবং থাকবে। সেই সূত্রেই আমি তোমার সাথে কথা বলছি।তা না হলে আমার তোমার সাথে কথা বলার একটু ইচ্ছেও নেই।
:আমি জানি আমি খারাপ। আমার জন্যেই তোমাকে মার খেতে হল।সব দোষ আমার!আমি স্বীকার করছি।মেনে নিচ্ছি।আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।আমাকে এত বড় পাপ হতে উদ্ধার কর তাসফি। প্লিজ আমাকে উদ্ধার কর।
মেয়েটা কেঁদে উঠল।কান্না শুরু করে দিল সে।একদম আগের মত।একটু পরিবর্তনও হয়নি।আমি মাটির দিকে তাকিয়ে আছি।ঠিক তখনই আমি লক্ষ্য করলাম ক’ফোটা জল মাটিতে পড়ল। নিতুর চোখের জল।অন্য সময় হলে আমার খারাপ লাগত।নিজের হাত দিয়ে চোখের জল গুলো মুছে দিতাম।কিন্তু এখন আমার একটু খারাপও লাগল না।চোখের জল গুলো মুছে দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও হল না।আমি কিছু সময় চুপ থাকলাম। তারপর বললাম,
:ক্ষমা! সে তো আমি সেদিনই করেছি যেদিন তুমি আমার জীবন থেকে বিদায় নিলে। আমি ক্ষমা করতে শিখেছি নিতু।তুমি শিখ নি। তুমি ক্ষমা করতে জানো না নিতু।
:এতটা নিষ্ঠুর হইও না তাসফি। প্লিজ এতটা না।কষ্ট হয় আমার।ভিষন কষ্ট হয়।আর সইতে পারি না।তুমি জানো এতটা দিন আমার কিভাবে কেটেছে? কতটা কষ্টে আমার সময় গুলো কেটেছে সেটা তুমি জানো না।জানলে এত কুৎসিত কথা বলতে না।তুমি জানো না তাসফি, তুমি যাওয়ার পর আমার আলোটা হারিয়ে যায়।জীবনটা অন্ধকার হয়ে যায় আমার।একটু দেরিতে হলেও আমি সেটা বুঝতে পেরেছি।আর সেটাই এখন প্রতিটা ক্ষনে ক্ষনে আমাকে তিলে তিলে মারে।আমি আর সইতে পারি না তাসফি। একদম না।তুমি প্লিজ ফিরে এস তাসফি। প্লিজ ফিরে এস।আমার আলো হয়ে ফিরে এস।প্লিজ।আমি যে তুমি ছাড়া অপূর্ন।একদম অপূর্ন। আমি সব সত্যি জানি তাসফি। আমি সবটা জানি।আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এখন তুমি হলেই আমি পূর্ন হব।তা না হলে এই আমিটা যে অপূর্নই রয়ে যাবে।প্লিজ ফিরে এস।
কন্ঠটা ভেজা।ভালোবাসায় মিশ্রিত। কোন পুরুষ এমন কন্ঠকে অবহেলা করতে পারত না।একদমই না।কিন্তু এমন কন্ঠ শুনে আমার একটু খারাপও লাগল না।অবহেলা করতেও বাধা দিল না।মন পড়ে আছে সেই মেমসাহেবর কাছে।সেটা নিয়ে মন খারাপ।ভিষন মন খারাপ। । নিতুকে নিয়ে নয়। আমি বললাম,
:নিতু তুমি জানো মানুষ প্রানিটা বড় অদ্ভুত। এরা ভুল কাজ করতে বেশি ভালোবাসে।এবং ভুল করেও।তারপর তা থেকে শিক্ষা নেয়।খুব কম লোকই প্রথমে ভুল করে আবার দ্বিতীয়বার সেই ভুলটাই করতে যায়।জানো সেই কম লোক কারা? যারা বোকা তারা।তারা ইচ্ছেতেই আবার সেই ভুল করে।আমি বোকা নই নিতু।একবার ভুল করে আর করতে চাই না আমি।আমার ভেতর ‘তুমি’ নামক যে গাছটা ছিল সেটা মারা গেছে নিতু।সে কবেই সেটা মরে ছাঁই হয়ে গেছে।সেটা আর জাগবে না নিতু।কখনই জাগবে না।
:জাগবে! তুমি চাইলে অবশ্যই জাগবে।
:আমি চাইলেও সে জাগবে না।কারন তুমি নিজ হাতে সেটা গলা টিপে মেরে ফেলেছ।আর চাইও না সেটা আবার জাগুক।ভালো থেক।
এই বলে আমি উঠলাম।তখনই ও আমার হাত ধরে ফেলল।আমি অনেক্ষন পর তাকে দেখলাম।তার দিকে তাকালাম।সে কান্না করছে।খুব কান্না করছে।চোখ মুখে রাজ্যের বিষন্নতা বিরাজমান।বলক,
:প্লিজ তাসফি!
আমার কেন জানি ওর এমন চেহারা দেখে একটু মায়াও হল না।সতিই আমার মন তাকে এখন আর চায় না।আমি আস্তে করে তার হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।কিছুদুর যেতেই ও দৌড়ে এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।ওর এমন কান্ড দেখে আমি হতভম্ব না হয়ে পারলাম না।জড়িয়ে ধরে খুব কান্না শুরু করে দিল।সেদিনও ও এমন কান্না করেছে।ওর এমন কান্নার মায়ায় পড়ে আমি হোচট খাই।আমি আর হোচট খেতে চাই না।আমি ওর মায়ায় পড়তে চাই না।আমি ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।সে ছাড়ল না।এমন সময় কেউ একজন ওকে এক টান দিয়ে সরিয়ে ফেলল।আমি কিছুটা অবাক হয়ে পিছন ফিরলাম।তাকিয়ে দেখি তুলি দাঁড়িয়ে আছে।চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে।যেন কাউকে আস্ত খেয়ে ফেলবে।আমি একটু ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম যে তুলি রেগে যাচ্ছে।এবং তার রাগের মাত্র অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে।আমি কিছু বললাম না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম।তুলি আগ্নি দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ নিতুকে পরক্ষ করল।নিতু কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আছে দেখলাম।হয়ত কিছু বুঝতে পারছে না।তুলি আর দাঁড়াল না সেখানে।একেবারে সোজা আমার সামনে চলে এল।আমার হাত ধরে টানতে টানতে একেবারে নিতুর আড়ালে নিয়ে এল।আমি একটু পিছন ফিরে তাকালাম।দেখলাম সে বেঞ্চিতে বসে মুখে ওড়না গুঁজে কান্না করছে।আমার কেন জানি মেয়েটার প্রতি মায়া হল।কারন মেয়েটা অনেক্ষন রোদের মাঝে ছিল।
তুলি আমাকে আড়ালে নিয়ে এসেই একটা বেঞ্চিতে বসাল।যেখান থেকে নিতুকে দেখা যাচ্ছে না।আমি তখনও আবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।করছে কি মেয়েটা।হুট করেই তুলি আমার গলা চেপে ধরল।তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেক রেগে আছে।রাগের দরুন সে আমার গলা চেপে ধরেছে।আমি চিল্লাতেও পারছি না।আবার তাকে মারতেও পারছি না।কি যে করি।আমি ওর হাতটা ধরে সারানোর চেষ্টা করলাম।নাহ্। পারলাম না।এত শক্তি মেয়েটা পেল কই।দেখে তো মনে হয়ে না তার এত শক্তি আছে।তুলি তার অগ্নিময় চেহারাটা আমার মুখের সামনে নিয়ে এল।ওর নাক থেকে রাগান্বিত গরম নিঃশ্বাস বের হচ্ছে।আর মুখে গুন গুন করে কি যেন বলছে।আমি কোন মতে বললাম,
:ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি।ছাড়ুন বলছি?
ব্যাথা পাচ্ছি বলাতেই দেখলাম সে গলা থেকে সরিয়ে নিল।তারপর আমার সামনে পায়চারী করা শুরু করে দিল।দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে তার রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।একদম না! আমি দৌড়ের জন্যে প্রস্তুতি নিলাম।অবস্থা বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না।সে গুন গুন করে বলছে,
:আমার সামনে ওকে জড়িয়ে ধরে! কত বড় সাহস ওর।মেয়েটাকে তো আজ খেয়েছি।এই বলে সে ফোন বের করল।সুযোগটা তখনই পেয়ে গেলাম।আমারে আর পায় কে! নে! পালা তাসফি! পালা।তা না হলে এই দজ্জাল মাইয়া তোরে খাই ফালাইব।এক দৌড়ে অনেক দুর চলে এলাম।একবার পিছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম সে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তারপর আস্তে করে বেঞ্চটায় বসল।হাতে ফোন নিয়ে কি জানি করল।ধুরর! এত কিছু দেখার সময় নেই।আমাকে পালাতে হবে ব্যস।
কিছুদুর যেতেই দেখলাম কালো ষাড়ের ন্যায় দুইটা কালো মানব আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বিশাল দেহি এমন মানুষ গুলোকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।তারপর ভয় কাটিয়ে একটা ভাব নিয়ে কেলো একটাকে বললাম,
:হেই? আর ইউ ফ্রম উগান্ডা?
তারা কি বুঝল জানি না।শুধু আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসল।তারপর যা করল তার জন্যে আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।তারা দুজনেই আমাকে কোলে তুলে নিল।যে দিক থেকেই আসছি সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে।নিশ্চই তুলির কাছে।আমার আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ রইল না।কারন তুলির বাবা এই ভার্সিটির চেয়ারম্যান। একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীও।টাকা পয়শারও অভাব নেই তাদের। এমন দু’চারটে ভাড়াটে বডিগার্ড রাখা কোন ব্যাপারই না।আমার অনেকটাই জ্ঞান হারানোর উপক্রম হয়েছে।যেখানে বাগের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।ওর আমাকে নিয়ে সোজা তুলির কাছে গেল এবং ঠিক তুলির পাশেই বসিয়ে দিল।তারপর ষাড় দুটি হেলতে দুলতে চলে গেল।সেদিক থেকে চোখ ফিরাতেই দেখলাম তুলি আমার খুব কাছে, আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি তাকাতেই বলল,
:কি? সমস্যা কি? দৌড়ালে কেন?
:ক-ক-কই। কই দৌড়ালাম।
:তা একটু আগে কি করলে?
:ওও।সেটা।আরে সেটা তো জগিং ছিল।
:এই ভর দুপুরে তুমি জগিং করছ।দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমার জগিং।
:থাক! আর দেখাতে হবে না।যা দেখলাম এগুলো হজম করতেই অনেক দিন লেগে যাবে।
:এই তো।লক্ষি বাবু।
হঠাৎ ই আমার মনে হল আরে মেয়েটা তো আমাকে তুমি করে বলছে।আমাকে তুমি করে বলল কেন? জিজ্ঞেস করতে গিয়েই থেমে গেলাম।জেনেশুনে নিজের বিপদ না আনাই ভালো।এর চেয়ে ভালো চুপচাপ বসে থাকি।একটু পর তুলি বলে উঠল,
:মেয়েটা কে?
:কোন মেয়েটা?
:ন্যাকামো করবা না!
আমি একটু চুপ হয়ে গেলাম।কিছু সময় ওর দিকে তাকালাম।সে অনেকটাই উত্তেজিত হয়ে আছে।রেগে আছে অনেকটাই।বললাম,
:সে! সে অতিত।আমার অতিত।যেটা এখন আমার কাছে একটা দুঃস্বপ্ন।
:ঠিক বুঝলাম না।বুঝিয়ে বল।
:ওর নাম নিতু।আমার সাথেই পড়ত।কলেজ থেকে প্রেম আমাদের। ওর বাবাও রাজনীতি করে। আমার বাবাও।এই দুজনের মাঝে অনেক শত্রুতা।ঘোর শত্রুতা যাকে বলে আরকি।তবুও আমরা একজন অপর কে খুব ভালোবাসতাম।বলতে গেলে দুজন দুজনের প্রেমে অন্ধ ছিলাম।হঠাৎ-ই কোন এক অজ্ঞাত ব্যাক্তি ওর ভাইকে মারে।অনেক মারে।যার দরুন তাকে দশ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়।ওরা ভাবে এটা আমরা করেছি।তাই আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে ওরা নিতুরকে ব্যবহার করে।নিতু হঠাৎ করেই আমার সাথে আরো ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করে।নিতুকে বুঝাই। আমার বাবা কিংবা তার কোন লোক যে নিতুর ভাইকে মারেনি সেটা আমি ওকে বুঝাই।ও বুঝে যায়।খুব সহজেই বুঝে যায়।সেই সাথে আমার আর ওর সম্পর্ক আরো একটু গাঢ় হয়।
তারপর হঠাৎ-ই একদিন আমার কিডন্যাপ হয়। স্বয়ং নিতু আমার কিডন্যাপ করায়।আমি কিছুটা অবাক হই।নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছি না।এই ছিল আমার প্রতি ওর বিশ্বাস। এই ছিল ভালোবাসা।একেই কি আমি এত দিন ভালোবেসেছি? মনে হতেই কেমন লাগে আমার। ও নিজের হাতে মারে।রড দিয়ে মারে।খুব জোরে।মাথায়, বাজুতে, পিঠে।আমি চিৎকার দেই।কষ্টের চিৎকার। ভালোবাসা হারানোর চিৎকার। ওর আঘাতে আমি একটু ব্যাথাও অনুভব করি না।ও আমাকে কিডন্যাপ করেছে ওর ভাইকে মারার অপরাধে যা সম্পুর্ন মিথ্যা।সেই মিথ্যার উপর ভিত্তি করে সে আমাকে কিডন্যাপ করে? এটা জেনে এতটাই আঘাত পেয়েছি যে ওর দেওয়া প্রতিটি আঘাতই আমার কাছে তুচ্ছ মনে হয়।খুব তুচ্ছ মনে হয়।তারপর হয়ত আমার প্রতি ওর দয়া হয়। আমাকে মেরে আমার বাড়ির সামনে ফেলে যায়।আমার জিবন থেকে একটা বছর চলে যায়।পুরো একটা বছর আমার চিকিৎসা চলছিল।ভালো প্রতিশোধ নিয়েছে ও।আমার ওকে খুব বলতে ইচ্ছে মেরেছে যেহেতু একেবারি মেরে ফেলত।কেন খামখা আমাকে এভাবে রেখে এল।ইচ্ছে হয়। তবুও বলি না।কোথাও যেন বাধা পাই।
আমি এই বলে তুলির দিকে তাকালাম।মেয়েটাকে কেমন জানি বিষন্ন দেখাচ্ছে।ফর্সা মুখটা কালো হয়ে আছে।মুখ কালো করে বলল,
:তুমি তো চাইলে প্রতিশোধ নিতে পারতে।
:নিলাম তো।
:কিভাবে?
:এই যে আজকে ওকে একা ফেলে চলে এলাম।হাজার বলার পরেও থাকলাম না।এর থেকে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে বল।
:হুম! তা ঠিক। আচ্ছা তুমিকি এখনও ওকে ভালোবাস?
আমি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,
:নাহ্! ওকে আমি ভালোবাসি না।আমার জন্যে ও মরে গেছে।
:এইত।গুড।এসব মেয়েকে ভালোবাসার থেকে না বাসাই ভালো। কি বল?
:হুম।সেই থেকে মেয়েদের প্রতি একটা অরুচির সৃষ্টি হয়েছে আমার।
:সব মেয়েদের জন্যে।
:হুম।
:কেন? সবাই তো আর এক না।
:হুম তা ঠিক।সবাই তো আর এক না।তবে এর সংখ্যা খুব কম।
:আমি অতশত বুঝি না।কে কেমন সেটা আমার জানার বিষয় নয়। আমার শুধু একটাই চাওয়া। আর সেটা হচ্ছ তুমি।বুঝতে পারছ?
:নাহ্। আমি বুঝতে পারি নাই।
:আসো।বুঝিয়ে দিচ্ছি।
:নাহ্ ! আমার বুঝতেও ইচ্ছে হয় না।
আমি এই বলে উঠে চলে আসতে থাকলাম।পিছন থেকে ও বলল,
:আমাকে চিন না তুমি।তোমার কিভাবে ইচ্ছে করাতে হয় সে আমার জানা আছে।
সত্যি সত্যি মেয়েটা আমার আর পিছু ছাড়ল না।একেবারে আঠার মত লেগে রইল।যখন দেখলাম যে অবস্থা সুবিধার না তখন নিজেকে কিছুদিন আড়াল করে ফেললাম।আসলে মেয়েটা এমন ভাবে আমার পিছু নিয়েছে যে আমিও ওর প্রতি উইক হতে থাকলাম।আমার উইক হওয়ার একদমই ইচ্ছে নেই।তাই আত্মগোপন করলাম। পুরো এক সপ্তাহ ভার্সিটি গেলাম না।সেদিন ছিল শুক্রবার। বিকেলবেলা একটু হাঁটতে বের হলাম।ঘরে এক একা থাকতে বোর লাগছিল।হাটতে ছিলাম ফুটপাতের উপর দিয়ে।হঠাৎ -ই কালো একটা মার্সিডিজ গাড়ি আমার থেকে হাত পাঁচেক দুরে থামল।মার্সিডিজ এর দরজা ঠেলে বের হল কালো দুটি মানব ষাড়।আরে এদেরকে তো আমি চিনি। এরা তো তুলির গোপন বডি গার্ড।যাদের কথা তুলি ছাড়া আর কেউই জানে না।আমি অবশ্য সেদিনই জানতে পেলাম। কথা গুলো ভেবে শেষ করতে পারলাম না।তার আগেই কাঁদে কারো ভারি হাত পড়ল।নাহ্। এই মেয়ে আর আমাকে শান্তি দিবে না।একদমই না।আমাকে নিজের করে নিবেই। যেভাবে লোক জন লাগিয়েছে আমার পিছনে।
গাড়িটা আমাকে নামিয়ে তারপর হাওয়া হয়ে গেল।আমি কিছুটা হতভম্ব হয়ে এলাম।সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম তুলি একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছে।আমার হাত দশেক দুরে হবে।আমি ওর দিকে তাকাতেই সে চিৎকার দিয়ে বলে-
:আসো আজকে।খবর আছে তোমার।আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।
আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাবলাম,
:নাহ। মেয়েটা সত্যি সত্যিই আমার খবর করে ছাড়বে। অন্তত তার ভাব দেখে সেটাই বুঝা যাচ্ছে।বাকি জীবন যে কিভাবে এই দজ্জাল মাইয়ার সাথে কাটাব সেটা ভাবতেই আমার গা সিউরে উঠছে।অবশ্য ওর এমন পাগলামো আমার বেশ ভালোও লাগে।আস্তে আস্তে,ভয়ে ভয়ে ওর দিকে এগুলাম।না জানি আজ কয়টার খবর করে আল্লাহই জানে ভালো। খোদা! হেল্প মি।