ভালোবাসা

ভালোবাসা

:আচ্ছা তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাস?

ফোনের ওপাশ থেকে মিতু আমাকে কথাটা বলল।আমি ওর এমন কথা শুনে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যাই।বলে কি মেয়েটা! আমি যে ওকে ভালোবাসি এ নিয়ে ওর সন্দেহ আছে?অবশ্য থাকারই কথা।অামার যা স্বভাব! আমি এক প্রকার অস্বস্তিতে পড়ে যাই।কি বলব ঠিক খুঁজে পাচ্ছি না।কিছু সময় চুপ করে থাকি।ও পাশ থেকে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস এর আওয়াজ ভেসে এল।আমার নিরাবতা দেখে মিতু আবার বলে উঠল,

:কি হল? কথা বলছ না যে? আমি যে তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছি সেটা কি তুমি শুনতে পাও নি?

আমি অাবারও কিছু বললাম না। চুপ করে থাকলাম।মিতুর গলার আওয়াজ আমার স্বাভাবিক মনে হল না।কেমন বিপদ বিপদ গন্ধ মাখানো আওয়াজ। আমি ঠিকই টের পেলাম যে মিতু রেগে যাচ্ছে।ভিষন রেগে যাচ্ছে।যা রাগ না মেয়েটার!অতএব এখন চুপ থাকাটাই শ্রেয়। আমিও চুপ! সেও চুপ! এর কয়েক সেকেন্ড পর ওপাশ থেকে ভেসে এল একটি ঝাঁঝালো কন্ঠ।আমার মোবাইলের লাউডস্পিকার যেন আপনা আপনি চালু হয়ে গেল।ওর তীক্ষ্ণ, ঝাঁঝালো কন্ঠ আমার কানের পর্দা একেবারে নাড়িয়ে দিল।বলল,

:কথা কি কানে যায় না? নাকি শুনেও না শুনার ভান করছ।সেটা তো করবাই। আসলে তুমি তো আমাকে কখন ভালোবাসই নি।আমিই কেবল এক তরপা ভালোবেসে গেছি।তুমি আমাকে একটুও ভালোবাস নি।আর বাসবেই বা কিভাবে।ভালোবাসতে হলে যে একটা মনের প্রয়োজন সেটা তো তোমার নেই।কঠোর এক মন তোমার।রস কস বলতে কিচ্ছু নেই।এত দিন তোমার সাথে থেকে কেবল আমার জীবনের মূল্যবান সময় গুলো নষ্ট করেছি।আর না! ।খবরদার! আমাকে আর ফোন দিবা না।দেখা করা তো দূরের কথা।বেয়াদব ছেলে একটা।
এতটুকু বলে সে একটু থামল।ওপাশ থেকে জোরে শ্বাস নেওয়ার আওয়াজ আসছে।আমি বললাম,
:তাহলে তুমি কি ব্রেক আপ চাচ্ছ?
:হু! ব্রেক আপ চাই।তোমার মত অপয়ার হাত থেকে মুক্তি পেতে চাই।তুমি আসলেই একটা ছোট লোক।শালার সব গরিব গুলোই এমন হয়। রাখ! ফোন রাখ।আর ভুলেও ফোন দিবি না।ছোট লোক কোথাকার!

ফোনটা টুট টুট শব্দ করে কেটে গেল।

আমি নির্বাক হয়ে ওপাশের কথা গুলো গিললাম।কি মধুর কন্ঠ দিয়ে কত গুলো তীক্ষ্ণ, ধারালো, হৃদয়বিদারক কথা বলল সে। আমার জানা মতে মিতুর সুন্দর একটা মন আছে।কিন্তু এরকম একটা কালো,কুৎসিত স্বত্বা যে তার মাঝে রয়েছে এ আমার জানা ছিল না।ওর শেষের কথা গুলো আমার হৃদয়ে আঘাত করেছে ভিষন।চোখ গুলো আপনা আপনি ঝাপসা হয়ে আসছে।কষ্টগুলো একটু একটু তীব্র আকার ধারন করছে।মাথায় কেবল সেগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে।একটু পর এর তীব্রতা বাড়বে।সেই সাথে বাধ ভেঙে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে পানি।আমি জলদি করে উঠে গেলাম।রুমের লাইটটা নিভিয়ে দিলাম।শুয়ে পড়ব তার আগেই চোখের বাধ ভেঙে গেল।পানি পড়তে শুরু করল।আমি উপড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজলাম।বালিশটা ভিজতে লাগল চোখের পানিতে।আর আমি মৃদু আওয়াজে কান্না করছি।কেউ তা শুনছে না।কেবল আমার বালিশটা শুনেছে।তবে সে কিছুই করতে পারছে না।

মিতুকে আমি ভালোবাসি।প্রচন্ড ভালোবাসি তাকে।কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না।কেন জানি না আমার সাথেই কেবল এটাই হয়।আমি আমার ভালোবাসাটাকে তার সামনে ঠিক মত উপস্থাপন করতে পারি না।তার সাথে রাতভর রোমান্টিক কথা বলতে পারি না।কোথাও যেন বাধা পাই।ওর সাথে দেখা হলে আমি বেশিরভাগ সময়ই চুপচাপ থাকি।কথা কম।আমি ওর সাথে বেশি কথা বলার চেষ্টা করি।কিন্তু ভিতর থেকে কিছু একটা আমাকে বাধা দেয়।গলা দিয়ে শব্দ গুলো ঠিক মত বের হয় না।প্রেমিক হওয়ার সুবাদে তাকে আমি দামি কোন উপহারও দিতে পারি না।এত সৌখিনতা আমাদের মত মানুষদের একদম মানায় না।আমি মানুষটা ঠিক অন্য রকম।কি রকম সেটাও জানি না।হঠাৎ-ই একটা টিউশনি পেয়ে যাই।টাকার খুব দরকার আমার।তাই কষ্ট হলেও টিউশনিটা করা শুরু করে দেই।এতে করে মিতুর সাথে যতটুকু কথা হত এখন সেটাও কমে যায়।খুব কম কথা হত আমাদের মাঝে।বাবার চাকরিটা হুট করেই চলে যায়।তাই আমাকে এত চাপ নিতে হচ্ছে।যেখানে বাবার আমাকে টাকা পাঠানোর কথা সেখানে আমাকে এখন পাঠাতে হয়। জীবনটা একটা যন্ত্রের মত হয়ে যায়।সকালেও টিউশনি। তারপর ক্লাস। আবার টিউশনি। চলতেই থাকে।সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে বাসায় আসতে হয়। মাঝে মাঝে না খেয়েই শুয়ে যাই।হাত দিয়ে খেতেও ইচ্ছে হয়।ক্লান্তি আর অবসাদ যেন চেপে ধরে।চোখ গুলো যেন আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়।ঠিক তখন মিতু ফোন দেয়।কথা বলতে পারি না।সে তবুও কথা বলবে।ফোন না ধরলে মেসেজ দিতে থাকে।ফোন ধরে কানের উপর রেখে শুয়ে থাকি।সে কথা বলে।আমি এ পাশ থেকে ‘হু হা’ করি।ও কিছুটা বিরক্ত হয়।এক সময় আমি ঘুমিয়ে যাই। মিতু আমাকে ডাকে।আমি শুনতে পাই না।

একদিন না।দুইদিন না।তিনদিন না।টিউশনিটা পাওয়ার পর থেকেই ওর আর আমার মাঝের দূরত্বটা বাড়তে থাকে।তারই ফল স্বরূপ আজ এ অনাকাঙ্ক্ষিত ব্রেক আপ।
মিতুর এমন কটাক্ষ কথা গুলোয় আমি একটু মন খারাপও করি নি।মেয়েটা আমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে। মাঝে মাঝে ভিষন রেগে গেলে তাল হারিয়ে এসব কথা বলে সে।আমি মনে কিছু নেই না।

ভার্সিটিতে এসেই মিতুকে খুঁজতে লাগলাম।দেখলাম সে তাসফির সাথে লাইব্রেরীর দিকে যাচ্ছে।দেখা মাত্রই আমার বুকটা ধক করে উঠল।কেউ যেন ওকে আমার বুকটা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমি দৌড়ে ওদের সামনে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখেই মিতু কিছুটা বিরক্ত হল।তাসফি আর দাঁড়াল না।মিতুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।বলল,
:আমি ভিতরে আছি।তুমি কথা বলে আস।
মিতুও হাসল।বলল,
:আচ্ছা! তুমি যাও।আমি আসছি।এই জাস্ট পাঁচ মিনিট!
সে কিছু বলল না।আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসল।আমার ইচ্ছে হচ্ছিল যে শালারে এখানেই খুন করে ফেলি।কিন্তু ইচ্ছে হলেই তো আর করা যায় না।তবে আমার অন্তর মহল যে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিল সেটা আমি ঠিকই টের পাচ্ছি।আমি মিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
:তুমি ওর সাথে এত হেসে হেসে কথা বললা কেন?
সে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
:আমার ইচ্ছে।তোমার কি।
:আমার কি মানে! আমার অনেক কিছু।দেখ মিতু আমি একটা পেইনের মধ্যে আছি।আমাকে…
:দেখ! তোমার এত কথা শুনার ইচ্ছে আমার নেই।সর সামনে থেকে। আমি লাইব্রেরীতে যাব।তাসফি বসে আছে।
:তোমার কাছে আমি গুরুত্বপুর্ন নাকি ওই হ্যাবলা তাসফি গুরুত্বপূর্ণ?
:অ্যাই! তুমি ওকে হ্যাবলা বললা কেন?
:হ্যাবলা কে হ্যাবলা বলব না কি ক্যাবলা বলব? শালা ক্ষ্যাত একটা।
:মুখ সামলে কথা বল।তোমার সাহস তো কম না।শুন ও যদি ক্ষ্যাত হয় তাহলে তুমি হলা ডাবল ক্ষ্যাত। কাউকে কিছু বলার আগে নিজের দিকটা একটু ভেবে দেখ।
আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম।বলে কি এই মেয়েটা।ওকে কিছু বললেই মিতুর গায়ে লাগছে।নাহ্! আমি শেষমেশ মিতুকে হারিয়েই ফেললাম।আর মিতু তো ঠিকই বলছে।আমি খানিকটা নরম কন্ঠে বললাম,
:সরি।আসলে আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি ঠিক বুঝতে পারি নি।ওকে এভাবে বলাটা ঠিক হয় নি।আমার দিকটা বিবেচনা করে দেখলে ও আমার থেকেও অনেক ভালো।ক্ষ্যাত সে নয়।ক্ষ্যাত আমি। মাপ করবেন প্লিজ।

এই বলে আমি চলে এলাম।খুব জোরে হাটতে লাগলাম।কেন জানি না খুব কষ্ট হচ্ছে।বুকের বাঁ’পাশটা কেন জানি ব্যাথা করছে।মিতুর প্রতিটা কথা আমার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে।এক সময় স্নায়ুতন্ত্র জানাল, হ্যাঁ সে আপনাকে কটাক্ষ কথা বলেছে।আপনাকে একেবারে হেয় করেছে।এগুলো সব কষ্ট। এগুলো কে কষ্ট রূপে আপনার হৃদয়ে ফেরন করছি।সেগুলো আমার হৃদয়ে এল।এসেই খোঁচাতে শুরু করল।খুঁচিয়ে একেবারে রক্তাক্ত করে দিল।তারপর হঠাৎ-ই আমি অনুভব করলাম আমার চোখ থেকে পড়ছে।হৃদয়ের এমন রক্তাক্ততা আমার চোখ দিয়ে পানি রূপে বের হল।চোখও বাধা দিল না।বেরিয়েই গেল।আম হাত দিয়ে পানি গুলো মুছে ফেললাম।আসলেই আমি ক্ষ্যাত।আমি গরিব।কষ্ট গুলো আমাদের জন্যেই।দ্রুত বাসায় আসলাম।রুমে গিয়ে বালিশটায় মুখটা গুঁজে দিলাম।মৃদু আওয়াজ হচ্ছে।সেটা কেউ শুনছে না।কেবল বালিশটা ছাড়া।সে শুনেও কিছুই করতে পারছে না।

মাঝে মাঝে ভিষন কষ্ট হত।সইতে পারতাম না।বাধ্য হয়ে নিকোটিন ঢুকাতাম হৃদয়ে।ক্ষতটা তখন যেন একটু শুকিয়ে যেত।কিন্তু কিছু সময় পরই আমি আবার হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করতাম।হাজার কষ্ট হলেও আমি আমার রুটিন ঠিক রাখতাম।ভালো হয়েছে ও চলে গেছে।আমাকে এখন রাতভর ওর সাথে কথা বলে কাটাতে হবে না।একটা অতিরিক্ত টিউশানিও করা যাবে এগুলো বলে নিজেকে একটু শান্তনা দিতাম মাত্র।এর বেশি কিছু না।শুরু হল সেই রোবটিক জিবন।ভার্সিটি গেল মিতুর দেখ পেতাম।মাঝে মাঝে তাসফির সাথেও দেখতাম।কষ্ট হত।তবুও এড়িয়ে যেতাম।নিজেকে যথেষ্ট আড়াল করার চেষ্টা করতাম। কারো সাথে তেমন কথাও বলতাম না।কথা হত কেবল মহির সাথে।একজন প্রকৃত বন্ধু। ও এখনও জানে না।জানলে মিতুর একটা ব্যবস্থা হতই।আমিও বলি নি।বলবও না।নিপু মেয়েটা দেখছি পাখনা গজিয়েছে।সে এখন আমাকে দেখলেই হাসে।আহ্ঃ! সেকি হাসি! একেবারে প্রেমে পড়ার মত।কিন্তু আমার তেমন কিছুই অনুভুতি হল না।কেননা আমি সদ্য ছ্যাকা খাওয়া একটি ছেলে। এত তাড়াতাড়ি পূর্বের ভালোবাসাকে ভুলা মুশকিল। তাই আমি তেমন সায় দিতাম না।কিন্তু মেয়েটা পিছু ছাড়ল না আর।

সেদিন হুট করেই মেয়েটা আমার সামনে এসে দাঁড়াল।মৃদু হাসল।বলল,
:কেমন আছিস!
:ভালো।তুই কেমন আছিস?
:আছি কোন রকম।কেন জানি না আজকাল দিন গুলো ভালো যায় না|
:ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।চল ক্লাস করি।
মেয়েটা একটু অহত হল।হয়ত আরেটু কথা বলার ইচ্ছে ছিল তার।কিন্তু আমি তা মোটেও চাই না।

আজ মহির জন্মদিন।ও আমাকে যেতে বলেছে।যেভাবেই হোক যেতে হবেই।এটাই তার কথা।আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই।আর টাকাও তেমন নেই হাতে।আর যাই হোক কিছু তো একটা ওকে দিতেই হবে।না গেলে ও মন খারাপ করবে।তাই যাওয়াটাই স্থির করলাম।ছোট্ট ভালো দেখে একটা ডায়েরি কিনলাম।একটা ছোট চিরকুট লিখলাম,
“জিবনে প্রতিটা সুখ দুঃখের কথা এখানে লিখবি|তবেই এই ডায়েরিটা স্বার্থকতা লাভ করবে।জন্মদিনের অসংখ্য শুভেচ্ছ।দোয়া করি বাকি জিবনটা যেন সুখে কাটুক।”
বেশি কিছু লিখলাম না। গিপ্ট পেপার দিয়ে মুড়ে রওনা হলাম ওদের বাড়ির দিকে।

মিতুকে দেখলাম তাসফির পাশে দাঁড়িয়ে আছে।আমি একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম।আমাকে দেখতেই নিপু এগিয়ে এল।অনুষ্ঠান শুরু হল।একটু গানবাজনার আয়জন করা হয়েছে আরকি।আমি এসব থেকে একটু দূরেই থাকলাম।ভালো লাগে না এসব।কিন্তু নিপু দূরে থাকল না।আমার পাশেই থাকল।আমিও কিছু বললাম না।মিতুর দিকে তাকালাম একটু।দেখলাম সে একা একা বসে আছে বিষন্ন মায়ায়।তাসফিকে দেখলাম অন্য একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।ব্যাপার কি! এত তাড়াতাড়ি ব্রেক আপ হয়ে গেল নাকি? কে জানি! এর কিছুক্ষন পর কাপল ডান্স শুরু হয়ে গেল।আমি আস্তে করে আড়াল হয়ে গেলাম।ছাদের এক কোনায় চলে এলাম।একা একা দাঁড়িয়ে রইলাম।এমন সময় নিপু এসে দাঁড়াল আমার সামনে।একটু হাসলও।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নিপু আমাকে কিছু একটা বলতে চায়।কিন্ত ভয়ের কারনে বলতে পারছে না।আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।তারপর চোখ ফিরিয়ে নিলাম।বললাম-

:কিরে? কিছু বলবি।
নিপু একটু সংকোচের ভিতর আছে।আমতা আমতা করে বলল,
:ইয়ে মানে একটা কথা মানে তোকে একটা কথা বলতে চাই সোহান।
:কি কথা! আর এমন তোতলাচ্ছিস কেন?
:একটু ভয় হচ্ছে আর কি।
আমি মৃদু হাসলাম। হাসি দিতেই চোখ গেল পিছনের দিকে।দেখলাম মিতু আমাদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নিশ্চই জ্বলছে।আমি ওকে দেখানোর জন্যে আরেকটু বাড়িয়ে হাসলাম।বললাম,
:আরে ভয় নেই।নির্ভয়ে বলে ফেল।
:আসলে আমি না একজন কে ভালোবাসি।কিন্তু ভয়ে বলতে পারছি না।
আমি মনেমনে ভাবলাম যাক মিতুকে জ্বলানোর জন্যে ওর সাথে প্রেম করা যায়।আর নিপু নিশ্চই আমাকে ভালোবাসে। কথাটা মনে হতেই মিতুর মায়াবি মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। নাহহহ! আমার দ্বারা আর প্রেম টেম হবে না।আমি চাইলেও কোন মেয়েকে ভালোবাসতে পারব না।কেননা মিতু চরিত্রটা আমার ভিতরে এখনও বেঁচে আছে।তাকে চাইলেই মুছে ফেলা যায় না।
:কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি?
নিপুর কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম।বললাম,
:কিছু না।বল তুই কাকে ভালোবাসিস!
ও কিছুক্ষণ চুপ থাকল।তারপর বলল,
:মহি। মহিকে আমি সেই প্রথম থেকেই ভালোবাসি।কিন্তু ভয়ে বলতে পারছি না।তুই একটু আমার হয়ে বলে দে না প্লিজ।আমার ওর সামনে যেতেই ভয় লাগে।তুই তো ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড। একটু বুঝিয়ে বলিস। প্লিজ!
আরে হল কি! আমি কি ভাবছি আর মেয়েটা কি বলছে। শালার কপাল রে।অবশ্য ভালোও হয়েছে।আমি কিছু সময় চুপ থাকলাম। এমন সময় নিপু আমার হাত ধরে ফেলল।বলল,
:প্লিজ! একটু হেল্প কর!
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আমি অনুভব করলাম কেউ আমাকে টানছে।তাকাতেউলি দেখা মিলল মিতুর লাল সাদা সেই চেহারার। আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আমি বললাম,
:একি? আমাকে কই নিয়ে যাচ্ছেন।ছাড়ুন বলছি।ছাড়ুন!
সে আমার কথা শুনল না।টেনে নিয়ে গেল সিঁড়ির রুমের দিকে।ছাদের দরজা বন্ধ করে দিল।আমার কলার চেপে ধরল আবার।একেবারে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দিল।তারপর কলার ছেড়ে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল।আমার খুব সামনে এসে দাঁড়াল। বলল,
:কি! সমস্যা কি তোমার? হু! কি সমস্যা!
আমি কিছুটা অবাক হলাম।বললাম,
:কি বলছেন কি?আর সমস্যা কিসের।আমার কোন সমস্যা নেই।সমস্যা থাকলে আপনার থাকতে পারে।আমার না!
:চুপ! একদম চুপ।নিপুর সাথে কিসের এত কথা! হু! কিসের এত কথা?
:আপনি এমন করে কথা বলছেন কেন? আমার কোন মেয়ের সাথে কথা থাকতেই পারে।তাতে আপনার কি?আপনি কেন মাঝখানে এলেন।আমি ঠিক বুঝলাম না।ছাড়ুন। পথ ছাড়ুন। আমাকে যেতে দিন।
এই বলে সামনে এগুতে লাগলাম।ঠিক তখনই মিতু আমাকে আবার ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে দিল আমায়।আমি কিছুটা বিরক্তি ভাব এনে বললাম,
:আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি বলুন তো। এমন করছেন কেন?
:সমস্যা আমার না। তোমার সমস্যা।কি বলেছে ওই মেয়েটা। বল আমাকে। বল!
:আমি বলতে বাধ্য নই।
:প্লিজ সোহান আর কষ্ট দিও না। প্লিজ।আমি আর সইতে পারি না।
:হুহ।আপনারা কষ্ট দেন।কষ্ট পান না।কষ্ট দিতে বড্ড বেশি ভালোবাসেন আপনারা।
:প্লিজ! এমন কথা বল না।আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট দেই নি।যা…
:দেখুন! আপনার এমন ফালতু প্যাঁচাল শুনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।পথ ছাড়ুন।আমাকে যেতে হবে।
:কই যাবে? ওই মেয়ের কাছে।যাও তো।দেখি তোমার সাহস।
আমি মৃদু হাসলাম।তারপর সামনের দিকে এগুলাম।ও তখনই আমায় টেনে ওর কাছে আনল।একেবারে ওর মুখের সামনে।ওর নাক দিয়ে গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে।চোখ গুলো একটু লাল হয়ে আছে।সেখানে চকচকে পানি খেলা করছে।যেন কোন মূহুর্তে পড়তে প্রস্তুত।তারপর হুট করেই আমাকে জড়িয়ে ধরল।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।বলল-

:প্লিজ এমন কর না।আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।এগুলো করেছি শুধু তোমার আর আমার মাঝের ভালোবাসার বন্ধনটা আরেকটু গাড় করার জন্যে।আমি তোমার জন্যে কতটা গুরুত্ব পূর্ণ সেটা বুঝাতে আমাকে এসব করতে হয়েছে।তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি নিজেও ভালোছিলাম না।একটুও না।সারাক্ষণ কেবল তোমার কথাই ভাবতাম।তোমার পরিবর্তনটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারি নি।তুমি যে এক্সট্রা টিউশনি করি সেটা বল নি কেন আগে আমায়? কেন বলনি?
:আমি তো বলতে চেয়েছিলাম। তুমি তো শুনার চেষ্টাও করলা না।আচ্ছা তুমি এত নিষ্ঠুর হলে কিভাবে বলত।
:আমি বলেছি তো।আমি ইচ্ছে করে এসব করি নি।আচ্ছা যদি ভুল হয়ে যায় প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও।প্লিজ!
:তুমি অনেক দেরি করে ফেলেছ মিতু।অনেক দেরি হয়ে গেছে।
মিতু হুট করেই আমাকে ছেড়ে দিল।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
:দেরি করে ফেলেছি মানে? দেখ তুমি এখন যদি বল ওই নিপুর সাথে তোমার কিছু চলছে সাথে সত্যিই আমি তোমাকে খুন করে ফেলব।আর নিপুর খবর আমি করব।আগে তোমায় ঠিক করে নেই।
:বলছি তো। ইউ আর ঠু লেট মিতু।
ও হুট করেই আমার হাতটা ওর মাথায় রাখল।বলল,
:আমার মাথায় হাত রেখে বল যে তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাস?
আমি একটু ভড়কে গেলাম।বললাম,
:ইয়ে মানে মানে অন্য কাউকে ভালোবাসি না।তবে তোমাকেও ভালোবাসি না।
:ইয়াহু!
:কি হয়েছে।এই তো কাঁদলে। এখন দেখি হাসছ।
:তুমি অন্য কাউকে ভালোবাস না।এটাই অনেক।
:হাহ! তোমাকেও তো ভালোবাসি না।
:এটা আমার কাছে ওয়ান সেকেন্ডের ব্যাপার। তোমার মন গলানোর অস্র আমার কাছে আছে।
:যদি তার আগে নিপু চলে আসে।তাহলে…
ও আমাকে কথা বলতে দিল না আর।হুট করেই একটু চুমু খেল। সাথেই সাথেই আমার মনে হল আমায় যেন কারেন্ট শক করেছে।ও আমার গলা চেপে ধরল।আরেকটু কাছে নিয়ে এল।আহ্ঃ আমি শান্তির সাগরে ভেসে গেলাম।এক শিতল শিহরন বয়ে গেল আমার হৃদয়ে। গা যেন একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেল।অনন্য সে শিহরন। আহ্ঃ! সেকি মিষ্টি স্বাদ তার।একটু পর ও আমায় ছাড়ল।বিজয়ী হাসি দিয়ে বলল,
:হয়েছে?
আমি দম নিয়ে বললাম,
:বাপরে! কি ছিল এটা।
:সে তুমি বুঝবে।চল।

তারপর সে আমার হাত ধরল।পাঁচ আঙ্গুলে ফাঁকে নিজে পাঁচ আঙ্গুল রেখে সামনে এগুলাম।দরজা খুলতেই দেখলাম সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।মিতু খানিকটা লজ্জা পেল।মুখটা লাল হয়ে গেল।এই লাল বর্নটা মিতুর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।মিতুকে সুন্দর লাগছে।আমাদের দেখতেই সবাই তালি দিচ্ছে।দেখলাম সবাই জোড়ায় জোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।এমনকি তাসফিও।তাহলে কি সাথের মেয়েটা ওর গফ?নিপুকে দেখলাম এক পাশে মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মহিও দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে।আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আমি আস্তে আস্তে নিপুর দিকে এগুলাম।নিপুকে মহির হাতে তুলে দিব বলে।মেয়েটা সত্যিই মহিকে ভিষন ভালোবাসে।ওর চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।আমাদের সবার জিবন তেজপাতা হবে আর মহি সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে! তা হয় না।ওর জীবনটাও তেজপাতা বানাতে হবে।তাই অতিসত্বর তাকে নিপুর হাতে তুলে দিতে হবে।সেও বুঝক।তেজপাতার মর্ম।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত