এলাকার সহজ সরল ছেলে হিসেবে পরিচিত আমি। সদা হাসিমুখ, দিকভ্রান্ত হয়ে চলাফেরা, নিজের প্রতি
বেখেয়াল, সব মিলিয়ে জীবনে কি করলে কি হবে তা আমার মাথায় ছিলনা। এজন্য আমার মা আমাকে কতো
বকা দিতো। আমি বড় হচ্ছি নাকি ছোট হচ্ছি, মাঝেমাঝে মা আমার আচরণে বুঝতে পারেননা। এজন্য মা আমাকে কত বকা দেয়।
কলেজে যখন যায়, একদম পেছনের বেঞ্চটা আমার জন্য বরাদ্দ থাকে। কারণ সামনে বসলে একজন এখান থেকে চিমটি দিলে, আরেকজন ওখান থেকে চিমটি দেয়। আমি পেছনে ফিরে তাকালে সবাই সাধু হয়ে যায়, বুঝতে পারিনা আসলে কে চিমটি দিয়েছে। ফ্যালফ্যাল করে সবার দিকে তাকায়। তখন মেয়েগুলো আমার অবস্থা দেখে হেসে উঠে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পেছনে বসব সবসময়। ক্লাসের ছেলেগুলো তখন পেছনে বসতে শুরু করে, আমার জন্য সামনের বেঞ্চ খালি রাখে যাতে
আমাকে নিয়ে তারা কমেডি করতে পারে। এরপর আমি প্রতিদিন সবার আগে যেতাম কলেজে শুধুমাত্র পেছনের সিটে বসার জন্য। ছেলেগুলো তখন কি করত? আগেরদিন তারা বেঞ্চে চুইংগাম লাগিয়ে রাখত। আর আমি এসে খেয়াল না করেই ওখানে বসে পড়তাম। স্যারেরা যখন পড়ার ধরার জন্য আমাকে দাঁড়াতে বলত, তখন চুইংগামের কীর্তিতে নিচ থেকে টান পড়ত। সবাই তখন একসাথে হেসে উঠত। আমি আর কি করব? আমিও ওদের সাথে হেসে উঠতাম।
আমার এই বোকামির জন্য মা আমাকে সবসময় বকত। কেন আমি ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিনা। এরকম বোকা থাকলে নাকি জীবনে আমার কোন উপকার হবেনা। তবে একটা উপকার আমার হয়েছে। আমার জীবনে প্রেম এসেছে এই বোকামির জন্য। আমার এই বোকামি দেখেই আমার প্রেমে পড়ে একটি পরী। বদলে যেতে থাকে আমার জীবন। আজ আমি সেই গল্পই বলব।
“আমি ও একটি পরীর গল্প”
কখনো আম্মুর বকা খেয়ে মন খারাপ হতোনা। বরং কেউ বকা দিলে ভাবতাম আমাকে বকা দিয়ে যদি কারো তৃপ্তি মিটে, তো বকা খেলে মন্দ কি? কিন্তু একদিন আম্মু আমাকে আমার বোকামির জন্য অনেক বকা দেয়। তাই মন খারাপ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছিলাম। সারাদিন বাসায় ফিরলামনা। রাতে আমি গ্রামের পুকুরঘাটে গালে হাত দিয়ে বসেছিলাম। আকাশে চাঁদ ছিল। চাঁদের আলোতে পুকুরের পানি দেখছিলাম। হঠাৎ একটা মেয়ের ক্ষীণ চিৎকার কানে এলো। মনে হলো কোন কারণে ব্যথা
পেয়ে ককিয়ে উঠেছে সে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। কিছুটা সামনে গিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে। পেছনে তার দুইটা ডানা। সে মাথা নিচু করে ঝুকে পায়ে হাত দিয়ে কিছু বের করার চেষ্টা করতেছে। মনে হয় কাটা ঢুকেছে পায়ে।
আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করল: কি হয়েছে আপনার?”
আমার কণ্ঠ শুনে মেয়েটা আমার দিকে তাকাল। অস্ফুটে
একটা শব্দ করল:
–কাটা…..”
চাঁদের আলো মেয়েটার মুখে পড়েছে। আমার মনে হলো এতো অপরূপ মেয়ে পৃথিবীতে আর একটাও নেই।
কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বললাম:
–কই? হাত সরান তো, আমি বের করতে পারি কিনা দেখি।”
–আচ্ছা, একটু বের করে দেন না?” নরম কণ্ঠে বলল মেয়েটা।
আমি হাটুগেড়ে বসে মেয়েটার ফর্সা পা খানা আমার হাটুর উপর রাখলাম। তারপর ওর পায়ে মুখ লাগিয়ে অনেক্ষণ চেষ্টা করে কাটাটা বের করলাম। অদ্ভুত ব্যাপার হলো ওর পা থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ বের হলো।
সাধারণত মানুষের পা থেকে গরমের ভ্যাপসা গন্ধ বের হয়,
কিন্তু এই মেয়েটার ক্ষেত্রে হলো তার উল্টো।
–কে তুমি” জিজ্ঞেস করলাম আমি।
–ডানা দেখেও বুঝতেছনা?”
–ওহহ, সিনেমায় অভিনয় কর বুঝি। আমারও খুব ইচ্ছে সিনেমায় অভিনয় করার। প্লিজ আমাকেও একটু নেবে সিনেমায়?”
–আরে আমি সিনেমায় অভিনয় করিনা। এ ডানা দুটো সত্যিকারের। আমি পরী। মানুষ না।”
মেয়েটার কথা শুনে আমি খুশি হয়ে বললাম: ও তুমি পরী?
আমাকে নিয়ে যাবে তোমাদের দেশে?”
–হ্যা নিয়ে যাব, তুমি আমার উপকার করেছ। আজ থেকে তুমি আমার বন্ধ। কিন্তু এতরাতে তুমি এখানে কি করছ?”
–মা আমাকে বকা দিয়েছে। আমি নাকি খুব বোকা এজন্য।
–কেন? তুমি কি বোকামি করলে।”
তারপর আমি পরীকে সব বললাম। পরী হাসতে হাসতে বলল:
এই কথা, শুন আমি যেহেতু তোমার বন্ধু হয়েছি, এখন থেকে তোমার দেখাশুনার সব দায়িত্ব আমার। কেউ তোমাকে
নিয়ে আর কিচ্ছু করতে পারবেনা, আজ থেকে আমি যা বলব তাই করবে। ঠিক আছে?”
–হ্যা, ঠিক আছে।” আমি পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। হাসিটা তার ঠোটে তখনও লেগেছিল। হাসি থেকে যেন তার মুক্তা ঝরছে।
পরী আমাকে বলল: এখন তুমি বাসায় চলে যাও।”
–আচ্ছা….” মাথা নেড়ে সায় দিলাম। তারপর আমি কিছুদূর হেটে আবার পরীর কাছে আসলাম।
–আবার কি হলো?” পরী জিজ্ঞেস করল।
–তোমার নাম তো জানা হলোনা…..” মন্ব্য করলাম আমি।
–আমার নাম জেরিন, ফারিয়া জেরিন। তুমি আমাকে জেরিন বলেই ডাকবে। কেমন? তোমার নাম কি?”
–আমার নাম রানা। জেরিন, তোমার সাথে আবার কবে দেখা হবে?”
–বলবনা….
–কেন?
–কারণ তোমাকে সারপ্রাইজ দেব….” বলেই জেরিন একটা দুষ্টুমি মার্কা হাসি দিল।
–ওহ, কি সারপ্রাইজ? আমার খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।
বলনা বলনা প্লিজ….
–বলবনা, বলবনা….” জেরিন হেসে উঠল। এ কোন হাসি?
তার বাঁকা ঠোঁটের হাসি দেখলে চাঁদটাও লজ্জা পেত তখন।
–কেন বলবেনা?”
–বলছি তো সারপ্রাইজ দেব।
–আচ্ছা ঠিক আছে।”
–এখন বাসায় যাও তুমি। খুব শীঘ্রই দেখা হবে আমাদের।
আমি প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়ে চলে এলাম বাসায়। আবারও মায়ের বকা খেলাম এতক্ষণ বাইরে থাকার জন্য। তারপর
মা আমাকে খেতে দিল। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন কলেজে গেলাম। নিয়ম অনুযায়ী পেছনের সিটে গিয়ে বসলাম। ক্লাসের ছেলেমেয়েরা কিছুক্ষণ আমাকে
নিয়ে হাসহাসি করল। একটু পর স্যার ঢুকল ক্লাসে। ক্লাস শুরু করলেন তিনি, ঠিক তখন ক্লাসের বাইরে একটা মেয়ের
কণ্ঠ শুনা গেলো: ম্যায় আই কামিং স্যার??
–ইয়েস কামিং…..
অপরূপ একটা চেনা মেয়ে ক্লাসে ঢুকল। ছেলেরা সবাই “ওয়াও ওয়াও” করতে লাগল। পেছনের বেঞ্চ থেকে চমকে উঠলাম আমি। স্যার সবার সাথে মেয়েটার পরিচয় করিয়ে দিলেন: এ হচ্ছে ফারিয়া জেরিন, তোমাদের নতুন বন্ধু।”
ফারিয়া বলল: হাই বন্ধুরা….
সবাই একসাথে বলে উঠল: হাই….”
স্যার জেরিনকে সিটে গিয়ে বসতে বললেন। জেরিন এসে আমার পাশে বসল। ছেলেরা সব পেছনে তাকিয়ে রইল জেরিনের দিকে। জেরিন আমাকে একটা চিমটি কেটে
বলল: কেমন সারপ্রাইজ দিলাম??
এই হাসিটার মধ্যে কি লুকিয়ে আছে
তা হয়তো আমার জানা নেই।
এই মেয়েটিকি সত্যিই কোন মাদ্রাসার ছাত্রী?
নাকি অন্যকিছু।
দোর-
কি সব আজেবাজে কথা চিন্তা করছি আমি!
ঐই মেয়েটা যাইহোক তাতে আমার কি!
এইরে।
ঐদিকে অনেক বেলা হয়ে গেছে আমার কোনো খেয়ালি নেই।
যাই তাড়াতাড়ি বাসায় যায়।
তাড়াতাড়ি করে বাসায় আসলাম।
রুমে ডুকতেই আম্মু জিঙ্খেস করলো-
-কিরে রিহান এতো দেরি হলো কেন তোর আজকে?[আম্মু]।
এইরে এখন আম্মুকে কি বলবো?
না মেয়েটার কথা বলা যাবেনা।
– অনেকদিন পর রাস্তায় দিপুর সাথে দেখা হয়ে গিয়োছিলো।
তাই একটু লেট হয়ছে।[ডাহা মিথ্যা কথা]।
-ঠিক আছে।
তাড়াতাড়ি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আয়।
টেবিলে খাবার রাখা আছে।[আম্মু]।
-ঠিক আছে।
[হাতে রুমাল নিয়ে]
ও তৃষা তুই গেছোস কিনা ভুইলা আমারে।
আমি এখন রিকশা চালায় ঢাকা শহরে।
গোসল করছিলাম আর গানটা গাচ্ছিলাম।
নিজেই অনেকটা অবাক হয়ে গেলাম।
গানে তৃষা আসলো কোথায় থেকে?
ও মনে পড়েছে
সকালের মেয়েটার নামতো-
তৃষা বলেছিলো!
কিন্তু এই মেয়েটার নাম আমার মুখে আসছে কেন?
কি হচ্ছে এসব?
একটা মেয়েকে আমি
চিনিনা জানিনা তাও কেন বারবার
ঐই মেয়েটার নাম আমার মুখে আসছে।
কেন আমি এই মেয়েটাকে কিছুতেই ভুলতে
পারছি না।
তাহলে কি মেয়েটা সত্যিই কোন অদ্ভুদ শক্তির অধিকারী।
না না।
এটা কিভাবে সম্ভব।
আর যদি কোন অদ্ভুদ শক্তির অধিকারী হয়েও
তাহলে আমার কাছে কি চায়?
দোর এসব আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
গোসল শেষ করে হালকা নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম।
রাস্তায় হাটছি আর একহাতে ফোন গুতাচ্ছি।
কাদে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাটা আর ফোন গুতানোও একটা আর্ট।শুধু আমি না।
অধিকাংশ ছেলেদেরি এটা একটা অভ্যাস।
দেখতে দেখতে কলেজে এসে গেলাম।
রুমে ডুকতেই দেখি সবাই আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাচ্ছে।
বাহ।
একদিনে এতো ফেমাস হয়ে যাবো কখনো কল্পনাও করিনি।
সবাই আমার দিকে যে ভাবে তাকাচ্ছে
মনে হচ্ছে যেন আকাশ থেকে কোন এলিয়েন এসে পৃথিবীর বুকে
পা রেখেছে।
একটু এগিয়ে গিয়ে মোস্তাফিজের শার্টের কলার ধরে বললাম-
-ঐই হারামি আমাকে কি বোকা পেয়েছিস?
আমাকে দেখে সবাই এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো।
মোস্তাফিজ কিছু না বলেই হাসতে হাসতে পকেট থেকে
ফোনটা বের করে আমার মুখের সামনে ধরলো।
একি আমার মুখে এতো কালি আসলো কোথায় থেকে?
গেলো আমার মান ইজ্জত সব গেলো।
তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়েই দিলাম এক দৌড়।
একি আমার পিছনে দেখি কুত্তা ও আসছে।
এ কেমন প্যারা।
এমনিতেই আছি মহাবিপদে তার ওপরে আবার
এই কুকুরের যন্ত্রনা।
হু হু হেস হেস।
একি কুত্তা কাক্কু তো দেখি কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ছে না।
না যাই এই পাশের বাড়িটিতে গিয়ে একটু লুকোয়।
দৌড়ে গিয়ে পাশের একটা বাসায় ঢুকলাম।
চুপ করে দেয়ালের পাশে বসে আছি।
হঠাৎ করেই কারো হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।
পিছনে ফিরে দেখি একটা মেয়ে!
আরে এটা তো সেই মেয়েটা যাকে আমি সকালে মাদ্রাসায় পৌছে দিয়েছিলাম!
মেয়েটা মানে তৃষা এখানে কি করে?
-আসসালামুআলাইকুম।
কেমন আছেন মি.রিহান?[তৃষা]।
-ওয়ালাইকুমআসস-ওয়ালাইকুমআসসালাম।
তু তু তুমি এখানে কি করো।
-আমাকে দেখে এতো তোতলাচ্ছেন কেন?
আমি কি ভূত নাকি?[হাসতে হাসতে]।
-না।
তবে আপনি কি মানুষ নাকি অন্যকিছু।[ভয় পেয়ে]
-ঠিক ধরেছেন।
আমি হলাম পরী।
আর এই পৃথিবীতে আসছি আপনাকে নেয়ার জন্য।
-মা মা মানে..কি ব…..!
পুরোটা বলার আগেই চোখদুটো বন্ধ হয়ে গেলো।
সম্ভবত ঙ্গান হারিয়ে ফেলেছি।
যখন ঙ্গান ফিরলো চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি ইয়া বড় একটা বাড়ি।
এই বাড়িটা কার?
আমাদের বাড়ি তো এইরকম না।
তাহলে কি আমি পরীর রাজ্যে আছি?
পাশে তাকিয়ে দেখি ছোট একটা মেয়ে আমার পাশে বসে আছে।
একি এই মেয়েটার পিছনে তো দেখছি ইয়া বড় পাখির মতো পাখা।
আমি ঠিকি ধরেছি।
এটাই পরীদের রাজ্য।
আমাকে উঠতে দেখে ছোট মেয়েটা চিৎকার করে কাকে যেন ডাকলো।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার চারপাশে অনেকগুলো মহিলা জড়ো হয়ে আমাকে দেখতে লাগলো।
সবার পিছনেই পাখির পাখার মতো পাখা।
তারমানে এরা সবাই পরী।
কিছুক্ষন পর তৃষা আসলো।
তৃষাকে দেখে সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
তৃষাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে লাগলাম-
-আমাকে এই ভাবে তুলে আনার মানে কি?
কি অপরাধ করেছি আমি হা।[রাগ দেখিয়ে]।
-ওলে বাবা লে।
রিহান সাহেব দেখি রাগ করছে।
এতো রাগ করা ভালোনা বুঝলেন![আমার চোখের দিকে তাকিয়ে]।
আমি কিছু না বলে শুধু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
পরীরা সুন্দর হয় শুনেছি।কিন্তু-
এতোটা সুন্দর হয় জানতাম না।
আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে তৃষা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।………………….
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে-
তৃষা আমাকে বললো-
-এমনভাবে তাকিয়ে কি দেখো।
[তৃষা]
-তোমাকে দেখি।
তুমি সত্যিই অনেক সুন্দর।
[তৃষার চোখের দিকে তাকিয়ে]।
-ঘোড়ার ডিম।
আর ঢপ দিতে হবেনা।
এবার হাত মুখে ধুয়ে খাবার খেতে আসো।
-না খাবো না।
তুমি আমাকে কিছু না বলেই এভাবে তুলে আনলা কেনো।[রাগ দেখিয়ে]।
-আগে খেয়ে নাও পরে তোমাকে সব বলছি।
-না।খাবো না।
আম্মুর কথা মনে পড়ছে খুব।
এএএএএ[কান্নার ভাব করে]।
-আমার বরটা দেখছি কাদেঁ।
তুমি পিচ্ছি নাকি যে কাদছো?[আমার দিকে তাকিয়ে]।
-হু পিচ্ছিই।
আম্মু আমাকে প্রতিদিন
নিজ হাতে খাইয়ে দিতো।
এখন কে খাইয়ে দিবে?
[মন খারাপ করে]।
-মা নেই কি হইছে।
বউ তো আছে!
এখন তোমার বউ খাইয়ে দিবে।[দুষ্টুমি করে]।
-বউ!
আমিতো বিয়েই করিনি বউ এলো কোথায় থেকে?
-আপনাকে এতো গবেষনা করতে হবেনা।
এখন খেতে আসুন আমি গেলাম।
এটা পরী না ছাই।
কই একটু আদর করবে তা না।
উল্টো রাগ দেখায়।বসে বসে আম্মুর কথা ভাবছিলাম।
হঠাৎ করেই একটা ছোট্র পরী আসলো!
সম্ভবত এটা তৃষার বোন।
-এইযে পিচ্ছি এদিকে আসো।
তোমার নাম কি?[আমি]
-আপনাকে কেন আমার নাম বলতে যাবো।
বলবো না![তৃষার বোন]।
-কেন বলবে না।
বলো বলছি।[ভয় দেখিয়ে]।
-এইযে মি.রিহান না কি যেন নাম।
আপু আপনার সব কথায় উওর দিতে পারে।
কিন্তু আমি দেবো না।[চোখ বড় বড় করে]।
ও আল্লা এটাতো দেখছি তৃষার থেকেও বেশি ফাজিল।
-ঐই যাও এখান থেকে ফাজিল কোথাকার।
যাচ্ছি যাচ্ছি।
এতো ধমকাতে হবেনা।আমাদের বাড়িতে এসে আমাকেই ধমকায়।
বলেই শালিটা চলে গেলো।
-ঐই কার সাথে এতো কথা বলছিলেন মি.রিহান সাহেব।[তৃষা]।
-তোমার পাজি বোনটার সাথে।[আমি]
-হয়েছে হয়ছে।
এই নেন খাবার খেয়ে নিন।[হাতে কিছু ফল দিয়ে]।
-শুধু ফল!
অন্যকিছু খাবোনা।[মন খারাপ করে]।
-আগে একটা ফল খেয়ে দেখেন।
তারপর অন্যকিছু খেতে চাইলে খাবেন।
-ঠিক আছে।
বলেই একটা ফলে কামড় দিলাম।
আহা।
কি স্বাদ!এতো মিষ্টি ফল কোনদিন খাইনি!
একটা খেয়েই পেট ভরে গেছে।
-কি মি.রিহান সাহেব।
আরও দিবো নাকি?[আরও একটা ফল মুখের দিকে এগিয়ে দিয়ে]।
-না।একটাই পেট ভরে গেছে।
আর দরকার নেই।
-ঠিক আছে।
চলুন আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করবেন।
-আপনার আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করতে হবে কেনো?
[অবাক হয়ে]।
-এই যে মি.এতো প্রশ্ন না করে যা বলছি
তা করেন।
নয়তো আর পৃথিবীতে যেতে পারবেন না।
[মুচকি হেসে]।
-ঠিক আছে চলুন।
হাঁটতে হাঁটতে একটা ইয়া বড় রুমে
প্রবেশ করলাম।
আমাকে ঢুকতে দেখে রুমের সবাই দাড়িয়ে গেলো।
রুমে ঢুকেই সবাইকে সালাম করলাম।
একজন বৃদ্ধ লোক আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
সম্ভবত এটাই তৃষার বাবা।
তারপর কি যেন বললো।
কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।
শুধু আব্বুর নামটা যখন বলছিলো তখন বুঝেছি।
তারপর তৃষার আম্মুর সাথে এভাবে সবার সাথে পরিচিত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
তৃষা আর আমি পাশাপাশি বসে আছি।
হঠাৎ করেই তৃষা কাদতে লাগলো!
-আজব!কাদছো কেনো?
আমি কি কিছু বলছি তোমায়?
-না বলেননি।
আপনাকে একটু পর পৃথিবীতে দিয়ে আসতে হবে।
খুব খারাপ লাগছে আমার।
-খারাপ লাগছে কেনো?
[আমি]।
-যখন থেকেই বুঝতে শিখেছি।
তখন থেকেই শুনে আসছি আমার বিয়ে নাকি আব্বুর কোন এক বন্ধুর ছেলের সাথে।
তাও আবার মানুষ।
আর তখন থেকেই আপনাকে নিয়ে সপ্ন দেখে এসেছি।
ভালোবেসেছি।
আপনাকে ছাড়া অন্যকোন ছেলেকে ভালোকরে দেখেনি পযর্ন্ত। [কেদে কেদে]
.এই অবস্থায় হাসবো নাকি কাদবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমিও তো ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।
তাইতো বার বার ওর মনে হচ্ছিলো।
-তোমার সাথে কি আমার বিয়ে ছোটবেলা থেকেই ঠিক করা ছিলো।[তৃষার দিকে তাকিয়ে]।
-ছোটবেলা থেকেই।
কিভাবে যেন পৃথিবীতে আপনার আব্বু আমার আম্মুকে একটা বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলো।
আর তখন থেকেই তারা বন্ধু।
আর একে অপরকে কথা দিয়েছিলো যে
একে অপরের প্রথম ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে করাবে। .
ও।
তাইতো বলি আম্মু আমাকে বারবার বলতো কেন
যে
“বিয়ের সময় হলে বউ নিজেই এসে তোকে নিয়ে যাবে”।
এখন বুঝতে পারছি এটি বলার কারন
কি ছিলো।
তারমানে আম্মুও জানে যে আমি আকাশে আছি।
-চলেন আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসি।
[চোখের জল মুছতে মুছতে]।
-চলো।[আমি]।
-একটা করবো রিকুয়েস্ট রাখবেন।[তৃষা]।
-হু।
বলো কি রিকুয়েস্ট।
-আমার খুব ইচ্ছাছিলো আমার বরকে জড়িয়ে ধরে একদিন সারারাত আকাশে উড়ে বেড়াবো।
জানিনা এটা পূরন হবে কিনা![মন খারাপ করে]।
-ঠিক আছে।
তাহলে কালকে যাবো।
আজকে তোমার সাথে আকাশে ঘুরে বেড়াবো।
এবার তো একটু হাসো।
-তুমি অনেক ভালো।[জড়িয়েধরে কাঁদতে কাঁদতে]।
বসে বসে আম্মুর কথা ভাবছিলাম! এমন সময় তৃষা রুমে আসলো!
-চলুন![তৃষা]
-চলুন মানে?
কোথায় যাবো?[আমি]
-বা রে!
এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন! আপনি না বলছিলেন
আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরন করবেন![তৃষা] .
-ও সরি।
আমি তোমার সাথে যেতে পারবো না! আমি বাসায় যাবো!
আমাকে বাসায় গিয়ে দিয়ে আসো![আমি] .
-কিন্তু!
আমার ইচ্ছাটা![কাদো কাদো গলায়] .
-আমি বলছি যাবো না ব্যস যাবো না[ধমক দিয়ে]
তৃষা আমার কথা শুনে কাঁদতে লাগলো! কাদুক তাতে
আমার কি!
এতো ভাব আর সহ্য করতে পারবো না। .
-কি হলো কথা কি কানে যাচ্ছে না! [চিৎকার দিয়ে]
-চলুন আপনাকে বাসায় দিয়ে আসি[কেঁদে কেঁদে]
-হুম চলো।[আমি]
দেখতে দেখতে তৃষা আমাকে নিয়ে আকাশে উড়াল দিলো।
-আপনি ভয় পাবেন!
চোঁখ
দুটো বন্ধ করে ফেলুন।[তৃষা]
-ঐ তোকে এতো ঙ্গান দিতে হবেনা! চুপকরে বাসায় দিয়ে
আয় গিয়ে![রাগ দেখিয়ে]
তৃষা কাঁদছে আর উড়ছে। আমারও কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে। তাই ওর বুকের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম! যখন চোঁখ খুললো
তাকিয়ে দেখি তৃষা আমার পাশে দাড়িয়ে কাঁদছে!
আমি জোর করেই চোঁখ বুজে রইলাম। হঠাৎ করেই অনুভব করলাম কেউ একজন আমার কপালে চুমু খেলো!
তাকিয়ে দেখলাম তৃষা আমার কপালে চুমু খাচ্ছে।
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে দেখে ও ভয় পেয়ে গেলো।
তাই অদৃশ্য হয়ে গেলো।
আমিও ঘুম থেকে ওঠে
ফ্রেশ হয়ে নাশতা করলাম।কিন্তু আম্মু আব্বু কিছুই বললো না!
তারা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি আকাশে গিয়েছিলাম।
-কিরে তৃষাকে কেমন দেখলি[আম্মু]
আম্মুর হঠাৎ করেই এইরকম প্রশ্নে অনেকটা ভয় পেয়েই উওর দিলাম
-হ্যাঁ ভালোই।[আস্তে আস্তে]
-তোর কি মন খারাপ?
এখন একটু রেস্ট নে বাবা[আম্মু]
আমি কিছু বলার আগেই আম্মু রুম থেকে বের হয়ে গেলো! মাথা কেমন জানি ভারি ভারি লাগছে! তাই আবার শুয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো আম্মুর ডাকে! ;
-কিরে রিহান এখনো ঘুমোচ্ছিস! কলেজে যাবিনা?
কতদিন যাবত কলেজে যাসনা তার কেনো খরব আছে?[আম্মু]
-হু যাবোতে!
তুমি গিয়ে নাশতা রেডি করো আমি আসছি।[ঘুম ঘুম চোঁখে]
আম্মু আমার কথা শুনে নাস্তা রেডি করতে চলে গেলো।
আমিও ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে কলেজে গেলাম। কলেজে ঢুকতেই বন্ধুরা আমাকে চারপাশে ঘিরে ধরলো!
-কিরে দোস!
এতোদিন কোথায় ছিলি?[নাইমা]
-বিয়ে করে ফেলেছিস
নাকি হারামি?[দিপু]
-আরে না!
একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম এই আরকি![মিথ্যা বললাম]
-ও এই কথা!
তা একটা ফোন
তো দিতে পারতি![মোস্তাফিজ]
-ফোন ভুলে বাসায় ফেলে গেছিলাম! তাই দিতে পারিনি![আবারও মিথ্যা বললাম]
-ঠিক আছে।
ক্লাসে চল[নাঈমা]
সবাইকে নিয়ে ক্লাসে গেলাম। কিন্তু কিছুতেই ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছি না!
বারবার তৃষার সাথে কাটানো মূহর্ত গুলোর কথা মনে পড়তে লাগলো! .
তাই পুরো ক্লাস
না করেই বাসায় চলে আসলাম! এভাবেই একটা মাস কেঠে গেলো! এখন তৃষাকে আগের থেকেও বেশি মিস করতে লাগলাম!
ওর কথা মনে হলেই বুকটা ধক করে ওঠে! .
এখন আর
আগের মতো খাওয়া দাওয়া করিনা! কলেজে যায়না!
সারাদিন দরজা বন্ধ
করে বসে থাকি!
আজকেও এর ব্যতিক্রম হলোনা! ডিনার করে চোঁখ বুজে শুয়ে আছি! হঠাৎ করেই অনুভব করলাম কে যেনো আমার পাশে দাড়িয়ে আছে। চোঁখ খুলতেই বুকটা ধক করে ওঠলো! .
তৃষাকে দেখলাম
চোঁখ বন্ধ করে
আমার বিছানার পাশে দাড়িয়ে কাঁদছে! চোঁখ বন্ধ থাকায় আমায় দেখতে পায়নি! আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে ওর হাতটা ধরলাম।
তৃষা অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো!
ও হয়তো ভাবছে আমি ওকে জিঙ্খেস করবো কেনো এখানে এসেছে!
বা
ঝাড়ি দিবো!
তাই অনেকটা ভয় পেয়ে চোঁখের অশ্রগুলো মুচতে লাগলো!
-এতোদিন কোথায় ছিলে? কেনো আসোনি হা[চোঁখের দিকে তাকিয়ে]
তৃষা হয়তো নিজের চোঁখকেই বিশ্বাস করতে
পারছে না!
আমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে কাঁদছে!
এই ১মাসে ওর
অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে! কাজলকালো চোঁখদুটো কেমন জানি ফুলে গেছে!
আগের থেকেও
অনেক শুকিয়ে গেছে!
চোঁখর নিচে কালো
কালো দাগ হয়ে গেছে!
-কি হলো!
এই কয়দিনে তোমার একি অবস্তা হয়েছে?[আমি]
তৃষা কিছু না বলেই কেঁদে কেঁদে আমাকে
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
-আপনাকে না দেখে আর থাকতে পারছিলাম না! অনেকবার আসতে চেয়েছি!
কিন্তু আসিনি!
যদি আপনি রাগ করেন
এই ভয়ে![কাঁদতে
কাঁদতে]
-হু রাগ করতাম তখন
যখন তোমাকে ভালোবাসতাম না! তোমাকে অনুভব করতে জানতাম না! ভালোবাসা কি
বোঝতাম না!
জানো তুমি চলে যাবার পর বুঝতে পেরেছি তোমাকে ছাড়া
আমার পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব! প্রতিদিন রাতে
আকাশের দিকে থাকিয়ে তোমাকে খুজতাম!
আমি যে তোমাকে
অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তৃষা![চোঁখের জলগুলো মূচে দিয়ে] .
পাগলিটা আমাকে আরও শক্ত করে ঝরিয়ে ধরলো।
আমার পায়ের ওপর ওর দুটো পা রাখলো! আমার মাথাটাকে দুই হাতে ধরে ওর মিষ্টি দুটো ঠোটের সাথে
আমার ঠোটগুলো মিলিয়ে দিলো। দুজনেই
হারিয়ে গেলাম এক পবিএ ভালোবাসায়।
অনেকক্ষন পর
-এই যে শুনোন!
আমার ইচ্ছাটা কি পূরন করবেন?[মাথা নিচু করে]
হবু বউয়ের সাথে
প্রেম করতে সমস্যা কোথায়!
-হু চলো।
বলেই পাগলিটাকে জড়িয়ে ধরলাম!
পাগলিটাও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আকাশে উড়াল দিলো।
আমি তৃষার চোঁখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি!
তৃষা লজ্জায় চোঁখ বন্ধ ফেললো। .
-এইযে রিহান সাহেব এই ভাবে কি দেখেন আমার লজ্জা করছে![চোঁখ বন্ধ করেই] .
-দাড়াও লজ্জা এখনি ভেঙ্গে যাবে বলেই তৃষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোটে ঠোট রাখলাম!
পাগলিটাও আমাকে বাধা না দিয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো!
দুজনেই
পবিএ ভালোবাসার মধ্য দিয়ে উড়ে চলছি এক অজনার উদ্দেশ্যে!
……………সমাপ্ত…………