অদৃশ্য ভালোবাসার কারাগার

অদৃশ্য ভালোবাসার কারাগার

রূপা দেখতে তেমন ফর্সা না হলেও উজ্জ্বল শ্যামলা । এবং এর মাঝেই একটা ..মায়া জিনিস আছে। চুপচাপ. শান্ত কিন্তুু সেটা কারও কাছে.। এবং কারও কাছে সে চঞ্চল টাইপের। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ..।
কলেজ লাইফে উঠেছে ..স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধু বান্ধব ..নিয়ে মজা হাসি ঠাট্টা পড়াশোনা পরিবারের ভালবাসা সব কিছুতে..পরিপূর্ণ জীবন তার ..।

কিন্তুু ..সেই সুখের মাঝে ..নতুন একটা সুখের আবির্ভাব হতে লাগলো। .কলেজের একটা ছেলে কে দেখে রূপার মনের ভেতর একটা আলাদা অনুভূতি হলো। .ছেলেটার নাম রাকিন.। রূপার সাথেই পড়ে। ছেলেটা দেখতে সুন্দর বলতে গেলে ..সুদর্শন ছেলে বলতে যা বুঝায়। সব কিছুই আছে ..।

তবে ..সেই সুদর্শন এর ভেতর আসল জিনিস টা ছিলো না। .হ্যাঁ মন, মনুষ্যত্ব, এগুলো ..।
রাকিন দেখতে খুব সুন্দর ছিলো হ্যান্ডসাম ছিলো সাথে টাকা পয়সাও। তাই যে কোনো মেয়েই ওর ওপর ক্রাশ খাইতে পারে। আর রাকিন ও তার সুযোগ নেয়.। অনেক মেয়ের সাথে সে প্রেমের অস্কার প্রাপ্ত অভিনয় করে তাদের. কে ব্যবহার করে ভোগে।
কিন্তুু রূপা এগুলো জানতো না।

এভাবে চলতে থাকে। এদিকে রূপার মনে যেন . রাকিনের. জন্য একটা জায়গা তৈরী হয়ে গেছিলো।
রূপা রাকিন কে ভালবেসে ফেলে। ..রূপা চেষ্টা করতো রাকিনের সাথে কথা বলার আশেপাশে থাকে। রাকিন ব্যপারটা লক্ষ্য করে .এবং তার অভিনয় শুরু হয়ে যায়.।

একদিন ..রাকিন রূপা কে প্রোপোজ করে বসে। ..এবং রূপা খুশি খুশি মনে গ্রহণ করে। ..
কিন্তুু ..মিথ্যা সত্যি ত একঘাটে জল খায় না। ..
বাঘে মহিষে খেলেও সত্যি মিথ্যা খায় না।
কিছুদিন পরই রাকিন রূপা কে .রুম ডেট করতে জোর করে। .
রূপা রাজি না বলে অনেক বার। .
কিন্তুু সত্যি কারের ভালবাসা গুলো খুব দুর্বল হয়। .ভালবাসার মানুষ টির. চাওয়া পাওয়া গুলো বার বার ফিরিয়ে দিতে অক্ষম.।
রূপার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে.।

রূপা বুঝতে পেরেছিলো ..এগুলো করলে রাকিন কে হারাতে হবে তারপর ও.রূপা রাজি হয়ে যায়।
তারপর তারা অই সময় টুকু কাটায় যেটা সত্যি ভালবাসা টাকে মেরে কবর দেওয়া হয়েছে কোনো চারদেওয়ালের বিছানায় ..।
রাকিনের কাজ শেষ ..তাই রূপা কে সে ইগনোর করতে শুরু করে দিলো।
রূপা রাতের আড়ালে প্রত্যেক দিন কাঁদে। তারপর ও ..রাকিনের সাথে ..যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে ।
কিন্তুু রাকিন কে সে ধরে রাখতে পারে না।

অবশেষে কান্নার জল শুকিয়ে যায়। .রূপার মনের ভেতর ..একটা জেদ চলে আসে। ভালবাসা যখন ক্ষোভ, জেদ, প্রতিশোধ এ রুপান্তরিত হয় সে মানুষ টা ..তার মনুষ্যত্ব টা একটা অদৃশ্য কারাগারে বন্দি হয়ে যায়। ..
ঘৃণার বেড়াজালে ভালবাসা বাধা পড়ে যায়।
রূপা ..তারপর থেকে ..ছেলেদের কে নিয়ে খেলতে শুরু করলো।
অনেক ছেলে কে এভাবে নাকে দড়ি নিয়ে ঘুড়ায়.।
এতে করে যখন ছেলে গুলো কষ্ট পায়. তখন. রূপা আনন্দ পায়। .
এভাবে চলতে চলতে রূপা আজ ..ভার্সিটির স্টুডেন্ট।
এভাবে ভার্সিটির ছেলেদের কেও এভাবে প্রেমের অভিনয় করে ছলনা করে।।
ভার্সিটির অনেক ছেলেকে সে এভাবে ছলনা করে। পরে নিজেই হাসতে হাসতে কেঁদে দেয়। .

মামুন , একই ভার্সিটির সাইকোলজি ডিসিপ্লিন এর ছাত্র।
মামুন প্রায় এ বিষয় টা লক্ষ্য করে ..।
মামুন এর ফ্রেন্ড এর গার্লফ্রেন্ড ছিলো রূপার বেস্ট বন্ধু।
তাই. মামুন রূপার বন্ধুর থেকে সব জানতে পারে.।
এবং সিদ্ধান্ত নেয় রূপা কে প্রোপোজ করার।
এদিকে ফেসবুক আইডি, ফোন নাম্বার সব কিছুই নেওয়া হয়েছে।
রাতে মামুন তার আইডি দিয়ে রূপাকে ম্যাসেজ দেয় এবং রিকুয়েস্ট পাঠায়।

যেহেতু মামুন ছবি প্রোফাইল এ ছিলো। আর একই ভার্সিটির হওয়ায় চেনে। তাই রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে নেয়.।
এবং রিপ্লে দেয়.। .
এভাবে তারা কথা বলতে থাকে.।
একদিন মামুন দেখা করতে বলে ..
রূপা রাজি হয়.
কিন্তুু রূপা এটা জানতো না এই ছেলেটাই যে. অর সব কিছুকে ছাড়িয়ে যাবে। .
দুজনে দেখা করে ..
মামুন সেদিন রূপা কে প্রোপোজ করে ..।
রূপা আর পাচঁটি টা ছেলেদের প্রোপোজ এর মতো ..এক্সেপ্ট করে নেয় ..

মামুন তারপর থেকে ..রূপার সাথে যোগাযোগ রাখতো.। হঠাৎ হঠাৎ. অদ্ভুত কাজ করে বসতো.।
যেটা রূপা নিজেই অবাক হতো ..।
কখনো ছোট ছোট বোতলে জোনাকি ভরে রূপার জানলায় রেখে যেত.।
কখনো .অনেক ভোরে শিউলী মালা নিয়ে হাজির হতো রূপার বাড়ির সামনে ..।

কখনো ..রূপার চোখ দুটি ..দুহাত দিয়ে বন্দ করে কানে কানে আসতে আসতে ভালবাসি ভালবাসি এভাবে বলে যেতো। .
এভাবে একমাস চলে যায় ..।রূপা নিজেই যেন মামুন এর মাঝে হারিয়ে যায়.।
কেন যেন ..রূপা মামুন কে কষ্ট দিতে পারে না। যখনই অনেক রাগারাগি করতো ..কষ্ট দেওয়ার জন্য অনেক খারাপ কথা বলতে যেতো।
তখনই মামুন কান বন্দ করে ভালবাসি একভাবে বলে যেতো.।
যার কারনে রূপা ব্যর্থ হয়ে যেতো।
রূপা চিন্তা করে .এবার ওর সাথে ব্রেক আপ করবেই। যেভাবেই হোক ওকে কষ্টে দেখতে চায় ..।

তাই দেখা করার কথা বলে ..।
দুজনে দেখা করে..।

রূপা বলে যে অর সাথে আর রিলেশন রাখতে পারবে না।
ওর বয়ফ্রেন্ড আছে .এভাবে বলতে থাকে।
কিন্তুু মামুন কিছুই বলে না ..
চুপচাপ হাসি মুখে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
হঠাৎ করে মামুন রূপা কে kiss করে বসে।
রূপা স্তব্ধ, হতভম্ব হয়ে যায় চুপ করে যায় ..।

মামুন আর কিছু বলে না ..
চুপচাপ চলে যায়.।
রূপা এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না মামুন . এমন কিছু করে চলে গেলো। কারণ ..

আজ পর্যন্ত মামুন এগুলো কিছুই করেনি। বড়জোর হাত ধরেছে। .
রূপা বাসায় চলে আসে। .

এরপর থেকে মামুন আর ..যোগাযোগ করে না ..।ভার্সিটিতে ও যায় না।
রূপা শুধু মামুন কে ভাবছে .।

বারবার মামুনের সাথে কাটানো সময় ..চোখে ভেসে উঠছে। যেখানে যাচ্ছে সেখানেই যেন মামুন।
রাতে ঘুমাতে গেলে চোখ বুঝলেই মনে হয় মামুন কানে কানে ভালবাসি বলছে । মামুন. এর সাথে যোগাযোগ এর চেষ্টা করেছে ..কিন্তুু সবদিক থেকে বন্ধ।
মোবাইল বন্ধ, ফেসবুক ডিএক্টিভেট করা।
রূপা নিজেই যেন ভাবতে পারছে না ..যে একটা ছেলের জন্য ..সে পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে। কি আছে? অর ভেতর? এর আগে অনেক ছেলে র সাথে রিলেশন করেছে। কখনো এমন হয়নি ..।তবে কি আবার আদনান কে সত্যি ভালবেসে ফেলেছে?
রূপা ছাদে বসে আছে। অনেক দিন পর আজকে তার প্রথম ভালবাসার কথা মনে পরছে। ..
আজকে অনেক দিন পর কিছু হারানোর কষ্ট হচ্ছে। ..
দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে ..মামুন এর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই।
ঘুম থেকে উঠে ..ফোনের ম্যাসেজ এর আওয়াজে।
ম্যাসেজ চেক করতে গিয়ে ..রূপা একটু চমকে যায়।
স্পষ্ট লেখা ম্যাসেজ টা মামুন এর।
দ্রুত ম্যাসেজ সিন করে দেখে ..
“তোমার প্রিয় ..নদীর পাড়ে এস। আমি অপেক্ষা করবো “”
সময় টাও দেওয়া আছে ..।
রূপা দ্রুত তৈরি হয়ে নেয়। আজকে আর মামুন কে..হারাতে দিবে না।চ
মামুন কে ছাড়া বাঁচতে পারবে না।
নদীর পাড়ে কেউ নেই। ..
শুধু দেখে একটা নৌকা খুব সুন্দর করে সাজানো। আর মাঝি বসে আছে। ..
রূপা কে দেখে মাঝি কাছে এসে জিজ্ঞেস করে ..
মাঝি :- আপনে রূপা?
রূপা :হ্যাঁ, কেন?
মাঝি :আপনের ছবি দেখিয়েছিল তারপর ও সিউর হইলাম আর কি নাম শুনে।আসেন নৌকায় ওঠেন। ভাই ..নদীর মাঝখানে অপেক্ষা করছে।

রূপা চুপচাপ ..উঠে বসে। নদীর মাঝখানে গিয়ে দেখে আরেক টা নৌকায় আদনান দাড়িয়ে আছে। এই নৌকা টা আরো বেশি সুন্দর করে সাজানো।
নৌকায় উঠে যাওয়ার পর একটা নৌকা চলে যায়। রূপা চুপচাপ মামুন সামনে গিয়ে দাড়ায়।

মামুন কিছু বলতে যাবে।
তখনই ঠাস করে একটা শব্দ.।
বুঝতেই পেরেছেন কে কাকে দিলো।
ও এখনও বুঝেন নাই।
রূপা মামুন কে দিয়েছে। কি দিয়েছে বলা লাগবে?? থাক এতো টা বোকা আপনারা নন।

-কোথায় গিয়েছিলে? হ্যাঁ? মেয়েদের কষ্ট দিতে তোমাদের ভালো লাগে? সব ছেলে রা এক। .কোথায় গেছিলে বল? (রূপা)
-কেন? এর আগে ত অনেক ছেলের সাথে রিলেশন করেছ। তাদের কে ব্রেক আপ দিয়েছ। আমাকে ভুলতে পারনি? (মামুন )
না পারিনি। আমি নিজেই জানি না ..কেন পারিনি। শুধু বলতে পারি. তোমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারিনি.।
আমিতো হারানোর জন্য হারিয়ে যাইনি।
-তাহলে?
-আমি শুধু তোমাকে হারানোর কষ্ট টা অনুভব করানোর চেষ্টা করেছি..।তুমি যেটা করতে সেটা সঠিক ছিলো না। অনেক ছেলেকে এভাবে কষ্ট দিয়েছিলে কেন?(মামুন)
-তুমি আমার অতীত জানো না।
-আমি জানি, আমি সব জানি ..রূপা।
একটা ছেলে তোমার সাথে ছলনা করছে বলে সব ছেলে যে এক বা সব ছেলেদের সাথে যে সেই ছলনা করলে তোমার সাথে ঘটা ঘটনার. ..প্রতিশোধ নিবে?
-আমি জানি না কিচ্ছু জানি না (রূপা কান্না শুরু করে দিলো)
:রূপা আমি জানি ..কেউ ঠকলে কতটা কষ্ট হয়। তাই বলে অন্যের ওপর এটা উচিত নয়?
রূপা চুপ শুধু কেদে যাচ্ছে।
আমি সব জেনে ..তোমাকে প্রোপোজ করেছি! শুধু তোমার ভুল টা বোঝানোর জন্য।
তার মানে তুমি আমাকে ভালবাসা না?
ভালো না বাসলে কি আজ তোমাকে ভুল টা ধরিয়ে দিতে পারতাম?
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। রূপা। আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো? চল টা দুজনে মিলে সব কিছু নতুন করে শুরু করি। করবে?
হ্যাঁ, তবে একটা শর্তে (রূপা)
কি?
:আমাকে অনেক ভালবাসতে হবে।
:সেতো আমার বউকে বাসবোই
(এই বলে জরিয়ে ধরে রূপা কে)
:এখনো বিয়ে হয়নি। কিন্তুু। (কেদে কেদে)
তাহলে চল যাই কাজী অফিসে?
ধ্যাত!!
হাহাহা ..ভালবাসি।
আমিও অনেক অনেক ভালবাসি।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত