আমি ভাবিনি ইশিতা আমাকে ফেসবুকে নক দিবে।আমি বেশ তব্দা খেয়ে তাকিয়ে রইলাম স্ক্রীনের দিকে, দুবার নামটা পড়লাম।শেষবার জোরেই পরে ফেললাম।মেয়েটার প্রোফাইলের ছবিটা কত সুন্দর। বাস্তবের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর,যদিও আমার ইশিতাকে বাইরেই দেখতে ভালো লাগে।বাইরে বলতে সে আছে আমার ঠিক পাশের রুমেই। ওরা নতুন এসেছে আমাদের এই বাসায়।আমরাও যেমন ভাড়াটিয়া ওরাও তেমনি। আমি প্রতিদিনের মত ছ্যাঁকা খাওয়া গান গাইতে গাইতে ছাদে কাপড় উঠানোর জন্যে গিয়েছিলাম।
নক দিয়ে সোজা বললোঃ এই মুরগী ছাদে আয়।
আমি প্রথমে এক লাফেই উঠে যাইতেছিলাম, পরে ভাবলাম মুরগী কইছে যামু না।
সাথে সাথে মেসেঞ্জারে কল চলে আসলো।
– জানতাম মুরগী বললে আসবা না, প্যারা নাই। আমি ছাদেই।
ঃ তো আমার কি?
– পাশের ছাদে একটা নীল চেক শার্ট পরা ছেলে ঘুরতেছে। তাকায় আছে তো তাই!
আমি দৌড়ায় ছাদে গেলাম। গিয়ে আগে দেখলাম পাশের ছাদে। কেউ নাই। ওমনি ইশিতা আমার শার্টের কলার ধরে বললোঃ
কি রে মুরগী, ছেলের নাম নিতেই ওপরে দৌড় দিলি যে!
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললামঃ
– নতুন এসেছেন আমার একটা দ্বায়িত্ব আছে না।আর এরকম অদ্ভুত শব্দ ব্যবহার আর তুই তুই করতেছো কেন?
ঃ এই শালা তোর থেকে আমার ভাষা জ্ঞান শিখতে হবে। তুই চুপ, একদম চুপ।
একটু পরে পাশের ছাদে পল্লব ভাই আসতেই আমি বললামঃ জানো সবাই পল্লব ভাইকে পটলা বলে।
বলতেই ইশিতা ডাক দিলোঃ
পটলা ভাই!
ভাই চোখ বড় করে তাকাতেই ইশিতা আমার দিকে আঙ্গুল তুলে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
আমি পল্লব ভাইয়ের চোখেঃ আহো ভাতিজা আহো লুকটা দেখতে পেলাম একদম জীবন্ত।
আমি দেরি না করে নিচে নামতে যাবো সিঁড়িতে আমার হাত ধরে ফেললো ইশিতা। ধরেই বললোঃ কেমন লাগলো মুরগী।
আমি হাত ছাড়ানোর জন্যে টানাটানি করতে করতেই ইশিতার গালে কেমনে জানি ঠোঁট না ছুঁয়ে গেলো। মেয়েটা চুপ চাপ আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায় বললোঃ
এই শালা জানি আমার বফ আছে?ওইটা আজ অবধি হাত ধরতে পারলো আর না তুই! শালা লুইচ্চা। এখনি নিচে নাম।
আমি দৌড়ে বাসায় ঢুকলাম। ভাবলাম আম্মার কাছে এসে যদি বিচার দেয় কি বলবো।দুইদিন লজ্জায় বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আগে দেখে নিতাম আর ছাদে যাওয়া বন্ধ একদম,নেটও বন্ধ। সন্ধ্যায় আম্মা ওদের বাসায় আড্ডা দিতে যায়। আমি পড়ার টেবিলে বসে আছি। হুট করে বাসার ভেতর একটা শব্দ হলো। মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে আছি। হুট করে দেখি আশেপাশের সব বাসায় আলো জ্বলতেছে।
ড্রইং রূমে আসতেই দেখি ওখানে কি জানি দাঁড়ায় আছে, আমি এগোতেই খিল খিল করে এক বিভৎস হাসি দিলো কে জানি। একটা বড় সাইজের আটা বেলার ডান্ডা উড়ে এসে লাগলো আমার কপালে। ভুতটা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে আমার ওপরেই পড়লো। আমি বিশাল চিৎকার চেচামেচি করেছিলাম মনে আছে। শক্ত করে ভুতটা ধরেই ফেলেছিলাম।
চোখ মেলতেই দেখলাম আম্মা পাশে বসে আছে। ডানপাশে আমার টেবিলে বসে আছে ইশিতা আর তার পাশে ওর আম্মা। রুমে লাইট চলে আসছে। আন্টি ইশিতাকে বেশ করে বকা দিলো। মেয়েটা মায়াবী মুখ করে তাকাতেই আমার আম্মা বললোঃ
বাদ দেন ভাবি। আমার ছেলেটাই এমন। এমনিতেই ভয় পায়। গাধার বাচ্চা একটা!
আমি অসহায়ের মত তাকাতেই ইশিতা চোখ মারলো একবার। আমি অন্যপাশ হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ইশিতা কানের কাছে ঠোঁট এনে গরম শ্বাস ছেড়ে বললোঃ
এই শালা এত ভয় পেয়েছিস যে প্যান্টটাও ভিজিয়ে ফেললি। 😄😄
আমি লাফ দিয়ে উঠে দেখি না আগের প্যান্ট পরাই আছি।
পরদিন সকালেবেলা আমি কোচিং এর জন্যে বের হবো। আগেই দেখে নিলাম কোথাও আছে নাকি। বের হতে যাবো, দেখি দাঁড়ায় আছে নিচে। বললোঃ
রিকশা ডাক!
ঃ কই যাবা?
ডাকতে বলছি ডাক
আমি বাক্যব্যায় না করে ডাকলাম।রিকশায় উঠে বললোঃ
বস!
আমি বললামঃ না।কাজ আছে! অনেক জরুরী ক্লাস।
কড়া দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতেই বললামঃ
আচ্ছা রেখে আসতেছি।
মেয়েটার চোখ নাক মুখ ফোলা ফোলা, সারারাত কেঁদেছে বোঝা যাচ্ছে। আমার হাতে একটা কাগজ ধরায় বললোঃ এইটা ধর।
আমি মশকরা করে বললামঃ কি আমাকে প্রেমপত্র দেয়া হচ্ছে।
_ চুপ শালা! একদম বাজে বকবি না। কলম দিয়ে তোর দুইটা চোখ ফুটা বানায় ফেলবো।
একটা গলির সামনে রিক্সা দাঁড়াতেই বললোঃ
ভেতরে যাবি দেখবি চকলেট কালারের একটা শার্ট পরা ছেলে বসে আছে।ওকে এই চিঠিটা দিবি।
আমি চিঠিটা দিলাম। ব্যাক করবো ভেবে যেই আগ বাড়িয়েছি। ছেলেটা কাঁধে হাত ধরে ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগায় দিলো। বললোঃ
তুই ইশিতার বয়ফ্রেন্ড মানে? প্রিয় কুত্তার বাচ্চা লেখা কেন?
আমি ইনিয়ে বিনিয়ে প্রকান্ড বডিবিল্ডারের সামনে বললামঃ ভাইয়া এইটা আমাকে ইশিতা দিয়েছে।
ঃ ইশিতা কই?
-ইশিতা এসেই আরো একটা থাপ্পড় দিয়ে কতগুলা ছবি আর মেসেজের প্রিন্টেড কপি ছুড়ে মারলো ছেলেটার মুখে। দুই চারটে ছবি আমিও দেখলাম। দেখে আমার নিজেরই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।
ইশিতার তখন গলা চড়ে গেছে।
তুই আমার ফটোশপ করা ন্যুড দিয়ে আমাকেই ব্লাকমেইল করোস? আরে গাধার বাচ্চা ফেক আইডিটা যে নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে খুলছোস মনে আছে?
ছেলেটা ইশিতার হাত ধরতে আসতেই আমি এবার একটু তেড়ে গিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বললামঃ
ইশিতা দৌড় দে।
ইশিতা উল্টো ছেলেটার আম্মাকে যেম কই থেকে ডাক দিলো। এত বড় একটা ছেলেকে মহিলা ঝাঁড়ু পেটা করে নিয়ে গেলো যে আমি সহ সবাই বেশ অবাক।
ইশিতা এবার খুশি মনে বললোঃ
চল আইস্ক্রিম খাই।
কি উপলক্ষ্যে
ঃ যাহ শালা! এই পোলাটা আমারে ব্লাকমেইল করে করে তামা তামা বানায় ফেলছিলো। ব্রেকাপের কথা ওঠার পর থেকেই। কাল রাতে হঠ্যাৎ অন্য একটা নাম্বার থেকে কল দিতেই নাম্বারটা মিলে গেলো মেসেঞ্জারে। আর যায় কই? দেখে একটা বার মনে হয় এত থার্ডক্লাস হবে?
আমি থাপ্পড় কেন খাইলাম?
ঃ চুমু খাইছিলি যে ছাদে সেইটার অপরাধে!
আমি এইসব করি নাই।
ঃ আইসক্রিম খাবি না চিল্লায় সবাইকে বলবো?
দেখ তুই কিন্তু ব্লাকমেইল করতেছোস!
ইশিতা আমার চোখের দিকে শান্ত করে তাকিয়ে বললোঃ
ব্লাক মেইল হইলে ব্লাকমেইল! কিন্তু আমি যা বলবো, যখন বলবো সব শুনবি!
না!
ঃ না মানে? মাইর চিনোস?
হুট করে এসে আমার গালে চেপে ধরে বললোঃ আরে মুরগী এক থাপ্পড় খেয়ে তো গাল কেটে ফেলেছিস!
বলেই মেয়েটার চোখ মুখ পাংশু বর্ণের হয়ে গেলো। হাসপাতালের জন্য রিকশা ডেকেই আমার জন্যে তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
হালকা একটুই কেটে গেছে। তবুও…
আমি মেয়েটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। মধ্যদুপুরে একটা ছেলের গাল থেকে রক্ত পরা বন্ধ করতে এক হাতে টিস্যুতে ধরে আছে গাল। তাকিয়ে আছে পাশের মেয়েটির দিকে। মেয়েটার গাল থেকে টুপটাপ করে ঝরছে কান্নার জল।