–মিলকরণ বোঝেন ?
–মানে ?
–চোখের সাথে কাজলের,হাতের সাথে চুড়ির,কানের সাথে দুলের, পায়ের সাথে নূপুরের,চুলের সাথে ফুলের,অঙ্গের সাথে শাড়ির।
–এসব কেন বলছেন ?
–মা যখন পাত্রী দেখতে যাওয়ার কথা বলেছিলো তখন আমার কিছুটা বিরক্ত লাগছিলো। কেননা এসব পাত্রী দেখতে যাওয়াটা আমার অস্বস্তি লাগে।একপ্রকার মা জোর করেই এখানে নিয়ে আসছে।
আমি এই পর্যন্ত যে কয়জন পাত্রী দেখেছি তার মধ্যে আপনি তৃতীয়জন।
আগের দু’জন ভীষণ পরিপাটি ছিলো।সাজের মিলকরণটা অসম্ভব সুন্দর ছিলো।আমি জাস্ট ওদের দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
–তাহলে তো আপনার ঐ দুজন থেকে একজন কে বিয়ে করে নেওয়া উচিৎ ছিলো।তৃতীয়জনকে দেখতে আসাটা অহেতুক।
–তা ঠিক।তৃতীয় ব্যক্তিকে না দেখাটাই বেটার ছিলো।কারণ আপনি মোটেও ওদের মত পরিপাটি নয়।
এনিওয়ে,আলাদা করে আমার আর কিছুই বলার নেই, চলুন ।
–জ্বী, চলুন।
পাত্রপক্ষ চলে গেলো।
আমি নিশ্চিত ওদের আমাকে পছন্দ হয়নি।যে ব্যক্তি পাত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে অন্য পাত্রীদের প্রশংসা করে তার তো আমাকে পছন্দ করার প্রশ্নই উঠে না।
কিছুদিন পার হয়ে গেলো…
.
সেদিন ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঠগোলাপগুলো দেখছিলাম।
আমার বারান্দার সাথেই একটা কাঠগোলাপ গাছ আছে।তার পাশে পাঁচটা বেলীফুল গাছ আছে।গাছ থেকে একটা বেলীফুল নিয়ে খোঁপায় গুঁজে দিয়েছিলাম।
.
হঠাৎ ড্রেসিংটেবিলের সামনে রাখা সেলফোনটা বেজে উঠলো।ফোনটা ধরতে যাবো ঠিক তখনই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে আসলো একটি ম্যাসেজ।
“আপনাকে এলোমেলোতেই অসম্ভব সুন্দর লাগে।”
কিছুই বুঝলাম না।কে এই ব্যক্তি ? আমাকে এমন ম্যাসেজই বা কেন পাঠিয়েছে ?ভুলে মনে হয় কেউ পাঠিয়ে দিয়েছে ! হতেই পারে ।
হঠাৎ ঘোরভাবনা বিচ্ছেদ করে আরেকটা বার্তা ফোনের স্ক্রিনে ভেসে আসলো।
“শুনুন,বেলীফুলটা খোঁপায় না গুঁজে এলোচুলে গুঁজে দিন।দেখতে বেশ লাগবে । ”
.
নাহ্ এটাতো কেউ ইচ্ছে করেই করছে।ভুলে তো এমন ম্যাসেজ আসবে না।
নাম্বারটাতে ফোন দিবো ? দেওয়াটা কি উচিৎ হবে ? নাকি ব্লকলিস্টে রেখে দিবো ? কিন্তু কে এসব বার্তা পাঠাচ্ছে ?
পরেরদিন ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।রিকশার জন্য অপেক্ষা করছি।
হঠাৎ সেই নাম্বার থেকে আরেকটা ম্যাসেজ আসলো।
“আপনার কপালের টিপটা এক সাইডে চলে গেছে।ঠিক করে নিন।”
এইবার আমি ঐ নম্বরে ফোন দিয়ে বসলাম।যা হবে তা পরে দেখা যাবে।কিন্তু এই লোকটা কে ? আমার ফোন নম্বরটাই বা পেলো কোথায় ?
শুধু শুধু ম্যাসেজ দিয়ে বিব্রত কেন করছে ! নানান প্রশ্ন মনে ভিড়েছে।
কিন্তু লোকটা ফোন রিসিভ করছেনা।
দুইবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু রিসিভ করলোনা !
অদ্ভুত !
.
ভার্সিটি শেষে বাসায় ফিরে আসলাম।বাসায় এসে দেখি আমাদের বাড়িতে সেই মানুষগুলো। যারা গত তিন সপ্তাহ আগে আমাকে দেখতে এসেছিলো।
অনেক অবাক হয়েছিলাম।
উনারা আমার বাড়িতে আবার কেন আসছে ?
আমি সোজা নিজের রুমে চলে আসলাম।নিজের রুমে এসে আমি আরও বেশি অবাক হলাম।কারণ আমার ড্রেসিংটেবিলের সামনে ভাঁজ করে রাখা একটি নীল রঙের শাড়ি, নীল চুড়ি, বেলীফুলের মালা রাখা।
.
–এগুলো আপনার জন্য।
–আপনি !
–জ্বী, আমি।অবাক হলেন ?
–তাতো বটে।কিন্তু আমার বাড়িতে আবার আসার কারণ ?
–কারণ হলো আপনি।সেদিন আমি চলে গিয়েছিলাম ঠিকই।কিন্তু যাওয়ার সময় আপনার ফোন নম্বরটা নিয়ে গিয়েছিলাম।
–তার মানে এতদিন আপনি আমাকে ম্যাসেজ করতেন ?
–জ্বী।
–কিন্তু এসবের মানে কি ?
–আপনাকে গুঁছিয়ে রাখার দায়িত্বটা সারাজীবনের জন্য আমাকে দিবেন ?
–মানে ?
–আমার পরিপাটি মেয়ে পছন্দ নয়।আমার পছন্দ আপনার মত একজন ব্যক্তি।যার মিলকরণের ব্যাপারটা মোটেও আয়ত্বে থাকবেনা।
মিলকরণটা কেবল আমি করে দিবো।
— নীল শাড়ির সাথে দুলটা কি রঙের হবে ?
–এহ্ রে দুলটা নিয়ে আসতে ভুলে গেলাম।
–জ্বী জনাব।আমি মিলকরণ বুঝিনা, কিন্তু আমি যথেষ্ট গুঁছিয়ে নিতে জানি।
–তাতেই হবে। থাক আজ দুল পরতে হবেনা।দুল ছাড়াই শাড়িটা পরুন আর অনুগ্রহ করে নীল চুড়িগুলোও পরবেন।চোখে কিন্তু অবশ্যই কাজল দিবেন।
–আমি কাজল পরতে পারিনা।চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
–বাচ্চার মত কথা বলতেছেন ! ওকে নো প্রবলেম।কাজলটা না হয় আজকের জন্য থাক।
–কেন , আপনি কাজলটা আমাকে পরিয়ে দিতে পারবেন না ?
–সিরিয়াসলি ?
–জ্বী অবশ্যই।
–ঠিক আছে তাহলে আপনাকে কাজল পরিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা আমার।তবে সেটা অবশ্যই বিয়ের পর থেকে।
–পাগল একটা।আমার হবু বর পা টিপে টিপে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর আমি নীল শাড়িটার ভাঁজ খুলে পরছি।
অবশেষে কপালে একটা পাগল জুটে গেলো।কাজল পরিয়ে দেওয়ার পাগল।