আমার ঠিকানা

আমার ঠিকানা

রাতের বেলা শুয়ে আছি। মা এসে বললেন ” হিমু কি করিস? ” আমি আমতা আমতা করে বললাম ” মা শুয়ে আছি। ” মা আমার কপালে হাত দিয়ে বললেন ” আমি কি বউমার মুখ টা দেখে যেতে পারব না? ” আমি হতাশ হয়ে বললাম ” মা একটা চাকরি পাই।

তারপর বিয়ের কথা ভাবব। মা আমার দিকে কেমন অসহায় মুখ নিয়ে চলে গেলেন। আমি জানি আমি বিয়ে করতে পারব না। আমি জেনে শুনে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারব না। আমি আট-দশ টা ছেলের মতো না। আমি বিয়ে করতে পারতাম। মিথ্যা কথা বলে অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারতাম। কিন্তু আমি সুখি হতাম। কিন্তু মেয়ে টার চোখে আমি সারাজীবন অপরাধী হয়ে তাকতাম।

সকাল বেলা ঘুমিয়ে আছি এমন সময় মা আমাকে একটা ডাক দিলেন। আমি মায়ের কাছে এসে বসলাম। মা আমাকে বললেন তুই শুধু বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যা আমি তোর জন্য একটা মেয়ে দেখছি। আমি তৈরি হয়ে মায়ের সাথে কন্যা দেখতে গেলাম। কন্যা কে দেখলাম। কন্যা কে দেখার পর আমার চোখ কপালে উঠে গেল। কন্যাও আমাকে দেখল। কন্যা আমাকে দেখে পছন্দ করি নি আমার মনে হয়। চা নাস্তা খাওয়ার পর বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে মা কে বললাম মা মেয়ে আমার পছন্দ হয় নি।

মা কে দেখতে পেলাম আগুনের মতো লাল হয়ে গেছেন। আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। পরের দিন সকালে বাসা থেকে বের হলাম। মেয়ে টা কে আমার বাসার পাশের রাস্তায় দেখতে পেলাম। মেয়ে টা আমাকে দেখে আমার কাছে আসল। আমার মুখ বরাবর আঙুল দেখিয়ে বলে ” এতো ভাব কিসের? আপনি জানের আমার জন্য কত ছেলে পাগল। আমি যদি একবার কোনো ছেলে কে মুচকি হাসি দেই তাইলে সে ছেলে আমার জন্য প্রতিদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমার জন্য বাজারের সব গোলাপ ফুল কিনে আনে। আপনি নাকি বলছেন আমার মুখে মায়া নেই?

আমি মনে মনে ভাবলাম এই মেয়ে এতো কথা আমাকে কেন বলছে। আমি তার কথার উপর বলে দিলাম। দয়া করে আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না। আমি সেখান থেকে চলে আসতে যাব তখন মেয়ে আমাকে বলে ” ছেলেদের এতো ভাব থাকা ঠিক না। এই ভাব চিরদিন থাকবে না। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম। আমি জানি মেয়ে টা এখন আবেগ দিয়ে কথা বলছে। বিয়ের পর বেকার স্বামী কে নিয়ে কোনো মেয়ে সংসার করতে চায় না। আমি আকাশের দিকে একবার তাকালাম। এক মিনিট তাকিয়ে তাকলাম। মানুষ কে মিথ্যা কথা বলে নিজের অধিকার আদায় করতে পারব না। আমি পারব না মেয়ে টা কে কষ্ট দিতে। মেয়ে টা আমার মনে হচ্ছে খুব ভালো। দেখতে খুব সুন্দর। আমি হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম।

বিকাল বেলা আমার একটা বন্ধুর সাথে দেখা হলো। বন্ধু টা ছেলে না। মেয়ে বন্ধু। মানে বান্ধবী। আমি মেয়েটার সাথে হাসাহাসি করলাম। এক সময় দেখতে পেলাম। মায়ের দেখা মেয়ে টা চলে আসল। আমাকে এসে বলে ” ও বুঝতে পারছি। এর জন্য আমাকে ভালো লাগে না। এই মেয়ে টার জন্য আমাকে পাত্তা দেন না। আজ কে বাসায় যান। আপনার মায়ের কাছে সব বলে দিব। আমি খুব অবাক হলাম। আমি মায়ের দেখা মেয়ে টা কে বললাম ” আপনার নাম কি? ”

মেয়ে টা দেখলাম মুখ টা কালো করে ফেলল। আমাকে একটা কষ্টের ভাব নিয়ে বলল ” মুমু। ” আমি মুমু কে বললাম ” এই মেয়ে টা আমার বান্ধবী। মুমু কেমন বোকা হয়ে আবার বলে এ রকম মেয়ে বন্ধু কয় টা আছে? ” আমি হাতে গণনা করে বললাম ৫ টা। এবার দেখতে পেলাম মুমুর মুখে হাসি।

মুমু আমাকে বলল ” আমি আপনার মায়ের সাথে কথা বলে আসছি। তারপর মুমু চলে গেল। আমি বান্ধবীর সাথে কথা শেষ করে চলে আসলাম।

আমি বাসায় গেলাম। বাড়িতে যাওয়ার পর দেখলাম মুমু একটা শাড়ি পড়ে আমাদের ফুল বাগানের কাছে বসে তাকল। আমি মুমু কে না দেখার ভাণ করে সেখান থেকে চলে আসতে যাব টিক তখন মুমু আমাকে বলে ” আমাকে কেমন লাগছে? আমি মুমুর দিকে একবার তাকালাম। তারপর বললাম ” খারাপ না ভালো লাগছে। মুমু হাসি দিয়ে বলে ” আমার মাথায় ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিবেন। আমি বিরক্তি ভাব নিয়ে বললাম ” বাসায় কি কাজকাম নাই। যান আপনার বাসায় যান।

মুমু ফুল হাতিয়ে বলে ” মানুষ যে এতো ভাবওয়ালা হয় আমার জানা ছিল না। মনে হচ্ছে মাথার সব চুল ছিঁড়ে দিতে। আমি কিছু বললাম না। মেয়ে টা কে দিন দিন এখন আমার ভালো লাগে। কিন্তু মেয়েদের প্রতি এতো মায়া ভাব দেখালে নিজের ক্ষতি হবে। আমার ধারণা মেয়ে টা আমাকে একা রেখে চলে যাবে। আমি এর জন্য মেয়ে টা কে পাত্তা দেই না। পাত্তা দিলে যে কোনো সময় মেয়ে টা আমার মাথায় ভারি দিবে।

আমি একটা দোকানে গিয়ে হাতে একটা সিগারেট নিলাম। মুমু কোথায় থেকে এসে বলে ” আমাকে পছন্দ করেন না টিক আছে কিন্তু তাই বলে সিগারেট খাবেন। সিগারেট খেলে নিজের ক্ষতি হয় এই টা আপনি জানেন?

আমি মুমুর দিকে তাকিয়ে বললাম ” আপনি খাবেন? ”

মুমু বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল ” আপনি দেখতে যেমন একটা গাধা তার চাইতে আপনি আর বেশি বোকা। মেয়ে রা কি সিগারেট খায়?

তাইলে কারা খায়?

মুমু আমার দিকে তাকিয়ে বলে ” ছেলেরা খায়। ” আমি বললাম তাইলে আমি খাই। ” মুমু রেগে গিয়ে বলে ” আপনি খেয়ে খেয়ে মরে যান তাতে আমার কি? ” আমি এই কথা শুনার পর বললাম ” তাইলে যান। ”

মুমু চোখে পানি এনে বলে ” আমি কিন্তু আপনার মায়ের কাছে বিচার দিব। ” আমি সিগারেট টা মাটিতে ফেলে বললাম ” তার আর দরকার নেই। চলেন আপনাকে নিয়ে ফুচকা খাব। ” মুমুর ঠোঁটে হাসি দেখতে পেলাম। মুমু খুশি হয়ে বলে ” সত্যি। ” আমি চোখের ইশারা দিয়ে বললাম ” হ্যা। ”

মা আমাকে বললেন ” বাবা হিমু আজ আরেক টা মেয়ে দেখতে যাব তুই তৈরি থাকিস। আমি কফি খাইতে ছিলাম। মায়ের এ কথা শুনার পর মুখে কফি রাখতে পারি নি। সব মুখের ভিতর থেকে ফেলে দিলাম। আমি মাকে বললাম ” মা একটা কথা বলব? ” মা ইশারা দিয়ে বললেন হ্যা বল। ” মা আমি কি বিয়ে করে করে বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট টিম বানাব? ”

মা মুখে হাত দিয়ে বললেন ” বাবা কি বলিস রে? ” তুই করতে চাইলেও আমি করতে দিব না । আমি মাকে বললাম”মা মুমু কে আমি বিয়ে করব।”মেয়ে টা খুব ভালো। মা বললেন ” হেহেহে।  আজ মুমুর সাথে তোর বিয়ে।”আমি চোরের মতো করে নিজের রুমে চলে গেলাম।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত