আজ শনিবার,অফিস বন্ধ। স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও আরাফ সাহেব তাদের নজর এড়িয়ে লুকিয়ে পতিতালয়ে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেন! ডিপ্লোমার পর বিএসসি করে আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার তিনি।মোটামুটি টাকাকড়ি ভালোই আছে। ওই মালপানি থাকলে যা হয় আর কি!পতিতালয়ে যেতে তো বয়স লাগে না!তাই কোনকিছু না ভেবেই চলে গেলো পতিতালয়ে তেত্রিশ বছর বয়সে আর জীবনে প্রথমবারের মতোই যাচ্ছে আজ। যদিও একটু ভয় করছে তার। ভয়টা সমাজের মানুষদের পাচ্ছে সে!যদি দেখে ফেলে একবার তাহলে লোকে বলাবলি শুরু করবে ইঞ্জিয়ার সাহেবের সাথে পতিতাদের সম্পর্ক রয়েছে। তাই রাতের আঁধারে লুকিয়ে চলে গেলো সেখানে।
নিষিদ্ধ পল্লির সর্দারনী রাহেলা বিবির সাথে কথা বলে আরাফ সাহেব।
-আসুন জনাব আসুন। আপনার যে মেয়েটাকে ভালো লাগে তাকে সিলেক্ট করে আমাকে বলুন।
তারপর আরাফ সাহেব ঘুরে দেখতে লাগলেন মেয়েগুলোকে।
তারপর একটা মেয়েকে দেখিয়ে বলে আমি ওর সাথে সময় কাটাতে চাই।
-তিন হাজার টাকা দিতে হবে ঘন্টায় একে চাইলে। আমার এখানকার সবচাইতে হট।বয়স হলেও যৌবনের দিক থেকে একদম পার্ফেক্ট আছে।যাকে একদম খাঁজ বাংলায় সাবিতা বৌদির সাথে তুলনা করা চলে!
মেয়েটা পরিচিত আর খুব চেনা হলেও ওর সম্পর্কে এমন কথা শুনে একটুও অবাক হইনি অবাক তো ও আগেই করে দিয়েছিলো।
-আচ্ছা ঠিকাছে ডিল ফাইনাল।
তারপর আরাফ সাহেব মেয়েটিকে নিয়ে রুমে চলে যায়।
-আরাফ…
-নামটা মনে আছে তাহলে!
-হুম আছে।
-অপ্সরা ওহ সরি নিত্তিয়া।
-আর একবার অপ্সরা বলে ডাকবি প্লিজ?
-না। আর কখনোই না।দশ বছর আগেতো এই নামটায় মায়া ছেড়ে চলে গিয়েছিলি। সেদিন মনে হয়নি এই নামে তোকে কেউ একজন ডাকুক!
আচ্ছা আপনারা তো কিছুই বুঝতে পারছেননা হয়তো তাই ফ্ল্যাশব্যাক করে দশ বছর অতীতে গিয়ে দেখাই কি হয়েছিল সেদিন!
আরাফ তখন কুমিল্লায় পাবলিক পলিটেকনিকের এক সাদামাটা ছাত্র।মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সন্তান।স্টাইল তার সাথে যায় না। তাই তাকে দেখে ক্রাশ খাওয়ারও কেউ নাই। তবে গুণ একটা আছে ভালো অনেক সুন্দর কবিতা লিখতে জানে। উপস্থাপনা আর বক্তৃতাটাও জানে সাথে। বিজয় দিবসে মুজিবর কবিতা দিয়েই সবার আবেগকে ছুঁয়ে দিতে পেরেছিল। মুগ্ধ হয়ে শুনছিল সবাই ওর নিজের লেখা কবিতা আর আবৃতি।ভাষা আর শব্দচয়নগুলো ছিল মনকাড়া! এর আগেও আরাফ রবীন্দ্রসংগীত ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে গানটা গেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলো সেদিন।
আর ঠিক সেদিনই আসে নিত্তিয়া।তুমি যাই বলোনা কেন তোমার একটা আলাদা ট্যালেন্ট আছে বটে!আমি তোমার লেখা কবিতার উপর ক্রাশ খাইছি,আর কি কি লিখতে পারো তুমি?
-একটুআধটু গান লিখতে পারি,গল্প লিখতে পারি।
-বাহ! কবি হওয়ার ইচ্ছে আছে?
-আপনি এখানে কবি হতে এসেছেন?
-ধুর! আমি কবি হতে যাবো কেন? আমিতো ইঞ্জিনিয়ার হতে এসেছি।
-এখানে কেউ কবি হতে আসে না। সবারই স্বপ্ন সে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমিও এখান থেকে ডিপ্লোমা করে ঢাকায় যাবো বিএসসি করতে। স্বপ্ন একটাই বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়া।
-বাহ ভালো। লেটস ফ্রেন্ডস?
তারপর দুজনেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলো দুজনের দিকে।
তারপর দেখতে দেখতে তিনবছর পেরিয়ে চতুর্থ বছরে পদার্পণ করতে চললো ওদের ফ্রেন্ডশিপ। সম্পর্ক যেন আরও গভীর হয়েছে।
নিজ থেকেই প্রপোজ করে বসেছিল নিত্তিয়া।আরাফ প্রথমে এগুলাকে পাগলামি ভেবে এক্সেপ্ট না করলেও পরবর্তীতে ওর পাগলামিগুলোকেই ভালোবাসতে থাকে।অনেক বেশিই ভালোবাসে আরাফ ওই নিত্তিয়া নামের মেয়েটাকে। আর মেয়েটিও ছিলো ক্যাম্পাসের সবচাইতে মায়াবতী আর সুন্দরি মেয়ে তাই শখ করে ওকে অপ্সরা বলে ডাকতাম। কয়েকদিন পর নিত্তিয়া আরাফকে অবহেলা করতে শুরু করে।
লাস্ট সেমিস্টারের কিছুদিন আগে…
-নিত্তিয়া তোর সাথে কথা ছিলো।
-কি কথা?
-তোকে ইদানীং সিয়াম ভাইয়ের সাথে বেশিই দেখা যায়!উনি কে হয় তোর?
সিয়াম ভাই সাজ্জাদ সাহেবের একমাত্র সন্তান।দামী গাড়ি নিয়ে ঘুরে আর বন্ধুদের সাথে পার্টি করে টাকা উড়ায়! সাজ্জাদ সাহেবের ব্যবসা-বাণিজ্য আর অঢেল টাকার পাশাপাশি উনি জেলা পর্যায়ের রাজনৈতিক দলের সেক্রেটারি! তাই সিয়াম ভাই আলাদা মুড নিয়ে ঘুরে।
-দেখ আরাফ এসব পার্সোনাল প্রশ্নের জবাব আমি দিতে বাধ্য নই!
-কেনো বাধ্য নয় তুই?আগেতো কিছু লুকাতি না!
-এখন ইচ্ছে হইছে তাই লুকাইছি।
-ইচ্ছে হবে কেন?
-একটা কথা বলি?তোর এখনো ক্যারিয়ার গড়া হয় নি। নিজের খরচ নিজে চালাতেই হিমসিম হয় তোর। তুই কি ভাবছিস তোর সাথে রিলেশন এগিয়ে নেয়া সম্ভব?
-তাহলে আগে কেনো ভালোবাসি বলেছিলি?
-আবেগে বলছিলাম। তুই নিজেও আবেগ থেকে বেরিয়ে এসে ভেবে দেখ তাহলে বুঝবি তুই আমাকে কতটা ভালো রাখতে পারবি।
-আচ্ছা ভালো থাকিস!
-আর হ্যা তুই চাইলে সবসময় আমার বেস্টু হয়ে থাকতে পারিস।
-তার প্রয়োজন নেই।সারাজীবন যার হাত ধরে কাটাবো বেস্টু তো তাকেই বানাবো।
-হুম। বেস্ট অফ লাক।
তারপর নিত্তিয়াকে সিয়ামের সাথে প্রায়শই দেখা যেতো। ফিরারি ব্র্যান্ডের দামী বুলেটপ্রুফ গাড়ী নিয়ে চলে সিয়াম। মাঝেমাঝে সিয়াম নিত্তিয়াকে গাড়ী দিয়ে ক্যাম্পাসে ছেড়ে যায়।
তারপর ডিপ্লোমা শেষে আরাফ চলে যায় ঢাকায় বিএসসি করতে।মধ্যবিত্ত বাবা অনেক শ্রম আর ত্যাগ-তিতিক্ষা দিয়ে ছেলেকে বিএসসি করায় আর ছেলে তার প্রতিদান সরূপ সবার আগে বাবাকে বিএম ডব্লিউ ব্র্যান্ডের কিনে দিয়েছিলো। বাবার সাপোর্টেই যে সরল আরাফ আজ ইঞ্জিনিয়ার আরাফ সাহেব নামে পরিচিত।
স্বপ্ন ছিলো বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আর সেটা হয়েছিও।আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার।এলাকার সবাই একনামে আরাফ ইঞ্জিনিয়ার বলে চেনে।কিন্তু তোর কি জন্য এই অবস্থা বল?
-তুই চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর সিয়াম আমাকে ডাকে। তারপর একটা রুমে নিয়ে গিয়ে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ইম্প্রেশ করে। আমরা তো কয়েকদিন পর বিয়ে করবোই। আমরা ছাড়াও তো কতো প্রেমিক যুগল এগুলা করছে। তোমার হয়তো আমার উপর একটুও বিশ্বাস নাই। ওকে ফাইন বিশ্বাস করতে হবে না। আর ভালোবাসতেও হবে না। আমাকে হয়তো ভালোবাসোইনি কখনও!
কিন্তু আমি যে ওকে ভালোবেসেছি এটাও মিথ্যে নয়। তাই বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে আমি রাজি হয়ে যাই আর বিশ্বাস করে ওর সাথে ফিজিক্যালি রিলেশন করি। কিন্তু তার দুদিনপর সমাজে লোকে ছিঃ ছিঃ করতে থাকে উঠতি বয়সী ছেলেরাও বলতে থাকে আপুটা জোশ,ফিগারের প্রশংসা করতেই হয় মাইরি! বাবা-মা বলে তুই আমাদের মেয়ে নামের কলঙ্ক। তোকে জন্ম দেয়াটাই এই জন্মেরমত আমাদের বড় পাপ। বাবা-মায়ের মুখে এসব কথা শুনে চোখ গড়িয়ে অশ্রু ঝরছে। কিন্তু কেনো বলছে এসব বুঝতে পেরেছি একটু পরেই যখন শুনলাম আমাকে নিয়ে নাকি ইউটিউবে ঝড় উঠে গেছে। তখন বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে। তাই আমি সাথেসাথেই সিয়ামের কাছে যাই আর বলি আমাকে বিয়ে করতে। কিন্তু ও আমায় ফিরিয়ে দেয়। বলে কিসের বিয়ে? আমিতো জোর করে কিছু করিনি! দুজনের ইচ্ছেতেই সব হয়েছে। মজা তুমিও পাইছো আমিও পাইছি। এখানে আবার বিয়ে-টিয়ের কি আছে!তাছাড়া এর বিনিময়ে অনেক গিফটই তো পেয়েছিলে।
তারপর আমি গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেই আর সেখান থেকেই এক তরুণী আমাকে উদ্ধার করে এই নিষিদ্ধ পল্লিতে নিয়ে আসে।যেখানে দিনের আলোতে নারীরা সমালোচিত আর অন্ধকারে প্রশংসিত! আর ফিরে যাই নি বাড়ি। ইঞ্জিনিয়ার আর হতে পারিনি।
-হুম। হবি কিভাবে! অভিশাপ ছিলো যে! সেই সাদাসিধে আরাফের মনে কষ্ট দেয়ার অভিশাপ! সত্যিকারের ভালোবাসা রেখে অর্থলোভী প্রেমের অভিশাপ ছিলো!আজ আরাফেরও বুলেটপ্রুফ ফিরারি ব্র্যান্ডের গাড়ি আছে। আর সেদিন তুই সত্যিকার ভালোবাসা চিনতে পারলে আমাকেই ভালোবাসতি কিন্তু তুই ভালোবেসেছিস সিয়ামের প্রাচুয্যকে! ভেবেছিলি ও তোকে এসিরুমে রাখবে দামী গাড়ী করে চলতে পারবি।আমার কাছে থাকলে এসব কিছুই পাবিনা।যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে অতিলোভে তাতি নষ্ট! এখন আরাফেরও রাউন্ড সিঁড়ির বাড়ী আছে। আরাফেরও ব্যাংক-ব্যালেন্স ভর্তি টাকা আছে!
-কিন্তু সেই সাদাসিধে আরাফের আজ এই অবস্থা!হঠাৎ নিশিকন্যাদের রুমে!
-আগে কখনো আসিনি। আজ দেখতে এলাম পকেট ভর্তি টাকায় ভর্তি ধনীর দুলালেরা এখানে কি এমন উপভোগ্য পায়! আর সেই সাথে শুনতে চেয়েছিলাম কোনো একটা সুন্দরি নিশিকন্যার সুন্দর অতীত আর তার স্বপ্নের কথা কিন্তু যাকে দেখলাম তার সুন্দর অতীতকে সে নিজেই সাদা কাপড় পরিয়ে মাটিতে পুঁতে দিয়েছে!
-আর কি কি অভ্যাস আছে?
-অভ্যাস বলতে রাতের আঁধারে জোনাকিপোকারা জ্বলে উঠার সাথে সাথে আমার হাতে নিকোটিনের সরু খোলসআবৃত কাঠিটা জ্বলে উঠে।দিনের আলোতে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব অনেকটাই সেন্সিটিভ!
চেয়েছিলাম এখানে কোনো নারীদেহ টাচ করবোনা। শুধু গল্প করবো লোকের অজানায় একটা পতিতারও যে সুন্দর অতীত ছিলো সেই অতীত নিয়ে। কিন্তু এখন টাচ করতেই হবে যার কাছে ঠকেছি শুধুমাত্র টাকার জন্য আজ তাকে দেখাতে হবে তার এই সুন্দর দেহটা কতটা মূল্যহীন! মনের অপমৃত্যু তো হয়েই গেছে। এখন দেহটা দিয়ে ব্যবসা ছাড়া কিছুই হবে না।তা কত পার্সেন্ট নিস সর্দারনীর থেকে?
-সত্তর আমি আর উনি ত্রিশ।
-তারমানে প্রতিবার দুইহাজার নিস?
-হুম।
-তাকিয়ে আছিস কেনো?একটু আগে কি বললাম?
মেয়েটা একবার আরাফের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো খুলবো?
-সেটা কি আর বলতে!এতোক্ষণ কি বললাম?
তারপর আরাফ নিত্তিয়া নামের মেয়েটির নগ্ন দেহের স্বাদ নিয়ে দশ হাজার টাকা ছুঁড়ে মারলো ওর দিকে,এইটা ছিলোনা বলেই তো ছেড়ে গিয়েছিলি আমায়! কাগজের এই ছাপা নোটগুলো আমার কাছে ছিলোনা বলেই তো চলে গিয়েছিলি?এখন এগুলা চুবিয়ে পানি খা তুই। (শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে কথাগুলো বললো আরাফ)
তারপর চলে আসার সময় একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো নিত্তিয়ার চোখ গড়িয়ে অশ্রুধারা বইছে! কাঁদুকগে,আমার কি!এটাতো হওয়ারই কথা ছিলো। ঠকাইলে ঠকিতে হয় কথাটা কে না জানে!
সেদিন রাতে বাসায় গিয়ে গোসল করে আরাফ তার রুমে গিয়ে বসলো।
-খাবে না?(আরাফের স্ত্রী)
-না।বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।
বলেই আরাফ মিহির পাশে ঘুমিয়ে গেল(আরাফের মেয়ে)
আরাফ আর অরণির বিয়ে হয়েছে চারবছর। ওদের দুই বছরের একটা মেয়ে আছে। পাপা,পা,দাদা,দাদু,ফুপি,মামা বলতে পারা ছাড়াও আরও কয়েকটা ছোটখাটো শব্দচয়ন উচ্চারণ করতে পারে। আর দু-চার কদম হাঁটতে পারে।
কিন্তু এতো বছরেও আরাফ অরণি নামের মেয়েটাকে প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারেনি। মন থেকে তাকে ভালোবাসতে পারেনি। অরণি প্রতিরাতেই বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদতো। আর মনেমনে ভাবতো একটা মেয়েরও তো চাওয়া পাওয়া আছে স্বামীর ভালোবাসা তো সব মেয়েই পেতে চায়।কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ এই জন্যই হয়তো ও আমাকে ভালোবাসেনা। অফিস পাঁচটায় ছুটি হলেও প্রতিদিন রাত করে বাড়ি ফিরে আর রোজ একগাদা সিগারেটের গন্ধ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে। যেদিন অফিস ছুটি থাকে সেদিনও বাড়ি থাকে না। কোথায় কোথায় চলে যায়! এদিকে যে আমি খাবার নিয়ে বসে থাকি এর কোনো মূল্যায়নই নেই তার কাছে। ভালোবেসে স্বামীর জন্য রান্নাকরাটাও বুঝি আমার অপরাধ। কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে অরণিও নিত্তিয়ার ওপাশে শুয়ে পড়লো।
পরেরদিন আরাফ ঠিক ছয়টায় বাড়ি ফিরলো। অরণি কিছুটা অবাক চোখেই তাকিয়ে আছে। হাতে শপিং ব্যাগ,আর একটা টেডিবিয়ার!আরাফ বিয়ের পর অরণির জন্য নিজে কিছু আনেনি। টাকা দিয়ে দিতো অরণি কিনে নিতো। অথচ মেয়েটার ইচ্ছে আরাফের পছন্দমতই সাজতে। আরাফ অরণির হাতে টেডিবিয়ার দিয়ে বললো এটা মিহির জন্য। আর অরণির হাতের আঙ্গুলে নিজে আংটি পরিয়ে দিলো। নিজ হাতে অরণির পায়ে নূপুর পড়িয়ে দিলো। আর হাতে একটা কালোরঙের শাড়ী আর একটা কাজলের কৌটো দিয়ে বললো কাজল পরলে তোমায় সুন্দর লাগে। হাতে সাত-আটটা কিটক্যাট দিলো।
-ভাবছি এখন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যের আগেই বাড়ি ফিরবো!
অবাক চোখে খানিকসময় তাকিয়ে থেকে…
-এতোগুলা কিটক্যাট মিহি খেতে পারবে নাকি!
-মিহির জন্য দুইটা বাকিগুলো তোমার জন্য।
মেয়েটা আজ এতো ভালোবাসা পেয়ে আনন্দে কান্না করে দিলো।
-এই পাগলী কাঁদছো কেন?
-তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরবো?
-অনুমতি নেয়ার কি আছে!
-বিয়ের পর কখনওই তো নিজে থেকে জড়িয়ে ধরিনি।
-এখন থেকে যখন ইচ্ছে ধরবে অনুমতির প্রয়োজন নেই।
মেয়েটা আরাফকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর চোখদুটো ছলছল করছে। না আজকে এগুলা অশ্রু নয়,এগুলা আনন্দ অনুভূতি। ঠোটের কোণে একচিলতে হাসি নয়নের বারিধারা রূপে বর্ষিত হচ্ছে। এ যেন এক প্রাপ্তির অনুভূতি। চারবছর ধৈর্য্যের প্রতিদান।
-অনেকক্ষণ তো জড়িয়ে ধরে রাখলে এবার একটু ছেড়ে দিয়ে যাও আজকে বিরিয়ানি রান্না করো। এখন থেকে আর বাইরের খাবার খাবোনা। তোমার ভালোবাসার হাতে রান্না করা খাবার খাবো।
-আর একটু এভাবে থেকে তারপর যাচ্ছি।
তারপর পাগলী মেয়েটা আরও মিনিট দুয়েক এভাবে জড়িয়ে থাকার পর দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।
আমি ওকে ভালো না বাসলে যে আমাকেও আবার ঠকতে হবে কারণ মেয়েটা যে আমায় পাগলের মতো ভালোবাসে তারও একটা মূল্যায়ন দেয়া চাই না হলে যে একটা নিরঅপরাধী মেয়েকে ঠকানো হয়। আমায় ভালোবেসে যে ঠকতে হবেনা তারই প্রমাণ দেয়ার পালা। আর মেয়েটা চারবছর ধরে যতটা ধৈর্য্যর সাথে লড়াই করেছে তার প্রতিদানটাও যে দেয়া চাই।
-এই শুনো!
-কি?
-একটু বেশি করে রান্না কইরো।
-কেন?
-আরে এতোক্ষণ ধরে যারা আমাদের ভালোবাসার গল্পটা পড়লো আর সম্পর্কটার পূর্ণতা জানলো। তারা ট্রিট সরূপ দাওয়াত চাইবে যে কমেন্ট বক্সে!আর বিরিয়ানির লোভ কেইবা সামলাতে পারে বলো!
-যাহ্!ফাজিল একটা।
-হাহাহা…