বার্ষিক পরিক্ষা শেষ। খুব ভালো ফলাফল করেছি । আজকে রাতে খুব জোসনা হয়েছে। কিন্তু বাড়িতে আমার ছোট বোনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান ছিলো। তাই খুব টায়ার্ড হয়ে রাত নয়টার দিকেই শুয়ে পড়লাম। কিন্তু যার দেরি করে ঘুমানোর অভ্যেস তার কি আর তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। তাই হঠাৎ রাতে ঘুম ভেঙে গেলো।
মোবাইলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩ টা বাজে। তাই একটু হাটতে বের হলাম। হাটতে হাটতে দেখি মাটিতে একটা বই পড়ে আছে । খুব উৎসাহ নিয়ে বইটা হাতে নিলাম। কারন আমার যেকোন বইয়ের প্রতি দারুন লোভ। বইয়ের নাম ছিলো জল জোসনা,,,। প্রখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহমেদের একটি বই।
এখন ভাবতে লাগলাম এই বই কোথা থেকে আসল। আমার জানা মতে এরকম কোন বই আমার নেই। যাই হোক। রাতটা ছিলো জোসনার আবার হাতে একটা জোসনার বই, খুব রোমান্টিক একটা ব্যাপার। বইটি পড়তে শুরু করলাম। বইয়ের দ্বিতীয় পৃষ্টায় একটা নাম লেখা। নামটি ছিলো শ্রাবন্তী ইয়াসমিন। অর্থাৎ বুঝতেই পারলাম এটা একটা মেয়ের বই। তারপর জোসনা ভরা রাতে জোসনার বইটি পড়া শুরু করলাম। খুব ভালো লাগছিলো।
হঠাৎ আম্মুর ডাক। জানিনা কেমনে বুঝতে পারল। যাইহোক আমার রুমে এসে পড়লাম। তারপর মোবাইলে আবার চেয়ে দেখি ৪টা বাযে। বুঝলাম এখন আর ঘুম হবে না। কারন একটু পরেই আযান দিবে। তারপর নামাজের জন্য উঠতে হবে। এখন না ঘুমানোটাই ভালো। কিন্তু এখন কি করব?
তারপর ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেলো সেই বইটার কথা। বইটা পড়া শুরু করি। বইটা শেষ করতে পারি না আযান দিয়ে দেয়। তারপর অযু করে নামাজ পড়ে নিই। তারপর একটু বিছানায় যায়। তারপর শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকি,, কে এই মেয়েটা? নামটা খুব সুন্দর হয়ত মানুষটাও অনেক সুন্দর। এসব ভাবতে ভাবতে ভোরের আলো ফুটে যায়। নাশতা করতে যাব এমন সময় রিমির আগমন। ও হ্যা রিমি হলো আমার বান্দন্নী,,, থুক্কু বান্ধবী। রিমির সাথে অপরুপ একটা মেয়ে। যাকে দেখে আমি হারিয়ে গেলাম অজানা এক দেশে। যাকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। যে দেশে হারিয়ে গেছি সেখানে শুধু ওই মেয়েটি আর আমি। রিমির ডাকে আমি আমার দেশে ফিরে এলাম। রিমি বলল,,,,,,,,,
রিমিঃ কেমন আছিস শাকিব?
আমিঃ ভালো তুই,,
রিমিঃ আমিও ভালো,,,
আমিঃ ও কে রে? (মেয়েটিকে দেখিয়ে)
আমিঃ ও কে রে?
রিমিঃ ও আমার বান্ধবী শ্রাবন্তী । কালকে তোদের বাড়িতে আমার সাথে এসে ছিলো। আর ওর একটা প্রিয় বই এখানে ফেলে গেছে। তুই কী বইটা দেখছিস?
আমিঃ আপনার বইটার না কী জল জোসনা? ( মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে)
শ্রাবন্তীঃ হুম্ম, আপনি কি বইটা পেয়েছেন?
আমিঃ হুম্ম, একটু দাঁড়ান আমি নিয়ে আসছি।
শ্রাবন্তীঃ হুম্ম,
আমি বইটা আনতে আমার রুমের দিকে যাচ্ছি। আর ভাবছি মেয়েটা অনেক সুন্দর। ঠিক যেন একটা পরি। ধেত কি ভাবছি, পরি হলে এখানে কি করে। বইটা নিয়ে আসলাম,,,,
আমিঃ এই নিন, আপনার বই।
শ্রাবন্তীঃ ধন্যবাদ।
আমিঃ না ঠিক আছে।
রিমিঃ ঠিক আছে আমরা যাই,
আমিঃ ঠিক আছে, আসবি কিন্তু আবার,,,আর হ্যা আপনিও কিন্তু আসবেন।
তারা চলে গেলো। আমি খেয়ে ধেয়ে কলেজ চলে গেলাম। কলেজ থেকে ফিরে দিলাম একটা ঘুম। বিকালে বের হলাম। মাঠে যাব, ক্রিকেট খেলতে।
এরইমধ্যে শ্রাবন্তীর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় একটা মেয়ের ডাকে পিছনে তাকালাম। দেখলাম শ্রাবন্তী,,,,
আমিঃ আরে আপনি?
শ্রাবন্তীঃ হ্যা,,কেন আশা করেন নি??
আমিঃ ওই আরকি।
শ্রাবন্তীঃ সকালে আপনার সাথে একটু কথা হলো। আর এখন দেখি আপনি হাটতে বের হয়ছেন। তাই ভাবলাম আপনার সাথে পরিচিত হয়ে আসি।
আমিঃ আমি তো এখন খেলতে যাচ্ছি। ( কৌতুহল থাকা সত্ত্বেও ভাব দেখিয়ে বললাম)
শ্রাবন্তীঃ ওহ,,,তাহলে আপনি যান,, অন্যদিন কথা হবে। আমি ভেবছিলাম আপনি হাটতে বের হয়ছেন।
বেশি ভাব দেখাতে গিয়ে এই হয় আরকি
আমিঃ আপনার ফোন নাম্বারটা দেন,,পরে কথা হবে।
কোনকিছু না ভেবে ফোন নাম্বার দিয়ে দিল।
আর এমন করেই আপনি থেকে তুমি। আর আমাদের মাঝে তৈরি হলো এক ভালোবাসার জোসনা। অর্থাৎ জোসনা রাতের ভালোবাসা। আজকে আমি শ্রাবন্তীকে আমার মনের কথা টা বলব। যদিও আগেও বলেছি । কিন্তু আজকে একটু অন্যভাবে। তার পছন্দের প্রিয় ফুল জুই ফুল দিয়ে।
এভাবেই কেটে যায় অনেকগুলো বছর। সেই জন্ম দিনের জোসনার রাতে যেমন জোসনার বই পড়েছিলাম আজও পড়ি। কিন্তু একটু ভিন্ন ভাবে। সেদিন পড়েছিলাম মনে মনে,, শুধু নিজে বুঝার জন্য। কিন্তু এখন তা আর হয় না। কারন শ্রাবন্তী আমার বুকে মাথা রেখে শুনতে থাকে আমার মুখে হাজারও জোসনার গল্প। কারন শ্রাবন্তী এখন আমার একমাত্র বউ ((( হিহিহিহি,,,,একমাত্র বউ)))
আজকের রাতে বেশ জোসনা হয়েছে। আর আমি আজকে একটা জোসনার কবিতার বই থেকে কবিতা পড়ছিলাম। আর আমার একমাত্র বউ(হিহি) আমার বুকে মাথা গুজে তা শুনছে। আজ আমরা অনেক রাত পর্যন্ত জাগব। কারন আজকে শ্রাবন্তীর জন্মদিন। যদিও তার কিছুই মনে নাই।
আমিঃ শ্রাবন্তী চোখটা একটু বন্ধ করো,,,,
শ্রাবন্তীঃ হুম্ম,,আমি চোখ বন্ধ করি আর তুমি শুরু করো দুষ্টুমি,,, তা হচ্ছে না।
আমিঃ আরে না,,, প্লিয,,,
শ্রাবন্তীঃ কেন?
আমিঃ করোই না,,,,
শ্রাবন্তীঃ ঠিক আছে। এই করলাম,,,,,
আমিঃ চোখ কিন্তু খুলবা না,,,,
শ্রাবন্তীঃ ঠিক আছে। অনেক গুলো জোনাকি একটা কাচের বোতলে ভরে তার মুখের কাছে এনে ধরলাম। আর বললাম,,,,
আমিঃ Happy Birth Day,,,, Shrabonti………
সে আমার কথা শুনে অবাক হয়ে চোখ খুললো। আর জোনাকি দেখে খুব খুশি হলো।
কিন্তু পরে বোতলের মুখটা খুলে জোনাকি গুলো ছেড়ে দিল,,,,,
আমিঃ ছেড়ে দিলে কেন?
শ্রাবন্তীঃ তারা তো মরে যেত। আর তারাও আল্লাহর সৃষ্টী। কিন্তু আমাদের থেকে অনেক নিরীহ এবং ছোট,,, তাই বলে আমরা তাদের মেরে ফেলব।
আমিঃ,,,,,,,,,,,,,,,,
আমি কিছুই বললাম না, খুব ভাগ্য করে এমন বউ পেয়েছি।
শ্রাবন্তীঃ আমার গিফট কই?
আমিঃ এই যা গিফট তো আনিনি,,,,
শ্রাবন্তীঃ কিহ,,( নরম স্বরে)
আমিঃ ওই আমার পাগলির জন্মদিন। আর আমি গিফট আনব না,,, এ কেমন কথা,, এই নাও,,
শ্রাবন্তীঃ আরে জোসনার বই,,, ভালোবাসার জোসনা!!! তা লেখক কে?
আমিঃ আমি,,,, আমার লেখা বইটা প্রকাশ পেয়েছে।
শ্রাবন্তীঃ কি,,, আমাকে বলনি কেন?
আমিঃ Surprise দিব বলে।
শ্রাবন্তীঃ হুম্ম,,,,আমি খুব খুশি হয়েছি।
আমিঃ এই চলো আমাদের এখন কেক কাটতে হবে।
আমিঃ রহমান চাচা,,,কেকটা আনেন তো।
শ্রাবন্তীঃ কেক আনতে গেলে কেন,,,আমি কি বাচ্চা নাকি?
আমিঃ আমার মিষ্টি বউয়ের জন্মদিনে কেক আনব না,,,, এ কেমন কথা।
শ্রাবন্তীঃ হয়েছে থাক,,,,আর বলতে হবে না।
কেক কাটার পর একে অপরকে কেক খাইয়ে দিলাম।
হঠাৎ,,,,,,,,,,,,,,,,
হঠাৎ শ্রাবন্তী বলল,,,
শ্রাবন্তীঃ চাচা আপনি এখানে আসেনতো,,,,,
রহঃচাচাঃ হ্যা মা বলো,,,,
শ্রাবন্তীঃ হ্যা চাচা হা করুন তো,,
রহঃচাচাঃ কেন মা?
শ্রাবন্তীঃ করুন না।
এরপর রহমান চাচা হা করলে শ্রাবন্তী তাকে নিজ হাতে কেক মুখে তুলে দিল। তখন চাচার চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল,,,,
শ্রাবন্তীঃ চাচা আপনি কাঁদছেন কেন?
চাচাঃ মা,,,,আজ পর্যন্ত আমার মেয়েও আমাকে তুলে খায়াও নি। আর তুমি কিনা//// মা তুমিই আমার মেয়ে,,,,
শ্রাবন্তীঃ ঠিক আছে চাচা আমিই আপনার মেয়ে।
আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম। শ্রাবন্তীর চোখেও পানি। আমি তখন তাকে বললাম :
আমিঃ জোসনার বইটি,,,,
শ্রাবন্তীঃ কি হইছে?
আমিঃ ছিড়ে ফেলব ।
শ্রাবন্তীঃ কেন? (অবাক ও ভয়ে)
আমিঃ কাদছো কেন। তুমি জানো না তুকি কাদলে আমি সহ্য করতে পারি না।
শ্রাবন্তীঃ আচ্ছা, আর কাদবো না।
আমিঃ ঠিক আছে।
শ্রাবন্তীঃ চলো ঘুমুতে যাই। অনেক রাত হইছে।
আমিঃ চলো,,,, চাচা আপনি ঘুমুতে যান অনেক রাত হলো। আমার মোটেও এই জোসনার রাতটা ছেড়ে যেতে মন চাইছে না। তবুও যেতে হলো।
সকাল ৯টা। হঠাৎ আমার বউয়ের ডাক,,,,
শ্রাবন্তীঃ এই উঠো উঠো,,,, তোমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে,,,,
আমিঃ কয়টা বাজে?
শ্রাবন্তীঃ ৯টা বাজে।
আমিঃ oh my god……
তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নাশতা করতে গেলাম। পরে অফিসের দিকে ছুটলাম। আমার অফিসে আজকে গুরুত্বপুর্ন মিটিং রয়েছে। তাই এত তাড়াতাড়ি।
ভাবতেই অবাক লাগে, কিছুদিন আগে পরীক্ষার টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যেতো। আর এখন অফিস। গুরুত্বপুর্ন ক্লাস আছে বলে তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতাম। আর এখন গুরুত্বপুর্ন মিটিং আছে বলে তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হয়। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু যা একটুও পালটায় নি তাহলো শ্রাবন্তীর ভালোবাসা। সে আগে যেমন ভালোবাসত এখন ও তেমন। বরং আরও অনেক বেশী। আর পালটায় নি জোসনার বই পড়া। এই জোসনার বইয়ের জন্যই শ্রাবন্তী আজ আমার জীবন সঙি।
ভাবতে ভাবতে অফিসে চলে আসলাম। তারপর মিটিং সেরে ৪ টার দিকে অফিস থেকে বের হলাম।
সন্ধ্যা বেলায় আকাশের নিচে বসে আছি,আমি ও শ্রাবন্তী জোসনার অপেক্ষায়। হাতে আমার প্রকাশিত বইটি। আজকে আকাশ মনে হয় মেঘাচ্ছন্ন। হয়ত আজকে চাদটা মেঘের সাথে যুদ্ধে হেরে গেছে।
হঠাৎ ঝুমঝুম করে শুরু হলো বৃষ্টি। আমরা দুজন ঘরে চলে আসলাম। তারপর শ্রাবন্তী বলল,,,,,,,,,
শ্রাবন্তীঃ কফি খাবে নাকি চা খাবে?
আমিঃ কফি,,,,,
শ্রাবন্তীঃ ঠিক আছে,,, বসো একটু, আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি।
আমিঃ হুম্ম,,,,
সে কফি বানাতে চলে গেলো। আবারও ভাবতে লাগলাম, আমি আসলেই গর্বিত। কেননা আমি খুব ভালো একজন বউ পেয়েছি। যা হয়ত সচরাচর কেও পায়না।
আমার ভাবনার ছেদ ঘটালো আমার বউ।
শ্রাবন্তীঃ এই নাও,,
আমিঃ হুম্ম,,,,
কফিতে চুমুক দিলাম,,,,
শ্রাবন্তীঃ কেমন হয়েছে?
আমিঃ ঠিক তোমার মতো,,
শ্রাবন্তীঃ হেথ ।
কাল শুক্রবার, অফিস নেই। কালকে আমি ও শ্রাবন্তী,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
কালকে আমি ও শ্রাবন্তী ঘুরতে যাব। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে নাশতা সেড়ে ফেললাম। তারপর আমি ও শ্রাবন্তী রেডি হয়ে গাড়িতে উঠলাম। আজকে আমি গাড়ি ড্রাইভিং করব। তাই ড্রাইভার কে আগেই ছুটি দিয়ে দিয়েছি।
গাড়ি ড্রাইভিং করছি। শ্রাবন্তী আমার পাশে বসে। হঠাৎ সে বাচ্চাদের মতো বায়না ধরল আইসক্রিম খাবে।
শ্রাবন্তীঃ এই আইসক্রিম খাব?
আমিঃ ওকে,,
শ্রাবন্তীঃ tnx
আমিঃ উম্মাহ,,,,
শ্রাবন্তীঃ এটা কি হলো ?
আমিঃ আমি আমার বউকে উম্মাহ দিলাম, আর কি হত?
শ্রাবন্তীঃ যা ফাযিল,,,,,
আমিঃ তোমারিত
শ্রাবন্তীঃ হুম্ম,,,,
তারপর আমি একটা আইসক্রিমের দোকানের সামনে গাড়ি থামালাম।
আমিঃ দুটা আইসক্রিম দেন তো,,,,,
দোকানদারঃ ম্যাংগো নাকি স্ট্রবেরী?
আমিঃ এই শ্রাবন্তী কোনটা খাবে?
শ্রাবন্তীঃ স্ট্রবেরী,,,,,
আমিঃ স্ট্রবেরী দেন ////
এভাবে আইসক্রিম থেকে ফুসকা ফুসকা থেকে বাদাম আর অনেকখানি ভালোবাসা দিয়ে শেষ করলাম শুক্রবারের দিনটা। আমি যদিও নামাজ পড়তে চাইনি,,,, তবুও আমার বউয়ের জোড়াজোড়িতে নামাজ পড়লাম। বাড়িতে আসার সময় ও আমার জন্য অনেক সুন্দর একটা ঘড়ি কিনল। আর আমি তাকে লাল টুকটুকে একটা শাড়ি কিনে দিলাম। তারপর ফিরে এলাম আমাদের বাড়িতে।
রাত্রে আমি ও শ্রাবন্তী ছাদে বসে আছি। আর বই পড়ছি। আমাদের বিয়ের পর কোন একটা রাত বাদ যায়নি যে আমরা বই পড়িনি,,,,,তাহলে আজকে তার ব্যাতিক্রম হবে কেন?
বই পড়তে পড়তে শ্রাবন্তী আমাকে বলল,,,,,
শ্রাবন্তীঃ আচ্ছা তোমার আমার উপড় কোন রাগ নেই তো?
আমিঃ মানে? তোমার উপড় আমার কেন রাগ থাকবে?
শ্রাবন্তীঃ না মানে,, আমি তোমাকে সবসময় জোড় খাটাই, তুমি যা করতে চাও না তাই করাই,,,তাই বললাম,,,,
আমিঃ আরে পাগলি এতে আমি রাগ করবো কেন? এগুলো তো আমার খুব ভালো লাগে। আর তোমার এই শাশন পাবার জন্যই মাঝেমাঝে আমি ইচ্ছে করে পাগলামো করি। আর সত্যি বলতে আমি তোনার মতো বউ পেয়ে খুব খুশি।
শ্রাবন্তীঃ সত্যি?
আমিঃ হুম্ম,,,,
শ্রাবন্তীঃ আমি যদি কখনো মরে যায়?
আমিঃ চুপ আর কোনদিন এমন কথা বলবা না,,,,
শ্রাবন্তীঃ আরে রাগ করছো কেন? আমি তো এমনিই বললাম,,,
আমিঃ এমনি? আর কখনো এমন কথা যদি বলো,,
শ্রাবন্তীঃ ঠিক আছে,,, আর বলব না,,এখন গল্প পড়,,,,পরে কি হলো?
আমিঃ পড়বো না,,,,,
শ্রাবন্তীঃ কেন?
আমিঃ খুব রাগ হচ্ছে ////
শ্রাবন্তীঃ তাই, তা কিভাবে আমার পাগলটার রাগ ভাঙাতে হবে শুনি?
আমিঃ পাপ্পি দিতে হবে,,,,
শ্রাবন্তীঃ যা, দুষ্টু, সব পাঠক রা তো শুনছে,,,,
আমিঃ তাতে কি? দাও দাও (গালটা এগিয়ে দিয়ে)
শ্রাবন্তীঃ আমিমি পারবোনা,,,, (গাল টা সড়িয়ে দিয়ে)
আমিঃ ঠিক আছে আমিও পড়বোনা,,,,
শ্রাবন্তীঃ উম্মাহ,,,হলো এখন পড়ো,,,,, আর থাক আজকে আর পড়তে হবে না,,,
আমিঃ কেন?
শ্রাবন্তীঃ আরে কালকে তো মা আসতাছেন,,,ভুলে গেলে তাকে তো আনতে যেতে হবে,,,,
আমিঃ ওহ,,হ্যা,,,চলো ঘুমিয়ে পড়ি
শ্রাবন্তীঃ চলো।
সকাল ৪:৫০ বাজে। আজান দিচ্ছে,,, উঠে অযু করে নামাজ পড়তে মসজিদে চলে গেলাম। নামাজ পড়ে ফিরে আসতে আসতে ৫:২০ বেজে গেলো। তারপর আরএকটু ঘুমালাম। তারপর ৬:৩০ এ শ্রাবন্তীর ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। মাকে অনেক বললাম গাড়ি পাঠিয়ে দেই,,কিন্তু কিছুতেই রাজি হলেন না। আর শ্রাবন্তী মাকে আনার জন্য তাড়াতাড়ি বের হবো বলে সকাল সকাল নাশতা বানিয়ে দিল। তারপর নাশতা করে বের হলাম রেল স্টেশনের উদ্দ্যেশ্যে। এখন ৭:৩০ বাজে। ৮ টার দিকে মা চলে আসবেন। তাই কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে থাকলাম। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষি হয়না। যাই হোক অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। ৮টা বাজে। রেল গাড়ি চলে আসল, আর মাও গাড়ি থেকে নামছেন। তারপর মাকে সালাম করে গাড়ি করে চলে আসলাম বাড়িতে। শ্রাবন্তী মাকে সালাম করে দুজনে রান্না করতে চলে গেলো। আর আমি দৌড় লাগালাম অফিসের দিকে।
অফিসে কাজ করছি। এমন সময় শ্রাবন্তীর ফোন,,,,,,
শ্রাবন্তীঃ হ্যালো,,,,শাকিব?
আমিঃ হুম্ম,,,,বলো,,,,,//
শ্রাবন্তীঃ এই শোন কালকে কিন্তু মায়ের জন্মদিন, মনে আছে তো?
আমিঃ এই যা ভুলেই গিয়েছিলাম,, ঠিক আছে মাকে বলবা না কিন্তু,,,, মাকে সারপ্রাইজ দেব!!!!
শ্রাবন্তীঃ কী সারপ্রাইজ?
আমিঃ পরে দেখতে পাবে
শ্রাবন্তীঃ বলো না,,,,,(আবেগী স্বরে)
আমিঃ পরে প্লিজ,,
শ্রাবন্তীঃ ওকে,,,,
ফোনটা কেটে গেলো। ভাবতে থাকি আমার মায়ের জন্মদিন অথচ আমার মনে নাই,,,,আর পাগলিটা ঠিকই মনে রাখছে,,,,, যাই হোক আবার অফিসের কাজে মন দেই,,,,,
বিকালে অফিস থেকে ফিরেই দিলাম এক ঘুম। একেবারে রাতে ঘুম ভাংল। তারপর খেয়ে আবার ঘুম। সকালে উঠে প্রতিদিনের মতো নাশতা করে ছুটলাম অফিসে। অফিস থেকে ফিরে অপেক্ষা করতে থাকলাম ১২ কখন বাজবে। অবশেষে,,,,,,,,,,,
তারপর আমি,,,, মা,,শ্রাবন্তী,,,,আর রহমান চাচা,,,,মিলে কেক কাটি। আর কোন লোক ছিলো না। শ্রাবন্তীর আবদার। আমাদের পরিবারের অনুষ্ঠানে পরিবারের বাইরের কেও থাকবে না,,,,আর কে বাই থাকবে?? এমনি করে দিন যায় দিন আসে। মা গ্রামে চলে গেছেন। খুব মনে পড়ে তাকে। যতদিন এখানে ছিলেন মনে হয়েছে যেন স্বর্গে ছিলাম। রাতে বই পড়ি আর শ্রাবন্তী তা শুনে।
হঠাৎ একদিন শ্রাবন্তী মাথা ঘুরে পড়ে যায়।( জানেনিত ফলে কি হয়)
শরানাপন্ন হলাম ডাক্তারের। ডাক্তার হাসি মুখে বলেন,,,মিষ্টি খাওয়ান, আপনি বাবা হতে চলছেন। আমার খুশি কে দেখে। ডাক্তার কে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বললাম মিষ্টির টাকা। ডাক্তার চলে গেলেন। আমি শ্রাবন্তী কে জড়িয়ে ধরলাম। দেখি পাগলিটা লজ্জা পাচ্ছে। কিছুক্ষন পর সে বলল,,,,
শ্রাবন্তীঃ এই শাকিব শুনো,,,
আমিঃ হুম্ম,,,জান বলো,,,,
শ্রাবন্তীঃ একটা জিনিস চাইব দিবে?
আমিঃ আজকে তুমি যা চাইবে তাই দেব,,,,
শ্রাবন্তীঃ ঠিক আছে
আমিঃ বলো কি চাই?
শ্রাবন্তীঃ বেশি কিছু না,,,,আমরা বাবা মা হতে যাচ্ছি তাই যদি,,,,,,,
আমিঃ যদি কি??
শ্রাবন্তীঃ গরিব মানুষদের খাওয়াতে,,,,
আমিঃ ঠিক আছে তাই হবে,,,,
শ্রাবন্তীঃ আমি কিন্তু সেই খাবার রান্না করব,
আমিঃ ঠিক আছে,,,,,,,,
শ্রাবন্তীঃ এই কি করছো,,,,,ছাড়ো ছাড়ো,,,,,
আমিঃ কি করছি বুঝতে পারছো না,,
শ্রাবন্তীঃ ছাড়ো,,,কেও চলে আসবে
আমিঃ আসুক,,,,একটা
শ্রাবন্তীঃ না
আমিঃ প্লিজ,,,,
শ্রাবন্তীঃ উম্মাহ,
তারপর আমরা বাসায় চলে আসি। তাকে বাসায় রেখেই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। মাকে আনতে যাচ্ছি। গ্রাম টা অনেক পালটে গেছে। সব কিছুই এখন অচেনা,,,, যেই গ্রামে থেকেই বড় হয়েছি সেই গ্রামই আজকে অচেনা,,,, মাকে নিয়ে চলে আসলাম,
একদিন রাতে শ্রাবন্তীর সাথে ঝগড়া করছি,,,
আমিঃ শ্রাবন্তী বলোতো,,,ছেলে হবে নাকি মেয়ে?
শ্রাবন্তীঃ তোমার মত দুষ্টু একটা ছেলে হবে,,,
আমিঃ না তোমার মত মিষ্টি একটা মেয়ে হবে
শ্রাবন্তীঃ না ছেলে
আমিঃ না মেয়ে,,,,
শ্রাবন্তীঃ ঠিক আছে আল্লাহ যা দেন।
এর পর আর কথা বললাম না। এরপর আর কোন থাকতে নেই।
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। আজকে আমি আমার প্রথম সন্তানের মুখ দেখবো। তাই হাসপাতালে,,,অপারেশন থিয়েটারের সামনে আমি,ও মা দাড়াই আছি। কিছুক্ষন পর,,,,,
ডাক্তারঃ Congratulations আপনার মেয়ে হয়েছে।
আমিঃ কি আমার মেয়ে হয়েছে
ডাক্তারঃ হ্যা,,,
ডাক্তার আমার মেয়েকে আমার কাছে আনলেন। আমি তাকে কোলে নিয়েই নাম ঠিক করে ফেলি। জোসনা,,, খুব সুন্দর একটা নাম। তারপর আমি শ্রাবন্তীর কাছে গেলাম,,,, গিয়ে বলি,,,,
আমিঃ শ্রাবন্তী,,,,, আমাদের মেয়েই এখন আমাদের,,,,,,,,,,,,,,,,,
শ্রাবন্তীঃ ভালোবাসার জোসনা,,,,,,,,