মেঘের চাদর

মেঘের চাদর

পূর্বকথাঃ
প্রীতি যখন ফেসবুক রাইটারটির প্রোফাইল ভিজিট করছিল তখনও সে জানে না মানুষটি কে। না জেনেও সে মানুষটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সেই দুর্বলতা থেকেই একদিন রাইটারটিকে সে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালো যার আইডি নাম ছিল ‘নীল আগন্তুক’।

এরইমধ্যে প্রীতির একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়। ইউনীভার্সিটির এক অমনোযোগী ছাত্র.. যাকে সবাই হিমু বলে ডাকে। প্রীতি একদিন ক্লাসের ফাঁকে তাকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের হিমু?”
সে বলে, “সেরকমই…. চেষ্টায় আছি।”
“সবাই তোমায় হিমু ডাকে কেন?”
“আসলে আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন থেকেই সবাইকে বলেছি আমার ডাকনাম হিমু। সবাই সেটাই বিশ্বাস করেছে।”
“তাই?”
“হুম। হিমু চরিত্রটা আমাকে অনেকখানিই ইমপ্রেসড করেছে।”
“কিন্তু তুমি যে আমায় ইমপ্রেসড করেছো তা কি জানো?”
হিমু অবাক হয়ে বলে, “মানে?”
প্রীতি অল্প হেসে বলে, “কিছু না। বাই।”

এর কিছুদিন পরই প্রীতি কাউকে কিছু না জানিয়ে আমেরিকা চলে যায়। সেখানে নর্থ ডাকোটার প্রবাসী হয়ে থাকে। এতে প্রীতির কোনো দোষ ছিল না। তার মামা-মামী তাকে এক প্রবাসীর সাথে বিয়ে দিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়। প্রীতির বাবা-মা কেউ ছিল না, মামা-মামীও তাকে তেমন দেখভাল করতো না।

কিন্তু দুঃখী প্রীতি বিয়ের পরও সুখী হতে পারলো না। কারণ দু’বছরের মাথায় প্রীতি জানতে পারে একটি মেয়ের সাথে তার স্বামী লীভ টুগেদার করছে। এরপর আর স্থির থাকা যায় না। সেজন্যই প্রীতি তাকে ডিভোর্স দিয়েছে।

প্রীতির ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে আজও সেই রাইটার আছে। তাকে নকও করে সে। খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার, দু’বছরে একবারও সে রেসপন্স করেনি।

১.
“আপনি যে এক্সপেক্টেড স্যালারী চেয়েছেন তাতে করে আপনার মত একজনকে আমরা কেন নেব? আপনার জায়গায় তো আমরা দুজনকে রিপুট করতে পারি।”
“সত্যি কথা বলতে কী স্যার আপনাদের যে জব… সেই জবটা হচ্ছে মার্কেটিংয়ে। আর আমার এক্সপার্টিংও হচ্ছে মার্কেটিংয়ে। তো কাজ যদি না করি তবে এক্সপেরিয়েন্সটা হবে কীভাবে স্যার?”

প্রশ্নকর্তা কিছু বললেন না। পাশে বসা শক্ত মুখের ভদ্রলোক নির্মমভাবে বাপ্পির ফাইলটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “আপনি এখন আসতে পারেন।”
বাপ্পি করুণ মুখে বলে, “জ্বী স্যার?”
“ইউ ক্যান লীভ নাউ!”

রাস্তাটা রোদের উত্তাপে তেতে উঠেছে। সামনেই মরীচিকা দেখা যায়। সেই মরীচিকার ওপর অলস দৃষ্টি ফেলে রেখে বাপ্পি হেঁটে চলেছে। মরীচিকার ওপর দিয়ে একজন ভিক্ষুক লাঠি হাতে রাস্তা পার হচ্ছে। এই কড়া রোদেও তার গায়ে চাদর। দৃশ্যটা কেন জানি বাপ্পির মনে ধরলো। তার ইচ্ছে হল কাগজ-পেন্সিল হাতে এখনই দৃশ্যটির ছবি এঁকে ফেলে। ভাবতেই হাসি পেল তার। ছবি আঁকাআঁকি সে অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে। একসময় শখের টানে গল্প-কবিতাও লিখতো। আজ সেইসব দিনগুলো স্মৃতিতে কংকালমূর্তি হয়ে ভেসে উঠেছে।

বাসায় ফিরে সন্ধ্যায় হাতমুখ ধুয়ে বাপ্পি ফেসবুকে বসলো। দশ মিনিটের জন্য বসবে ভেবেছিল। কিন্তু একঘন্টাতেও সে উঠবার কথা মনে করতে পারলো না। তার একমাত্র কারণ বাদশার ম্যাসেজ। আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে তার সাথে বাদশার শেষ কথা হয়। বাপ্পি ম্যাসেজ খুলে দেখলো। খুব ছোট্ট একটা ম্যাসেজ। ছোট্ট, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাসেজে লেখা, “অচিরেই তার সাথে তোমার দেখা হবে। ভাল থেকো বন্ধু।”

বাপ্পি উত্তেজনার সাথে রিপ্লাই করলো, “অচিরেই বলতে কবে মীন করছেন? বলুন বাদশা ভাই!”
অনলাইনে থাকা সত্ত্বেও বাদশা রিপ্লাই করে না। বাপ্পি আবারও কীবোর্ডে আঙুল চালায়, “ছ’বছর আগে থেকেই বলে আসছেন কথাটা.. এখনও তো দেখা হল না।”
এবারেও বাদশা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ধৈর্য্য নিয়ে বাপ্পি তবু টেক্সট করে যায়। এক ঘন্টা পেরুতেই সে গুণে দেখে এগারোটা টেক্সট অলরেডি করা হয়ে গেছে। বাপ্পি একটা দীর্ঘশ্বাসের মত শব্দ শুনে ঘুরে তাকায়। তখনই যেন তার কানের কাছে কেউ বলতে থাকে, “খুব শীঘ্রই তার সাথে তোমার দেখা হবে। প্রকৃতি তোমাদের চিনে নেবে। প্রচন্ড ঝড় শুরু হবে সেদিন। পাখিরা অস্থির হয়ে উড়তে থাকবে আকাশে।”

কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই। সে ক্লান্তভঙ্গিতে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে বসে থাকে চুপচাপ। চাকরি না হবার দরুন তার ভেতর যেমনি দুশ্চিন্তা হচ্ছে তেমনি বাদশার ম্যাসেজ পেয়েও তার ভেতর সুনামির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। যদিও ব্যাপারটা আপাতদৃষ্টিতে খুবই মামুলি, আমলে নেবার মত নয়। কিন্তু বাদশাকে সে চিনে নিয়েছে। কৃষ্ণশক্তির দক্ষতায় সে এদেশের যেকোনো যাদুকরকেই হার মানাতে প্রস্তুত। তার ভবিষ্যদ্বাণীকে মামুলি ভাবলে চলে না। বাদশাকে সে কখনও চোখে দেখেনি, ভার্চুয়ালেই কেবল পরিচয়। তবুও বোঝা যায় মানুষটি ওভার পার্সোনালিটির ধাচে গড়া।

সকালবেলা জগিং করতে গিয়ে বাপ্পি একজনের সাথে ধাক্কা খায়। মানুষটি সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে পড়ে বলে, “বাপ্পি, কেমন আছো?”
চেনা কন্ঠস্বর শুনে বাপ্পি ঘুরে তাকায়, সেইসাথে দেখতে পায় তাহমিদকে। বাপ্পি মৃদু হেসে বলে, “কতদিন পর দেখা….।”
“তা প্রায় তিন বছর।”
“হুম সেটাই।”
দুজনে হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে হাত মেলায়।
“তোমার সাথে দেখা হবে জানতাম।”
“এটাও কি পূর্বনির্ধারিত?”
“সবই পূর্বনির্ধারিত…… এ জগতে সবই পূর্বনির্ধারিত।”
সে কিছু বলে না। তাহমিদ হচ্ছে বাদশার শিষ্য। বাদশার কাছ থেকেই সে ব্ল্যাক ম্যাজিকের জগতে প্রবেশ করবার সুযোগ পায়। বাপ্পি বলে, “বাদশা ভাই কোথায় আছেন বলতে পারেন?”
“না।”
“তার সাথে যোগাযোগ নেই?”
“না।”
“আপনার বস অথচ তার সম্পর্কে কিছু জানেন না?”
“সে নিজেই নিজেকে ভুলে যায় কখনও কখনও। তবে তোমার সাথে তার দেখা হবে।”
“কীভাবে?”
“সেটা জানি না।”
“এটাই আপনাদের সমস্যা।”
“কোনটা?”
“এই যে টার্নিং পয়েন্টে এসে প্রশ্ন করলেই ধরা খেয়ে যান। নানান অপশন দেখাতে থাকেন।”
তাহমিদ বুঝতে পারে বাপ্পি রেগে গেছে। সে নরম সুরে বলে, “একটু হাঁটা যাক চলো।”
“চলুন।”
কিছুদূর যাবার পরই থমকে দাঁড়ায় তাহমিদ। বলে, “তখন কী যেন বলছিলে?”
“আসলে আমি আপনাদের কোনো বুজরুকি বিশ্বাস করি না।”
“ও আচ্ছা।”
“এবং নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত কিছুই বিশ্বাস করব না।”
“সামনের ঐ গাছটা দেখছো?”
“হুম তো?”
“আসো এদিকে।”
তাহমিদ তাকে একটা বকুল ফুলের গাছের কাছে নিয়ে যায়। তারপর গাছটি স্পর্শ করতেই তার সারা শরীর ইলেকট্রিক শকের মত কেঁপে ওঠে। তাহমিদ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে থু করে একদলা থুথু ফেলতেই বাপ্পি দেখতে পায় থুথুর সাথে গাঢ় রক্ত বেরিয়ে এসেছে।
“কিছু দেখলে?”
বাপ্পি সেকথার জবাব না দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে আসে। বাসায় ফিরে অনেক ভাবতে থাকে সে। কী ঘটলো তার চোখের সামনে? যাদু বলে তো দুনিয়ায় কিছু নেই। তাহলে তাহমিদ যেটা করলো সেটার ব্যাখ্যা কী? অনেক ভাবনা চিন্তা করতে করতে দুপুর নাগাদ সে ঘুমিয়ে গেল। ঘুমের মাঝে একটা ছোট্ট স্বপ্ন দেখলো সে। বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে সে দাঁতব্রাশ করছে। মুখ থেকে ফেনা ফেলতেই ফেনার সাথে রক্ত বেরুলো। তখনই ঘুমটা ভেঙে যায়। শুরুতে স্বপ্নটা আমলে না নিলেও পরে সে ঠিকই বুঝতে পারে ব্যাপারটা। দাঁত বা মাড়ি থেকে জীবাণুর কারণে রক্ত বেরিয়ে আসা সম্ভব, যেমনটি তাহমিদের বেলায় ঘটেছে। তাহমিদ তাকে বোকা বানিয়েছে ভেবেও সে ততটা রাগ করে না। কারণ তাহমিদের চরিত্রই একটু খাপছাড়া ধরনের।

২.
“হিমু!”
প্রীতি দেশে ফিরেই যে হিমুকে দেখতে পাবে ভাবেনি। ঢাকার বাড্ডাতে থাকে এখন প্রীতি। সন্ধ্যা নাগাদ ঘরের বাইরে বেরুতেই হিমুর সাথে তার দেখা হয়ে গেল। হিমু তার দিকে ডাক শুনে এগিয়ে আসছে। তবে তার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে তাকে চিনছে না।

প্রীতি বলল, “কেমন আছো?”
“জ্বী ভালো।”
“আমাকে মনে হয় চিনছো না?”
“চেনা চেনা লাগছে অবশ্যি।”
“আমি প্রীতি।”
“প্রীতি মানে ইউনীভার্সিটির প্রীতি?”
“হ্যা।”
“অনেক বদলে গেছো তুমি।”
“তুমিও। ভীষণ রোগা হয়েছো। তবে হিমুর মত ঠিকই দাঁড়ি আছে মুখে।”
হিমু অল্প হাসে।
“তুমি কি ব্যস্ত? এসো, এক কাপ চা খাওয়া যাক।”
“আজ একদমই সময় নেই। ইনফ্যাক্ট আমি ঢাকায় একটা কাজে এসেছি।”
“কী কাজ গো?”
“পরে বলব।”
“না না, এখনই বলো।”
তখনই হিমুর ফোনটা বেজে ওঠে। অতঃপর সে রিসিভার কানে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। একফাঁকে বলে, “দেখা হবে, চলি।”
“ঠিক আছে, আমি এই এলাকাতেই থাকি। মনে করে চলে এসো।”

প্রীতির থেকে বিদায় নিয়ে হিমু হনহন করে হাঁটতে থাকে। ওদিকে বাদশা অদূরেই একটি সোড়িয়াম ল্যাম্পের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ল্যাম্পের আলোয় ফুটে উঠেছে তার তিনটা ছায়া। সে এখানে দাঁড়িয়ে বাপ্পির জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একজনকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়, যার দৃষ্টি বাদশার ছায়ার দিকে। ছেলেটি এসেই বাদশার দিকে তাকিয়ে বলে, “তাহমিদ ভাই ভুল বলেনি, সত্যিই আপনার দেখি তিনটা ছায়া।”
“তুমিই বাপ্পি?”
“না, আমি হিমু।”
“হুম, তোমার আরেক নাম তাহলে হিমু?”
“বাহ, তাহমিদ ভাই যেমনটি বলেছিল তেমনিভাবেই দেখছি মিথ্যা থেকে সত্যটাকে আলাদা করে নিলেন। গ্রেট!”
“তুমি কি ফাজলামি করছো আমার সাথে?”
বাপ্পি লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলে, “না।”
“এবারেও মিথ্যা বলেছো। তবে আমি তোমায় সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাবো।”

বাপ্পি এই মুহূর্তে একটি তেতলা বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তার হাতে একটা রিভলভার, যেটা লোডেড। বারটি গুলির ম্যাগাজিন রয়েছে তাতে। সেইসাথে সেফটি ক্যাচও অন। বাদশা পাশেই ইজিচেয়ারে বসে আছে। সে বলে, “রিভলভারটি অবৈধ ভেবো না। আমি আর্মির জব করি তা তো জানোই।”
বাপ্পি কিছু বলে না, সে জানে।
“এবার তবে নির্দেশমতো কাজ করো।”
ধীরে ধীরে তখন বাপ্পি রিভলভার নিজের কপালে ঠেকায়। তারপর কোনোদিকে না তাকিয়ে ট্রিগারে চাপ দেয়। প্রচন্ড আওয়াজ হওয়া সত্ত্বেও কোনো গুলি বের হয় না।

“হুম, আমি জানতাম ভেতরে গুলি নেই।”
বাদশা বিরক্ত হয়ে রিভলভার হাতে নিয়ে পার্টস খুলে গুলি দেখায়।
“দেখছো?”
“জ্বী।”
“আর কোনো কনফিউশন?”
“বাকি থাকলো শুধু তন্দ্রার রহস্যটা, যার সাথে অচিরেই আমার দেখা হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আপনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।”
বাদশা তখন তাকে উপেক্ষা করে সিগারেট ধরানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, বাপ্পি কিছু না বলেই প্রস্থান নেয়।

৩.
অনেকদিন পর স্পার্ক্লিং অ্যাঞ্জেল নামের আইডি থেকে বাপ্পির আইডিতে ম্যাসেজ আসে। অন্যদিনের মত সে আর অবহেলা করে না, রিপ্লাই দেয়, “আপনি কে তা জানতে পারি?”
“আপনার একজন ভক্ত।”
“আমার না আমার লেখার ভক্ত?”
“দিলেন তো বিপদে ফেলে।”
“হাহাহা!”
“আচ্ছা, আপনার নামটা জানতে পারি?”
“উহু, আগে আপনারটা জানতে চাই।”
“ওকে। আমি প্রীতি।”
“কোন প্রীতি?”
“মানে?”
“আপনি কি […] ইউনীভার্সিটিতে পড়তেন?”
“হ্যা, বাট হু আর ইউ?”
“আমি হিমু।”
“তুমি!”
“হ্যা।”

প্রীতি যতটা না অবাক হয় তারথেকেও বেশি ইমপ্রেসড হয়। এরপর থেকে তাদের নিয়মিত কথা হতে থাকে। প্রীতি বুঝতে পারে সে যেন খুব বেশিই প্রভাবিত হয়ে পড়ছে। যেন হিমুর প্রেমে পড়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু হিমুরও তো একটা জীবন আছে, যেটা সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। হয়তো সে অন্য কাউকে ভালবাসে। এটা জানার জন্যই প্রীতি একদিন নক করে জানতে চায়, “তোমার জীবনে কেউ আছে?”
“হ্যা।”
“কে?”
“এখনও কেউ নেই, তবে আসবে।”
“মানে কী? আচ্ছা যাই হোক, কে সে?”
“তন্দ্রা।”
প্রীতি একটু ব্যথা অনুভব করলেও কনভার্সেশন চালিয়ে যেতে থাকে, “সে কে?”
“আমি জানি না।”
“অদ্ভুত তো!”
“তুমি কি জানতে চাও?”
“চাই।”
“তাহলে একে নক করো, সব বলে দেবে।”
এই বলে বাপ্পি একটা লিংক পাঠিয়ে দেয়। লিংকটাতে ক্লিক করে প্রীতি যে আইডি খুঁজে পায় তাতে করে তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায়। এটা বাদশার আইডি লিংক, যে কিনা তার প্রাক্তন স্বামী! প্রীতি, বাপ্পিকে ম্যাসেজ দেয়, “তুমি কীভাবে একে চেনো?”
“ফেসবুকের মাধ্যমে। সে একজন ম্যাজিশিয়ান।”
“জানি।”
“কীভাবে?”
“বলা যাবে না।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। তবে তার ভবিষ্যদ্বাণী আমার কাছে মিথ্যা মনে হয়। তবু তন্দ্রাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। কী যে করি?”
“অন্য কোনো অ্যাস্ট্রোলজিস্টের কাছে যাও, তাহলেই তো হয়।”
“দারুণ আইডিয়া তো!”
প্রীতি কিছু না লিখে ক্লান্তভঙ্গিতে ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসে।

অ্যাস্ট্রোলজিস্ট খুঁজে পাওয়া যে এত কঠিন হবে তা কে জানতো। বাপ্পির যে কয়টা হাতেগোনা বন্ধু ছিল তাদের সবাইকে সে অ্যাস্ট্রোলজিস্টের ব্যাপারে বলেছে, কেউ এখনও খুঁজে দিতে পারেনি। এরইমধ্যে সে একটা অ্যাস্ট্রোলজির ওপর বই কিনে ফেললো। বইটাতে একটা তথ্য পেয়ে সে চমৎকৃত হল কারণ বাস্তবিকই তার সাথে সেটা মিলে গেছে। তার হাতের সুলেমান রিং নাকি অস্পষ্ট। যার অর্থ তার কোনো ইএসপি (এক্সট্রা সেন্স পারসেপশন) ক্ষমতা নেই। এটা সে নিজেও উপলব্ধি করেছে। অবশ্য ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব কম লোকেরই থাকে।

অবশেষে বাপ্পি একদিন একজন অ্যাস্ট্রোলজিস্টের সন্ধ্যান পায়, যদিও তিনি থাকেন অনেক দূরে.. সিলেটে। বাপ্পি বাসে করে সেখানে রওনা দেয়। কিছুদূর যেতেই যখন দুপুর হয়ে আসে তখনই ঘন কালো মেঘে আকাশ কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে। আচমকায় বয়ে যেতে থাকে ঝড়ো হাওয়া। বাস তৎক্ষণাৎ ব্রেক কষে। বাপ্পির পাশে বসে থাকা ঘুমন্ত লোকটির তখন ঘুম ভেঙে যায়। তিনি দেখেন, তার পাশে বসা ছেলেটি সম্মোহনীর মত দাঁড়িয়ে পড়েছে। তিনি একবার বলেন, “ভাই, কই যান?”

কিন্তু বাপ্পি সাড়া দেয় না। সে হেঁটে হেঁটে বাস থেকে নেমে রাস্তার মাঝে দাঁড়ায় ঝড়ো হাওয়া ভেদ করে। লোকজন ছুটে চলেছে, সবাই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে দিগ্বিদিক। শুধু বাপ্পিই কেবল দাঁড়িয়ে রাস্তার মাঝে। সে দু’হাত দুদিকে প্রসারিত করে বিড়বিড় করে বলে, ” এসো তুমি নীরবে..।”

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত