“স্যার একটা কথা বলি?”
মিথিকে নোট লিখে দিচ্ছিলাম৷ মিথির কথাটা শুনে মিথির দিকে তাকালাম৷
চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে ফেলল মেয়েটা৷
ওকে ডেইলি ২ঘন্টা করে পড়াই৷
এই ২ঘণ্টার মধ্যে তার এই প্রশ্ন ঐ প্রশ্নের বেহুদা উত্তর দিতেই কেটে যায় ঘন্টাখানেক৷
তবে মেয়ে যথেষ্ট বুদ্ধিমতি৷ সে হিসেবে পড়ার অতোটা অসুবিধা হয়না৷
ঠিক ঠিক মানিয়ে নিতে পারি৷
এইবার এসএসসি দিবে৷ বেতনটাও যথেষ্ট ভালো৷ আর তার মা-বাবা যত্নআত্তি করেন যথেষ্ট৷
কথা বলার সময় কখনোই অনুমতি নেয় না৷ আজ হুট করে অনুমতি চেয়ে বসলো!
মাথায় শয়তানি চেপেছে নিশ্চিত৷
আমি উত্তর না দিয়ে আবারো লিখাই মনোযোগ দিই৷
-স্যার বলবো?
আমার উত্তর না পেয়ে বলল মিথি৷
আমি মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিই,
-হ্যা বল৷
-ঠিকঠিক উত্তর দিবেন প্রমিস?৷
-হ্যা দিবো৷ বল৷
-স্যার প্রেম করেছেন কখনো?
মিথির কথাশুনে আকাশ থেকে পরলাম৷ বিগত দু’বছরে হাজার রকমের শয়তানি করলেও এরকম প্রশ্ন কখনো করেনি৷
-একদম চুপ মেয়ে৷ পড়ায় মনোযোগ দাও৷
আমার ধমক শুনে মিথি ভয় পেয়েছে বলে মনে হয়নি৷ বরং মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
-স্যার প্রমিস করেছেন কিন্তু৷ আপনি আমাকে বলেছিলেন একদিন৷ জীবন দিয়ে হলেও মানুষকে দেয়া কথা রাখতে হয়!
-যদি না বলি?
-সোজা হিসেব কেঁদে দিবো৷ আব্বুকে বলবো আপনি আমাকে পিটুনি দিয়েছেন!
আমি বলতে না চাইলেও ফাযিল মেয়েটা ঠিকই শুনে নিবে৷
-হ্যা করেছি৷
-এখন করেন না?
-না করিনা৷
-কেন?
-প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গিয়েছে৷ সে এখন অন্য কারো৷
-কি বলেন স্যার৷ আপনি তাইলে হাজারো প্রেমিকের ভিড়ে এক ব্যর্থ প্রেমিক?
মিথির কথায় হাসি আমি৷ আমার হাসি দেখে মিথি ভ্রু কুচকিয়ে চোখ দু’টো ছোট করে বলল,
-হাসছেন কেন?
-তোমার কথা শুনে৷
-আমি হাসির কি বলেছি শুনি?
-এই যে বললে, হাজারো প্রেমিকের ভীড়ে আমি ব্যর্থ প্রেমিক৷
-তা নয়তো কী?
সামনে রাখা গ্লাসের পানিটুকে একঢোকে গিলে ফেলি আমি৷
মিথি অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে আমার উত্তরের অপেক্ষায়৷ আমার নীরবতা দেখে একটু বিরক্ত হচ্ছে বটে৷
-আমি মোটেও ব্যর্থ প্রেমিক নই৷ আমি স্বার্থক প্রেমিক৷
যে কবি তার প্রেমিকাকে বিয়ে করতে পারেনা সেই স্বার্থক প্রেমিক৷
যদিও আমি হুমায়ুন আজাদের মতো কবি হতে পারিনি৷
তবে কবি না হলেও প্রেমিক হতে পেরেছি কিন্তু৷
যেহেতু আমি প্রেমিকাকে পাইনি সেহেতু আমি অবশ্যই হুমায়ুন আজাদের মতে স্বার্থক প্রেমিক! বুঝেছো মেয়ে?”
-স্যার আমি স্বার্থক প্রেমিকা হতে চাই!
মিনিট দুয়েক চুপ থেকে বলল মিথি৷
-না মেয়ে তুমি তা হতে পারবেনা৷ স্বার্থক প্রেমিক/প্রেমিকা হতে গেলে যে গুণ লাগে৷ তার ছিটেফোটাও তোমার মধ্যে বিদ্যমান নেই৷
-কি কি গুণ থাকা লাগবে স্যার?
মিথি আরেকটু উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো৷
আমি আড়মোড়া ভেঙে অলস ভঙিতে বললাম,
-চা নিয়ে আসো এককাপ৷ চা খেতে খেতে বলি৷
মিথি আর কিছু বলল না৷ তড়িঘড়ি করে চা আনতে উঠে পরলো৷ আমি ডাক দিই আবার৷ মিথি ফিরে তাকাতেই বলি,
-বিস্কিট এনো সাথে৷
-বলতে হবে না সেটা৷ দেখেই বোঝা যাচ্ছে খালি মুখে এসেছেন৷
এই বলেই চলে যায় মেয়েটা৷
আমি চোখ দু’টো বন্ধ করে একটা যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করি৷
কিন্তু খালিপেট বারবার বেঈমানি করেই চলেছে৷
এমন হলেতো হবে না৷ ফাযিল মেয়েকে যে করেই হোক বোঝাতে হবে৷
-স্যার চা নিন৷এবার বলুন!
-এখনই বলতে হবে?
-হুম এখনই৷
আমি চায়ের মধ্যে বিস্কিট ভেজাতে ভেজাতে বলি,
-শুনো তাইলে৷ ও হ্যা আমি যেহেতু প্রেমিক৷ মানে স্বার্থক প্রেমিক৷ সেহেতু প্রেমিকের জায়গা থেকেই বলবো৷ তুমি সেটাকে প্রেমিকাতে কনভার্ট করবা! বুঝেছো?
-হুম বুঝেছি৷
-শুনো,
“স্বার্থক প্রেমিকরা প্রেমিকার বিয়ে হলে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদবে না৷
বরং প্রেমিকার বিয়েতে গিয়ে দাওয়াতে অথবা বিনা দাওয়াতে মাংস পোলাও গিলে আসবে৷
প্রেমিকা যখন অন্যের কনে সেজে বসে থাকবে৷
স্বার্থক প্রেমিক তার প্রেমিকার সামনে গিয়ে দাঁতের ফাঁকে আটকানো মাংস বের করতে করতে বলবে, তোমাকে দারুণ মানিয়েছে৷
স্বার্থক প্রেমিকদের মুখ ভার থাকা যাবে না৷ শত দুঃখ কষ্টেও তাদের হাসিমুখে থাকতে হবে৷ হবেই হবে৷
স্বার্থক প্রেমিকদের নড়বড়ে একটা পরিবার থাকে৷ যে পরিবারের বাবা অথবা মা অসুস্থ থাকবে৷
ছোটবোন অথবা ভাইয়ের খরচ চালানোর দায়িত্ব থাকবে তাদের কাঁধে৷
সেই সুবাধে তারা মরতেও পারে না৷”
কিন্তু তুমিতো প্রেমিকের বিয়ে হলে কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে যাবে মেয়ে৷
আর বিনা দাওয়াতে যখন খেতে যাবা৷ তখনতো কান্নার বেগে কিছু খেতেই পারবানা৷
যদি খেতে নাই পারো ! তোমার প্রেমিকের সামনে গিয়ে কিভাবে দাঁতের ফাঁকের মাংস বের করবে শুনি?
বর সেজে যখন তোমার প্রেমিক বসে থাকবে ভরা মজলিশে৷
তখন তুমিতো তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ কান্না শুরু করে দিবে মেয়ে৷
স্বার্থক প্রেমিক/প্রেমিকাদের মুখ ভার করা চলবেনা৷ কিন্তু তুমিতো অল্পতেই ঠোট ফুলিয়ে রাখো মেয়ে৷
তাইলে কিভাবে স্বার্থক প্রেমিকা হবে?
স্বার্থক প্রেমিক/প্রেমিকাদের নড়বড়ে পরিবার থাকতে হবে৷ তাদের ঘরে বাবা অথবা মা অসুস্থ থাকবে৷ ছোট ভাই-বোনের খরচ চালাতে হবে৷
কিন্তু তুমিতো আব্বু-আম্মুর আদুরে মেয়ে৷ অল্পতেই আদর ঝরে পড়ে৷
স্বার্থক প্রেমিকা হতে গিয়ে তখন আবার হারপিক খেয়ে মরবা৷
যত দোষ সব আমার ঘাড়ে চাপাবে তখন৷”
চায়ের কাপ খালি করে যখন মিথির দিকে তাকালাম৷ মেয়েটা ততক্ষণে চোখের পানিতে খাতা ভিজিয়ে ফেলেছে৷
আমার কলিজাটা ধুপ করে ধরে গেল৷
মেয়ের বাবা এসে যখন দেখবে মেয়ে চোখ মুখ ফোলা৷
তখন নিশ্চিত আমার খবর করে ফেলবে৷
কিছুক্ষণ পর মিথিকে ফিসফিস করে বললাম,
-কাঁদছো কেন মেয়ে? হবেনা স্বার্থক প্রেমিকা?
-য়ুহু হবো না৷ আজ আব্বু আসলেই বলবো, পরীক্ষার পরই যেন আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়৷ আমি ব্যর্থ প্রেমিকা হবো৷
আর ব্যর্থ প্রেমিকার ব্যর্থ স্বামী বানাবো আপনাকে!
থাকেন আপনি হুহ৷”
কথাটা বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল পিচ্চি মেয়েটা৷
আমিও আস্তে করে উঠে পড়লাম৷
মাসের ১০দিন শেষ হয়েছে সবে৷
ভাবলাম আন্টিকে বলি, যেন এডভান্স দেয়৷
চাইতে গিয়েও চাইলাম না৷
শেষমেষ বেতনের মায়া ত্যাগ করে চুপটি করে বেরিয়ে পড়লাম৷
আমি ব্যর্থ প্রেমিকার স্বামী হতে চাই না৷
আমি স্বার্থক প্রেমিক হবো৷ মুখে মেকি হাসিয়ে ঝুলিয়ে বিষণ্ণতার সাগরে ভাসবো আমি৷
আকাশের কালো মেঘ হয়ে ভেসে বেড়াবো এদিক ওদিক৷ আর বৃষ্টির জল হয়ে ঝড়ে পড়বো হাজারো স্বার্থক প্রেমিকের চোখের জল লুকোনোর হাতিয়ার হয়ে৷