ভালোবাসা ধরে রেখেছি

ভালোবাসা ধরে রেখেছি

বস অফিসে দুজন চাইনিজ নিয়োগ দিয়েছেন। একজন পুরুষ একজন মহিলা। অফিসে ফাঁকিবাজের এমনিতে অভাব নেই এখন তো সবাই আরও বেশি কাজে ফাঁকি দিচ্ছে। সবাই চাইনিজ ম্যাডামকে ইম্প্রেস করতে ব্যস্ত। কেউ তাকে গিফ্ট পাঠাচ্ছে যেমন কাদের সাহেব সেদিন একটা গিফ্ট বক্স এনে চাইনিজ মেডামের টেবিলে রাখলেন। মেডাম গিফ্টের প্যাকেট খুলেই লাফ দিয়ে পিয়নের পিঠে উঠছে। কাদের সাহেব শুনেছিলেন চাইনিজরা তেলাপোকা খেতে ব্যাপক পছন্দ করে তিনি সারারাত জেগে এক প্যাকেট তেলাপোকা ধরেছেন। বস জানতে পেরে বেচারার একমাসের বেতন কাট করেছেন। ওয়ার্নিং দিয়েছেন যাতে ভুলেও চাইনিজ ম্যাডামের ক্যাবিনে না যায়। এ নিয়ে তার মন ভিষণ খারাপ তিনি এখন চাইনিজ স্যারের সাথে সখ্যতা গড়েছেন। শুনেছি তার কাছে ক্যারাটে শিখছে। কিন্তু এ সুখ ও তার কপালে সইলোনা, বেচারা ক্যারাটে কিক দিতে গিয়ে চিৎ হয়ে পড়ে মাথা ফাটিয়েছে।

অফিসের বাকি সবাই তার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে তারা চেষ্টা করছেন ম্যাডামকে বাংলা শেখানোর। নোয়াখালি, বরিশাল, সিলেট, চট্রগ্রাম সবরকমের বাংলা শিখতে গিয়ে চাইনিজ ম্যাডাম নিজেই নতুন বাংলা ভাষা আবিষ্কার করে ফেলেছেন। সেদিন আমাকে দেখে বললেনঃ

–ও মনু শইলডা ভালা নি?

-জ্বী ম্যাডাম ভালো।

–গুড হালারপো।

ম্যাডাম কেন গালি দিলেন সেদিন বুঝতে পারিনি পরে শুনলাম বড় বসকেও বান্দরের উকুন, নেড়ি কুত্তার চুলকানি বলে গালি দিয়েছেন। মনে মনে শান্তি পেয়েছিলাম এটা ভেবে যে আমি একা গালি খাইনি। বুঝতে পারলাম কেউ একজন ম্যাডামকে বাংলা শেখানোর নামে গালি শেখাচ্ছে। শেখাক আমার কি। অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম মেডাম পেছন থেকে ডাক দিলেনঃ

–আলিফ

-জ্বী ম্যাডাম।

–আইজ মুই তোমাদের বাড়ি যাবে।

বুঝতে পারলাম ম্যাডাম আমার বাসায় বেড়াতে আসতে চাচ্ছেন। রাত্রির ভয়ে বললামঃ

-ম্যাডাম আমার ওয়াইফ তো বাপের বাসায় বেড়াতে গেছে।

–নো প্রব্লেম মুই রানতে পারি। মুই রাত্রে তোমার বাড়ি যাবে।

-অক্কে ম্যাডাম।

আমি এমনিতে এই চাইনিজ ম্যাডাম আর স্যারকে সহ্য করতে পারিনা। তারা কেন যেন আমার সাথে শত্রুতা করছে বুঝছিনা। প্রমোশনের কথা চলছিলো সেটা অফ করে তাদের প্রধান চামচা রাকিব সাহেবের প্রমোশন দিয়ে দিলেন। অথচ অফিসের সব অতিরিক্ত কাজ আমাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে এমনকি তাদের কাজ ও করিয়ে নিচ্ছে। লোকাল ভাষায় একটা কথা আছে, নরম মাটিতে বিড়াল হাগে। আমাকে তারা নরম মাটি পেয়েছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে চাকরি ছেড়ে দেই নাহলে চিংপং চাইনিজ দুইটারে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। মন মেজাজ বেজায় খারাপ।

অনেকক্ষন ধরে কলিং বেল বাঁজানোর পরে রাত্রি দরজা খুলে দিলো।

-কি করছিলে, এতোক্ষন লাগে দরজা খুলতে?

–তোমার আসতে এতো লেট হলো কেন?

-জ্যাম ছিলো।

–তা তো দেখছি। অফিসে চাইনিজ মেয়েটা আসার পর থেকে প্রতিদিন রাস্তায় জ্যাম থাকা শুরু করেছে।

-তুমি অযথা সন্দেহ করছো।

–সেটা তো সময় বলবে। কোন প্রমাণ পাই তারপর দেখ তোমার কি অবস্থা করি।

-আচ্ছা সে দেখা যাবে, এখন বাসায় ঢুকতে তো দিবে।

কাপড় পাল্টে টিভির সামনে বসলাম। মুহি এসে বললোঃ

–আব্বু কি করো?

-টিভি দেখি আম্মু, তোমার হাতে ওটা কি?

–এটা মেশিন।

-কি মেশিন বানিয়েছো আম্মু?

–এখনো কোন নাম রাখিনি।

-এটা দিয়ে কি হয়?

–এটা দিয়ে কি হয় তুমি দেখবে আব্বু?

-অবশ্যই দেখবো আম্মু, তুমি বানিয়েছো আমি দেখবোনা তা কি হয়।

–এটা কিন্তু বিপদজনক।

-হাহ্ তোমার আব্বুকে যা তা মনে করোনা আম্মু। তোমার আম্মুকে নিয়ে সাত বছর সংসার করছি। তার থেকে বেশি বিপদজনক আর কি হতে পারে।

–আব্বু তাহলে মেশিনের ভেতরে হাত দিয়ে এই লাল সুইচটা অন করো।

ছোট্ট বাচ্চা বানিয়েছে কি আর হতে পারে ভেতরে হয়তো রং বা পানি দিয়ে রেখেছে অথবা তেলাপোকা রেখেছে এর বেশি কি আর হবে। মেশিনের ভেতরে হাত দিয়ে লাল সুইচ অন করলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন চোখ খুললাম দেখি আমি বিছানায়। রাত্রি মুহি আর ভাতিজা তিনজন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যতোদূর মনে পড়ছে অজ্ঞান হওয়ার আগে প্রচন্ড ইলেকট্রিক শক খেয়েছিলাম।

আমাকে চোখ খুলতে দেখে রাত্রি বললোঃ

–কেমন লাগছে এখন?

-হাত পা ঝিনঝিন করছে বাদবাকি সব ঠিক আছে।

–চা খাবে?

-হুম…

ভাতিজার দিকে তাকিয়ে বললামঃ

-কিরে তুই কখন আসলি?

–চাচিআম্মা ফোন দিলেন। আপনার নাকি মৃগী বেরাম হইছে। চিৎ হইয়া পইড়া রইছেন।

-বেশি কথা কস ক্যান। তোর মাথার খবর কি? এখন সমস্যা হয়?

–না চাচ্চু মাথা ঠান্ডা থাকে।

-ভালো। মাথা গরম হলে আমার বাসায় একটা মেশিন আছে নিয়া যাইস। মেশিনের ভেতরে হাত দিবি তারপর সুইচ অন করবি পাগলামি ভালো হয়ে যাবে।

–মেশিন কই পাইলেন চাচ্চু?

-তোর বোন বানাইছে। এখন সামনে থেকে ভাগ।

রাত্রি চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। তাকে কিভাবে বলি চাইনিজ মেডাম রাতে খেতে আসবেন। নিজেই নিজেকে দাওয়াত দিয়েছেন।

-রাত্রি…

–হুম বলো।

-অফিসে তোমার রান্নার প্রশংসা করেছিলাম বুঝছো, চাইনিজ ম্যাডাম তো তোমার রান্না খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছেন।

–তাই না, তাকে দাওয়াত করেছো নাকি?

-না মানে সে নিজেই নিজেকে দাওয়াত করেছে।

–তো আমাকে এখন কি করতে হবে? তেলাপোকা ভাজি আর ব্যাঙের ঝোল রান্না করতে হবে? ভালো তো তুমি তেলাপোকা ধরো তোমার ভাতিজাকে পাঠাও ব্যাঙ ধরতে।

-আহা রাগ করছো কেন আমরা যা খাই তাই রান্না করবে।

রাত্রি হনহন করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। যাক তাকে রাজি করানো গেছে। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। শুয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম যখন ভাঙ্গলো দেরিতে। হাসির শব্দ শেনা যাচ্ছে। চাইনিজ ম্যাডাম বুঝি এসেছেন। বিছানা থেকে নেমে বের হলাম। চাইনিজ স্যার ম্যাডাম দুজনেই এসেছেন। চাইনিজ স্যার আর ভাতিজা দুজনে মুখোমুখি বসে আছে। আর চাইনিজ ম্যাডাম মুহির সাথে বসে তার বানানো ম্যাশিন দেখছে। ভাতিজার মাথার ঠিক নেই আর মুহির শয়তানির সীমা নেই। চাইনিজ মাল দুটা দাঁত বের করে হাঁসছে বটে কিন্তু তারা যে কি জিনিস সাথে নিয়ে আছে তারা নিজেও জানেনা। এই দুটা হলো বোম কখন ফাটবে কে জানে।
রুমে গিয়ে বললামঃ
-হ্যালো স্যার, হ্যালো ম্যাম।

চাইনিজ ম্যাডাম হাসিমুখে জবাব দিলেনঃ
–হ্যালো কাউয়া…

কাউয়া বলায় মুহির কপালে একটা ভাঁজ পড়লো। ভাতিজা রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। খাইছে এরা কিছু করে না বসে নাহলে চাকরিটা যাবে। এমনিতে আমার চাকরি বেশিদিন টিকেনা। স্যার আর ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললামঃ

-বসার রুমে আসুন। বসে গল্প করি।

তারা কেউ আসতে রাজি হলোনা। রাত্রি রান্নাঘর থেকে ডেকে বললোঃ

–আলিফ এদিকে একটু আসো।

রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম রাত্রি বাসন ধুচ্ছে।

-কি ব্যাপার রান্না হয়নি এখনো? মেহমান কখন এসেছে?

–মেহমানকে খাওয়ানো হয়ে গেছে। তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকিনি।

-চলো ও রুমে যাই। স্যার ম্যাডাম মুহি আর সাকিবের সাথে আছে। কোন অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে।

রুমে আসে দেখলাম ভাতিজা স্যারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু তিনি বাংলা তেমন একটা জানেন না বলে ভাতিজার কথা বুঝতে পারছেন না। ভাতিজা ইংলিশে বললোঃ

-ইউ খায়িং জিন্দা ব্যাঙ… ফ্রগ?

–আই কান্ট আন্ডাস্যান্ড…

-অকে… হিন্দিতে বলি। তুম জিন্দা ব্যাঙ খাতা হ্যায়?

–সরি!

-সালা চাইনিজ পিংপং কথা বুঝছনা। ব্যাঙ খাস তোরা?

–সরি!!!

-সালা সরি সরি করছ ক্যান, উষ্ঠা মারুম।

ভাতিজাকে দিলাম ধমকঃ
-সাকিব চুপ থাক। মেহমানদের সাথে কেউ বেয়াদবি করে।

–চাচিআম্মা বলছে চাইনিজকে জিন্দা ব্যাঙ খাওয়াতে পারলে আমিকে পাঁচশত টাকা দিবে। সালাকে ব্যাঙ না খাইয়ে ছাড়ছিনা।

ভাতিজা পকেট থেকে একটা জিন্দা ব্যাঙ বের করে চাইনিজ স্যারের মুখে ঠুসে দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে ধরলো। খাইছে রে। বহুদ কষ্টে ভাতিজার হাত থেকে স্যারকে উদ্ধার করলাম। এদিকে দেখি চাইনিজ ম্যাডাম মুহির মেশিনের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বসে আছে। মুহির দিকে তাকিয়ে বললামঃ

-আম্মু না… সুইচ চাপেনা। তুমি না ভালো মেয়ে।

–ও তোমাকে কাউয়া বলছে কেন?

কথাটা শেষ করে মুহি সুইচ অন করলো। চাইনিজ ম্যাডাম চিঈ চিঈ জাতীয় শব্দ করে অজ্ঞান হলেন। তারা চলে যাওয়ার সময় এও বললেন কাল থেকে অফিস আসার দরকার নেই আপনাকে বহিস্কার করা হলো। ভাতিজা পাঁচশত টাকার বদলে হাজার টাকা নিয়ে বিদায় হলো। মেজাজ খারাপ। রাত্রিকে দিলাম ঝাড়িঃ

-এসব কি করছো তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। তুমি কচি খুকি নও। সাকিবকে তুমি এজন্যই ডেকেছিলে না।

–হুম… তুমি কি ভাবছো তোমার অফিসে কি হয় সে খোঁজ আমি রাখিনা। এই চাইনিজ বদ দুইটা যে অফিসে তোমার বারোটো বাঁজাচ্ছিলো সে খবর অনেক আগে পেয়েছিলাম শুধু কিভাবে তাদের শিক্ষা দিবো সেটা বুঝতে পারছিলাম না।

-শিক্ষা দিছো, মন খুশি হইছে, এখন? এখন আমি কি করবো। চাকরি তো গেছে। খাবা কি এখন।

–সে দেখা যাবে।

-কি দেখা যাবে? সবকিছুতে তোমার বাড়াবাড়ি।

–আরে ব্যাস যার জন্য করলাম চুরি সে বলে চোর। অক্কে ঠিক আছে। আই এ্যাম সরি। ভুল হয়েছে মাফ করো।

-শুরু হলো তোমার ড্রামা। তুমি দোষ করবা কিন্তু আমি কিছু বললেই তোমার ড্রামা শুরু হয়ে যায়।

–যাও ভাগো তোমার সাথে কথা নাই।

রাত্রি মুহির ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। আমিও কাঁথা নিয়ে শুয়ে পড়লাম। গভীর রাতে থাপ্পর খেয়ে ঘুম থেকে লাফায় উঠলাম। দেখি রাত্রি পাশে তিড়িং বিড়িং হয়ে চারপাশে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। এই মহিলা মাঝে মাঝেই ঘুমের মধ্যে থাপ্পর মারে। তার দাবি ঘুমের মধ্যে হাত পা নাড়ানোর অভ্যাস আছে। লক্ষ্য করেছি এটা তখনি ঘটে যখন ঝগড়া চলে। একটু জায়গা ফাঁকা রেখে শুয়ে পড়লাম কিছুক্ষন পরে আবারো থাপ্পর। এবার ঝাকি দিয়ে রাত্রিকে ডেকে তুললামঃ
-ওই মহিলা তোর সমস্যা কি?

–কেন কি হয়েছে?

-তুই জানিসনা কি হয়েছে?

–না তো, তুই তুকারি করছো কেন?

-থাপ্পর দিচ্ছিস ক্যান?

–ও ঘুমের মধ্যে লেগে গেয়ে হয়তো।

-না তুই ইচ্ছা করে দিছিস…

–আবার তুই তাকারি। দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।

-কি করবি তুই?

রাত্রি আমার চুল ধরে টানাটানি শুরু করছে আমি কি পারিনা? ছেড়ে দিবো তোকে? আমিও চুল ধরে টানাটানি শুরু করছি। আজ হয় নিজে টাকলা হবো নাহলে বৌকে টাকলা করে ছাড়বো। আমাকে তো চিনেনা। পরোক্ষনে রাত্রির চুল ছেড়ে দিলাম। রাত্রি বললোঃ

–কি হলো হেরে গেলে?

-তো কিতা করাম তোর চুল আমার প্রিয় জানসনা। ওগুলা ছিলে তো আমারি লস।

–হইছে ঢং করার লাগবেনা। আমি তো সবকিছু বেশি বেশি করি। তুমি থাকো আমি গেলাম মুহির ঘরে।

-পারলে যাও।

দুই হাত দিয়া ধরে রাখছি। পারলে যায় দেখাক।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত