অপরাজিতা

অপরাজিতা

সেই কখন অপরাজিতার অপারেশন চলছে।এখনো কেন শেষ হচ্ছে না?টেনশনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।এত টেনশন আর নিতে পারছি না।কি হবে না হবে জানি না।তবে ডাক্তার তো বললো সব ঠিকই আছে।অপরাজিতা আবার দেখতে পাবে।ওর ইচ্ছে প্রথম আমাকে দেখা।আমি সেই মুহূর্তের জন্য শুধু অপেক্ষা করছি।

দু’বছর আগে একটা ট্রেনিং সেন্টারে ওকে প্রথম দেখি।আমি তখন বুঝতে পারনি ও যে দেখতে পায় না।আর কি করেই বা বুঝবো?অপরাজিতা সবকিছু নিজে নিজে করতো।কারো উপর নির্ভর ছিলো না।তাই বুঝার কোন উপায় ছিলো না।
দিনদিন আমার ওর প্রতি ভালো লাগাটা বেড়েই যাচ্ছিলোএটা কোন করুণা ছিলো মনের ভিতর থেকে এক ধরণের মায়া কাজ করছিলো।তবে ওকে ভালোবাসি বলার সাহসটা পাচ্ছিলাম না।বললে হয়ত রিয়েক্ট করতে পারে এসব ভাবনা ভেবেই যাচ্ছিলাম।এভাবে ই দিন যাচ্ছিলো।ট্রেনিং টা শেষ হওয়ার আর কিছুদিন বাকী ছিলো।আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ভালোলাগার কথা ওকে জানাবো।আগেই টুকটাক কথা হতো।তবে খুব একটা না।তাই সুযোগটা খুঁজেই যাচ্ছিলাম।একদিন দিনক্ষণ দেখে ওকে বললেই ফেললাম।

“আপনার সাথে আমার একটা কথা ছিলো।যদি আপনার সময় থাকে”?উত্তর টা একটু রাগি রাগি ছিলো।তবে রাজী হয়েছিলো। “জ্বি বলেন।তবে তাড়াতাড়ি করবেন”।

আমি অনেক কথা বলার পর। ভালোবাসি কথা টা বলে ফেললাম।আর যা ভাবছি তাই হলো।প্রচন্ড রিয়েক্ট করে আমাকে ফিরিয়ে দিলো।তবে আমি মোটেও রাগ করিনি।আর হালও ছাড়িনি।প্রায় একমাস আমাদের যোগাযোগ হয়নি।আমি নতুন জবে বিজি হয়ে যাই।তবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম।বিয়ে করলে অপরাজিতাকে ই করবো।ও ছাড়া আমার কোন গতি নাই।বাসায় তেমন কেউ রাজী ছিলো না শুধু মা ছাড়া।ওদের ধারণা একটা অন্ধ মেয়েকে বিয়ে করাটা অসম্মানের।আমার কাছে মোটেই এসব ছিলো না।একদিন আমি আর মা অপরাজিতার বাসায় গেলাম বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।এবং কোন ভনিতা না করে সরাসরি বলে দিলাম।ওরা রাজী হলো।কিন্তু অপরাজিতা? যাই হোক আমার সিদ্ধান্তে আমি অটল ছিলাম।এভাবে দু’মাস যাওয়ার পর অবশেষে আমার আর অপরাজিতার বিয়ে হলো।আমার তো খুশিতে তখন লাফাতে ইচ্ছে করছিলো।তবে সেটা করিনি।

বিয়ের প্রথম রাতে অপরাজিতার শুধু একটা প্রশ্ন ছিলো।অন্ধ জেনেও কেন বিয়ে করলাম? আমি বললাম ” সত্যিকার ভালোবাসা কখনো বাহিরের রূপ দেখে হয় না।মনের রূপ দেখে হয়।তাই ভালোবাসি তোমাকে”।

এই প্রথম তাঁর ঠোঁটের কোণে হাসি দেখলাম।হাসলে ওকে দারুণ লাগে।ও খুবটা একটা হাসে না।আমি তাঁর হাসির জন্য অনেককিছু করতে পারি।ও আর একটা কথা, ওর নাম টা আমার দেওয়া।অপরাজিতা ফুল ওর খুব প্রিয়।বারান্দার এক কোণে অপরাজিতা গাছ লাগিয়েছিলাম আমি।নীল নীল ফুলে চেয়ে যেতে।ও তো দেখতে পেতো না।তবে হাত দিয়ে স্পর্শ করতো। বুঝতে পেতো।আনন্দে নিজের অজান্তে হাসত।আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম ওর হাস্যজ্জল চেহারা।মায়ায় মায়ায় ভরে থাকত তাঁর চোখ জোড়া।তখন মনে হত পৃথিবীতে আমিই সেরা সুখী মানুষ। ওকে হাসাতে পেরে।ঔদিকে আমি খুব দৌঁড়াদৌঁড়ি করতাম। এক জোড়া চোখ ওর জন্য জোগাড় করতে। আসলে একটা এক্সিডেন্ট এ ওর চোখ গুলো হারিয়েছিলো।ডাক্তার রা আশা দিয়েছিলো। অপরাজিতা আবার দেখতে পাবে।আমি পাগলের মত সবসময় খোঁজ করতাম।আমার অপরাজিতা আবার দেখবে।বারান্দার কোণে নীল অপরাজিতা ওকে আমি দেখাবো।আজকে সেই দিন।

– এই যে হ্যালো মিস্টার। আপনার ওয়াইফের অপারেশন শেষ হয়েছে।
– তাই নাকি।( আমি খুব চমকে উঠলাম।খুশিতে আত্মহারা)
– এখন ওনি বিপদমুক্ত।
– দেখা করা যাবে?
– আরও বেশ কিছুক্ষণ পর।

এটা বলে ডাক্তার চলে গেছেন।আমার আবারও অপেক্ষার পালা।কিছুক্ষণ পর ওর কাছে গেলাম।তখন একটু জ্ঞান ছিলো।তারপর কয়েকদিন পর ওর চোখের ব্যান্ডেজ খুললো।আমি ওর সামনে বসে ছিলাম।প্রথম আমাকে দেখলো।আর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে আমি খেয়াল করলাম।

আমি বললাম ” এই চোখ দিয়ে কখনো পানি পড়বে না।শুধু পৃথিবীর রূপ দেখবে”।ও বলে ” এই চোখ দিয়ে তোমাকে দেখবো মন ভরে”।

আমি আর অপরাজিতা ভালোবাসি দু’জন দু’জনকে পাগলের মত।মনের সব ইচ্ছে পূরণ করি অপরাজিতার।বারান্দার কোণে অপরাজিতা গাছটা এখন আরও বেশী ফুল দেয়।আর আমার অপরাজিতা আরও বেশী খুশি। সেটাও আমি লুকিয়ে দেখি।কাউকে ভালোবাসলে মন থেকে ভালোবাসতে হয়।সব বিপদে তাঁর পাশেই থাকতে হয়।হাত ছেড়ে দিতে হয় না।আর এটাই প্রকৃত ভালোবাসা।

“আমি আর আমার অপরাজিতার ভালোবাসা”

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত