পাগলির প্রেম

পাগলির প্রেম

ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে করে বাসার কলিং বেল টা বেজে উঠল,বার বার বাজতেছে না এটা তো বাসার কলিং বেল এটা আমার মোবাইলের এলার্ম টোন বাজছে মনে হয়।ঘুমের মধ্যেই তাড়াতাড়ি কেটে দিলাম।তারপর আবার অঘোর ঘুমে আবার ডুবে গেলাম।

হঠাৎ করেই বাসায় আম্মুর চেঁচামেচি শুনতে পারলাম।বুঝলাম আমার জন্য কিছু একটা হয়েছে।কারন আমাকে বকাঝকা করছে।বকাঝকার ধরনটা এমন ছিল জমিদারের ছেলে ঘুম ভাংগে ১২ টায়,কিছুদিন পর যার বিয়ে সে এভাবে ঘুমায়,বাসায় কত কাজ খোঁজখবর কি রাখতে হয় না আরও বিভিন্ন কথা বলে বকাঝকা করছে।

আমি তাড়াতাড়ি একলাফে ঘুম থেকে উঠে গেলাম।উঠে মোবাইলে তাকালাম। হায় হায় মোবাইল তো অফ।তাড়াতাড়ি মোবাইল অন করে দেখলাম নিধি ফোন দিয়েছিল প্রায় ১০ টা।তারমানে আমি এলার্ম ভেবে এলার্মটা কেটে যে ফোন অফ করে দিয়েছিলাম এটা এলার্ম ছিল নিধির ফোন।আর ওর ফোন কেটে আমি মোবাইল অফ করে দিয়ে ছিলাম।ও এতক্ষনে বুঝেছি আমার আম্মু কেন আজ আমাকে সকাল সকাল বকাঝকা করছে।নিশ্চিত আম্মুর কাছে বলেছে ফাজিল মেয়েটা।

ও আমার নাম রায়হান আর নিধি নামের যে মেয়েটার কথা শুনেছেন এটা আমার হবু বউ।আমার আব্বু আর আম্মুর নাকি নিধিকে দেখে পছন্দ হয়ছিল।আর সে জন্য আমার উপর বিয়ে নামক দুনিয়ার প্যাঁচাল বস্তুটি জোর করে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।আর সে ধারাবাহিতায় পারিবারিক ভাবে দেখাদেখি করে সামনে সপ্তাহে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।

একটু পরে ফোন ব্যাক করলাম নিধির কাছে।আর ফোন করেই মেজাজ গরম করে কথা বললাম।

–এত্ত সকালে ফোন দিয়েছে কেন।আর আম্মুর কাছে বিচার দিয়েছ কেন।
–উরে বাবা কি রাগ গো আর এমন রাগ সকালে আমারো উঠেছিল যখন আমার ফোন গুলা না ধরে কেটে অফ করে দিয়েছিলেন।আর কোথায় এত্ত সকাল,শুনেন স্যার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা ভাল।আর আপনাকে ভাল রাখার দায়িত্ব আমার,বুঝলেন স্যার।
–বুঝলাম,কিন্তু এখনো বিয়েই হল না।কিন্তু দায়িত্ব এত্ত তাড়াতাড়ি কেন।
–হয় নি তো কি হইছে।আর তো কয়েটকা দিন নাকি।
–এই কয়েকদিন যাক তারপর দায়িত্ব পালন করো।
–না,এখন থেকেই করব।আমার হবু বর,এটা আমার ইচ্ছা।
–আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।সব মেনে নিলাম।
–গুড বয়।আচ্ছা বাই বাই।
–হুম।বাই

ফোন কেটে দিয়ে মনে হল।বিয়েই আগেই এই অবস্থা আর বিয়ের পর তো আমাকে পাগল করে ফেলবে এই মেয়ে।আল্লাহ কোন বিপদে পরতে যাচ্ছি আমি।আমাকে রক্ষা করো আল্লাহ।এগুলা বলতে বলতে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করে বের হলাম বাসা থেকে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন এসে গেল।বিয়ের দিন সকালে মোবাইল অফ করে ঘুমিয়ে আছি।কারন আমি জানি আজকে সব বন্ধুরা ফোনের উপরে ফোন দিতে থাকবে।আর হবু বউ তো আরো বিরক্ত করবে।আর ঘুমে ডিস্টার্ব একদম পছন্দ করি না আমি।

একটু পরে আমার ছোট বোন এসে ডাকতে লাগল,ঘুম থেকে উঠার জন্য।এক ধমক খেয়ে চলে গেছে ভয়ে।একটু পর আমার আম্মু এসে ডাকতে লাগল।আম্মুর বকাবকিতে উঠতে বাধ্য হলাম।আম্মু বলল নে তর ফোন ধর কথা বল।

–হ্যালো,কে?
–নিধি।
–নিধি কে?
–কি নিজের বউ কে চিনে না।
–ও সরি সরি।ঘুম থেকে উঠেছি মাত্র তাই উল্টাপাল্টা বলছি।
–এত্ত ঘুম কিসের।দাড়াও কাল থেকে ঘুম পালাবে।আর ফোন অফ করে রেখেছ কেন।
–আরে ফোনে চার্জ ছিল না তাই অফ।
–এই একদম মিথ্যে বলবে না কিন্তু।আমি জানি তুমি কেন অফ করে রেখেছ ফোন।আম্মু বলছে তুমি নাকি মাঝেমাঝে এমন করো।ঘুমে যেন ডিস্টার্ব না হয়।
–না না আজকে সত্যি মোবাইলে চার্জ নেই।
–আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম।
–আচ্ছা নিধি,আজকে আমাদের বিয়ে তুমি একটু পর পর ফোন দাও তোমার লজ্জা লাগে না।আর কেউ কি কিছু মনে করে না।
–ওই চুপ।আমার যদি বফ থাকত এভাবে কথা বলতাম না।
–হুম,বলতে।
–হুম আমার তো বফ নেই।তুমিই সব বর+বফ বুঝছো।
–হুম,বুঝছি।
–বুঝছো ভাল কথা।একটু পর ফুল বিয়ের সাজে রেডি হয়ে আমাকে তোমার ছবি পাঠাও।
–আরে তোমার বাড়িতে গেলেই তো আমাকে সরাসরি দেখতে পারবে।ছবি পাঠানোর কি দরকার।
–আরে বুদ্ধু,তখন তোমার দিকে তাকাবো কিভাবে। এত্ত মানুষের ভিরে।লজ্জা লাগবে না আমার।যেটা বলছি সেটা করো।রেডি হয়ে ছবি পাঠাও।খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।বিয়ের পাঞ্জাবিতে আমার বরটাকে কেমন লাগছে।
–আচ্ছা ঠিক আছে একটু পরেই পাঠাচ্ছি।
–হুম।এখন রেখে দেই,বাই বাই।
–হুম,বাই।

ফোন টা কেটে দিয়ে মনে মনে বললাম।মেয়েটা আসলেই একটা পাগলি আর আমাকেও তার প্রেমে পাগল করেই ছাড়বে নিশ্চিত।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত