সকাল থেকে বৌটা কিরকম করছে। চুপচাপ থাকছে। ঝিম ধরে বসে থাকছে ময়ূরের মতো। আর আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না কিছু। এরকম হয় যদি আমি কোনো বড় আকারের ভুল করে থাকি তাহলে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে গত সপ্তাহে কমপক্ষে কোনো ভুল করি নি! জিজ্ঞেস করলামঃ-
– ময়নার মা। কী হলো গো তোমার?
– ময়নার মা কে? ময়নার মা বলবেন না। তাছাড়া আমার কিছু হয় নি।
– তাহলে কোনো কথাবার্তা বলছো না যে? অন্যদিন তো তুমি এরকম থাকো না।
– কী বলতে চান শুনি? আমি বেশি কথা বলি না?
– না না। তা হবে কেনো? আচ্ছা কী আর করা? রাগ কমলে কথা বলতে আইসো। সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য একটা।
– আমার কোনো সারপ্রাইজ দরকার নাই।
মৌ রেগে বেগুনের মতো লাল হয়ে আছে। বুঝতেই পারছি না অপরাধ টা কী করেছি? তাহলে তো কমপক্ষে রাগ ভাঙ্গাতে পারতাম। মা চুপিচুপি ডেকে কানে ধরে বললোঃ-
– কী করেছিস বল? মেয়েটা এরকম করছে কেনো?
– আমি কী জানি? নিজে ও তো বুঝতেছি না।
– সাধু সাজা হচ্ছে না?
– আরেহ না। তোমরা কেউ আমাকে বিশ্বাস করো না কেনো?
কোনোরকম মায়ের হাত থেকে বাঁচলাম। কিন্তু কী দারুণ ঝামেলা! কিছু না করে অপরাধী অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে। এভাবে সারাদিন কাটলো। শুক্রবারটা মাঠি। মৌ বিছানায় আসছে না। এমন রাগের সময় কীভাবে একা একা ঘুমাই? কিন্তু আমারো হলো রাগ। থাকুক সে তাঁর রাগ নিয়ে। আমি ঘুমাই। শুবার পাঁচ মিনিট পর দেখি মৌ উঁ উঁ করে কাঁদতে শুরু করে দিলো! আমি লাফিয়ে উঠে মৌয়ের মুখ চেপে ধরতে চাইলাম। কারণ কান্নার আওয়াজ মা শুনলে আমি শেষ! কিন্তু আমি যেনো চারশো বিশ ভোল্টের শক খেলাম। অবাক হয়ে বললামঃ-
– কাহিনী কী? বলবা তো নাকি? না বললে কীভাবে বুঝবো আমার দোষটা কী?
– আবার দোষ খুঁজেন? আপনার কয়টা বৌ সত্যি করে বলেন তো?
– নাউজুবিল্লাহ! তুমি থাকতে অন্য কোনো মেয়ে আমার বৌ হবে!
– তারমানে বৌ নাই। কিন্তু গার্লফ্রেন্ড আছে।
– এই কথা কে বললো? গার্লফ্রেন্ড কী জিনিষ আমি বুঝিই না।
– মিথ্যাবাদী, চরিত্রহীন, লম্পট, বাজে ছেলে। আমি আর আপনার ঘর করবো না। সারাদিন বাবুর সাথে কথা বলে লুকিয়ে লুকিয়ে। আবার বলে গার্লফ্রেন্ড কী বুঝি না।
– বাবু? কার বাবু? কীসের বাবু?
– ন্যাকামো একদম ভালো লাগে না। আমি বুঝি কিছু বুঝি না? এজন্যই তো নিজের ফোন ধরতে দেয়া হয় না। ফোনে যে হাজারটা বাবুর সাথে কথা বলা হয়।
বাবু বাবু শুনতে শুনতে আমার বন্ধু বাবুর কথা মনে পরে গেলো। ওর নাম, বাবু রহমান। ওর সাথে প্রতিদিন রাতে কথা হয়। প্রবাসে থাকার কারণে। ফোনে নাম্বার বাবু নামেই সেইভ করা। এটা মনে হয় কোনোভাবে দেখেছে! হাল্কা রেগে বললামঃ-
– বাবু আমার বন্ধু। প্রবাসে থাকে বিদায় শুধু রাতে কথা হয়! এতো অবিশ্বাস করো? নাও আজ ফোন তোমার কাছে দিয়ে গেলাম। রাতে ফোন দিলে নিজেই কথা বলে দেখো।
বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম। কিন্তু মহারাণী পথ আটকালো। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললামঃ-
– সরো, বাইরে যাবো।
– না।
– এখন কী আমি বাইরে ও যেতে পারবো না?
– না।
– কেনো?
– আমার ভয় করে…