প্রতিদিন মত আজও বট গাছটার নিচে দাড়িয়ে। হুমম কারন তো একটা আছেই কারন ছাড়া কি আর কেউ দাড়িয়ে থাকে? আর সেই কারনটাই হলো ওই মেয়েটা। প্রতিদিন ঠিক এই সময়টা কাধে একটা ব্যাগ নিয়ে এই পাশ দিয়ে হেটে যায় আর দুর থেকে আমি তাকিয়ে দেখি।
প্রথম প্রথম মেয়েটা আমার দিকে তাকাতো না এখন দেখি মাঝে মাঝে আড় চোখে দেখে আর সাথে সাথেই চোখটা ফিরিয়ে নেয়। সারা রাস্তাতে স্বাভাবিক ভাবে হাটলেও এই টুকু রাস্তা বড্ড বেশিই জোরে হাটে। ওর একটু লুকোচুরি চাহনিতেই তৃপ্তি। আর কি চাই? তবে মনের কথাটা বলতে পারলে হয়তো আরো কিছু পাবো।
নাহ্ সেটা ভালোও হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে।
মনের কথা বলবো কেমনে? ওখনো তো কথাই বলতে পারি নি কথা তো দুরের কথা পিছুও তো নিলাম না এখনো। মেয়েটা চোখের আড়াল হয়ে গেলো। প্রতিদিনের মত বাসায় চলে আসলাম। মাথার উপর ফ্যানটা ঘুরছে।
নাহ্ কালকে পিছু নিবো দেখি কি হয়।
যেই ভাবা সেই কাজ। পিছু পিছু হাটছি দুরত্বটা বেশ। বুকে ধুকপুক করছে। একটু পর পর মেয়েটা পিছনে তাকাচ্ছে। হঠাৎ হাটা থামিয়ে দিলো। সাথে আমিও। আবার চলছে সাথে আমিও। আবার হাটা বন্ধ করে হাতের ইশারাতে ডাকছে। ধিরে ধিরে কাছে গেলাম। শীতেও কপাল টা ঘেমে গেছে।
“কি আজকে গাছ থেকে পথে কেন? ”
কাছে যেতেই বললো।
“না মানে আসলে,,,, ”
– কি গলাতে আবার কি হলো?
– না মানে পানি খাবো। পানি হবে?
– পানি? হি হি হি
কোন কথা না বলেই বোতল বের করে দিলে। পানি খেয়েই দৌড়। এই দৌড় না সেই দৌড়। একটু আসতেই দেখলাম বোতলটা হাতেই। এই রে শেষে না বোতল চুরির দ্বায়ে জেলে দেয়। পরের দিন বোতলটা নিয়ে আসলাম।
মেয়েটা আসছে আমিও পিছু নিলাম।
সামনের দিকে তাকিয়েই বললো,
– আজকেও কি পানি খাবেন নাকি?
– হুমম আসলে…..
– দেখেন পানি খাবেন ঠিক আছে কিন্তু আগের বোতল ফেরত দেন। বলা তো যায় না আজকেও বোতল দিয়ে দৌড় দিবেন হি হি হি।
বোতলটা এগিয়ে দিল। পানি খেয়ে বোতলটা এগিয়ে দিলাম।
– বাব্বা আজকে কি সাহস বাড়লো নাকি? বোতল নিয়ে দৌড় দিলেন না?
মাথা নিচু করে আছি।।
– নাম কি?
– জ্বি নীল।
– জ্বী নীল? বাহ্ সুন্দর নাম তো।
– না না শুধু নীল।
– ও আচ্চা শুধু নীল এইটাও সুন্দর।
– নাহ্ আসলে আমার নামটাই নীল।
– হুমমম এবার হলো। তো প্রথম দিন কাধে গিটার দেখলাম তারপর আর নেই কেন?
– না আসলে……..
– কি বাজাতে পারেন?
– নাহ্ আসলে…….
– ও তার মানে কাধে নিয়ে শুধু ঘুরেন?
– না পারি।।
– তাইলে কালকে নিয়ে আসবেন আজকে যান বাবা দেখতে পেলে পেদাবে।
– না না আমি চলে যাচ্ছি।
– হি হি হি।
দিলাম দৌড়। বাহ্ মেয়েটা প্রথম দিনই লক্ষ করছে? আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। আজকে কাধে গিটারটা নিয়ে আসছি। আমার যাওয়ার আগেই দেখি মেয়েটা দাড়িয়ে আছে।
– এতো পর কেন আজ?
ঘরির দিকে তাকালাম কই নাতো আমি তো আগেই আসছি।
– কই নাতো।
– হুমমমম আজকে একটা ক্লাশ করি নি।
– ও আচ্চা।
– চলেন
– কই? (ভয়ে ভয়ে বললাম)
– কোথাও বসি নাকি এইভাবেই বাজাবেন?।
– ও আচ্ছা চলেন।
গিটারের টুং টিং আওয়াজ।
-শুধু বাজাবেন গান পারেন না?
– একটু আধটু।
– হুমমমম তাইলে গান ।
গানের সাথে গিটার বেশ ভালোই লাগছে।
চলে আসবো পিছে তাকিয়ে বললাম,
– নাম টা?
– শুধু নিলিমা। তবে নীলু বলেই ডাকে সবাই।
– ও আচ্চা।
বাহ্ নামেরও মিল আছে তো। হাঁটা করলাম।
– এই যে শুনুন!
পিছনে ঘুরে বললাম “জ্বী ”
– কালকে আশা হবে না।
– কেন?
– কি রে বাবা কালকে তো পুজা বাড়িতে কত কাজ।
কথাটা শুনেই চুপ হয়ে গেলাম। সাথে বড় রকমের একটা শক্। তারমানে হিন্দু? মেয়ে চলে গেলো। পিছন ফিরে তাকালাম না। মাথায় ঘুরছে “কালকে পুজা ” বাসায় এসে শুয়ে পড়লাম। কাটিয়ে দিলাম আরেকটা নিঘূর্ম রাত। সকালে সিদ্ধান্ত নিলাম হোক অন্য জাতি তবুও তো ভালোবাসি। কিন্তু নীলু মানবে তো? যদি না মানে? তাইলে কি হবে? সারাদিন ভাবনায় বিভোর। কয়েকটা দিন গেলাম না।
৪ দিনের দিন হাটি হাটি করে গেলাম। দেখলাম সেই জায়গাতে বসে আছে। কোন কথা না বলেই বসে পড়লাম। আমাকে দেখে একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলো।
– একি আপনি এমন করে বসলেন কেন আমার বুঝি ভয় করে না? আর এতো দিন আসেন নি কেন? জানেন কত অপেক্ষা করেছি? আর খুব খারাপও লেগেছে। প্রতিদিন বসে থাকি কত কে কি না কি বলে।
একটানা অনেক কথা বলে যাচ্ছে। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।
– কি হলো চুপ কেন হুমমমম? আর আজকেও গিটার আনেন নি কেন? আাপনার মাথাটাতে এতো গবর কেন?আরে এখনো চুপ করে আসে এতোদিন কষ্ট দিয়ে এখন চুপ করে আছে। পুজো কেমন কাটলো? আমাদের এই দিকে আসলেন না কেন?
– নীলু আমি মুসলিম।
আমার দিকে তাকালো। অনেকটা অবাক হয়ে গেলো। এতোক্ষনের কথা যে থেমে গেছে। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। দুইজনই চুপ। একটু পর উঠে পড়লো আর হাটা শুরু করলো। ওর চলে যাওয়া দেখছি। পিছনের দিকে তাকালো না। সুর্যটা ডুবে যাচ্ছে। বাসায় চলে আসলাম। জানি নীলু মানবে না এই বিষয়টা। পরের দিন গেলাম। নীলু আসলো না, ফিরে আসলাম। কয়েকদিন নীলুর কোন দেখা নেই। একসপ্তাহ পর নীলু আসলো। ওকে দেখেই মনটা খুশি হয়ে গেলো।
– নীলু কেমন আছো? আর এতো দিন কই ছিলে?
আমার কথা না শুনার ভান করে চলে গেলো পাশ কাটিয়ে। বসে আছি। অপেক্ষা করছি ওর ফিরে আসার। অবশেষে আসলো। ওর কাছে গেলাম।
– নীলু শোন আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর ধর্মটা কোন ব্যাপার না। আমি আমার পরিবারকে বুঝাবো।
না কাজ হলো না নীলু চলে গেলো। যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকালো। ওর চোখের নীচে কালো একটা দাগ। মনে হলো ঘুমায় নি। নাহ্ হাল ছেড়ে দিলে হবে না। কালকে যদি না বলে তাইলে আর আসবো না। আরেকটি নির্ঘুম রাত কাটলো। আজও ওর আসার অপেক্ষা। কোন কথা না বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ওর যাওয়ার পথে চেয়ে আছি। একটু পর দেখলাম ঘুরে আসছে। মাটির দিকে তাকিয়ে আছি।
“দেখো আমার মন যা বলে আমি তাই করি। অনেক ভাবলাম রাতে ঘুম হয় না আমার। কিন্তু তুমি তোমার পরিবারকে মানাতে পারবে তো? ”
মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উওর দিলাম।
“দেখো মানাতে পারলে ভালো আর না মানাতে পারলে আমি তোমাকে মারবো তারপর নিজে মরবো এই বলে দিলাম, আর হ্যাঁ গিটার ছাড়া আসলে আস্ত ফিরতে পারবে না।”
এই খুশি রাখি কোথায়?
নীলু চলে যাচ্ছে। পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললাম,
“কিন্তু আমার উওরটা তো দিলে না ”
পিছনে ফিরে বললো,
“এতো সব দিতে পারবো না ”
– না আমার উওর চাই!
– দেখো জেদ করবা তো মেরে রেখে দিবো।
– কিন্তু!
– কোন কিন্তু না বাসায় যাও।
মুখটা কালো হয়ে গেলো। একটু দুরে গিয়ে আবার কাছে আসলো, কানে কানে বললো,
” ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ”