মিতি কি সত্যি ই তোমার বোন?
অফিস থেকে ফিরে সদ্য নিয়ে আসা বিরিয়ানির প্যাকেটটা টেবিলে রেখে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই বিছানার উপর একটা প্যাকেট দেখে আমার চোখ আটকে গেলো।প্যাকেটটা কেমন যেন পরিচিত।কোথায় যেন দেখেছি।
আমি কিছু না ভেবে প্যাকেটটা খুলতেই একটা কালো পাঞ্জাবী বের হয়ে আসলো।সাথে একটা কাগজের টুকরাও দেখতে পেলাম।
আমি কাগজটা নিতেই দেখি বেশ ছোট্ট করে লেখা,
তোমার জন্যে।
আমি মুচকি হেসে পাঞ্জাবিটা ওয়ারড্রবে রেখে খাবার টেবিলের দিকে গেলাম।বিরিয়ানি ঠান্ডা হয়ে গেলে আর ভাল্লাগবে না।আমি প্লেটে বিরিয়ানি ঢালছি আর মুচকি মুচকি হাসছি।সত্যি ই মেয়েটা পাগল।
সেদিন যখন সুপ্তিকে নিয়ে শপিং এ গিয়েছিলাম তখন পাঞ্জাবিটা বেশ পছন্দ হয়েছিল।কিন্তু সুপ্তির জন্যে কালো শাড়িটা নেওয়ার পর আর কিনতে পারিনি।ভেবেছিলাম সামনের মাসে বেতন পেলে নিয়ে নেবো।কিন্তু মেয়েটা আমার মনের কথা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো।তাই নিজেই পাঞ্জাবিটা নিয়ে এসেছে।
সুপ্তি আমাদের উপর তলায় থাকে।অবশ্য ওর সাথে রিলেশন আমার এ বাসায় আসার আগে থেকেই।ওর জন্যেই এখানে বাসা নেওয়া।আর আমার রুমের একটা চাবি ওর কাছেও থাকে।মাঝে মাঝে এসে রান্না করা,ঘর গুছানো থেকে শুরু করে কাপড়গুলাও ধুয়ে ইস্ত্রি করে দিয়ে যায়।অবশ্য ওকে এসব করতে আমি বেশ কয়েকবার নিষেধ ও করেছি।কিন্তু মেয়েটা শোনেনি।
আমি বিরিয়ানি শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে একটু ফেসবুকে ঢুকলাম।এই সময়টাতে এটাই আমার ভাল্লাগে।আমি ফেসবুকে লগইন করতেই মেজাজটা একটু খারাপ হয়ে গেলো।প্রথমের মিতির বিরক্তিকর স্ট্যাটাস চোখে পড়লো।
মেয়েটা ইন্টারে পড়ে।সায়েন্সে।ওনার স্ট্যাটাস দেখে মনে হয় সায়েন্সে কেও আগে আর পড়েনি আর এখনও পড়েনা।প্রতিদিন কোন না কোন ঢঙের স্ট্যাটাস থাকবেই।এই যেমন,রসায়ন পড়তে পড়তে জীবনটা শেষ,সবকিছু মাথায় ঢুকলে ম্যাথ মাথার উপর দিয়ে যায়,ফিজিক্স বই তো ধরলেই মাথা ঘুরায় আর জীব বিজ্ঞান পড়লে বমি আসে।আসলে ওর মত ওত ঢং করে বলতে পারিনা তাই একটু সহজ সরল হয়ে গেলো।
ওনার স্ট্যাটাস দেখে মনে হয় দুনিয়াতে উনি একাই সায়েন্স নিয়ে পড়ে।আর সারাদিন ঢোল পিটিয়ে মানুষকে শোনায় আমি সায়েন্সে পড়ি।ফাজিল মেয়ে একটা।আরে তুই সায়েন্স পারবি না তাইলে নিলি কেন।ভাব ধরার সময় ঠিকই ধরবা আর পড়তে গেলে ঢোল পিড়ানো।সায়েন্স নিয়ে তো আমিও পড়েছি কোই কোনদিন তো এরকম ঢোল পিটিয়ে মানুষকে জানাইনি।উনি সায়েন্স নিয়ে উদ্ধার করছে।ফালতু মেয়ে একটা।এদিকে মেয়েটাকে আনফ্রেন্ডও করতে পারতেছি না।হাজার হোক শালি বলে কথা।
আমি ফেসবুক থেকে বের হয়ে সুপ্তিকে ফোন দিলাম।মেজাজটা একটু বেশিই খারাপ আজ।এসব ফালতু স্ট্যাটাস দেখতে দেখতে একদম বিরক্ত।সুপ্তি ফোনটা ধরতেই আমি বললাম,
-মিতি কি সত্যি ই তোমার বোন?
আমার কথায় সুপ্তি ফিক করেই হেসে দিয়ে বললো,
-কেন,আবার কি স্ট্যাটাস দিয়েছে?
-কি দেয়নি সেটা বলো।কোই তুমি তো এমন না তাহলে ওটা এরকম এক পিস হইলো কেমনে।
-ও একটু এরকম ই।তুমি বরং ওকে আনফলো করে রাখো।
-হুম সেটাই ভাবছি।তোমার বোনটা যাকে বিয়ে করবে তার কপালে যে কি আছে আল্লাহই যানে।
-কেন কি হবে?
-কি হবে,তখন বরকে নিয়েও স্ট্যাটাস দেবে।আমার বরটার না দু দিন পর পর ডায়রিয়া হয়,বাথরুমে ঢুকলে বের হতেই চায়না।
আমার কথায় সুপ্তি এবার একটু জোরেই হেসে উঠলো।আজ সুপ্তির হাসিটাও কেমন যেন বিরক্ত লাগছে।
আমি আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম।বেশ রাগ উঠেছে আজ।অবশ্য রেগে গেলে আমি আর কিছু খাই না।কিন্তু আজ সে চান্স নেই।রেগে যাওয়ার আগেই খেয়ে নিয়েছি।এক ভুল তো আর বার বার করা যায় না।
কলিংবেলের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেলো।সাথে সাথে আমার বিরক্তির মাত্রাটাও বেড়ে গেলো।এই ছুটির দিনেও একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারিনা।আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি মাত্র নয়টা বাজে।এসময় আবার কে এলো।
আমি উঠে দড়জা খুলতেই দেখি সুপ্তি দাঁড়িয়ে।তবে ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে আজকের আবহাওয়া টা খুব একটা সুবিধের না।আমি কিছু বলার আগেই সুপ্তি বললো,
-কতবার ফোন দিয়েছি?
এই রে,ফোন তো সাইলেন্ট করেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।মেয়েটা তাহলে ফোনে না পেয়ে কলিংবেল বাজাচ্ছিলো।আমি সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আসলে হয়েছে কি,মানে ফোনটা সাইলেন্ট ছিল।
আমার কথায় সুপ্তির রাগটা মনে হয় আরও একটু বেড়ে গেলো।মেয়েটা এবার একটু রেগেই বললো,
-সেদিন মিথ্যে বলেছিলে কেন?
-কোনদিন?
-আমি যে শিউলি ফুল আনতে বলেছিলাম।
সুপ্তির কথায় সেদিনের কথাটা মনে পড়ে গেলো।মেয়েটা হঠাৎ করেই বায়না ধরলো শিউলি ফুল এনে দিতে।অবশ্য আমি এনেও ছিলাম।তবে ফুল না,ফুলের গাছ।আর সুপ্তিকে বলেছিলাম ফুল পাইনি।
ফুলের গাছটা ছাদে রেখেছিলাম।সেটাও সুপ্তির থেকে লুকিয়ে।লোকটা বলল একসপ্তাহের মধ্যেই ফুল ধরবে।তাই ভেবেছিলাম ফুল ধরলেই সুপ্তিকে সারপ্রাইজ দেবো।অবশ্য তখনও দু একটা ফুল ধরতো।
কিন্তু আজ মেয়েটা এ কথা বলছে কেন।আমি সুপ্তিকে বললাম,
-হুম বললাম না,পাইনি।
-তাহলে ছাদে কি?
এবার মেয়েটার হাতে ধরা পড়ে গেলাম।ও তো ছাদে যায় না।আজ হঠাৎ। তাহলে কি ফুল ধরেছে।আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা আমাকে টেনে ছাদে নিয়ে গেলো।ঠিক ফুলের টবটার সামনে।
বাহ,অনেকগুলা ফুল ফুটেছে তো।বেশ সুবাস ও আছে।আমি সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আসলে সেদিন ফুল পেয়েছিলাম কিন্তু আনিনি।আমি চেয়েছিলাম তোমাকে একদম টাটকা ফুল এনে দেবো।তাই গাছ এনে ফুলের অপেক্ষায় ছিলাম।
আমার কথায় সুপ্তি আমার হাতটা ধরে বললো,
-তাই বলে আমাকে একটু বলবে না।
-সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।
আমার কথায় সুপ্তি কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-ভালবাসি,অনেক ভালবাসি।এ ভালবাসা আবার ফুরিয়ে যাবে না তো?
আমি সুপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
অবশ্যই না।কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।