-তিতির
-হুম
-সকাল সকাল ক্লাসে এসেছি, এখন শুনি ক্লাস হবে না।আমার ক্ষুদা লাগছে,রাতে কিছু খাই নাই।
-গুড,রাতে খাওয়া ঠিক না।আমার মত মোটু হয়ে যাবি।মেয়েরা পছন্দ করবে না।
-ধুররর,দূরে গিয়া মর।আমি খাবো,তুই সাথে চল।
-তুই খাবি তো আমি ক্যান সাথে যাবো?
-তুই না থাকলে পেট ভরে না।
-বিয়ের পর বউরে এইকথা বলিস না।জুতোপেটা করবে।
-ধুশ,কোনো মেয়েকে পছন্দই হয় ন…
চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে তিতিরের পেছনে
চলে গেল রাফি।তিতিরের কাঁধে হাত রেখে কাঁধের উপর দিয়ে মুখ বের করে
চেঁচাচ্ছে, ‘ওরে বাবারে,খায়া ফেললো রে, বাঁচাও রে ‘।
-ষাঁড়ের মত চিল্লাস না।কি হইছে?
-ম মা মাকড়শা
-তোরে কি চোখ মারছে?
-না
-তাইলে চিল্লাস ক্যান? ছাড় আমারে।
এতক্ষনে রাফির খেয়াল হলো তিতিরের কাঁধ শক্ত করে ধরে রেখেছে। হঠাৎ রাফির
মধ্যে কিছু একটা পরিবর্তন ঘটে গেল।মেঘলা আলোয় তিতিরকে খুব ভাল লেগে গেল।অজান্তেই নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিল ওকে। তিতির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাফির চোখে।
-কিরে?হাবলার মত তাকিয়ে রইলি ক্যান?তোর না ক্ষুদা লাগছে।
-ওই
-হু
-চল
-কোথায়?
-ক্যান্টিনে
-কেন?
-রাফি তোর সমস্যা কি?সকাল থেকে আজিব বিহেভ করছিস। মাত্রই তো বললি ক্ষুদা লাগছে।
-চল যাই
তিতির আর রাফি। একই ভার্সিটি, একই ডিপার্টমেন্ট। শুধু দুজনের মধ্যেই যত অমিল।
রাফি হল সবচেয়ে বিচ্ছু। যত প্রকার অন্যায় আছে ওর দ্বারা সম্ভব। পছন্দ হেভী মেটালের রকগান গুলো ।ও মনেহয় জানেই না বাংলাতেও সুন্দর কিছু গান আছে।
আর তিতির অদ্ভুত শান্ত মেয়ে।ওর রবীন্দ্রসংগীত ভাল লাগে,বই পড়তে ভাল লাগে, বৃষ্টি ভাল লাগে।
রাফি রুমে বসে একবার টেবিল ল্যাম্প অন করছে,একবার অফ করছে। ওর কাছে সবকিছু অর্থহীন লাগছে।তিতিরের ছোট
ছোট সব কথা,খুনসুটি মিস করছে রাফি। এমনটা কেন হচ্ছে??নিজেকেই প্রশ্ন করলো রাফি।
নিজেই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ কেন ওই শ্যামলা মেয়েটিকে এত ভাল লাগছে ওর?
-তিতু
-বল
-কফিশপে যাই চল
-না
-চল না প্লিজ
-না
-প্লিজ প্লিজ
-ওকে, চল
দাঁত বের করে হাসি দিল রাফি। একেবারে কর্নারের টেবিলে জানালার পাশে বসলো ওরা।
-তিতু
-বল
-লাইফ নিয়ে তোর ভাবনা কি?
– রাফি, ভাল মানুষকেই প্রশ্নটা করেছিস। খুব ছোটবেলায়, ক্লাস থ্রিতে পড়ি যখন, তখন একটা বই পড়েছিলাম।আলবেয়ার কামুর ‘আউটসাইডার ‘।ওই বয়সে বইটা এত্ত ভাল লেগেছিল যে নিজেকে তেমন ভাবতাম।
রাফি আমি প্রতিটি মুহূর্তের সাথে বাঁচতে শিখেছি। আমি জীবনটা কে ম্যাথ বা কেমিস্ট্রি ভাবি না, যেখানে প্রব্লেম শেষে সমাধান হবেই। জীবন অন্যরকম। দুই প্রান্তের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যেমন বলা যায় না শেষে কি আছে।
জীবনের মাঝ প্রান্তে দাঁড়িয়েও বলা যায় না কী হবে। আমি জীবনকে ভাবিই না।
-আচ্ছা, তোর ফিউচার প্ল্যান কি?
-তেমন কিছু নেই। আমার দিনতো একভাবে না একভাবে চলে যাচ্ছে। যাবেও। যদি খুব দরকার হয়, সব ছেড়ে দিয়ে গেরুয়া কাপড় গায়ে তুলে, কমণ্ডলু হাতে বের হবো।
কথাগুলো শুনে রাফির খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন?আগেও বলেছে এমন কথা তিতু।রাফি হঠাৎ তিতিরের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে খেলতে লাগলো।
-তিতু
-বল
-যদি কখনো আমি তোর সাথে চলতে চাই। তোকে ভালবাসতে চাই, অধিকার দিবি?
হাতছাড়িয়ে অনেকক্ষন চুপচাপ বসে রইলো তিতির। ওর মুখের উপর বিকেলের রোদ্দুর খেলা করছে।
কফিশপ প্রায় ফাঁকা।দুজন চুপচাপ বিপরীত প্রান্তে মুখোমুখি বসে।অনেকক্ষন পর কথা বললো তিতির।
-আমি আসলে ভাবিই না কখনো। কাউকে আমার অনির্দিষ্ট, বোহেমিয়ান টাইপ জীবনে জড়াতে চাই নি।ছোট থেকেই আমি বড় ছন্নছাড়া। ভালবাসবো কখন?সময়ই পাইনি। একা থাকতে থাকতে আমার মনটাই মরে গেছে রে।ছিটেফোঁটাও আর অবশিষ্ট নেই।
আমি আজন্ম মাধুকরী।
বিল মিটিয়ে দুজনই বের হয়ে এলো। বিদায় নিয়ে দুজন দুদিকে
হেঁটে যাচ্ছে। কি মনে করে রাফি পেছনে তাকালো।
তিতিরের অবয়ব একটু একটু করে অস্তমিত সূর্যের সাথে মিশে যাচ্ছে। একটা সময় বিন্দু হয়ে মিশে গেল।
রাফির দুচোখ বেয়ে অশ্রু নেমেছে।না মুছে তাকিয়ে রইলো অস্তমিত সূর্যের দিকে।