অতি মানবী

অতি মানবী

রাতের বেলায় রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলাম, আর ঠিক তখনি আমার রুমমেট সোহানের মেসেজ–> ভাল থাকিস দোস্ত।

তার এই মেসেজটা আমার কাছে ভাল ঠেকলো না, কারণ আজ সকালে তার গফের সাথে তার প্রচুর ঝগড়া হয়েছিলো।

সে যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে, তাই তাড়াতাড়ি বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

বাসায় গিয়ে আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।আমি যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে।

সোহান উল্টা পাল্টা কি যেনো খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।আমি আর কিছু চিন্তা না করে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করলাম।
.
এক মহিলা ডাক্তারের অধীনে সোহানের চিকিৎসা চলতে লাগল।

তিনি রোগীর অভিভাবক হিসেবে আমাকে একটা পেপারে নাম ঠিকানা লিখতে বললেন।

নাম ঠিকানা লিখে যেই পেপারটা ডাক্তারের হাতে দিতে গেলাম ঠিক তখনি আমি চমকে উঠলাম, আমি এ কি দেখছি…?

ডাক্তারদের চোখও যে এতোটা মায়াবী হতে পারে সেটা আমার জানা ছিলো না………?

আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে একমুহুর্তের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার রুমমেট সোহান অসুস্থ।
.
ডাক্তারনির চোখের দিকে তাকালে যে কেউ তার মায়ায় পড়ে যাবে, আমি অনেকক্ষণ ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখছিলাম আর ভাবতেছিলাম যে,

এই মায়াভরা চোখের অধিকারীনির নামটা জানি কি……? উনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার বিষয়টা

তিনি লক্ষ করেছেন কিনা জানি না, তবে উনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে আমার ভালই লাগছিল।

আমি সব কিছু ভুলে গিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।
.
হঠাৎ ডাক্তারনি বলে উঠলো—> এই যে তুরিও সাহেব, এই ইনজেকশনগুলো তাড়াতাড়ি নিয়ে আসেন।

আমি তো তার ভয়েস শুনে রীতিমত অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম যে এই ডাক্তারনি আমার নাম জানল কিভাবে…?

পরক্ষণে আমি নিজেই এর উত্তর পেয়ে গেলাম, কারণ আমি নিজেই তো সোহানের অভিভাবক হিসেবে একটা পেপারে আমার নাম ঠিকানা লিখেছিলাম।

ইনজেকশনগুলো নিয়ে আসার সময় হঠাৎ করেই প্রেস্ক্রিপশনের দিকে নজর পড়ল আমার,

আর নজর পড়ার সাথে সাথেই আমার চোখ দুটো ঐ প্রেসক্রিপশনটায় আঁটকে গেল, কারন ঐখানে খুব বড় করে লেখা ছিল
“মিমিয়া মীম”
সাথে তার নাম্বারটা ও ছিল (01728****02)
.
ইনজেকশনগুলো নিয়ে যখনি ”ওটি”র সামনে গেলাম তখন কেউ একজন আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ধমকের সুরে বলতে লাগল—>

এই কয়টা ইনজেকশন আনতে এতক্ষণ সময় লাগে নাকি, সময়ানুবর্তিতা বলতে তো কিচ্ছু নাই আপনার সাথে।

আরও কত কি……………… এই ধমকদাতা আর কেউ নন, উনি হচ্ছেন ডাক্তারনি মিমিয়া মীম।

আসলে আনন্দে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে, আমার রুমমেট সোহান অসুস্থ।

তার ধমক শুনে লজ্জা পাওয়ার বদলে আমি তার চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম, তার চোখগুলো হাসের ডিমের মত বড় বড় হলেও অনেক মায়াবী।

কি আর করার, বেচারী আমার কোনো রেস্পন্স না পেয়ে আমার হাত থেকে ইনজেকশনগুলো নিয়ে ”ওটি”তে ঢুকে গেল।

নিজেকে তখন খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল কারন, আমার হাত থেকে ইনজেকশন নেওয়ার সময় আমি তার হাতের একটু ছোঁয়া পেয়েছিলাম।
.
এইভাবেই সোহানের চিকিৎসা চলতে লাগল আর আমার মনে হাজারো ভাবনা আসতে লাগল,

সারাক্ষন মাথার ভিতরে শুধু একটাই চিন্তা ঘুরত, কিভাবে এই ডাক্তারনির মায়াভরা চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকা যায়,

কিভাবে এই মায়াভরা চোখের অধিকারীনি কে নিজের করা যায়।

এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ৪টা লাইন কবিতা লিখে ফেলেছি নিজেও জানি না………>
.
–প্রথম যেদিন পড়েছিল চোখ তোমার ঐ মায়াভরা চোখে,
–“সিডর” যেন বয়ে গিয়েছিল আমার এই নিষ্পাপ বুকে।
–আমি সেইদিন থেকেই হারিয়ে ফেলেছি মন,
–সত্যি ভালবাসি ভীষণ………………।
.
সুস্থ হতে সোহান কে প্রায় ছয় দিন ঐ হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল,

আর এই ছয় দিনে আমি ঐ ডাক্তারনির প্রতি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।

সোহান কে বাসায় নিয়ে আসার পর থেকে সারাক্ষণ আমার মাথায় শুধু ডাক্তারনির কথাই ঘুরপাক খেত।

সব সময় ভাবতাম কিভাবে তার সাথে দেখা করা যায়, কিভাবে তার মায়াভরা চোখের মায়া উপলব্ধি করা যায়………।

তার সাথে দেখা করার জন্য আমি শুধু কারণ খুঁজতে থাকতাম।
.
বাই দ্যা ওয়ে………> আমি তুরিও রহমান, আপাতত একটা বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে আছি।

কপালে বিয়ে শাদী নাই তো তাই সোহান আর আমি একসাথে একটা বাসায় থাকি।
.
একদিন রান্না করতে গিয়ে সামান্য একটু হাত পুড়ে ফেলি, আর তখনি মাথায় আসল এইতো সুযোগ মীমের সাথে দেখা করার।

যেই ভাবা সেই কাজ, সাথে সাথেই চলে গেলাম ঐ ডাক্তারনির চেম্বারে।

মীম আমার হাত দেখে হাসতে হাসতে বলতে লাগল যে এটাতো কোনো নার্স কে দেখালেও ঔষধ লাগিয়ে দিত, তখন আমি বললাম……>

চাইলে তো আমিও ঔষধ লাগাতে পারতাম, আপনার কাছে এসেছি যেহেতু যা করার আপনাকেই করতে হবে। সে তখন একটু মুচকি হেসেছিল।
.
আজ পায়ে সমস্যা কাল হাতে সমস্যা পরশু পেটে সমস্যা এভাবে প্রায় প্রতি দিনই আমি একটা না একটা সমস্যা নিয়ে মীমের কাছে যেতাম।

দিনে একবার ওকে দেখতে না পারলে আমার ঐ দিনটা যেন যেতোই না।

একদিন ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ও ফেসবুক চালায় কিনা, সে বলেছিল সে নাকি প্রতিদিন রাত ১১.৩০ থেকে ১২.৩০ পর্যন্ত ফেসবুকিং করে।

কি মনে করে যেন আমি ওর আইডির নামটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও জিজ্ঞেস করলাম না।
.
রাতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে “জিঙ্গালালা” নামক পেজের পোষ্টগুলো পড়ছিলাম আর হাসছিলাম,

এই পেজের পোষ্টগুলি সত্যিই পেটে ব্যাথা ধরিয়ে দেওয়ার মত।

হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম যে ১১.৪৭ আমার মনে পড়ে গেল যে মীম তো এই সময়ে ফেসবুকে থাকে,

কি মনে করে হঠাৎ সোহানের প্রেসক্রিপশন থেকে মীমের নাম্বারটা নিয়ে ফেসবুকে সার্চ দিলাম,

আর ঠিক তখনি “””অতি মানবী””” নামে একটা আইডি আসল, প্রোফাইল ঘুরে বুঝতে পারলাম যে এটাই ডাক্তারনির আইডি।

রিকোয়েষ্ট দিয়েছিলাম, প্রায় সাত মিনিটের মাথায় মীম আমাকে কনফার্ম করেছিল।

আমার আইডিতে আমার পিক ছিল, মে বি পিক দেখেই আমাকে চিনতে পেরেছিল এবং কনফার্ম করেছিল।
.
কনফার্ম করার সাথে সাথেই আমি আমার আইডির প্রাইভেসি only me দিয়ে “”অতি মানবী”” tag করে একটা status দিয়েছিলাম,

যাতে status টা ঐ ডাক্তারনি ছাড়া আর কেউ দেখতে না পারে। status টা এমন ছিল………>
“”মেয়েদের চোখে সত্যিই জাদু আছে,
তা না হলে ঐ ডাক্তারনির চোখের দিকে তাকানোর পর থেকে আমার রাত দিন এক হয়ে গেল কেন…?””
.
এইভাবে প্রায় প্রতিদিনই আমি একটা একটা করে status দিতাম, প্রতিদিনই তাকে দেখার জন্য কোন না কোন রোগ নিয়ে তার চেম্বারে হাজির হতাম।

কিন্তু একদিন তার চেম্বারে যাওয়ার কোন কারন খুঁজে পাচ্ছিলাম না,

সমস্ত ঘটনা সোহানকে খুলে বলার পর সোহান আমাকে রসুনের সাহায্যে শরীরে জ্বর নিয়ে আসার এক চমৎকার বুদ্ধি দিয়েছিল।

তার কথা মত কাজ করার পর দেরখলাম সত্যি সত্যি আমার জ্বর এসেছে, আর সাথে সাথেই আমি ডাক্তারনির চেম্বারে চলে গেলাম।

জ্বর কত টুকু তা দেখার জন্য যখন সে আমার কপালে হাত দিল তখন আমার শরীরে যেন এক অজানা শিহরণ বয়ে গেল।
.
ডাক্তারনি জিজ্ঞেস করল যে এই অসময়ে এতো জ্বর আসল কিভাবে?
আমি বলেছিলাম—> জ্বর তো আসে নাই, জ্বর কে আনিয়েছি।
ডাক্তারনি—-> মানে……?
আমি——> প্রতিদিন তো একটা না একটা কারণ নিয়ে তোমাকে দেখতে আসি,

কিন্তু আজ কোন কারণ পাচ্ছিলাম না তাই রসুনের সাহায্যে জ্বর আনিয়েছি। (জ্বরের ঘোরে সব বলে দিয়েছি)
.
ডাক্তারনি আমার এই কথাগুলো শুনে খুব জোরে আমার বাম গালে একটা চড় মেরেছিল,

আর বলে দিয়েছিল যাতে আর কোন দিন তার চেম্বারে না যাই।

যদি যাই তাহলে নাকি ঘাঁড় ধাক্কিয়ে বের করে দিবে।
.
কি আর করার? তার এই অপমান নিরবে সহ্য করে চলে এসেছিলাম,

এরপর প্রায় ১৩ দিন আমি তার চেম্বারে যাইনি, খুব কষ্ট হত তাকে না দেখে থাকতে তারপর ও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছিলাম।
.
একদিন ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতেছিলাম যে, মীম মানে ডাক্তারনি আমাকে বলছে—> জানো তুরিও, ২১ শে আগষ্ট না আমার জন্মদিন।

স্বপ্নটা দেখা মাত্রই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম যে ২০ শে আগষ্ট ১১.৫৩ বাজতেছে।

কেন জানি মনে হল যে এই স্বপ্নটা সত্যি হবে, মীম কে ও দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল।

তাই তখনি সীদ্ধান্ত নিলাম যে, ২১ শে আগষ্ট মীমের জন্মদিন হোক বা না হোক আমি তার চেম্বারে গিয়ে তাকে উইশ করব,

এবার সে যা ই করে আমাকে।
.
সকাল ১১টার দিকে ছোট্ট একটা কেক নিয়ে আমি তার চেম্বারে গেলাম,

অনেকদিন পর আমাকে দেখে সে কিছুটা অবাক ই হয়েছিল এবং খুব নরমাল ভাবেই বলছিল যে,

এই হাসপাতালে তো আর ও অনেক ডাক্তার আছে, আপনি তাদের চেম্বারে না গিয়ে আমার চেম্বারে আসলেন কেন?

আপনাকে আমি নিষেধ করেছিলাম না আমার চেম্বারে আসার জন্য।

তার এতগুলো কথার উত্তরে আমি শুধু এই টুকুই বলেছিলাম যে, “HAPPY BIRTHDAY MIM”
.
আমার কথা শুনে সে এক প্রকার চমকে উঠেছিল এবং প্রায় ৩মিনিট চুপ থাকার পর আমাকে বলেছিল যে,

আপনাকে কে বলেছে যে আজ আমার জন্মদিন?

আমি তো কখনই আপনাকে বলি নাই, এমনকি আমার ফেসবুকে ও আমার জন্মতারিখ hide করা……।
আমি–> আসলে আমি সঠিক জানি না আজ তোমার জন্মদিন কিনা?

কাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম, তুমি আমাকে বলেছিলে যে, ২১শে আগষ্ট নাকি তোমার জন্মদিন, তাই উইশ করতে আসলাম।
মীম—> এটা কিভাবে সম্ভব………?
আমি–>সরি………।
মীম—> সরি কেন……?
আমি–> স্বপ্ন কে সত্যি ভেবে আপনাকে উইশ করতে চলে এলাম তো তাই।
মীম—> আপনি তো সেই মাপের একজন স্বপ্নদর্শী। আপনার স্বপ্ন তো সত্যি হয়ে গেল, সত্যি সত্যি আজ আমার জন্মদিন।
আমি–> সত্যি..? (আসলে আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।)
মীম—> হুম সত্যি…..।
.
দিনটা খুব ভাল ভাবেই পার করলাম, বাসায় গিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম কিভাবে তাকে প্রোপোজ করা যায়,

এতো দিনে তো তার বুঝে ফেলার কথা যে আমি তাকে ভালবাসি,

আমি তো শুধুমাত্র তাকে দেখার জন্যই প্রত্যেক দিন মিথ্যা অসুখের উসিলা দিয়ে তার চেম্বারে যেতাম।

সে কি আসলেই বুঝে না যে আমি তাকে ভালবাসি………?

এগুলো ভাবতেছিলাম আর ফেসবুকে নিউজফিড দেখছিলাম,

হঠাৎ নিউজফিডের একটা পোষ্টের দিকে চোখ যেতেই আমার বুকে ব্যাথা উঠে গিয়েছিল।
.
“”” অতি মানবী””” অর্থাৎ ঐ ডাক্তারনি status দিয়েছিল—-> “Got Engaged”.
.
আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না, পরদিন সকাল ১০টা তেই তার চেম্বারে গিয়ে বসে থাকলাম।

সে ১১টার দিকে চেম্বারে আসে, আসার সাথে সাথেই আমি তাকে জিজ্ঞেস করি—->
আমি–> এগুলো কি…?
মীম—> এগুলো কি মানে….?
আমি–> “Got Engaged” এই ধরনের status এর মানে কি….?
মীম—> আমার Engagement হয়ে গেছে তাই আমি status দিয়েছি তাতে আপনার কি…?
আমি–> নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে মীমের গালে খুব জোরে একটা চর বসিয়ে বলতে লাগলাম—->

তুমি কি একটু ও বুঝো নাই যে আমি তোমাকে ভালবাসি,

আরে ভাল যদি না ই বাসতাম তাহলে কেনই বা প্রত্যেক দিন মিথ্যে অসুখের বাহানা দিয়ে তোমাকে দেখার জন্য তোমার চেম্বারে আসতাম….?
মীম—> শুধু ভালবাসলেই হবে নাকি, ভাল যে বাসেন সেটাও তো বলতে হবে।(রাগী কণ্ঠে)
আমি–> ভয়ে বলতে পারি নি।
মীম—> কিসের ভয়…..?
আমি –> যদি তুমি আমাকে রিজেক্ট করে দাও সেই ভয়ে….।
মীম—> ধুর বোকা, আমি তোমাকে রিজেক্ট করব কেন? আমি ও তো তোমাকে ভালবাসি…।
আমি–> এ্যাঁ…….?
মীম—> হ্যাঁ………। আর এটা বলেই জড়িয়ে ধরল আমাকে এবং বলতে লাগল— ভালবাসি তোমায় তুরিও।
আমি–> আমি ও তোমাকে ভালবাসি মীম, অনেক ভালবাসি….।
(((শুরু হল নতুন একটি সম্পর্ক)))

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত