এই উঠুন। আপনার জন্য নাস্তা তৈরি করেছি। খেতে আসুন।
 প্রতিদিন এই ধরনের কথাগুলো শুনে ঘুম ভাঙে রাহাতের। ঘুম ভেঙে রাহাতের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
মুন রাহাতের বউ হলেও মুনকে রাহাতের সহ্য হয় না। আগে ঘুম ভাঙতো এলার্মের শব্দে। কিন্তু এখন ঘুম ভাঙে ভাঙা রেকর্ডের শব্দে। আর ঘুমটাও ভাঙে বিরক্তিতে।
আজকেও তেমনি ঘুম ভেঙে মেজাজ খারাপ করেই ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসলো। আর মুনের রান্না করা খাবারই খেতে থাকলো।
খাবার খেয়ে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল। মুন অফিসের ব্যাগ নিয়ে সবকিছু এগিয়ে দিচ্ছে। রাহাত বলল
 -লাগবে না। আমিই করে নেব।
 -কেন?
 -আমি তো তোমাকে বলেছি সবকিছু জানতে চাইবে না। আর অফিসে যাওয়ার সময় আমার সামনে আসবে না।
মুন চলে যাওয়ার পরে রাহাত তৈরি নিজে নিজেই তৈরি হতে থাকলো। মুনকে পছন্দ না হওয়ার একমাত্র কারন সে গ্রামের মেয়ে।
 চালচলনে সবদিকেই সাদামাটা।
 যেটা রাহাতের পছন্দ না।
 রাহাতের পছন্দ স্মার্ট মেয়ে। কিন্তু মুন সেই ধরনের না।
রাহাত নিজেই টাইটা বাধতে অফিসের জন্য বেড়িয়ে যাচ্ছে। মুন যদি শহরের স্মার্ট মেয়ে হতো তাহলে এখন রাহাতের টাইটা
 বেধে দিত। কিন্তু সেইসব রাহাতের কল্পনা। একদিন রাহাত মুনকে টাই বেধে দিতে বললে বলেছিল সে পারে না।
মুনের মত গ্রামের সাদামাটা একটা মেয়েকে বিয়ে করা রাহাতের সবচেয়ে বড় ভুল। সেটা রাহাত প্রায়ই ভাবে। মুন শিক্ষিত হলেও সেই পরিমানেই সাধারণ। মুনকে বিয়ে করাই রাহাতের সবচেয়ে বড় ভুল মনে হয়।
রাহাত এইসব ভাবতে ভাবতে গাড়ি অফিসে চলে আসলো। গাড়ি থেকে নেমেই নিজের রুমের দিকে যেতে থাকলো। আর কাজের চিন্তা করতে থাকলো।
রুমে ঢুকে চেয়াররটাতে বসে ম্যানেজার হাবিবকে ডেকে পেল না। তাই পিয়নকে ডেকে হাবিবের কথা জিজ্ঞেস করে বলল
 -হাবিব এসেছে?
 -না স্যার।
 -আচ্ছা। আসলে আমার সাথে দেখা করতে বলবে।
 -আচ্ছা স্যার।
রাহাত চেয়ারে বসে একটা কাগজ দেখছিলো। দরজার কাছে একজনের আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখলো হাবিব দাঁড়িয়ে। হাবিবকে দেখে বলল
 -আরে হাবিব সাহেব আসুন।
 -আমাকে ডেকেছেন আপনি?
 -হ্যা। অনেক আগেই। অফিসে ছিলেন না নাকি?
 -আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।
 -প্রতিদিন দেরি হওয়ার কারন।
 -নাস্তা খেতে দেরি হয়ে যায়। আর সেইকারনেই দেরি।
 -আপনি তো মনেহয় বিয়ে করেছেন।
 তাহলে দেরি হবে কেন?
 -বিয়ে করেই আরো বিপদে পরেছি।
 এর চেয়ে আগেই ভাল ছিলাম।
 -এ কি বলছেন?
 -জি স্যার। স্মার্ট মেয়ে দেখে বিয়ে করেছি। কিন্তু বউ শুধু দেখতে আর ফ্যাশনেই স্মার্ট। সময়মত রান্না করে না। তারমত সে থাকতে চায়।
 -বলেন কি!!
 -জি স্যার। জীবন পুরাই তামা তামা হয়ে যাচ্ছে বউ এর জালায়।
 -আচ্ছা। আপনি এই ফাইলটা নিয়ে যান। বিকেলে মিটিং আছে।
 -আচ্ছা স্যার।
হাবিব যেতেই রাহাত হাবিবের কথাগুলো ভাবতে থাকলো। সত্যি শুধু ফ্যাশনে আর দেখতে ফিটফাট হলেই স্মার্ট বলা চলে না। স্মার্ট মেয়েদের তো তেমন ভাল মনেহয় না।
রাহাতের বন্ধু রবিনের কথা মনে পরে গেল। ওর বউ নাকি খুব স্মার্ট।
 অফিসের পার্টিগুলোতে রবিনের বউ খুব ফিটফাট আর স্মার্ট দেখা যায়।
 আর সবাই স্মার্ট হওয়ার কারনে তার প্রশংসা করে। কিন্তু রবিনের প্রতি তেমন খেয়াল নেই তার। নিজের
 জিবন নিয়েই থাকে।
স্মার্ট কথাটি মনে পরতেই রাহাত মনে মনে বলল “স্মার্ট!! ” কথাটি মনে পরতেই রাহাতের মুখে তাস্যিলের
 হাসি ফুটে উঠলো।এখন অফিসের কাজে মন দেওয়া উচিৎ। বিকেলে মিটিং আছে।
বিকেলে মিটিংটা শেষ হয়ে গিয়েছে খুব ভালভাবেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আর এখন অফিসে কোন কাজ না থাকায় রাহাত এখন বাসায় যাওয়ার চিন্তা করলো। আর যেই ভাবা সেই কাজ।
একটা ঘোরের মধ্যে থাকায় কখন গাড়ি বাসার সামনে চলে এসেছে রাহাত সেটা টেরই পায় নি।
 কিসেত ঘোর বুঝতে পারছে না। কিন্তু ঘোর এটা বুঝতে পারছে। তাই গাড়ি থেকে নেমে দরজার সামনে
 চলে গেল।
আজ দরজা খুলে মুন রাহাতের কাছ থেকে ব্যাগ নিল। প্রতিদিন রাগ করার পরেও মুন রাহাতের জন্য
 অপেক্ষা করে। বার বার আর এগিয়ে আসে রাহাতের কাছে।
মুন চলে যাচ্ছিল এমন সময় রাহাত ডাক দিয়ে বলল
 -আমাকে ভালবাসো তুমি?
 -বারে। সব স্বামিকেই তো তার বউ ভালবাসে।
 -আমার সাথে প্রেম করবে?
 -এটা কি বলছেন?
 -হ্যা। ঠিকই বলছি। আমাকে যদি ভালবাসো তাহলে আপনি করে বলো কেন?
 -আপনাকে তুমি বলার অধিকার আমার নেই।
 -আমি যদি অধিকার দেই।
 -তাহলে নেব। আজকে আমি টাই বাধা শিখে গিয়েছি।
 -কেন?
 -কারন আমি তোমার আদর্শ বউ হতে চাই।
 -আদর্শ বউ হতে টাই বাধা শিখতে হয় না। বউ হওয়ার গুনাগুন থাকলেই হয়। আর তোমার সেটা আছে।
 -জানি না আমি।
 -তোমাকে জানতে হবে না। তুমি ভাত দাও টেবিলে আমরা আজকে একসাথে খাবো।
মুনের দিকে তাকিয়ে রাহাত ভাবছে মেয়েটা কত সহজ সরল। আর নিজের চেয়ে স্বামির চিন্তাই বেশি করে। আদর্শ বাঙালি বধুরা
 মনেহয় এমনই হয়।
রাহাত ভাবতো মুনকে বিয়ে করা রাহাতের জন্য ভুল ছিল। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সেই ভুলটাই ছিল রাহাতের জীবনের জন্য ঠিক।
  










