জানো এটা কিভাবে খেতে হয়?
অফিস থেকে ফিরে সুপ্তির জন্যে আনা চকলেট আইসক্রিমটা আমি লুকিয়েই ফ্রিজে রেখে দিলাম।এখন যদি মেয়েটা দেখে আমি আইসক্রিম এনেছি তাহলে সব কাজ ফেলে এখনি খাওয়া শুরু করবে।
আমি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই সুপ্তি আমার হাত ধরে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে বললো,
-জানো, তোমার জন্যে কি এনেছি?
-না বললে জানবো কিভাবে।
আমার কথায় সুপ্তি কিছু বললো না।মুচকি হেসে রান্না ঘর থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে এসে বললো,
-বলো তো এটা কি?
আমি প্যাকেটটার দিকে একটু ভালভাবেই তাকালাম।দেখে তো মনে হচ্ছে বিরিয়ানির প্যাকেট।আসলে দেখে না,নাকে বিরয়ানির গন্ধ আসতেই বুঝছি এটা বিরিয়ানির প্যাকেট।
বিরিয়ানির প্যাকেটটা দেখে কেমন যেন খুশির মাত্রাটা একটু বেড়েই গেলো।সুপ্তি চেয়ারে বসে প্লেটে বিরিয়ানি ঢালতে ঢালতে বললো,
-একটু বের হয়েছিলাম,বিরিয়ানি দেখেই তোমার কথা মনে পড়ে গেলো।তাই নিয়ে এলাম।
আমি বিরিয়ানির দিকে তাকিয়ে হাত ধুতে ধুতে বললাম,
-বেশ ভাল একটা কাজ করেছো,দাও দেখি কেমন মজা হইছে।
আমার কথায় সুপ্তি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-জানো এটা কিভাবে খেতে হয়?
সুপ্তির কথায় আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে জানান দিলাম যে, এটা কিভাবে খেতে হয় সেটা আমি ছাড়া অন্য কেও ভাল দেখাতে পারবে না।কিন্তু মেয়েটা আমাকে দেখানোর সুযোগই দিচ্ছে না।বলতে গেলে সে নিজেই দেখানোর কাজে ব্যাস্ত।
আমি কিছু বলার আগেই সুপ্তি মুখে নিয়ে বললো,
-দেখো এভাবে খেতে হয়।
-হ্যা জানি তো।এবার দাও আমার দিকে।দেখি তোমার মত খেতে পারি কিনা।
-আরে দাড়াও তো।এই দেখো কিভাবে খেতে হয়।
কথাটি বলেই সুপ্তি আবারও মুখে বিরিয়ানি তুলে নিলো।ওর খাওয়া দেখে কেমন যেন নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।আমি বিরিয়ানির প্লেট যখনি ধরতে যাব তখনি সুপ্তি প্লেটটা সরিয়ে বললো,
-আরে বাবা এত অধোর্য কেন।দেখাচ্ছি তো।
-হয়েছে আর দেখাতে হবে না।দেখাতে দেখাতে তো অর্ধেই শেষ করে ফেললে।
-এবার একটু মনোযোগ দিয়ে দেখো।আর দেখাবো না।
সুপ্তির কথায় আমি এবার একটু মনোযোগ দিয়েই দেখলাম।বুঝতেছিনা মেয়েটা আমাকে কিভাবে খেতে হয় এটা দেখাচ্ছে নাকি এটা বলে নিজেই সব সাবার করে দিচ্ছে।
আমি কিছু বলার আগেই সুপ্তি বললো,
-দেখেছো কিভাবে খেতে হয়।
সুপ্তির কথায় আমি এবার আর কিছু বললাম না।ফাজিল মেয়েটা পুরো এক প্লেট বিরিয়ানি একাই সাবার করে দিয়েছে।আমি প্লেটটা আমার কাছে এনে বেশ ভালভাবেই দেখলাম,একদম ফাকা।একটুও রাখেনি।
কেমন যেন মেয়েটার প্রতি আমার রাগটা একটু বেড়ে গেলো।দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।এবার আমি খাবো আর তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবা।আমি উঠে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিমের বাটিটা এনে সুপ্তির সামনে ধরে বললাম,
-জানো এটা কিভাবে খেতে হয়?
-জানি তো, দাড়াও দেখাচ্ছি।
কথাটি বলেই মেয়েটা আমার হাত থেকে খপ করে আইসক্রিমের বাটিটা নিয়ে চামুচ দিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
আরে এটা কি হলো।
সুপ্তি যে এভাবে হাত থেকে আইসক্রিমের বাটিটা নেবে ভাবতেও পারিনি।মাঝে মাঝে ভেবে পাইনা মেয়েটা এত ফাজিল কেন।তবে ফাজিল মেয়েটা আবার ভালবাসতেও জানে।এইতো সেদিনের কথা।আমি জ্বরে যখন সারারাত কাতরাচ্ছিলাম তখন মেয়েটা রাত জেগে চোখের জল ফেলে আমার পাশে বসেই নির্ঘুম কাটিয়েছিল।
তবে যাই হোক, আজ বিরিয়ানির লোভ দেখিয়ে বিরিয়ানি দেয়নি।আবার আইসক্রিমও প্রায় শেষ করে ফেলেছে।
আমি চেয়ার টেনে বসে সুপ্তির খাওয়া দেখছি আর মনে মনে বলছি, এরকম অবিচার মেনে নেওয়া যায় না।কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।