“ওই হ্যান্ডসাম কোথায় যাও হ্যা? এত মান্জা মেরেছো কেনো?”
.
,
সবে মাত্র জুতো’র লেস গুলো বাধছিলো আলভি তখনই জেনিয়া পাশ থেকে বলে উঠলো কথাটা। জেনিয়ার হাজবেন্ড আলভি।
পেশায় একজন সফ্টওয়ার ইন্জিনিয়ার। বয়স ২৮। সপ্তাহে এই একদিন শুত্রবার একটু বাইরে ঘোরার সময় পায়।
মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয় পূর্বের সেই জীবনটায় ফিরে যেতে। কত সুন্দরই না ছিলো সে দিন গুলো কলেজ শেষে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেয়া।
আর বিকেলে থেকে রাত ৮ পর্যন্ত যেখানে খুশি সেখানে ঘুরে বেড়ানো ফ্রেন্ডদের সাথে নয়ত কোনো একটা পরিচিত চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়া।
ভার্সিটি লাইফে গিয়ে সেসব কিছু করার আর সময় হয়ে উঠেনি। এরপর জব করতে শুরু করে আর তারপর জীবিত থেকে বিবাহিত হয়ে যায়।
অথচ এত তাড়া তাড়ি বিয়ে করতে চায়নি। ইচ্ছে ছিলো চাকরী অবস্থায় বাবা’র থেকে একটা বাইক নেবে। সে আশা পূরন হয়েছে।
কিন্তু গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে সে আশা পূরন হলোনা। এর পূর্বেই সব শেষ হয়ে গেলো।
,
জেনিয়াও পিছিয়ে নেই বিবিএ তে পড়ছে সে। ভার্সিটি লাইফের মজা সম্পূর্ন নিতেও পারলো না অথচ বিয়ের পিড়িতে বসতে হলো তাকে।
অথচ উভয়েই মেনে নিতে পারেনা যে দুজন দুজনের জন্য পার্ফেক্ট। কারন দুটি মানুষের মেন্টালিটি ভিন্ন।
আলভি যেসব জিনিস লাইক করেনা সেটি জেনিয়া লাইক করে।
আবার আলভি যেটা লাইক করে জেনিয়া সেগুলো ডিজলাইক করে। আলভি’র প্রিয় রং নীল, কালো অথচ জেনিয়ার এসব ভালো লাগেনা।
আলভি’র ঠান্ডা’র মধ্যেও পাখা চালিয়ে কম্বল গায়ে গিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস অথচ জেনিয়া’র মোটেও সহ্য হয়না।
ঘরের দড়জা জানলা আটকে লাউড দিয়ে বক্সে গান শোনা’র অভ্যাস আলভি’র অথচ জেনিয়া’র দম বন্ধ হয়ে আসে।
মোট কথা দুজনে’র দুজনের শত্রু পক্ষ তাই দুজনে’র মধ্যে ভালবাসার জন্য কোনো কারন খুজে পায়না তারা।
,
জেনিয়া ফ্যামিলি’র সবার সামনে ভদ্র থাকলেও একদম সব সময় পেছনে পড়ে থাকে অালভি’র।
আর আলভি বেশি কথা বলতে চায়না মেয়েটির সাথে কারন তার ধারনা মেয়েটা অসম্ভব ঝগড়াটে।
কিছুদিন পূর্বে কি একটা নিয়ে আলভি জাস্ট একটু উচু গলায় ভাল ভাবেই কি যেন জিগ্গাসা করেছিল জেনিয়া সে কি পরিমান রেগে গিয়েছিল।
আর ঝগড়া তো আছেই, তাই যত কম কথা বলা যায় ততোটুকুই ভালো এমনটাই ভাবে আলভি।
অফিস ছুটি থাকায়, আজ বাইরে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই জেনিয়া’র বাধা। সব কিছুতেই বাধা দিবেই মেয়েটা।
,
,
লেসটা বেধে সোজা হয়ে দাড়িয়ে, বিরক্তি নিয়ে জেনিয়া’র দিকে তাকিয়ে বলে। “এটা কেমন কথা? মান্জা আবার মারে কিভাবে?
একটু কি স্টাইলিশ কিছু পড়ে বাইরেও যেতে পারবোনা নাকি?
“অবশ্যই না। কারন এখন তুমি জীবিত নও বরং বিবাহিত। তাই কোনো মেয়ে যদি চান্স নিতে চায়?
“মেয়েদের তো কোনো কাজ নেই আমার সাথে চান্স নিবে। আর মেয়েদের বয়ফ্রেন্ডের অভাব থাকে নাকি যে বিবাহিত ছেলের পেছনে পড়বে?
“কি আশ্চর্য, তোমার কপালে কোথায় বিবাহিত লেখা রয়েছে? সে যাই হোক এই বিকেল বেলা কোথায় যাওয়া হচ্ছে, আম্মু জানে তো তুমি বাইরে যাচ্ছো?
“আজিব আম্মুকে ডিস্টার্ব করবো কেনো? এখন কি আর আমি ছোট নাকি? আমার কি বাইরে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে হতে পারেনা?
নাকি বিয়ে করে পঙ্গু হয়ে গেছি?
“শেষে’র টাই, দাড়াও তুমি এক্ষুনি খবর নিচ্ছি তোমার।
“সব সময় আমার পেছনে পড়ে থাকো কেনো? চামচিকা একটা।
,
,
পরিস্থিত কি হবে ভেবে দড়জায় দাড়িয়ে রয়েছে আলভি। শাশুড়ি’র হাত ধরে ছেলে’র সামনে দাড়া করিয়ে বলে…,
“মা দেখেছেন আপনার ছেলে সেই কোন এক বিবাহিত বান্ধবী’র সাথে দেখা করতে যাচ্ছে আমাকে নিয়ে যেতে বলায় আমাকে খুব বকলো”।
মুখটা কাদো কাদো করে ফেলল জেনিয়া। এমনিতে দেখতে খুব চমৎকার একটি মেয়ে সে।
আর এমন মেয়ে বেশ ভালোই অভিনয় করে মানুষে’র মন গলাতে পারে।
“তুই এত খারাপ হয়ে গেছিস আমি যা কল্পনাও করতে পারিনি।
বিয়ে করেছো এখন নিজের বউকে গলায় ঝুলিয়ে যেখানে পারো নিয়ে যাবে, তোমার বউকে আমি দেখে রাখতে পারবোনা,
নিজে একটু খেয়াল রাখতে পারো না?
যাও বউমা তুমি রেডি হয়ে আসো, তোমাকে নিয়েই ওর যেতে হবে”।
,
,
জেনিয়া’র জন্যই এতগুলো কথা শুনতে হলো তার। ভেবে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। দড়জায় দাড়িয়েই অপেক্ষা করছে জেনিয়া’র।
রাগে জন্য ইচ্ছে হচ্ছে জেনিয়া কে কোথায়ও নদী নয়ত সমুদ্রের তীরে নিয়ে গিয়ে, পানিতে ফেলে দিক। সেজে গুজে বের হয়ে এলো জেনিয়া।
হাজবেন্ডে’র দিকে তাকিয়ে একটা চোখ মারলো। এরপর ভদ্র বউয়ে’র মত শাশুড়ি’র পা ছুয়ে সালাম করলো।
যার জন্য আলভি’কেও কথা শুনতে হলো।
“দেখেছিস কত লক্ষী, তুই পারবি কখনো এমন হতে?
,
ধপ করে হাটু গেড়ে বসে নিজে’র মায়ের পায়ে’র কাছে মাথা ঠেকিয়ে বলে, “দোয়া করবেন মা আমি আসছি”।
হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাওয়া’র মত অবস্থা হয়ে যায় জেনিয়া’র তবুও ঠোটেঁ ঠোটঁ চেপে থাকে।
,
,
বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দেয় আলভি, জেনিয়া ব্যাক সিটে বসে হাসতে থাকে।
এমনিতে ভালোই বাইক চালাতে পারে সে অথচ জেনিয়া’র জন্য সব কিছু উল্টো পাল্টা হয়ে যেতে থাকে। মাথা ঘুরতে থাকে তার।
ব্যাক সিটে বসে হেসেই যাচ্ছে জেনিয়া। আর একটু হলেই অন্য একটা গাড়িতে লেগে যেত।
জেনিয়া ব্যাঙ্গ করেই বলে, “ঠিকমত বাইক চালাতে পারো না এখন আমি না থেকে যদি তোমার গার্লফ্রেন্ড থাকতো তাহলে খবর নিয়ে ছাড়তো”।
,
,
বাইকটা একসাইডে ব্রেক করে জেনিয়া কে নামতে বলে। জেনিয়া কিছুতেই নামবেনা।
“আমি কিন্তু এই নির্জন জায়গায় বাইক আর তোমাকে ফেলেই চলে যাবো, পেছনে বসে খিকখিক না করে পারলে চুপ করো নয়ত তুমিই চালাও”।
এবারও দুষ্টুমির হাসি হেসে বলে, “আমিও কিন্তু বাইক চালাতে পারি,
তাই এই নির্জন জায়গায় তোমাকে ফেলে যদি বাইক নিয়ে চলে যাই সেটা ঠিক হবে কি?”।
রাগে ফুসতে থাকে আলভি “ওকে ঠিক আছে তুমিই চালাও দেখি কি এমন বাইক চালাতে পারো”।
,
,
ব্যাক সিটে বসে আলভি, আর জেনিয়া সামনে বসে বাইকটা স্টার্ট দিয়ে দ্রুত টান দেয়ায় আলভি প্রায় পড়েই যাবে এমন অবস্থায় কোনো রকম ভাবে জেনিয়া কে ধরে সামলে নেয়।
জেনিয়াও কম দুষ্টু নয় সেও স্প্রীড কমাচ্ছে না দ্রুত তো চালাচ্ছেই সাথে একটু এদিকে ওদিকে ঘুরাচ্ছে। আলভি জানতো না জেনিয়া এমন ভাবে বাইক চালাতে পারে।
“জেনিয়া ধিরে চালাও”। স্প্রীড বাড়াতেই থাকে জেনিয়া। আবারও কানে’র কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“বুঝতে পেরেছি তুমি খুব ভালো চালাতে পারো, এখন থামাও”।
“হিহিহি তোমার ভয় করছে তাইনা? আগে বলো?”। “আমি ভয় পাইনা”। “ভয় না পেলে আমাকে ধরে বসে আছো কেনো হুম হুম?”।
“স্প্রীড কমাও পেছনে এসে বসো”। বাইকটা সাইড করে জায়গা রিপ্লেস করে দুজন বসে।
,
“দেখলে তুমি ভয় পেয়েছো আমার কাছে।
“বেশি কথা বললে কিন্তু ফেলে দিবো।
“তোমার বউ তোমার পাশে রয়েছে একটু তো রেসপেক্ট করো। আর কোথায় যাচ্ছি আমরা?
“কোথায় গেলে একটু চুপ থাকবে তুমি?
“এমন একটা প্লেসে নিয়ে চলো আমাকে যেখানে গেলে মনটা শান্ত হয়ে যায়।
,
,
একটা নির্জন প্লেসে বাইকটা সাইড করে নেমে দাড়ায়। “এই প্লেস টা আমার সব থেকে ফেবরিট বুঝলে জেনিয়া।
এখানে যখন আসি তখন আমার মনটা এই পরিবেশে’র সাথে মিশে যায়। এই নদী’র তীরে বসে, ঘুরে আমি অনেক সময় কাটিয়েছি”।
“খুব সুন্দর কিন্তু তুমি এতোটা সুইট প্লেসে আমাকে ঘুরতে নিয়ে এসেছো নাকি মেরে ফেলবা প্লান করেছো”। “সব সময়ই কি আমার পেছনে না লেগে থাকলে নয়?”।
“কেনো তুমি শোনো নি, মা কি বলেছে? আমাকে তোমার গলায় ঝুলে থাকতে, কিন্তু আমি সেটা করবো না। কারন তোমাকে আমার ভাল লাগে তাই এতো জ্বালাই।
তুমি তো শুধু ঝগড়া টাই দেখো তোমাকে এতটা লাইক করি সেটা বুঝবে না কখনই”।
,
,
সবুজ ঘাসে’র ওপরে বসে পড়ে জেনিয়া। আলভিও বসে পড়ে। মুহুর্ত টা যেন থেমে যাচ্ছে, এটা কি বলল জেনিয়া!
নদী’র বড় বড় ঢেউ এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে জেনিয়া। “তুমি যা বললে তা কি সত্যি? কিন্তু আমি যদি ইস্ট হই তুমি তো আবার তাহলে ওয়েস্ট”।
“জীবনে পার্ফেকশান বলতে কিছু নেই জানো আলভি? আমার নীল রং ভালো লাগতো না কিন্তু একটা ব্লু ড্রেস পড়ে ট্রাই করে দেখলাম সত্যি এতোটাও খারাপ না।
তোমার মতই সব জানালা দরজা লাগিয়ে লাউড সাউন্ড দিয়ে গান বাজিয়ে দেখলাম সত্যি খুব ভালো লাগছিল।
এরপর তোমাকে নিয়ে ভাবলাম, তুমি এতোটাও খারাপ ছেলে নও তোমাকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি এখন শুধু ভালবাসার মানুষ টা হিসেবে সারাটা জীবন চাই”।
,
,
“যদি ভালবাসার মানুষ হিসেবে পেয়ে যাও তাহলে কি আমার সাথে লেগে থাকা বন্ধ করে দেবে?
“তুমি চাইলে তাই করবো।
“থাক তাহলে দরকার নেই।
“কেন? তুমি আমাকে ভালবাসতে চাওনা?
“অভ্যাস হয়ে গেছে, আমার পেছনে তোমার লেগে থাকা নিয়ে। এটা না করলে কেমন যেন কিছু নেই নেই মনে হবে”
“আচ্ছা আলভি, আমি যদি না থাকি তোমার কেমন লাগবে? ভাবো আমি দুরে চলে গেলাম”
“বলতে পারবোনা, কিন্তু অনেক কষ্ট হবে। তবে কেনো সেটা জানিনা।
“কারন তুমি আমাকে ভালবাসো কিন্তু আমার তা মনে হচ্ছেনা নয়ত এতোক্ষনে এই রোমান্টিক একটা প্লেসে কি একটা চুমু পাইনা?
,
,
পরিশিষ্ট-:
জেনিয়া’র কপালে একটা চুমু একেঁ দিল আলভি। পরিশেষটা এমনিতে অত্যান্ত শীতল, এর মধ্যে আবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝড়তে লাগলো।
“জেনিয়া তোমার ঠান্ডা লাগবে, চলো আমরা একটা কিছু’র নিচে দাড়াই”। “না এখানেই ভিজবো, আর ঠান্ডা লাগলে তুমি আছোনা?”।
“এতোটা ভরসা করছো আমিকি তোমার বিশ্বাস রাখতে পারবো?”।
“জীবনের শেষবারের মত তোমাকে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে, তুমি কি করবে সেটা তুমিই জানো কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছো তুমি”।
দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে হাতটা ধরে বলল, “আলভি আমার কেন যেন নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি কি আমাকে একটিবার জড়িয়ে ধরবে?”।
জেনিয়াকে কাছে টেনে নিয়ে তার শ্যাম্পু করা চুলে’র ঘ্রান নিয়ে কানে’র কাছে মুখটা নিয়ে বলে,
“আমি জড়িয়ে নিলে যদি তোমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট না হয়, তাহলে তুমি সেখানেই থাকো”।
বন্ধনটা আরও শক্ত করে জেনিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, “থ্যাকিউ আলভি, এখন আমার একটুও নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছেনা,
তুমি এমন ভাবেই সব সময় আমাকে আগলে রেখো, ওকে মাই হার্ট বিট?”। “আচ্ছা, আমার সুইট হার্ট”।