এই থামো।
মিহিনের কথায় আমি আর থামতে পারলাম না।এই নিয়ে পাচ মিনিটে একত্রিশ বার হাচি দিলাম।আপনারাই বলুন এইটা কি আটকে রাখার জিনিস।তবে আমি অপেক্ষায় রইলাম মিহিনের রাগি মুখটা দেখার জন্যে।মেয়েটা হয়তো বেশ রেগে গেছে।
আমি মুখ তুলে মিহিনের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালাম।ও কি খুব রেগে গেছে।আমি মিহিনের দিকে তাকাতেই মেয়েটা আমার অসহায় মুখ দেখে একটু জোরেই হেসে দিল।
তবে অট্টহাসিতে ওকে যে মানায় না এইটা যদি এখন আমি বলি তাহলে এই ঠান্ডা লাগা অবস্থায় মেয়েটা আমাকে ঠান্ডা পানি দিয়েই গোসল করিয়ে দেবে।
মিহিনের সাথে আমার পরিচয় এই বছর খানেক আগে।শীতের সময়।অফিস ছুটিতে গিয়েছিলাম বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে।আর সেখানেই মিহিনের সাথে পরিচয়।
মেয়েটা বেশ ভাল ব্যাডমিন্টন খেলতো।আর এই খেলাটা আমিও যে খারাপ খেলতাম তাও নয়।বেশ ভালই খেলতাম।আর এখনও মাঝে মাঝে খেলা হয়।আর সেদিন রাতে এই ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়েই মিহিনকে দেখা।আমার মত মিহিনও বেড়াতে এসেছিল এখানে।ওর নানার বাড়ি।আমি মিহিনকে দেখে কেমন যেন থমকে গিয়েছিলাম।এই শীতে যেন শীত পরীকে দেখছি আমি।
তবে আমার ধ্যান ভাঙলো একটা পিচ্চির ডাকে।আমি ওর দিকে তাকাতে পিচ্চিটা আবারও বললো,
-স্যার আপনি এখানে?
আমি মেয়েটার দিকে এবার একটু ভাল করে তাকালাম।কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে।আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা আবারও বললো,
-স্যার আমি জেরিন।
মেয়েটার কথায় এবার আর চিনতে বাকি রইলো না।জেরিন।ওকে আমি বেশ কিছুদিন পড়িয়েছি।তখন সবে পড়াশোনাটা শেষ করে চাকরি খুজছিলাম,তখনি ফ্রেন্ডের কথায় জেরিনকে পড়ানো।আমি জেরিনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-তুমি এখানে?
-চিনেছেন তাহলে।আসলে নানুর বাড়ি এসেছি।
-ও আচ্ছা।তোমার আম্মু আসেনি?
-এসেছে তো।আপুও এসেছে।
-আপু!তোমার আপুও আছে?
আমার কথায় জেরিন ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
-হ্যা আছে তো।
-কোই দেখিনি তো কখনও।
-আপু পড়তো রাজশাহীতে।শুধু ঈদে আসতো।তাই দেখেননি।
হ্যা সেটাই হবে হয়তো।নয়তো জেরিনকে পড়ানোর সময় তো দেখাই যেতো।আমার চুপ থাকা দেখে জেরিন বললো,
-ওই যে আপু, খেলছে।
জেরিনের কথায় আমি ওদিকে তাকাতেই দেখি সেই শীত পরীটার দিকে জেরিন আঙুল তুলে আছে।তার মানে এই ব্যাডমিন্টন কন্যাই ওর বোন।
এরপর জেরিনের সহায়তায় মিহিনের সাথে আমার পরিচয়।তবে মিহিনকে আমি পটাতে পারিনি তাই প্রেমও হয়নি।আমাদের বিয়েটা হয়েছে বলতে গেলে পারিবারিক ভাবেই।তবে সব প্লান আমারই ছিল।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যখন বাসায় আসার পর মনে হলো মিহিনের জন্যে আইসক্রিম, চানাচুর আনিনি তখন মিহিনের মুখের দিকে কেমন যেন তাকানো যাচ্ছিলো না।আকাশের মতই বেশ অন্ধকার ছিল।
আসলে বৃষ্টির দিনে বেলকুনিতে বসে চানাচুর খাওয়াটা ওর একটা বদ অভ্যাস।অবশ্য এটা বদ অভ্যাস বলতাম না, যদি না আমাকে এখন আবার চানাচুর,আইসক্রিম আনতে যেতে না হতো।
আমি মিহিনকে কিছু না বলে আবার বের হলাম।ও অবশ্য দেখলে এই বৃষ্টিতে আমাকে কোন মতেই যেতে দিত না।হাসি মুখেই বলতো কাল এনো।কিন্তু মিহিনের মন খারাপের কারনটা আমি হতে চাই না।আমি ওর মন ভাল করার কারন হতে চাই।
বৃষ্টিও যে খুব জোরে হচ্ছে সেটাও না।গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।তবে থামার কোন চিহ্নই দেখতে পাচ্ছি না।শুনলাম এভাবেই দু একদিন থাকবে।তিতলী চৌধুরী আসবে বলে কথা।মিহিন চৌধুরীর ঝড়েই টিকতে পারতেছি না আবার নাকি তিতলী আসবে।আসলে ঝড়গুলো সব মেয়েদের নামেই আসে।তারাও জানে এসব মেয়েদেরই মানায়।
আমি আর দেড়ি করলাম না। চানাচুর, আইসক্রিম নিয়ে বাসায় আসতেই মিহিনের রাগ যেন আরও বেড়ে গেলো।ওনার তোয়ালে আনার সময় নেই।ওড়না দিয়েই মাথাটা মুছে দিতে দিতে বললো,
-আমি বলেছি এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে এসব আনতে।এখন যদি অসুস্থ হয়ে পড়ো তাহলে।
মিহিন এটুকু বলে থামলেও হতো।কিন্তু মেয়েটা থামলো না।আমিও আর কিছু বলার সাহস পেলাম না।এই মেয়েকে দিয়ে বিশ্বাস নেই,কিছু বললে মারতেও পারে।
এরপরই শুরু হলো হাচি।এরকম হাচি আমি কোনদিনই দেখিনি।আমি হাচি দিচ্ছি আর ওদিকে ফাজিল মেয়েটা হাসছে আর চানাচুর খাচ্ছে।আমি উঠে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়াতেই মিহিন আমার পাশে এসে বললো,
-এই নাও চা।
আমি মিহিনের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে চুমুক দিয়ে বললাম,
-তুমি খাবে না?
-হ্যা খাবো।
-তোমার কাপ কোই?
-নেই।এই কাপেই খাবো।অর্ধেক তুমি, অর্ধেক আমি।
মিহিনের কথায় আমি কিছু বললাম না।ওর দিকে হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে আমার দিকে আগলে নিলাম।একদম বুকের বা পাশটায় এসে ওর মাথাটা রাখলো।
আমি চায়ের কাপটা মিহিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-নাও,এবার তুমি খাও।
আমার কথায় মিহিন কিছু বললো না।মুচকি হেসে কাপটা নিয়ে চায়ে চুমুক দিল।আর আমি তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে।মনে হচ্ছে ও চা খাচ্ছে না।খাচ্ছে ওর প্রতি আমার ভালবাসাটুকু।তবে চা ফুরিয়ে গেলেও ফুরোবেনা আমাদের ভালবাসা।ফুরোবেনা। কোন ভাবেই না।কোন মতেই না।