ক্যাম্পাসের মধ্যে যদি কারো সাথে নিজের সব পার্সোনাল কথা শেয়ার করতে পারি তাহলে সে কেবলই নিশাত। আমার সবচাইতে ভালো বন্ধুটাও কিন্তু নিশাতই। শুধু বন্ধু না আমি ওকে বন্ধুর চাইতেও বেশি কিছুই ভাবি। যতটা আপন ভাবলে সারাজীবন হাত ধরে রাখা যায় ঠিক ততটাই। ওকে অনেকবার ভালোবাসি বললেও ও পাত্তা দিতোনা। হয়তো মজা করি ভেবে কিছু বলতোনা, তবে আমি সিরিয়াস ছিলাম। ওর সাথে পরিচয়টা লাইব্রেরীতে হয়েছিলো। সায়েন্স ফিকশন বইটা যেদিন আমি নিতে চাইছিলাম সেদিন একটা মেয়ে এসেও দাবি করলো তারও এই বইটা আজকেই চাই! কিছুনা বলে দিয়ে দিলাম। বললাম সপ্তাহ শেষে এটা আমি নিবো। লাইব্রেরিয়ান (ম্যাম) বই নেয়ার তারিখটা লিখে রাখলেন নোটবুকে। তারপর আমি সেদিন শরৎ সমগ্র একটা বই নিয়ে চলে আসলাম।
সপ্তাহখানেক পর আবার লাইব্রেরিতে ম্যামের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম ম্যাম সায়েন্স ফিকশন বইটা এসেছে কিনা?
-ওটাতো একটা মেয়ে নিয়ে গেছে!
-সেদিনও তো একটা মেয়ে নিয়ে গেছিলো!
-আসলে ওই মেয়েটাই ওর নাম নিশাত। তোমার ডিপার্টমেন্টেই পড়ে। ও বইটা আবার নিয়েছে ওর নাকি পুরোটা পড়া হয়নি তাই আবার একসপ্তাহ সময় নিয়েছে।
ওহ নো! এই সপ্তাহে বইটা আমার কাছে থাকার কথা ছিলো!
কোনো কথা না বলে লাইব্রেরীতে একটা টেবিলে বসে হুমায়ুন স্যারের লেখা একটা বই পড়তেছি। পিছন থেকে একটা মেয়ে এসে বললো:
-এইযে মিঃ হিমু হওয়ার শখ আছে নাকি?
-আপনি? এখানে কি চাই? আমার মোটেই হিমু হওয়ার শখ নাই।
– যেভাবে গোল চশমা লাগাইছেন আমারতো তাই মনে হয়!
-দেখুন আমি ছোট অক্ষর কম দেখি বলে এটা টুয়েন্টি পাওয়ারের চশমা।
-ও আচ্ছা। তা এতো রেগে বলার কি আছে?
-আপনি সায়েন্স ফিকশন বইটা জমা দেননি কেন?
-পুরোটা পড়া হয়নি।
-শেষ করলে জমা দিয়ে দিবেন।
-ঠিকাছে। ফ্রেন্ডস?
-শর্ত আছে!
-কি?
-আমাকে আমার অন্য ফ্রেন্ডদের মতো কানা বলা যাবে না।
-হাহাহা! মেনে নিলাম।
-ওকে ফ্রেন্ডস।
সেদিন থেকেই বন্ধুত্ব। এরপর ওর সাথে আমার সব কথা শেয়ার করতাম আর ও আমার সাথে ওর সব কথা শেয়ার করতো। আমার একটা শখ ছিলো গল্প লেখা আর ওর শখ ছিলো ছবি আঁকা। ওকে অনেকবার ভালোবাসি বলেছিলাম ও শুধু বলেছিলো ফাইজলামি করবি না একদম। অনেকবার ভালোবাসি বলা হয়েছে! ও হয়তো সম্পর্কটাকে শুধুই বন্ধুত্ব ভাবে। আমারও উচিৎ আর জোর না করা। নাহলে হয়তো বন্ধুত্বটাও হারিয়ে যাবে! থাকুকনা ও আমার বন্ধু হয়ে হাসি-খুশির আনাগোনায়!
-নিশাত একটা কথা ছিলোরে দোস্ত।
-কি কথা?
-লাইব্রেরিতে সেদিন প্রথম বর্ষের বাংলা ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়েকে দেখে ক্রাশ খাইছিলামরে! চশমিস গার্ল! গোল ফ্রেমের ভেতর বন্দি ডাগর ডাগর চোখ আর সেকি মায়াবী চেহারা! তুই এখন টিপস দে ওই মেয়েটাকে কেমনে পটানো যায়!
-ধুর! চশমিস হলে পটাতে হবে না! যেহুতু তুইও চশমা ছাড়া ঠিকমতো দেখিস না তাই বিয়ের কিছুদিন পর দেখবি দুইটাই রাতকানা হয়ে একটা আরেকটারে খুঁজতেছিস!
-যা ভাগ!
-একটু ভিন্ন টাইপের খুঁজে দেখ।
আরও কিছুদিন পর:
-ওই হাসিব্বা!
-কি হয়েছে?
-তুই অদ্রিতাকে লাভ লেটার দিয়েছিলি?
-কই আমিতো কাউকে লাভ লেটার দেইনি! একটা খালি পেপার দিয়ে বলছিলাম এইটা আমার লাভ লেটার!
-মিথ্যা বলছিস! আমি ওই লেটার পড়েছিলাম ওইটায় লেখা ছিলো।
-হতে পারে! সেদিন চশমার ফ্রেম চেঞ্জ করতে দিছিলাম তো তাই হয়তো সাদা দেখছিলাম। কি লেখা ছিলো ওটাতে?
-ভালোবাসি জোড়া ব্রু আর নীল রঙ্গা চোখগুলো,ভালোবাসি ফর্সা করে লালটুকটুক গালদুটো। ভালোবাসি বেনী করা খোঁপা বাঁধানো চুলগুলো, ভালোবাসি কপাল আঁকা টিপটাকে! ভালোবাসি চশমিস ওই চোখদুটো!
-হুম বাসি তো।
-ধুর একটু ভিন্নতা থাকলে ভালো হতো।
-কি রকম!
-তোর যেহুতু জোড়া ভ্রু তাহলে ওর জোড়া ভ্রু থাকবে না। ফর্সাও হওয়া লাগবেনা এতোটা যেহুতু তুই ফর্সা আছিস। একটু শ্যাম বর্ণের মায়াবী চেহারা হলেই হবে। আর চশমা পড়তে হবে না কাজল রাঙ্গা চোখ হলেই তো চলে। টিপ পরা লাগবে না ঠোঁটের কোণে তিল থাকলেই হবে! নীল নয়ন লাগবে না কালো চোখের মেয়েগুলাই মায়াবতী হয়ে থাকে। বেনী না করতে পারলেও চলবে,চুলগুলো বাতাসে উড়ে তার কাপালে আসবে আর তুই ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিতে পারবি।
এমন একটা মেয়েকে তো ভালোবেসেছিলাম,অনেক ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সেতো আমাকে বাসেনি। বাসেনি তাতে আফসোস নাই কারণ তার সাথে একটা সম্পর্কতো আছে। তাই একটু ভিন্নতা খুঁজছিলাম। তাকে অনেকবার ভালোবাসি বলা সত্ত্বেও সে কখনো বলেনি আমিও ভালোবাসি।
-সে এটাও কি বলেছে যে ভালোবাসেনা?
-না! কিছুই বলেনি।
-বলেছে তোকে ঘৃণা করে?
-না!
-তাহলে কেন তুই অন্যকাউকে কিংবা ভিন্নতা খুঁজিস মাঝপথে তাকে ছেড়ে দিয়ে? আমি কি কখনো না বলেছি তোকে?
বলেই মেয়েটা নিরব কান্না করছে। ওর চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।
-সরিরে!
বলেই আমি মৃদু বাতাসে ওর কপালে উড়ে আসা চুলগুলো ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিলাম!
-সরি বললে হবে না।
-তাহলে?
-তাকে নদীর পাড়ে বসে শতবার ভালোবাসি বলতে হবে। বলতে হবে কখনওই হাত ছেড়ে দিবোনা।
-আচ্ছা চল।
-তারপর ও আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। গন্তব্য নদীর পাড়!
এভাবেই বন্ধুত্ব থেকে আরও একটি সম্পর্ক দুষ্টু-মিষ্টি ভালোবাসায় রূপ নেয়!