অমাবস্যা

অমাবস্যা

সিগারেট টা প্রায় শেষ পর্যায় চলে এসেছে। রাজ সিগারেটে শেষ টান দিতে দিতে কলিং বেল বাজালো। দরজাটা খোলেই তনু একটা বড় সড় ধাক্কা খেলো। রাজকে দেখার সাথে সাথে তনু দরজাটা লাগিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু রাজেরর পায়ের লাথির কাছে হার মানতে হলো। রাজ রুমে ডুকে সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো। তনুর চোখে ভয়ের ছায়া ভাসছে। রাজ রুমটা ভাল করে দেখে সোফায় গিয়ে বসলো। তনু কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলল “তুতুতুমি এখানে কি চাও?”

তনুর প্রশ্নে রাজ মুচকি হাসলো। তখন রাজ বলল, ” তোমার স্বামী তো অফিস চলেই গিয়েছে,তবু কথা বলতে ভয় কিসের? নাকি ভয় পাচ্ছো আমি যদি তোমার মত বেইমান হয়ে তোমার ক্ষতি করি। ” কথাটা শুনে তনুর গলার জল একদম শুকিয়ে গেল। অতীতের প্রতিটা সেকেন্ড তার চোখে ভেসেঁ চলেছে। তখন তনু ভয়ে ভয়ে বলল, ” ক্ষতি”। ” হুম আমি তোমার ক্ষতি করতেই এসেছি ” বললো রাজ আর মুখে পিশাচের মত হাসি।

তনু প্রায় কান্না করে দিবে, ” না রাজ তুমি আমার কোন ক্ষতি করতে পারো না, তুমি তো আমায় ভালবাসতে তাই না “। ” হুমম তবে ভালবাসতাম কিন্তু এখন তো বাসি না ” বলল রাজ। রাজের চোখে মুখে প্রতিশোধের নেশা চেপে ধরেছে। আর এইদিকে তনু কথা বলতে পারছে না।

রাজ উঠে দাড়িয়ে তনুর কাছে গেল আর তনুকে জড়িয়ে ধরলো। তনু কান্না করা চোখে বলতে লাগলো ” রাজ প্লিজ আমার কোন ক্ষতি করো না। আমি তোমার পায়ে পড়ি। ”

” এত চাপ নিচ্ছো কেন তনু রাণী, আসো একটা সেলফি তুলি ” পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতে করতে কথাটা বলল। আর এইদিকে তনু বাধাঁ দিতে চাইলেও ব্যর্থ হলো।

একটা ক্লোজ সেলফি তুলে রাজ তনুকে ঝাটকা দিয়ে ছেড়ে দিলো। তখন রাজ বলল…

“তোর মত মেয়েকে তো ছুয়ে দেখার ইচ্ছাটাও নেই আর তোকে জড়িয়ে ধরবো এটা ভাবলি কেমন করে? তুই যেন গত দুই বছর আগে আমার সাথে ছলনা করে ছিলে। আজ আমিও ঠিক তাই করলাম। তোর এই ছবি হবে আমার অস্ত্র। ” এদিকে তনু কান্না করতেই থাকে। রাজ আবার বলতে লাগলো,

” এখন তোর চোখের জলে আমি ভিজবো না। তোর স্বামী জানে তো তোর কুকর্ম কান্ডের কথা। নাকি জানাতে হবে। ”
কথাটা শেষ হতে দেরি হলেও তনু রাজের পায়ে পড়তে দেরি করে নি। তনু কান্না করতে করতে বলল, ” প্লিজ রাজ অর্নবকে ( তনুর স্বামীর নাম অর্নব) কিছু বলো না। ও জানলে হয়ত আমায় ডিভোর্স দিয়ে দিবে। ”

রাজ তনুর কথা শুনে উপরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো তারপর বলল, ” ডিভোর্স টা তোর মত মেয়ের জন্য কম শাস্তি হয়ে যায়। আমি তো এর থেকে বড় ধামাকার কথা চিন্তা করছি। ”

” প্লিজ রাজ আমায় মাফ করে দাও” তনু আকুতি করতে থাকে।

” কয়েকটা দিন নিজের মত জীবন ঘুছিয়ে নে। আমি পড়ে আসবো তোর জীবনে কালো ভয় হয়ে। আজকে আসি। ” কথাটা শেষ করে রাজ চলে আসলো তনুর বাড়ি থেকে।

রাস্তায় বের হয়েই আরেকটা সিগারেট মুখে নিলো। এক সময় এই তনুর কারনে সিগারেট ছেড়ে ছিল আর এখন এই মেয়ের কারনেই সিগারেট সহ অন্য সবই চলে। রাজ বাড়ির পথে হাটঁছে। যতই বাড়ির পথ আসছে ততই যেন চোখ গুলো ঘোলা হয়ে আসছে। নিজের এলাকা আসতেই এলাকার লোকেরা আড় চোখে রাজকে দেখছে আর কানাকানি করছে, “আসছে জেল খেটে, এমন ছেলে জন্ম নেওয়ার পড়েই মেরে ফেলা উচিত “। সবাই পিছনে কিছু না কিছু বলছে কিন্তু সামনে এসে বলার সাহস কারো নেই। রাজ সবার কথা শুনতে শুনতে বাসার সামনে চলে আসলো। দরজাটা খোলাই ছিল তাই কাউকে ডাক না দিয়ে রুমে ডুকলো। পরিচিত সব কিছু যেন আজ অপরিচিত। দেয়ালে ঝুলানো রাজের ছবির সাথে যেন এই রাজকে মোটেও মিলানো যাচ্ছে না। ডান পাশের নিজের রুমে নিজের গিটার টা দেখা যাচ্ছে কিন্তু এখন সেটায় হয়ত কেউ হাত দেয় না।

চশমাটা চোখে দিতে দিতে রাজের বাবা রুম থেকে বের হয়। রাজকে দেখে অনেকটা বিভ্রত হয়ে যায়। রাজ চোখটা নিচে নামিয়ে নেয়। রাজের বাবা সাথে সাথে রাজের গালে হাতটা বসিয়ে দেয়। চড়ের আওয়াজ শুনে রাজের মা রুম থেকে বের হয়ে রাজকে দেখে কান্না শুরু করে দেয়। তবে রাজের বাবা বাধাঁ দেয়।

” এই বাড়িতে কোন কুসন্তানের জায়গা নেই। বেড়িয়ে যাও তুমি। এই চড়টা যদি ছোট বেলায় দিতাম তাহলে হয়ত আজকে আমাদের এমন দিনের মুখমুখি হতে হতো না। তোমার কারনে এলাকায় বের হতে পারি না। যে এলাকার লোকেরা চোখ তুলে কথা বলতে পারতো না, তারা আজ মুখে থুথু দিয়ে বলে, দেখে ধর্ষকের বাবা যাচ্ছে। ”

রাজের বাবার চোখেও জল, যদিও রাজ সত্যটা বলতে যায় তবুও পারলো না। বার বার হেরে যাচ্ছে নিজের কাছে। রাজের মার কান্না থামছে না। সুখের পরিবারটা আজ অন্ধকারে ছেয়েঁ গেছে।
দূর থেকে বাবা মাকে প্রনাম করে একটা কথা বলল,

” বাবা তোমাদের ছেলের কোন ভুল ছিল না, তবুও একটু বুঝলে না। ভাল থেকো তোমরা,আর হয়ত কোন দিন দেখা হবে না। ”

কথাটা বলে রাজ আর পিছন ফিরে তাকায় নিয়ে। এখন রাজের এক মাত্র যাওয়ার জায়গা হলো দীপ। দীপ হলো রাজের প্রিয় বন্ধু। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ছিল ২ সপ্তাহ আগে। জেল থেকে বের হয়েই রাজ দীপের বাড়ি যায় আর সেখানে থেকেই তনুর সব খবর নেয়। এক মাত্র দীপই রাজকে বিশ্বাস করলো আর সমাজ তাকে ধর্ষকের অপবাধ দিলো।

সকালে ঘুমিয়ে ছিলাম তখন মাথায় কারো হাতের স্পর্শে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি বাবা পাশে বসে আছে। তাই আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু বাবা আর ঘুমাতেই দিলো না…

— কিরে বাবা আর কত সকাল পর্যন্ত ঘুমাবি? আজ না ভার্সিটিতে তোদের ব্যাচের প্রজেক্ট জমা দেওয়ার কথা।
— হুমম আরেকটু ঘুমাই না।
— আর তো মাত্র ৪টা মাস বাকি আছে , এর পর তো একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়েই যাবি। আর না ঘুমিয়ে উঠে পর।
— হুমম যাও, আসছি।
— আমি নাস্তার টেবিলে বসে আছি, তুই তারাতারি আয়।
— হুমম

আমার ভোর বেশি ভাগ বাবার হাতের স্পর্শে হয়। আর প্রায় প্রতিদিনই বাবার সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করি। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তো তাই ভালবাসাটাও অনেক বেশি।

ফ্রেশ হয়ে বাবার সাথে নাস্তা করে ক্লাসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম। কিছুদিন আগে আমরা ইন্টার্নি করে এসেছি। এখন হাতে সময় আছে ৪ মাস। এই ৪ মাস ইঞ্জিনিয়ারিং লাইফের শেষ সময়। গত চার মাসে ভার্সিটিতে ৪ হাজারের উপর ক্রাশ খেলেও কোনদিন প্রেম করার ইচ্ছা হয় নি। কেন হয় নি সেটা জানি না, তবে হয় নি। তবে ক্লাসের প্রতিটা স্টুডেন্ট প্রায় আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের মতই।

ভার্সিটির শিমুল গাছটার পাশ দিয়ে যখন হেটেঁ যাচ্ছি তখনই একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলাম। কিন্তু আমি তো যথারীতি দূরত্ব বজায় করেই হাটঁছিলাম। আমি মেয়েটাকে না দেখেই সরি বলে চলে যাচ্ছিলাম। তখনই মেয়েটা বলে উঠলো…

— এই স্টুপিড, হাতের বই গুলো ফেলে দিয়েছেন। এই গুলো তুলতে তো একটু সাহায্য করতে পারেন।
— ও আচ্ছা
আমিও বই গুলো তুলতে হেল্প করলাম। কিন্তু যখন মেয়েটার দিকে তাকালাম তখন মনে হয় একটা ক্রাশ খেয়ে ছিলাম। কিন্তু আলাদা কোন অনুভূতি হয় নি। মেয়ের হাতে বই গুলো দিয়ে পিছন ফিরে চলে আসবো তখনই শোনলাম…
— আমার নাম তনু, তুমি?( আপনি থেকে সরাসরি তুমি)
আমি পিছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই মেয়েটি আবার বলল..
–এভাবে তাকানোর কিছু হয় নি। শুধু নামই তো জানতে চেয়েছি।
— রাজ।

নামটা বলে আর দাড়াই নি। কখন যে কি বলে ফেলবে এর শিউর নেই তাই নিজের রাস্তা মাপাই ভালো। কাহিনীটা কেমন যেন উল্টা পাল্টা লাগছে। আমি দূরত্ব বজায় করে চলার পরও ধাক্কা লাগলো,ধাক্কা লাগার পর মেয়ে আমায় বকলো না, বই তুলে দিতে বলল আবার আমার নামও জানতে চাইলো। এমন তো কখনো কারো সাথে হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।

ক্লাসে আসতে দেখি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে তাই পারমিশন নিয়ে পিছনে গিয়ে বসলাম। তখন আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আমার বন্ধুরা হাসতে ছিল। কিছুই বুঝতে ছিলাম না।
ক্লাস শেষ হতেই সব গুলো আমার সামনে আসলো আর এক সাথে বলল…

— এই তনুটা কে রে?
— এই মেয়ের কথা তোরা জানলি কেমন করে?
— ক্লাস শুরু হওয়ার আগে তো মেয়েটা এসেছিল আর তোর ব্যাপারে সব খবর নিয়ে গেছে।মনে হয় তোকে ভালবাসে।
— তোরা মনে হয় পাগল হয়ে গেলি। আমি আর প্রেম দুইটাই দুই প্রান্তের জিনিস।

এভাবেই বকবক করে বাকি ক্লাস গুলো শেষ করলাম কিন্ত কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না এই তনুর সাথে আমার কোন চক্কর চলছে না। ক্লাস গুলো শেষ করে আমাদের প্রজেক্ট স্যারদের বুঝিয়ে দিলাম। তখন দীপের সাথে হেটেঁ হেটেঁ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখনই একটা পিচ্ছি বাচ্চা এসে আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে দৌড়। আমি কাগজটা দীপের সামনেই খুললাম। সেখানে লেখা ছিল, ” আপনি আমার অনেক বড় তবুও তুমি করে বলছি। তোমাকে আমি গত ২ মাস ধরে ফলো করছি। তোমার ব্যাপারে সব খবর নিচ্ছি। আর সব কিছু থেকে তোমার নামে পজেটিভ রিপোর্ট পেয়েছি। আমি কথা ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বলতে পারি না তাই সোজাসোজি বলে দিচ্ছি, আমি তোমাকে ভালো বাসি,
বার্তায় তনু…

চিঠি দেখে হাসবো না লাফাবো ভাবতে পারছি না। এই যুগে কেউ চিঠি দেয় জানতাম না। আর দীপ তো পারে না হাসতে হাসতে রাস্তায় বসে পড়ে। আজব মেয়ে একটা। তার মানে সকালে ও ইচ্ছা করে এইসব করেছে।

রাতে শুয়ে ছিলাম। প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছি বললেই চলে। তখনই আমার ফোনটা বেজেঁ উঠলো।
— হ্যালো কে বলছেন?
— তোমায় হবু বউ। ( একটা মেয়ে কন্ঠ)
মেয়ের কথা শুনতে আমার অলরেডি হবু ঘুমও দৌড়ে পালিয়ে গেল।
— ওই মজা বাদ দিয়ে কথা বলেন নয়ত ফোন কেটে দিবো।
— ওগো রাজ বাবু, আমি তোমার ছোটই হবো তাই আপনি আপনি না করে তুমি করে বলো না। শুনতে সেই লাগে।
— দেখেন ভাল হচ্ছে না কিন্তু!
— আমি তনু…
একটা ছোটখাটো শকড খেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম…
— আমার নাম্বার পেলে কোথায়?
— সেটা পেয়ে গেছি কিন্তু আমার চিঠির কোন জবাব কিন্তু পাই নি।
— কি জবাব দিবো?
— আমি তো তোমায় ভালবাসি, আর তুমি???
— জানি না, আমি ফোন রাখলাম। এখন ঘুমাবো বাই।

বলেই ফোনটা কেটেঁ দিলাম। জীবনে কখনো প্রেম করি নি আর এখন একটা মেয়ে নিজে থেকে বলছে আমায় ভালবাসে। কেমন যেন লাগছে? ইশশ লাইফে কেন যে প্রেম করি নি। আগে প্রেম করলে হয়ত এই ফিলিংসটা বুঝতে পারতাম।

সকালে ঘুম ভাঙ্গতে কেমন যেন একটা ভাল লাগা কাজ করতে লাগলো। আসলে প্রথমে হয়ত সব কিছু রঙিন লাগে। অযথা মুখে হাসি একটু চুলে হাত,মোবাইল চেক আর আয়নায় দেখা এই সব গুলোই প্রেমের লক্ষন তবে আমি এত সহজে প্রেমে পড়বো না। কিন্তু মনের মাঝে কেমন যে একটা ভাল লাগা চলছে।

ভার্সিটি আসতেই দীপ আমার সামনে আসলো। কিন্তু দীপ আমায় দেখে জোরে জোরে হাসছে। তাই আমি বললাম…

— কিরে হাসছিস কেন?
— দোস্ত তুই আর তনু প্রেম করিস এটা তো আমাদের বলিস নি।
— মানে কি?
— মানে আবার কি? তনু তো নিজেই ক্লাসের সবাইকে এটা বলেছে।
— এই মেয়ে এত ফাস্ট কেন?
— তোর জন্য যে কোন মেয়েই এমন করবো?
— দীপ,তুই কবে থেকে পাম দেওয়া শুরু করলি।
— এই আর কি…

নিজের ক্লাসে গেলে এখন সমস্যা। আগে ওই মেয়েকে কিছু বলার প্রয়োজন নয়ত বেশি বাড়াবাড়ি করতেছে। তাই মেয়েটার ক্লাসের সামনে গিয়ে দেখি মেয়েটা বাইরেই দাড়িয়ে আছে তার ফ্রেন্ডদের সাথে। আমাকে থেকে তনু কতটা অবাক হয়ে ছিল বলতে পারবো না তবে বাকি সব মেয়ে গুলো অনেকটাই অবাক হয়ে ছিল। আমি তনুকে ডাক দেওয়ার আগে তনু এসে আমার হাত ধরে ওদের সামনে নিয়ে গেল আর সবাইকে বলল আমি ওর বয়ফ্রেন্ড। এরপর আমি ওর একটু আলাদা নিয়ে আসি।

— ওই আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হলাম কখন?
— সেটা সিক্রেট।
— এইসব ফালতু কাহিনী বাদ দাও। মাত্র এক দুই দিনে তো প্রেম হয় না।
— কে বলল এক দুই দিন। আমি তো তোমায় অনেক আগে থেকেই ভালবাসি তবে বলার মত সাহস পাই নি।
— ( আমি কি বলবো বুঝতে পারি নি)
— প্লিজ রাজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। খুব ভালবাসি তোমায়। একবার আমাকে কাছে টেনে দেখো। সময়ের সাথে তুমিও আমাকে ভালবেসে ফেলবে।

ওইদিন তনুর মুখের উপর কথা বলতে পারি নি। শুধু চেয়ে ছিলাম। এভাবেই শুরু হয়ে গিয়ে ছিল আমাদের প্রেমের গল্প।

খুব দুষ্টামী আর কেয়ারিং এর মাঝে দিয়ে একটা মাস কেটে গিয়ে ছিল। হঠাৎ করে তনুর আচরনের পরিবর্তন শুরু হলো কিন্তু আমি যেন আগের থেকেই বেশি ভালবাসতে শুরু করেছি।

একদিন তনুর মোবাইল বন্ধ পেয়ে আমি ভার্সিটিতে গিয়ে তনুর ফ্রেন্ডদের কাছে তনুর মোবাইল বন্ধ কেন জানতে চাওয়ায় সবাই হেসে দিয়ে ছিল। ওইদিন মনের মাঝে একটা বিশ্বাস ভাঙ্গার শব্দ অনুভব করে ছিলাম। সত্যি টা কি? তনু কি আমার সাথে গেম খেললো।

এরপর প্রায় একটা সপ্তাহ তনুর কোন খোঁজ পায় নি। এক সপ্তাহ পর যখন কলেজে গেলাম তখন তনুকে দেখে যেন শান্তি পেলাম। আমি দৌড়ে তনুর কাছে গেলাম। ও আমার দিকে কেমন যেন করুণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।

— কোথায় ছিলে এত দিন আমাকে ছেড়ে?
— তুমি কবে থেকে আমার সাথে ছিলে যে তোমাকে ছাড়া থাকতে যাবো।
— তনু তুমি এমন ভাবে কথা বলছো কেন?
— প্রয়োজন ছাড়া যে তোমার সাথে কথা বলছি এটা কি বেশি মনে হচ্ছে না।
— এইসব কি বলছো?
— দেখো রাজ, আমি একটা বাজি ধরে তোমার সাথে রিলেশনে গিয়ে ছিলাম। আর এমন আমি অনেকের সাথেই করেছি। এক মাস আমিও মজা নিয়েছি আর তুমিও নিয়েছো তাই এইসব ভুলে যাও।
— ঠাস…

থাকতে পারি নি। শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে তনুর গালে বসিয়ে দিলাম। তনুর হাতটা ধরে পাশের ক্লাসে নিয়ে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। ” তনু কেন করলে এমন, আমি তো তোমায় ভালবেসে ছিলাম নিজের থেকেও বেশি “। তনুর পায়ের সামনে বসে পড়লাম। তনু আর কোন কথা না শুনে চেচাঁতে লাগলো। আমি দরজাটা ভয় পেয়ে খুলে দিলাম কিন্তু উল্টা সবাই আমাকে ভুল বুঝলো। ছোট ভাইয়েরা আমার গায়েঁ হাত তুলল আর ধর্ষন করার চেষ্টা করার অভিযোগে জেলে দেওয়া হলো। দীপ আমাকে জেল থেকে বের করার অনেক চেষ্টাই করে ছিল তবে সে ব্যর্থ হয়ে ছিল।

” কিরে রাজ খাবি না?” দীপের প্রশ্নের তীরে রাজের ঘোর কাটলো। ভাতের থালাটা হাতে নিয়ে বসে রয়েছে তবু গলা দিয়ে ভাত নামছে না। আজ দীপ একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। হয়ত সব ঠিক থাকলে আজ রাজও কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতো। আর তনুকে নিয়ে নিজেদের ভুবন সাজাতো। তবু সব যেন জোনাক বিহীন রাতে হারিয়ে গেল সব।

দুই দিন পর রাজ প্রতিশোধ নেওয়ার কারনেই আবার গেল তনুর বাসায় তবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পূর্বে দীপকে বলেছিল ” হয়ত এটাই তাদের শেষ দেখা “। দীপ অনেক চেষ্টা করে ছিল রাজকে আটকাতে তবে রাজ আজ বাঁধন ছাড়া।

কলিং বেলটা বাজাতে তনু দরজা খুলে দিলো আর রাজ আগের মতই সোফায় গিয়ে বসলো। তনু মাথা নিচু করে বসে ছিল।

“তনু তুমি কি পারতে না আমার নামে ভুল চার্জশিট টা তুলে নিতে। তোমাকে ভালবেসে কি পাপ করে ছিলাম? ওইদিন শুধু তোমাকে রুমে নিয়ে ছিলাম তোমার পায়ের কাছে বসে একটু কাঁদতে। আর সেই তুমি দুই মিনিটের জন্য আমার জীবন থেকে দুইটা বছর কেড়ে নিলে। সাথে কেড়ে নিলে বাবার স্বপ্ন,মায়ের আশা,বন্ধুর বিশ্বাস, এলাকার সম্মান,ছোটদের ভালবাসা। জানো তো কারো ভালবাসায় আঘাত দিলে কেউ কখনো সুখী হতে পারে না। ” কথা বলতেই আমার চোখ দিয়ে জল পড়ছিল আর তনু শুধু ছোট করে, ” সরি” বলে ছিল।

” আচ্ছা তনু 019######85 এটাই তো তোমার স্বামীর নাম্বার তাই না। ” আমার প্রশ্নে তনু অনেকটা চমকে গেল। আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ওর সামনে ফোন দিলাম।

” হ্যালো মিস্টার অর্নব, আপনি তো তনুর হাসবেন্ড তাই না। আমি তনুর পুরাতন প্রেমিক বলছি। আমাদের প্রেমটা নতুন করে জেগে উঠেছে। নিজের চোখে দেখতে চাইলে চোখ রাখুন মোবাইল স্কিনে। একটা সেলফি পাঠাচ্ছি। আর হা, প্রেমিক কিন্তু আমি একা না, আরো অনেক আছে। ” বলেই ফোনটা কেঁটে দিলাম।

আমি ফোন দেওয়ার সময় তনুর আমার পা ধরে রেখে ছিল। এখন শুধু কান্না করছে । ” দেখলে তো বিশ্বাসের ঘর ভাঙ্গলে কেমন লাগে? আজকে আমার প্রতিশোধ পূর্ণ হয়েছে। তোমার ভিতরের অহংকার মরেছে। একটা সুন্দর মনের জন্ম হয়েছে। ” তনু শুধু কেঁদেই চলেছে। আমি তনুকে দাড়া করালাম।

” আমি তোমার স্বামীকে ফোন দেই নি। চিন্তা করো না তোমার এই কর্মকান্ড কেউ জানবে না। ভালবাসতে তো মা বাবা শিখিয়েছে তাই তোমাকে ভালবেসেছি। এখন সেই ভালবাসার অপমান কিভাবে করবো? এসে ছিলাম তোমাকে শাস্তি দিতে তবে তোমার মন বর্তমানে বুঝতে পেড়েছে নিজের ভুলটা। তাই আর তোমার কোন ক্ষতি করলাম না। ভাল থেকো। ” কথাটা শেষ করে আর তনুর দিকে তাকাই নি। ওর মনের ময়লা মুছে গিয়েছে সেটাই বড় কথা। বাবা মায়ের ভালবাসাটা আর হয়ত ফিরে পাবো না। ফিরে পাবো না এলাকার ভদ্র সেই ছেলে রাজকে। তাই না হয়, হারিয়ে যাওয়া যাক অজানা নতুন কোন অধ্যায়ে।

নদীর পাড় বসে আছি, হাতে দুই টাকার একটা ব্লেড চকচক করছে। বাতাসে এলোমেলো করে দিচ্ছে সব। নিজের সামনে সব আলোক রশ্মি থাকতে আমি অন্ধকারে স্বপ্ন দেখছি। হঠাৎ কাধেঁ কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। ফিরে তাকিয়ে দেখি সে আমার বন্ধু দীপ।তখন দীপ বলল, ” মারা যাওয়া খুব সহজ শাস্তি তাই এর থেকেও ভয়ংকর একটা শাস্তি নিতে পারিস আর সেটা হলো বাকি জীবন আঙ্কেল আন্টির দেখাশোনা। তোকে আমি জানি আর চিনি তাই বলছি, অন্ধকারে না হারিয়ে আলোতে ফিরে যা। এখনো অনেকে তোর অপেক্ষায় রয়েছে। ভালবাসি তোরে রাজ,ভালবাসি আমরা।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত