বৃষ্টিভেজা একটি রাত

বৃষ্টিভেজা একটি রাত

বিকেল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। পলাশ আজ গিয়েছিল টাঙ্গাইলে, ব্যবসা’র কাজে প্রতি সপ্তাহেই টাঙ্গাইল যেতে হয় তাকে। ফেরার সময় গাড়িতে ওঠার কিছুক্ষণ পর থেকেই বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমেছে। পলাশ জানালা দিয়ে হাত বের করে বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটাগুলো ধরছে।

শাহবাগ এসে পলাশের মনে হল এরকম একটা বৃষ্টির রাত নষ্ট করা যাবে না, আজ রাতের আয়োজনে ভুনা খিচুরি না হলে চলবেই না।

ওয়েদার টা ভুনা খিচুরির জন্য একদম পারফেক্ট। তাছাড়া বাড়িটাও একদম ফাঁকা, মা-বাবা সপ্তাহ খানেক আগেই গিয়েছে গ্রামে।

এরকম একটা সুযোগ পেয়ে সে হাতছাড়া করবে কেন?
দেরি না করে সুবর্ণাকে ফোন করল পলাশ।
হ্যালো, কোথায় তুমি?

— আমিতো এখনো অফিসে।
— কি বল, ছয়টা বেজে গেছে এখনো তুমি অফিসে, আজ কি বাড়ি ফিরবে না নাকি?
— আমার বেরুতে আরও ঘন্টা খানেক দেরী হবে, অনেকগুলো কাজ পড়ে আছে এখনো, একটা চেকের কোন হদিসই করতে পারছিনা, হিসেব মিলছেই না।
— আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে এসো, শোনো গাড়িতে উঠে জানালা বন্ধ করে দিও কিন্তু।
— ঠিক আছে।
— গাড়িতে উঠেই আমাকে কল কোরো কিন্তু।
— আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
— আচ্ছা রাখছি।

পলাশ ভেবেছিল এতক্ষণে সুবর্ণা বোধহয় বাড়ি ফিরেছে। কিন্ত বেচারি কাজের ব্যস্ততায় ডুবে আছে। ভেবেছিল ফোন ধরলেই বলবে আজকের ওয়েদার টা দেখেছো, আজ কিন্তু ভুনা খিচুড়ি রাঁধবে। কিন্তু তা তো আর হচ্ছে না, সুবর্ণার বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হবে তা সে বুঝতেই পারছে। কিন্তু তাই বলে এমন একটা রোমান্টিক ওয়েদার সে মিছে যেতে দিবে কেন?

গাড়ি থেকে নেমেই পলাশ সোজা মাংসের দোকানে গিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনে রিক্সায় উঠল। বাড়ির সামনের দোকান থেকে চাররকম ডাল নিয়ে বাসায় ঢুকল।

বাসায় এসে কোনরকম ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে ঢুকে মাংস কষানোর জন্য ধুয়ে মসলা দিয়ে চুলোয় বসিয়ে দিল।
এরপর পেঁয়াজ মরিচ কাটতে শুরু করে দিল।

পেঁয়াজ কাটা সবসময়ই পলাশের কাছে বিরক্তিকর একটা কাজ, কাটলেই চোখ দিয়ে শুধু জল পড়তে থাকে। সে দেখেছে কেজি কেজি পেঁয়াজ সুবর্ণা কেটে ফেললেও তাঁর চোখে একবিন্দু জলও দেখা যায় না, তাহলে তার চোখ থেকে জল পড়তে হবে কেন?

পেঁয়াজ কাটা শেষ করে পলাশ আতব চাল, ডাল ধুয়ে চুলোয় বসিয়ে দিল।

চাল বসিয়ে দিয়ে সালাদের জন্য শসা, টমেটো, আপেল, গাজর, নাশপাতি, পেঁপে, মালটা কেটে নিলো সালাদের জন্য। মিক্সড সালাদ পলাশের খুব পছন্দের।

চালের পানি বলক এলে কষানো মাংস চালের পাতিলে ঢেলে দিয়ে চলে গেল টেবিলে। টেবিলের মাঝখানে ৫টা মোম রেখে দুটি প্লেট, পানির গ্লাস, পানির জগ রেখে আবার রান্না ঘরে চলে আসল, এরমধ্যেই সুবর্ণার ফোন, সে গাড়িতে উঠে গেছে, আসতে আর বেশি সময় লাগবে না।

খিচুড়ির ঘ্রাণে পুরো রান্নাঘরটা ভরে গেছে। পলাশের ইচ্ছে করছে এখনই

একটু খেয়ে নিতে। কেনই বা করবে না, সেই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছে সারাদিন পেটে কয়েক কাপ চা ছাড়া কিছুই পরেনি। পেটটা তার খুধায় চো চো করছে, কিন্তু এখনই খাওয়া যাবেনা।

খিচুরি হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি গামলায় খিচুড়ি বেড়ে টেবিলে রেখে এবার পলাশ সালাদ বানাতে শুরু করল।
শসা, টমেটো, আপেল, গাজর, নাশপাতি, পেঁপে, মালটা, এর মধ্যে একটু তেঁতুল, চিনি, লবণ আর সরিষার তেল মাখতে শুরু করল। খিচুড়ি না খেয়ে থাকলেও তেঁতুল দেখলে কারো জিহ্বায় পানি না এসে পারে? সে অল্প একটু সালাদ মুখে নিয়ে বলে উঠল “ওয়াহ।”

রাত সাড়ে আট টা বাজে ক্রিং ক্রিং কলিংবেলের শব্দ।

পলাশ দ্রুত বিদ্যুতের মেইন সুইচটা বন্ধ করে দিয়ে দরজা খুলে সুবর্ণাকে বলল, তুমি তো খুব অলক্ষণে তুমি আসতেই কারেন্ট টা চলে গেল।

— সুবর্ণা হাসতে হাসতে বলল, তাই তো দেখছি, তাহলে বরং একটা কাজ করি আমি আবার চলে যাই তাহলে আবার কারেন্ট চলে আসবে।

— আরে ধুর! ঘরে ঢুকো। ঘরে ঢুকতেই পলাশ তাড়া দিয়ে বলল যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।

ব্যাগ রেখে সুবর্ণা গেছে ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হতে সে বেশ সময় নিচ্ছে, এদিকে পলাশের আর একমুহূর্তও নষ্ট করার ইচ্ছে হচ্ছে না। সে কিছুক্ষণ পর পর বলছে- ফ্রেশ হওয়া হল না এখনো?
গোসল করছ নাকি?

আরে কি হল? তাড়াতাড়ি এসো।

সুবর্ণা গোসল করতেই চেয়েছিল কিন্তু বার বার পলাশের তাড়ায় সে গোসল না করেই বেরিয়ে এসে বলল, কি হয়েছে বল তো? এতো তাড়া কিসের?

পলাশ বলল, তাড়া দিব না তো কি করবো? এসেই যে গিয়ে ঢুকেছ বের হবার নাম গন্ধ নেই, বস। সুবর্ণা চেয়ারে বসতেই পলাশ মোমবাতি গুলো জ্বেলে দিয়ে, খিচুড়ির ওপরের ঢাকনাটা সরিয়ে দিয়ে বলল ‘সারপ্রাইজ’।

সুবর্ণা একদম চমকে গেছে, চোখ বড় বড় করে সে বলল, এগুলো কে রেঁধেছে?

— কে রেঁধেছে মানে? বাসায় আমি ছাড়া আর কেউ কি আছে?
— তুমি রেঁধেছো? আমি তো জানতাম তুমি শুধু ভাল চা’ই ই বানাতে পারো, রাঁধতেও যে জানো তাতো কেউ বলেনি কখনো।

— নাও নাও খেয়ে নাও, খুধায় পেটটা জ্বলে গেল, সেই দুপুর থেকে না খেয়ে আছি।
— এতো কষ্ট করতে গেলে কেন? আমি এসে করতাম।
— বারে আমার কি একশ টা বউ নাকি? আর তাছাড়া তুমি তো প্রতিদিনই রাঁধো, তোমার কি কষ্ট হয় না নাকি?
— খিচুরি মুখে নিয়েই সুবর্ণা বলে উঠল- বাহ্! তুমি তো অসাধারণ রাঁধো। কে এমন রাঁধতে শেখাল?

— একসময় ভাবতাম জীবনে বিয়ে-শাদী করবোনা, তাই শিখে নিয়েছি, কেউ হাতে ধরে শেখায়নি। রান্নাঘরে মাঝে মাঝে মাকে রাঁধতে দেখতে দেখতে আমারও শেখা হয়ে গেছে।

— সালাদটা কিন্তু সত্যি অনেক ভাল হয়েছে, এরকম সালাদ আমি কখনো খাইনি। আমার স্বামীর কত্তো কত্তো প্রতিভা। শোন চল এক কাজ করি, দুজন মিলে একটা হোটেল খুলে বসি।

— তাতে আমার আপত্তি নেই, “যদি পেঁয়াজ কাটার ভার তুমি নাও।”
পরম তৃপ্তিতে দুজন রাতের খাবার খেয়ে উঠল।

বাইরে আবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে, পলাশ বলল- রাতের খাবার আমি করলেও চা কিন্তু তোমাকেই করতে হবে। আমি বারান্দায় গেলাম, তুমি দু কাপ চা নিয়ে এসো। সুবর্ণা পলাশের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল- কটা বাজে দেখেছো? এত রাতে চা খাবে? ঘুমাবে না?
পলাশ একটা দুষ্ট হাসি হেসে বলল-

“ওতো ভাবছ কেন কাল তো তোমার অফিস নেই। আমিও গোসল করিনি বুঝলে? সারাটা রাত তো এখনো পড়েই আছে।”

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত