পাগলী

পাগলী

আমি তামিম আহমেদ হিমু । দেখতে শুনতে একেবারে ভদ্র ছেলে। আমি গ্রামে বড় হয়েছি। গ্রামের সব কিছু আমার চেনা। আমাদের গ্রামে একটা নদী রয়েছে। সে নদী টা নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। আমাদের গ্রামে একটা মেয়ে ছিল খুব বজ্জাত। আমাকে দেখা মাত্রই তার মনে নদীর মতো জোয়ার সৃষ্টি হত। সে আর আমার দেখা হতো নদী পারাপার হতে। সে একদিন আমাকে নদীর ধারে পেল। আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে হাঁটতে লাগল। বান্ধবীর সাথে কি যেন বলছিল। আমি কিছু টা লজ্জা পেয়েছিলাম। আমার ইচ্ছা করছিল দাঁড় করিয়ে গালে একটা থাপ্পড় দিতে।

আমি আজ বাণিজ্য মেলায়.এসেছি । আমি একটা চেয়ারে বসলাম। সেখানে বসে বসে আইসক্রিম খেতে লাগলাম।
সে মেয়েটা কেও দেখলাম। আমি খুব অবাক হলাম। মেয়ে টা ফুচকার সাথে আইসক্রিম সহ আর কত কিছু খাচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম মেয়েটা কি রাক্ষস? এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটা চলে গেল। দোকানদার ওয়ালা আমাকে একটা ডাক দিল। আমি উনার সামনে গেলাম। তিনি আমাকে বলতে লাগলেন ” এক আপু আপনার নাম করে অনেক কিছু খাইছে তার টাকা আপনি দেন। ”
আমার কি যে রাগ উঠেছিল। তারপর আমি বললাম ” কোন মেয়ে? ”
উনি দেখালেন সে মেয়েটা। আমার কি যে রাগ উঠেছিল। তারপর টাকা দেওয়ার জন্য মানিব্যাগে হাত দিলাম। দেখি মাত্র ৫০ টাকা। কিন্তু বিল ৭০ টাকার। তারপর ২০ টাকা মাফ দিয়ে চলে আসলাম। আমার সামনে একটা ফুলের টপ ছিল সেটা লাথি দিয়ে ফেলে আসলাম। কি কপাল টা আমার নিজের পায়ে নিজে আঘাত পেলাম।

আমি ভার্সিটি তে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হলাম । বাসের জন্য অপেক্ষা করলাম। অনেক সময় পর একটা বাস আসল। আমি বাসে উঠতে যাব ঠিক সে সময় দেখলাম সে মেয়েটা। আমি যেই সীটে বসলাম ঠিক সেই সীটে দেখি মেয়েটা বসল। আমার কাছে বসে আমাকে বলল ” ভাড়া টা দিয়ে দিবেন। আমার কাছে ভাংতি নাই। ”
আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম ” টাকা নাই যেমন বাসে উঠো কেন?
সে বলল ” আমাকে দেখে। ”
তখন কিছু বললাম না। ভাড়া টা আমি দিয়ে দিলাম। মেয়েটা বাস থেকে নেমে যাবে। আমার কলেজ অনেক দূর। বাস থেকে নামার সময় বলল ” আমার জন্য অপেক্ষা করবেন ? ”
আমি মুচকি হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম ” আমার এসব ঢং ভালো লাগে না। ” মেয়েটা মুখ ভেংচি দিয়ে নেমে গেল।
ভার্সিটি ছুটির পর বাস দিয়ে নদীর পাড়ে নামলাম। ও মা। সেই মেয়েটা। আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তো পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম। আমি ধীরে ধীরে মেয়েটার কাছে আসলাম। আসতেই মেয়েটা আমাকে বলে ” মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি নাই? ” সারাজীবন কি শুধু বোকা থেকে যাবে। আমার জন্য একটু চালাক হতে পারবে না? ”
আমি মাথায় হাত দিয়ে বোকা ছেলের মতো চলে আসলাম। মেয়েটা আমার প্রতি খুব বিরক্ত হল।

আমি আমার বন্ধুদের সাথে একটা গ্রামে ঘুরতে গেলাম। সেখানে যাওয়ার পর অনেক কিছু দেখলাম। ছোট ছোট শিশু খেলাধুলা করছে। বড় বড় মেয়েরা ঘুরাঘুরি করছে। পিছন থেকে কে যেন আমাকে একটা ডাক দিল। আমি পিছনের দিকে থাকাতেই দেখলাম সে মেয়েটা। আমার কাছে এসে বলে ” আপনি আমাদের গ্রামে কেন এসেছেন ? আমাকে দেখতে বুঝি ? আমাকে দেখার কি আছে। আগামীকাল কে আমি তো আপনাদের গ্রামের দিকে স্কুলে যাব। ”
আমি ওর দিকে খুব কঠোর ভাবে তাকিয়ে তাকলাম। ও বুঝতে পারছে। আমি খুব বিরক্ত হলাম। তাই সে বলল ” আচ্ছা যান সরি। ”
মেয়েটা আমাকে বলল
” আমড়া খাবে? ” আমি বললাম না।
তারপর দেখি মেয়েটা গোমড়া মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকল। আমার দেখে খুব মায়া হলো। আমি বললাম ” ঠিক আছে দেও। ”
মেয়েটা খুব খুশি হলো। আমার সাথে সাথে কিছু জায়গা হাঁটল। তারপর আমাকে বলল ” আম্মুর সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিব। আমার সাথে চলেন। ”
আমি গলা দিয়ে মুখের পানি গিলতে লাগলাম। মেয়েটা আমাকে ভয় পাইয়ে দিল। আমি খুব ভয় পেলাম। তারপর আমি বললাম ” না না আমার কাজ আছে আমি বাড়িতে যাব। ” মেয়ে টার দেখলাম মন খারাপ হয়ে গেছে। বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।

আমি টাউনে আসলাম। একটা টিশার্ট কিনার জন্য। অনেক টিশার্ট দেখলাম একটাও পছন্দ হয় নি। কি যে করি মনে মনে ভাবতে লাগলাম। নিজে একটা টিশার্ট এর দোকান দিব। মার্কেটের একটু ভিতরে গেলাম। ভিতরে যেতেই ভালো করে একটা ক্রাশ খেলাম। আরে সেই মেয়ে টা। আজ ওকে খুব ভালো লাগছে। মেয়েটা হঠাৎ আমার চোখেব এতো সুন্দর কিভাবে হলো? আমি তো বুঝতে পারলাম না। আয়না দিয়ে একবার আমি তাকালাম। দেখে নিলাম আমি তামিম কি না। আমি তো ঠিক আছি। আমি দেখতে একেবারে তামিম এর মতো। আমি তামিম। এখন বুঝতে পারছি আমি মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেলাম। আমি চুপি চুপি মেয়েটার কাছে গেলাম। মেয়েটা আমাকে দেখে বলল ” আপনি কখন আসলেন? ”
আমি বললাম ” একটা টিশার্ট কিনার জন্য আসলাম। ”
মেয়েটা এই কথা শুনে আমার কাছ থেকে চলে আসল। অনেক সময় পর মেয়েটা আমার কাছে আসল। এসেই আমাকে একটা ব্যাগ দিয়ে দৌড় দিয়ে চলে আসল। আমি ব্যাগ খুলে দেখলাম টিশার্ট। আমি তো গালে হাত দিলাম। কি ফাজিল মাইয়া আমাকে টিশার্ট উপহার দিয়ে চলে গেল। আমি মেয়েটাকে ডাক দিলাম। কিন্তু মেয়েটা শুনে নি।

আমি রাতে ফ্যানের দিকে চেয়ে আছি। ফ্যান তার মতো করে ঘুরছে। আমি ভাবতে লাগলাম। মেয়েটা দিন দিন আমার কাছে বিশেষ মানুষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেলাম। আজ মেয়েটা কে আমি একটা কথা বলব। মেয়েটা খুব খুশি হবে। হয়তো আমাকে ভালবাসার বন্ধন দিয়ে জড়িয়ে নিবে। আমি এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকাল বেলা নদীর পাড়ে বসে তাকলাম। অনেক মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু সেই মেয়েটা শুধু আসছে না স্কুলে যাওয়ার জন্য। সকালবেলার মিষ্টি বাতাসে আমার চুল গুলো উড়ছে। আমার খুব ভালো লাগছে। সেই মেয়েটা তাকলে হয়তো আমার অনেক ভালো লাগত। সে নেই আমার আর দাঁড়াতে ভালো লাগছে না। সে নেই বলে নদীর পানি ঢেউ দিচ্ছে না। সে নেই বলে মাঝি
মুচকি হাসি দিচ্ছে না। আমি এখন বুঝতে পারছি। সে আমার কাছে কি ছিল। তার মায়াবী মুখ টা আমার কাছে ভেসে উড়ছে। কি পাগলি মেয়ে ছিল। এভাবে প্রায় ১ বছর হয়ে গেল মেয়েটি আসে নি।
আমি একদিন রাস্তায় বের হলাম। হঠাৎ মেয়েটাকে দেখতে পেলাম। আমি মেয়েটা কে দেখে দৌড় দিলাম। মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম ” কি রে পাগলি আপনি কই ছিলেন?
আপনাকে ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগছিল না। আমি আপনাকে অনেক মিস করছি। ”
মেয়েটা মাথা হাতিয়ে বলে ” কে আপনি? ”
আমার মাথা টা ভেংগে পড়ল। আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। মেয়েটার সাথে একটা ছোট ভাই ছিল। সে আমাকে বলল ” আপনার নাম তো হেলাল। আপনার ছবি আমি আমার এ বোনের কাছে দেখেছি। আমার বোন টা আপনাকে অনেক ভালবাস তো। প্লিজ আমার বোন টাকে মাফ করে দিবেন। আমার বোনের মাথায় সমস্যা আছে। এখন ও কিছু মনে রাখতে পারে না। ভালো থাকবেন ভাইয়া।

রাতের বেলা আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম। আমাকে কে ডাকছে। হ্যা। ডাকছে সে মেয়েটা। মেয়েটার মুখের মায়া আমার চোখের সামনে ভেসে উড়ছে। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাকে আমার খুব প্রয়োজন। তাকে আমি একটা ডাক দিলাম। সে শুনতে পায় নি। আমার বুকের ভিতরের হৃদয় টা ভেংগে পানি হয়ে যাচ্ছে। আমার ঘুম টা ভেঙে গেল। এই নিশি রাতে আমি বাহিরে গেলাম। বাহিরে গিয়ে একটা চেয়ারে বসলাম। হাতে একটা সিগারেট নিলাম। সিগারেট খেতে খেতে তাকে ভুলে যেতে লাগলাম।কিন্তু আমি ভুলতে পারি নি। আমি কান্না আটকাতে অনেক চেষ্টা করলাম তবুও চোখের পানি চলে আসল।
ভালো থেকো পাগলী।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত