অনেক সময় হয়ে গেল দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু মহারানীর আসার কোনো নাম নাই। দাঁতে দাঁত লাগিয়ে চারদিকে চেয়ে আছি। চশমা টা খুলে পরিষ্কার করলাম। একটা বাস আসল। তার দিকে চেয়ে রইলাম। না মহারানী আসে নি। ইচ্ছা করছে বাসের চাকা টা খুলে রাস্তার ধারে ফেলে রাখি। বাসের চাকা টা খুলে লাভ নেই। তবুও মেয়েটি আসবে না। আজ আসুক না। তাকে মজা দেখাব। মোবাইল টা বের করলাম। একটা গান দেখতে লাগলাম। আরমান আলিফ এর গান দেখতে লাগলাম। হঠাৎ অধরা আমাকে এসে বলে –
— তুমি এখানে বসে বসে গান দেখো ? আমি ভাবলাম। তুমি আমার জন্য পিচ্চি পিচ্চি পোলাপান নিয়ে বসে থাকবে।
— পিচ্চি পিচ্চি পোলাপান নিয়ে আমি কি করব ? তাদের কে কি দাওয়াত খাওয়াব? তাদের কে কি কোলে বসিয়ে আদর করব?
— ইশ! এমন ভাবে বলছ কেন ? আজ জানো কি দিন?
আমি অবাক হয়ে অধরার দিকে তাকালাম। দেখলাম তার কপালে কিছু লেখা আছে কিনা। তা তো দেখতে পাই নি। মনে মনে আঙুল চুষে ভাবতে লাগলাম। আজ কি দিন। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোনো কিছু ওই খুঁজে পাই নি।
আমি বললাম ” ও বুঝতে পারছি। ” অধরা ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে চেয়ে বলে ” আজকের এই দিনে আমরা একটা শিশু কে রক্ত যোগাড় করে দিয়েছিলাম। এই শিশু কে আজ আমরা দেখতে যাব। শিশু টা কেমন আছে। আমি তো অধরার উপর খুব রাগ করছিলাম। কিন্তু রাগ করে তাকতে পারে নি। আমি হেসে হেসে বললাম ” তুমি এক জিনিস মাইরি।”
অধরা আমার মাথায় একটা থাপ্পড় দিল। আমি লজ্জাশরম ভুলে বললাম ” তোমার কি হয়েছে গো। আশেপাশে মানুষ দেখো না । দিন দিন কিন্তু অনেক ফাজিল হচ্ছ। ”
অধরা কিছু বলল না। চোখ দিয়ে বুঝিয়ে দিল। পরে বুঝাব।
শিশুটা কে দেখতে গেলাম। শিশুটা কে অধরা মায়া করল। অধরা দাঁত বের করে হাসল। দুই টা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে অধরার সাদা দাঁত দেখা যাচ্ছে। কি সাদা দাঁত। ধ্যাত। আমি আবার অধরার প্রেমে পড়ে গেলাম। অধরা দাঁতের প্রেমে পড়ে গেলাম। হয়তো পানি খাওয়ার সময় পানি টাও দাঁতের স্পর্শ পেয়ে
আনন্দিত হবে। অধরা আমার দিকে চেয়ে বলে ” গাধার মতো করে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ” বসতে পারো না। ”
আমি মনে মনে বললাম ” অধরা তুমি যদি আমার প্রেমিকা না হইতে তাইলে তোমাকে বাঘের কাঁচার ভিতর রেখে বাঘিনী বলে বিক্রি করে দিতাম। ”
অধরা এবার একটা হাসি দিয়ে ছেলেটা কে বলল ” কাল থেকে তুমি বাসায় চলে যেতে পারবে। ”
ছেলেটা এই কথা শুনে অধরা কে জড়িয়ে ধরল। ভালবাসার বন্ধনে আপন করে নিল।
আমি আর অধরা একটা রিক্সায় ঘুরাঘুরি করে বাসায় চলে যেতে লাগলাম। আমার বাসা টা একটু দূর। অধরার বাসা খুব কাছে।
আমি মিনমিন করে বললাম ” ছেলেটা সাথে তুমি হেসে হেসে কথা বললে কেন? ”
— হিংসে হইছিল বুঝি?
— হিংসে হবে না কেন? ছেলেটা যদি তোমার প্রেমে পড়ে যায়। তখন কি হবে? আমি কি বনে গিয়ে ঘোড়ার ঘাস কাটব।
— তুমি এমন একটা ছেলে। তোমাকে দিয়ে অন্তত ঘোড়ার ঘাস কাটানো যাবে না। তবে তোমাকে লেজে বেধে মাট ঘুরানো যাবে।
চুপ হয়ে বসে থাকবে নাকি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।
আমি কিছু বললাম না। আজকাল রাতেবেলা কুকুর কে দেখেও এতো ভয় পাই না যে ভয় অধরা কে দেখে পাই।
আমি সকাল বেলা ঘুমিয়ে আছি। এমন সময় দেখি অধরা ফোন করল। অধরা ফোন দিয়ে আমাকে বলে তার জন্য আইসক্রিম নিয়ে যেতে। ইশ! মন টায় কয় কি করতে? এতো সকালবেলা আমি তার জন্য আইসক্রিম নিয়ে যাব। এতো ভালবাসা। আমি দাঁত ব্রাশ করতে করতে আইসক্রিমের দোকানে গিয়ে আইসক্রিম নিয়ে অধরার বাসার সামানে গেলাম। অধরা কে একটা ফোন দিতেই ইঁদুরের মতো দৌড়াঁতে দৌড়াঁতে আসল। এসেই আমার হাত থেকে আইসক্রিম টা নিয়ে নিল। আইসক্রিম নিয়ে বাসায় চলে যেতে লাগল। আমি মিনমিন করে বললাম ” আমাকে নাস্তা দাও।”
আমি বলার সাথে সাথে আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল। যেমন আমি বলছি আইসক্রিমের টাকা দাও। অধরা কিছু না বলে বাসায় চলে গেল। আমি শুধু চলে যাওয়া টা দেখলাম। আমি মুখ ঘুরিয়ে চলে আসতে লাগলাম। এমন সময় দেখি অধরা আমাকে ডাক দিয়ে বলে ” তোমার কফি খেয়ে যাও। ”
আমি হেসে হেসে বললাম ” দাও খেয়ে যাই। ” মুখে খাওয়ার পর দেখি চিনি কম হয়েছে। আমি হেসে হেসে বললাম ” আয়না তো দিন পাচঁ বার দেখো। কফিতে চিনি কম হয়েছে এইটা ভালো করে দেখো নি ? ” অধরা রাগি মুখ দেখিয়ে চলে গেল। আমিও বাসায় চলে আসলাম।
রাতের বেলা শুয়ে আছি। এমন সময় দেখি অধরা ফোন দিল। ফোন দিয়ে ভ্যাএএএএএএএ করে কান্না করতে তাকল। আমি রাগি কন্ঠ দিয়ে বললাম ” কি সমস্যা? ” কান্না করছ কেন ?
অধরা কান্না থামিয়ে বলে ” আমার জ্বর হয়েছে।
— তখন তো খুব আইসক্রিম খেয়ে ছিলে? তাইলে এখন কান্না করো কেন? চুপ হয়ে ঘুমিয়ে থাকো।
— খুব কষ্ট হচ্ছে। নিয়ে আসো না।
আমার মন টা দুর্বল হয়ে গেল। আমি একটা টিশার্ট পরলাম। টিশার্ট টা পড়ে রাতের বেলা হাঁটতে লাগলাম। সারা আকাশ অন্ধকার। শরীরে হালকা বাতাস লাগল। অধরা আমাকে ফোন দিয়ে বলে ” যাচ্ছ তো? ” আমি উত্তরে বললাম ” হ্যাঁ যাচ্ছি।
অধরা হেসে বলে ” তোমার জন্য কফি তৈরি করে রাখব? ” আমি একটু ভাবলাম। তারপর বললাম ” চিনি টা একটু বেশি দিও।
অধরা রাগ দেখিয়ে বলে ” চিনি দিব দূরের কথা লবণ দিয়েও করব না। ”
ওষুধ নিয়ে অধরার বাসায় গেলাম। ওষুধ বাসায় দিয়ে চলে আসলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এতো কিপটা কি মানুষ হয়। কফি টা পর্যন্ত তৈরি করে রাখতে পারল না ।
একটা গাছের নিচে বসে আছি। এমন সময় একটা মেয়ে আসল। মেয়েটা এসে আমাকে বলল ” ভাইয়া আপনার মাথার উপরে কাক। ” আমি উপরের দিকে চেয়ে দেখি মেয়েটা সত্য কথা বলল। আমি একটা মিষ্টি হাসি দিলাম। হাসি দিতেই অধরা দেখে ফেলল। অধরা এসে মেয়েটা কে একটা ধমক দিল। মেয়েটা লজ্জা পেয়ে চলে যেতে লাগল। অধরা আমার চোখের দিকে চেয়ে বলে ” জীবন টা কি তোমার শুধু? তোমার জীবনের সাথে আমার জীবনটাও জড়িত এই কথা মাথায় রেখে মেয়েদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে মনে থাকে যেন। ”
— তুমি এতো হিংসা করো কেন?
— হিংসা করব না। আমি কি অন্য কোনো ছেলেদের সাথে প্রেম করি।
— ইশ! ভালো লাগছে না। নিরব থাকো তো।
— মেয়েটা কে ছিল?
— আমি কি করে বলব? আমি জানি না মেয়েটা কে।
— তাইলে তুমি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।
— আচ্ছা যাও। তাতে আমি কিছু টা রক্ষা পাব। আমাকে জ্বালিয়ে একেবারে শেষ করে দিয়েছ।
অধরা কান্না করে চলে গেল। আমি দেখলাম চোখের পানি মুছে মুছে উড়নো টা একদম শেষ হয়ে গেল।
বিকালবেলা আমি দেখতে পেলাম একটা ছেলে অধরার কাছে বসে আছে। আমি অধরার কাছে গিয়ে ছেলেটা কে তুলে দুই টা থাপ্পড় দিলাম। অধরা দেখি আমার দিকে রাগি মুখ নিয়ে থাকিয়ে বলে ” তোমার সাহস কি করে হলো তুমি এই ছেলে কে মারতে? ”
আমিও চোখে বন্ধ করে বললাম ” ওই ছেলে তোমার কাছে কেন বসল? ওই ছেলে তোমার কাছে বসেছে বলে আমার বুকের ভিতর জ্বলে। আমি সহ্য করতে পারি না। ”
তাতে আমার কি? এই কথা টা অধরা চিল্লানি দিয়ে বলল। আমি নিচের দিকে চেয়ে আছি। অধরা আঙুল দিয়ে আমাকে বলল ” তুমি দিন দিন অসহ্য হচ্ছ। ”
আমি চলে যেতে লাগলাম। এখানে আমি দাঁড়িয়ে থাকি নি। কেন থাকব। না আমি চলে গেলাম।
আমি কোনো দিন সিগারেট খাই নি আজ একটা সিগারেট মুখে দিলাম। মানুষ বলে সিগারেট খেলে নাকি দুঃখ দূর হয়ে যায়। ধোয়া উড়ছে। এক সময় সিগারেট শেষ হয়ে গেল কিন্তু দুঃখ দূর হয় নি।
হঠাৎ দেখতে পেলাম আকাশে বৃষ্টি এসেছে। আমি চেয়ে আছি আকাশের দিকে। আকাশ টা আজ একা। রাতের বেলা যদি চাঁদ না উঠে তাইলে সে অসহায়। বিষণ একা। আমিও তার মতো একা হয়ে গেলাম। এক সময় চোখে পানি আসল। চোখে পানি আসার সাথে সাথে ভূমিকম্পের মতো কান্না চলে আসল। আমি প্রথম এক হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কান্না থামাতে পারি নি। পরে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম। তবুও কান্না থামে নি।
আজ দুই বছর হয়ে গেল। অধরার সাথে কোনো খু্ঁজ খবর নেই। অধরার কথা খুব মনে পড়ত। যে সময় মনে পড়ত তখন মুখে সিগারেট নিয়ে বসে থাকতাম। আমি আর অধরা যে জায়গায় বসতাম সে জায়গায় মনের অজান্তে গেলাম। সেখানে গিয়ে চারদিকে তাকালাম। আমার মুখ টা হাসি হাসি ভাব। মনের চোখে অধরার ছবি ভেসে উঠল। অধরা চোখ বন্ধ করে মাটির দিকে থাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে লজ্জা পাচ্ছে। আমি বাসায় আসলাম। বাসায় এসে বিশ্রাম নিলাম। বিকাল বেলা ঘুরতে গেলাম। কিছু কিছু মানুষ বিকালবেলা ঘুরেফিরে নিজের দুঃখ ভুলার চেষ্টা করে। তাদের দলে আমিও। আমি একটা চেয়ারে বসে গালে হাত দিয়ে বসে তাকলাম। আমার চোখ টা একটা গাছের দিকে গেল। আমি খুবই অবাক হলাম। মেয়েটা দেখতে অধরা মনে হচ্ছে। তাইতো অধরা। অধরা কি চায়। অধরা আমার কাছে আসল। এসে আমাকে বলে –
— খুব ভালো আছো? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে।
— দেখে যখন ভালো আছি মনে হচ্ছে তাইলে জিজ্ঞাস করছ কেন?
— না। এমনি। কোথায় ছিলে এতো দিন? আমার কথা কি তোমার মনে পড়ে নি?
— কেন মনে পড়বে? তুমি তো ভালো আছো।
— কেমন ভালো আছি। সেটা তো আমি জানি। আমার উপর এতো অভিমান করে আমাকে এতো কষ্ট দিলে কেন?
— আমি কারো উপর অভিমান করে নি। সে অধিকার আমার নেই। যদি থাকতো তাইলে কোথাও হারিয়ে যেতাম না। খুব কাছে কাছে থাকতাম।
— এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে। খুব ভালবাসি বলেই তো এতো কষ্ট আমাকে দিচ্ছ।
— আমাকে ভালবাসো?
— আগে ভালবাসতাম। এখন ভালবাসি না। এখন তোমাকে ধরে মারতে ইচ্ছা করছে। মাইর খাবে?
— আমাকে যদি মেরে শান্তি পাও তাইলে আমাকে মেরে মেরে একেবারে আহত করে পেল। তাইলে তোমার সেবা টা পাওয়া যাবে।
— ইশ! বাবুর শখ হয়েছে কত দেখো।
— যাও আমার সামনে থেকে যাও।
— যাব না। তুমি কি করবে?
— কিছু করতে পারব না। সেটা তুমি ভালো করে জানো। তাইতো এই কথা টা বলছ।
— ভালবাসি বুঝলা।
— জ্বী। বুঝলার। এবার চলো হাঁটি।
দু’ জন কানে একটা হেডফোন লাগিয়ে রাস্তায় হাঁটতে তাকলাম। একটা গান ছাড়লাম তাও আবার নজরুল সংগীত। দু’জন দাঁত বের করে হাসলাম। হয়তো দু’জন এক হয়েছি বলে। আমি ভাবতে পারে নি আমরা দু’জন এক হতে পারব। আমি অধরার একটা হাতে ধরলাম। অধরা প্রথম হাত টা সরিয়ে নিল। আমি প্রথম মন খারাপ করলাম। তারপর একটা হাসি দিলাম। কারণ অধরা নিজে আমার হাত টা ধরল।