গাল আর কানের উপর আচমকা বাবার দেওয়া একটা খেয়ে পুরো মাথা ঝিমঝিম করতেছে!কিন্তু বুঝতেই পারলাম না চড় মারলো কি কারণে!
-বেয়াদব!তোকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি!
-আমি আবার কি করলাম!
-কি করলি মানে!মনিকে কি করেছিস?
-আমি তো কিছু করি নি।
-কিছু করিস নি মানে!না জানি তুই আর কতো মেয়েকে এমন করেছিস।আমার ভাবতেই লজ্জা হয় তুই আমার ছেলে?
-মনির সাথে তোর সম্পর্ক কেমন?
-বেষ্ট ফ্রেন্ড।
-ও কেমন মেয়ে?
-খুব ভালো মেয়ে?
-ওর কারো সাথে রিলেশন আছে?
-না বাবা।ও খুব ভালো মেয়ে রিলেশনে জড়ায় না।
-তাহলে তুই এমন করলি ক্যান?
-কি করেছি বলবে?
-সেদিন তোকে মাহাবুবের বাসায় পাঠাইছিলাম যেদিন বাড়ি ফিরতে পারিস নি ঝড়ো আবহাওয়ার কারণে?
-হুম তো।
-সেদিন তোর মাহাবুব আংকেল আর ঝুম আন্টি কোথায় ছিলো?
-বাড়ি ছিলো না।উনার ভাই অসুস্থ ছিলো ওখানে গিয়েছিলো আর আমার মতোই প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য আটকা পড়ে গিয়েছিলেন!
-সেদিন কে ছিলো বাসায়?
-মনি ছিলো।
-একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে আর একটা মেয়ে এক রাত্রি খালি একটা বাসায় থাকবে আর তাদের মধ্যে কিছু হবে না।এটা হয় নাকি!
-আরে বাবা আমি ওকে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ভাবি।ইনফ্যাক্ট তুমি-আম্মু আর মাহাবুব আংকেল ও ঝুম আন্টির মধ্যে যেমন ফ্যামিলি বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমরাও তেমন বন্ধু।আর আমাদের বন্ধুত্বটা তোমাদের কারণেই হয়েছে!
-তাহলে ওই মেয়ে প্রেগন্যান্ট হলো কিভাবে!
-আমি জানি কি!
-ওই দিনের পর আজ এতোদিন পরে ওই মেয়ে বমি করছে আর পেট দেখলেই নাকি প্রেগন্যান্ট বুঝা যায়!
-এই সমস্যা তো অন্য কারণেও হতে পারে!
-কিন্তু মনি বলছে তুই নাকি সেদিন ওর সাথে অনেক ক্লোজ হয়েছিলি!
-আরে না বাবা।আমি এমন কিছুই করিনি।তুমি ওকে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে বলো।
-ও নাকি বেবি চেক দিয়ে টেস্ট করেছে আর নাকি ওটায় প্যাগনেন্ট বুঝাইছে!
-ওটা অনেকসময় ভুল হয় তো বাবা।
-চুপ কর!ও চারবার চেক করে তারপর মাহাবুবকে জানাইছে আর এই ঘটনা মাহাবুবই আমাকে বলছে।ওই মেয়ের যায়গায় অন্য কেউ হলে আজকে হয়তো আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকতো না তার!এখন তোর সাথে ওর বিয়ে দিয়ে আমার বন্ধুত্ব রক্ষা করতে পারলেই হয়।
-আমার আর কি করা ফাঁইসা তো গেছিই!
আমি এখন বসে বসে ভাবছি যাহ্ বাবা একবাসায় দুটি ভিন্ন রুমে দুটি ছেলেমেয়ে থাকলে আবার কিছু না করেও মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় নাকি!
তারপর একপ্রকার জোর করেই বিয়ে করাই দিলো!
আমি বাসর ঘরে ঢুকলাম।ধুর মুডটাই খারাপ হয়ে গেলো!এই প্যারা দেওয়া মাইয়ার সাথে থাকতে হইবো।দেখলাম মনি খাটে বসে আছে।ধুর আমি সোফায় ঘুমাবো।
-ওখানে ঘুমাচ্ছো কেনো?খাটে আসো।
-তুই ঘুমা খাটে।তোর সাথে একরুমে না থেকেও তুই প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছিস।এখন যদি এক বিছানায় থাকি তাহলে কি জানি হয়!
-কি!বিয়ে করা বউকে তুই করে বলা!
-বউ হওয়ার আগে তুই আমার বন্ধু ছিলি।
-এখন তো বউ।আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক!
-ধুর স্বামী-স্ত্রী!এই বিয়েতে আমার মত ছিলো না।বাজে মাইয়া।ফালতু মাইয়া।কার লগে ফষ্টিনষ্টি করে এখন আমার গলায় ঝুলতে আইছে আর বাচ্চা নাকি আমার।যতসব নষ্টা মাইয়া।
কথাগুলো রাগেই বলেছিলাম কারণ আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম আর ওকে পটানোর জন্য মনির থেকে তথ্য নিয়েছিলাম কারণ ও মনির বান্ধবী ছিলো।
আমার কথাগুলো শুনার পর মনি খাট থেকে নেমে এসে আমার পাঞ্জাবির কলার ধরে বললো, নয়ন তুই আমাকে বলতে পারলি এগুলা?তোকে পাওয়ার জন্য যদি অভিনয় করার নাম যদি নষ্টামি হয় হ্যা তাহলে আমি নষ্টা!
বলেই ও আমার কলার ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে কান্না করতে লাগলো।
-অভিনয়?
-হুম।অভিনয় বিশ্বাস কর নয়ন শুধু তোকে পাওয়ার জন্য এটা করতে হয়েছে!
-কি করতে হইছে?
-তৈলাক্ত খাবার বেশি খেলে আমার বদ হজম হয়।সেদিন ইচ্ছে করে নুডলসে অতিরিক্ত তেল দিয়ে খেয়েছি আর এতে আমার পেটে গ্যাস পাম করে আর তা থেকেই বদ হজম হয়ে বমি আসে তখন বাবা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞাস করে কি হয়েছে?আমিও বাবাকে মিথ্যে বলি যে তোর জন্যই এসব কিছু।আর বেবিচেক পেপারগুলো নিয়ে হুদাই বাথরুমে ফালাইয়া দিয়া এসে বলি আমি প্রেগন্যান্ট আর গ্যাস পাম করার কারণে পেট ফুলে ছিলো একটু তাই বাবাও সব কিছুকে সত্য মনে করে তোর মা মানে আমার জুলি আন্টিকে ফোন করে সব বলে আর উনিই তোর বাবাকে বুঝিয়ে বলে সব কথা।হাসিব কাকা আর বাবা নিজেদের বন্ধুত্বের স্বার্থে আমাদের বিয়ে দিবে এটা আমি শিওর ছিলাম।
-ক্যান করলি এমন?বল?তুইতো জানতিস আমি তমিস্রকে ভালোবাসি।
-হ্যা জানতাম।আর এই জন্যই এই অভিনয় করেছি যাতে তুই অন্য কারো না হয়ে যাস।
-কেনো আমি তো তোকে শুধুই বন্ধু ভাবি।
-আমি যদি তাই ভাবতাম তাহলে পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেয়েও তোর প্রাইভেট ভার্সিটিতে এসে ভর্তি হয়ে তোকে বলতাম না আমি ওখানে চান্স পাইনি!
-তাতে কি বন্ধুত্বের জন্যও এটা করা যায়।
-তুই অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলার সময় তোকে টেনে নিয়া আসতাম না।তুই ভাবতি তোর লুইচ্চামি দেখে আমার অসহ্য লাগতো কিন্তু সেটা না আমি শুধু অধিকার খাটাতে চাইছি এই ভেবে যে তুই শুধু আমার! স্কুল লাইফে নিজের হোম ওয়ার্ক তোকে দিয়ে নিজে মার খেতাম না।তোকে নিজের ভেবে অধিকার দেখাইয়া শাসন করতাম না।শুধু বন্ধু হলে আমি প্রায়সময় এসে জুলি আন্টিকে বাড়ির কাজে হেল্প করে মন জয় করতে চাইতাম না।তোর পাগলামি আর ফাজলামি দেখে অপলক তাকিয়ে হাসতাম না।তোর অবহেলায় আড়ালে কাঁদতাম না।
-আগে বলিস নি কেনো এগুলা যখন তোর হেল্প নিয়ে তমিস্রকে পটাইতে চাইছিলাম তখন?
-ভাবছিলাম তুই ওকে প্রপোজ করে ওকে নিয়ে ভালো থাকলে আমারও অনেক ভালো লাগবে।
-তাহলে এখন ফিরতে চাইছিস কেনো?
-আমি পারি নি!তোকে ভুলে থাকার মিথ্যে চেষ্টা করলেও।প্রতিদিন তোর সাথে বন্ধুর মতো হাসি-ঠাট্টা করলেও রাতে বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে হতো।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করতো নিষ্ঠুর এই পৃথিবী।যাকে পাওয়ার জন্য এতোকিছু করলাম সে কিনা অন্যের হাত ধরে পার্কে বসে থাকে।আমি প্রতিদিন ফিল করতাম তোর শুণ্যতা!এই বুঝি আমার অজানায় হারাইয়া গেলি!
-তোর কষ্ট হতো?
-হুম অনেক।
-তাহলে আর কষ্ট দিবো না।বন্ধুত্বের সুবাদে তোকে কাঁদতে দেয়া যাবে না।বেস্টু বলে কথা!কিন্তু তমিস্রর কি হবে!
আমি এবার বিছানায় বসে দুহাত দিয়ে মাথার চুলগুলা ঘুরাচ্ছি!এমন সময় তমিস্রর ফোন।
-ওই নয়ন।তুই হারামি লুইচ্চা,বাজে কোম্পানির মাল!বখাটে,বিখাউজ!তোর সাথে সব রিলেশন বাদ!পুরো ক্যান্টিনে আজ একটাই আলোচনা হচ্ছে তুই নাকি মনিকে প্রেগন্যান্ট করে দিয়েছিস আর তোর বাবা-মা মানে হাসিব আংকেল আর জুলি আন্টি জোর করে বিয়ে করাইয়া দিছে?ভালো হয়েছে।না হলে আমার সাথেও এমন হতে পারতো কিন্তু তখন আমার আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকতো না!আজ এই মুহূর্ত থেকে ব্রেকাপ।আর কখনো যোগাযোগ করবি না!
কথাটা শুনার পর ইয়ে করে মোবাইল উপরের দিকে ছুড়ে মারলাম আর ওটা একবার সিলিঙে আর একবার মেঝেতে আছাড় খেয়ে চূর্মার হয়ে গেলো!
-কিরে মোবাইল ভাঙ্গছিস কেনো!আমার উপর রাগ করে হলে আমি চলে যাচ্ছি।
আমি ভাঙ্গা মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে আছি!যাহ্!কি করলাম!
-আরে কই যাও!মোবাইল তো খুশিতে উপরের দিকে ছুড়ে মারছিলাম!রাগে হলে তো মেঝেতেই আছাড় দিতাম।খুশিতে কি করতে কি করে ফেললাম বুঝতেই পারছি না!ছুড়ে মারার পর মনে হইলো ভুল জিনিস ছুড়ে দিছি!আর কেউ কি বরকে তুই করে বলে নাকি?তুমি করে বলো।
-রিপিট হলো!কি এমন খুশির খবর!
-তমিস্র ব্রেকাপ দিয়ে দিছে রাগে!
-সত্যি?
-হুম।
-আরেকটা সত্যি বলি?
-কি?
-সব তোমার মা মিসেস জুলিয়া হাসিব মানে আমার শ্রদ্ধেয় শাশুড়ি আম্মার শিখানো প্ল্যান!
-মা!এমন করলো কেনো?
-আমি বানিয়ে বানিয়ে বলেছিলাম তুমি একটা বাজে,ফালতু মেয়ের সাথে লাইন মারো!আর মাও চাইতো আমি এ বাড়ির লক্ষ্মী হয়ে থাকি!তাই মা আমাকে শিখিয়ে দেয় আমার নিষিদ্ধ খাবারগুলা খেয়ে ইচ্ছে করে বদ হজম করাতে।তারপর যে খাবার ভালো লাগে না তা খেয়ে বমি করতে।
-লক্ষ্মী হয়ে এসেছো না পেঁচা হয়ে সে তো দেখতেই পাচ্ছি!
-সে যাই বলো এ বাড়ির বউ তো হলাম!কিন্তু এই কয়েকটা মিথ্যার মাঝে সবচাইতে সেরা সত্যটা হলো ভালোবাসা,তোমায় ভালোবাসি।
-হুম এবার বিছানায় শুয়ে পড়।
-শুবো না।
-কেনো?
-ওইটা বিছানায় কেনো?
-কোনটা?
-সতীন!
-ওহ কোলবালিশ?নিজেই যখন এতো কাঁটা পেরিয়ে এলে ওটাও সরাইয়া দাও নিজ হাতে।
-হুম আমি কিন্তু তোমার সাথে বন্ধুত্বের সেই প্রথম দিন বুঝেছি!
-কি?
-অবিভক্ত!
-কি!
-নয়ন-মনি!
-হাহাহা।হুম একদম।আমিও এখন বুঝেছি তমিস্র জুটি আমার সাথে যায় না।
-কোনটা যায়?
-নয়ন আর মনি!