স্বপ্নের বাসর

স্বপ্নের বাসর

বাসর ঘরে ঢুকেই দেখি বউ উধাও।
সে কি বউ কোথায় গেলো?
সবেমাত্র বিয়ে করে বউ ঘরে আনলাম, শুশুর বাড়িতে মানুষের হুড়োহুড়ির মাঝে বউকে ঠিকমতো দেখতে পর্যন্ত পারলাম না।
ভাবলাম.. বাসরঘরে নিশ্চিন্ত মনে বউকে দেখবো, কিন্তু তার আগেই বউ উধাও!
হায়রে কপাল!

ঊনপঞ্চাশতম বার বিয়ের চেষ্টায় বিফল হয়ে পঞ্চাশতম বারে গিয়ে কোনোরকম আমার বিয়ে হলো।
সে বউ ও কি না আমায় ছেড়ে চলে গেলো? ছোট বেলায় কোনো কিছু হারালে গলা ফাটিয়ে “আম্মা” বলে চিৎকার দিতাম।
আমার ভয়ংকর চিৎকারের শব্দে আম্মা সাথে সাথে হারানো জিনিসটা খুঁজে এনে দিতো। বর্তমান অবস্থায় ও “আম্মা আমার বউ” বলে জোরে চিৎকার দেওয়া উচিত বলে মনে হচ্ছে। চিৎকার দিতে যাবো.. খালি “আম্মা” বলেছি, ওমনি দেখি বউ ওয়াশরুম থেকে বেরুচ্ছে! পুরো চিৎকারটা আর দেওয়া হলো না। সে যাই হোক বউ তো পাওয়া গেল।

বউ আমার দিকে খানিকটা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
:- আপনি..রাতকানা রোগী নাকি? আমাকে আম্মা বলে ডাকছেন কেন?
:- ইয়ে..মানে সেরকম কিছু না। আমি ভেবেছিলাম আপনি বোধহয় চলে গেছেন!
:- চলে গেছেন মানে? ঐ মিয়া আমি কি আমার মা-বাবা ছেড়ে আপনার কাছে আসছি চলে যেতে? গাধা কোথাকার!
:- জ্বি তা ঠিক!
:- হয়েছে আর ঠিক ঠিক করতে হবে হবে না। দাড়িয়ে না থেকে, সব খুলে খাটে এসে বসুন!
সব খুলে খাটে বসবো মানে? বউ এসব কি বলছে? কথাটা শুনে আমার ভীষণ ভয় করছে। কোনোরকম ভয়ে ভয়ে বললাম,
:- স…ব খুলে মানে?
:- আরে গাধা.. আমি আপনার পাগড়ি আর জুতোর কথা বলেছি। সেই কবে বিয়ে হয়েছে এখনো এসব পড়ে আছেন কেন? গরম করছে না নাকি?
:- ওহ তাই বলুন খুলছি.. খুলছি!
:- আর হ্যাঁ.. বাসর ঘরেও রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে আছেন কেন? এখানে এত্তো লজ্জা পাওয়ার কি আছে? ঘরে তো আপনি আর আমি ছাড়া কেউ নেই? রুমাল পকেটে রাখুন!
:- ইয়ে..মানে প্রথম প্রথম তো, তাই একটু লজ্জা লাগছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে!
:- ঐ মিয়া..আপনার কি মনে হয়? আমার কি দ্বিতীয় বাসর হচ্ছে? বকবক না করে চুপচাপ খাটে ওঠে বসুন।

বউ অতি রাগী বুঝতে পারছি। শুনেছি রাগী বউয়েরা নাকি স্বামীদের মারধর পর্যন্ত করতে পারে। এই মূহুর্তে বউয়ের কথা অমান্য করা আমার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। রুমাল পকেটে রাখলাম, বউয়ের সামনে রুমাল ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকতে আমার অতি লজ্জা হচ্ছে। হাত-পা কাঁপছে। অতি লজ্জা পেলে আমার এই সমস্যাটা হয়। এত্তো লজ্জা পাওয়ার অবশ্য যথেষ্ট কারণ ও আছে। ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের সামনে দাড়িয়ে আমি কথা বলতে পারি না, লজ্জায় শরির কাঁপুনি দিয়ে উঠে। কলেজে পড়াকালীন সময়ে একবার বন্ধুদের থেকে প্রায় মণ খানেক সাহস ধার করে কলেজের অতি সুন্দরী মেয়ে ফারিহাকে প্রপোজ করেছিলাম। ফলাফল শূন্যের চাইতে ও খারাপ ছিল। সেদিন ফারিহার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম “ফারিহা আই…আই…আই…। বলতে চাচ্ছিলাম “আই লাভ ইউ” কিন্তু পারছিলাম না। বারে বারে আই এর মধ্যে ঠেকে যাচ্ছিলাম। তার সাথে শরির কাঁপুনি তো ছিলোই। আমার এই টিকটিকির মতো অবস্থা দেখে ফারিহা কষিয়ে গালে থাপ্পর দিয়ে বলল:- আগে “আই লাভ ইউ” পুরোটা ভালো করে মুখস্ত কর। তারপর, প্রপোজ করতে আসিস।

আমার প্রেম করা হলো না কিন্তু গাল লাল হলো। সেদিনি আমার লালগাল ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর কোনোদিন কাউকে প্রোপোজ করবো না। যাইহোক.. বউয়ের আদেশ রক্ষার্থে কাঁপতে কাঁপতে খাটে গিয়ে বসলাম। কিছু একটা বলা উচিত। কি বলবো বুঝতে পারছি না। তার আগেই বউ বলল:-
:- প্রেম-টেম করেছেন এই অবধি?
:- (মুচকি হেসে বললাম) নাহ্। আপনি?
:- বেশি করতে পারি নি। এইতো আট- দশটার মতো হবে।
:- আ..ট দ….শ?
:- কেন কম হয়ে গ্যালো?
:- না..না.. তা হবে কেন!
:- গান গাইতে পারেন?
:- জ্বি মোটামোটি পারি, কিন্তু একটু সমস্যা আছে!
:- ধুর মিয়া সমস্যা-টমস্যা পরে দেখা যাবে, গান শুরু করুন তোহ্!

অনেক ভয় হচ্ছিল! তবুও বুকে খানিকটা সাহস সঞ্চয় করে, চোখ বন্ধ করে, আমি আমার ফাটাবাঁশের বিখ্যাত গলায় সংগীত পরিবেশন শুরু করলাম,
না.না.না… নানানা… নানা
না.না.না… নানানা… নানা
কদম তলায় আমি যাবো না
কদমতলার বংশীওয়ালা গো!
পুরো গান শেষ করার আগেই আমার বউ বলে উঠলো। দোহাই আপনার..দোহাই লাগে.. গান গাওয়া বন্ধ করুন। আর এক লাইন গাইলে আমার সত্যি সত্যি বাসরঘর ছেড়ে পালাতে হবে। এটা কি গান? নাকি ট্রাফিকজ্যাম ?

:- ইয়ে.. মানে..আমি তো আগেই বলতে চেয়েছিলাম গান গাইলে একটু সমস্যা হয়। সমস্যাটা অবশ্য আমার হয় না। যারা গান শুনে তাদের হয়। এর আগে ছোটবেলায় স্যারের অতি রিকুয়েস্টে, ক্লাসে গান গেয়েছিলাম। গানের শুরুতে ক্লাসে উপস্থিতির সংখ্যা ছিলো ৬০ জন, গান শেষ করে দেখি শুধু স্যার আর আমি আছি! বাকি সব উধাও!

:- হয়েছে হয়েছে আপনার কুখ্যাত গলার সুনাম আর বলতে হবে না। এক কাজ করুন, নেচে দেখান। নাচতে পারেন তো?
কথাটা শুনেই বুকের ভেতরতা কেমনজানি নাড়া দিয়ে উঠলো। গান.. তাও জীবনে দু-একবার গেয়েছি কিন্তু সারা জিবনেও একবার ও নাচিনি। নাচ দেখাবো কিভাবে? না করার সাহসটাও হচ্ছে না, যদি রাগের ঠেলায় বউ মারধর শুরু করে? বাসরঘরের দিনি বউয়ের মার খাওয়া কোনো কাজের কথা না। মিন মিন করে বললাম:- নাচতে হবেই?

:- হু নাচতে হবেই, আপনি গান গেয়ে আমার মুড নস্ট করেছেন। এখন নাচ দেখিয়ে মুড ঠিক করবেন। নিন শুরু করুন।
কথাটা বলেই বউ তার মোবাইলের হিন্দি গান ছেড়ে দিল। ফুল ভলিয়মে গান বাজছে।
“ডিজে ওয়ালা বাবু ম্যারা গানা বাজাদে”
কোনো উপয়ান্তর না পেয়ে নাচা শুরু করলাম। খুব সম্ভবত নাচ ঠিকমতো হচ্ছে না। বউ খাটে বসে থেকে হাসছে আর বলছে,
:- হ্যাঁ.. হ্যাঁ হাতটা আরেকটু উপরে। আরে এভাবে না ওভাবে। কোমড় টা আরেকটু দুলবে হ্যাঁ.. হ্যাঁ। আরেহ্! ডানদিকে নাতো বাম দিকে।

বউ নির্দেশমতো নাচার চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না। হাত ঠিকমতো নাড়াচাড়া করতে পারছি না। কোমড়টাও ঠিক এঙ্গেলে দুলাতে পারছি না। হঠাৎ মনে হলো কে জানি চুল ধরে টানছে। ঘুম ভেঙ্গে গেল! চোখ মেলে দেখি আম্মা খাটের পাশে বেশ রাগী চেহারা নিয়ে দাড়ানো। তারমানে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম? যাক্ বাবা… তবুও ভালো ঐ রাগী বউ থেকে তো বাঁচা গেল। খুশিতে একটু মুচকি হাসলাম। কিন্তু আমার এই হাসির স্থায়ীত্ব বেশিক্ষণ হলো না। মা রেগে বললেন,
:- হারামজাদা! বিয়ের দিন ও কেউ ১০ টা পর্যন্ত ঘুমোয়? তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য রেডি হ। তোর বন্ধুরা সবাই বাইরের ঘরে অপেক্ষা করছে।

আম্মার কথা শুনে মনে পড়লো:- আজ তো সত্যিই আমার বিয়ে! বেছে বেছে বিয়ের দিনি এমন একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমার খানিকটা ভয় ভয় লাগছে। বউ যদি সত্যিই, স্বপ্নে দেখা ঐ বউয়ের মতো হয়? কিন্তু হলেও কিছু করার নেই। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে, বিয়ে থেকে আমার রক্ষা নেই। যাই.. আপতত বিয়েটা করে আসি। সবাই দোয়া করবেন বাসরটা যাতে স্বপ্নের মতো না হয়!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত