স্কুলের মিডটার্ম পরীক্ষার শেষের দিন।
পরীক্ষা শেষে সবাই মাঠে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। শান্তা রাশেদ কে খুজছিল। এমন সময় ও দেখল রাশেদ উত্তর বিল্ডিংএর গেট
দিয়ে বেরিয়ে আসছে। শন্তা বলল,
রাশেদ কাল সন্ধ্যায় তুমি আমার বাসায় আসতে পারবা ?
রাশেদ বলল, কেন?
– আরে এসোই না। আসবে?
– আমি তো তোমার বাসা চিনি না।
– আমি জানি।এই নাও এখানে লেখা আছে। কাল এসো কিন্তু।
– আচ্ছা।
শান্তা আর রাশেদের পরিচয়টা বেশ মজার।
বছরের শুরুতে নতুন বই দিবে। বই দেবার শেষে দেখা গেল দুইজন গণিত বই পায়নি।
স্যার দুই জনকেই স্টোর হাউসে পাঠান দুতি গনিত বই আনতে। কিন্তু সেখানে সেখানে দেখা গেল একটা মাত্র গনিত বই…
স্টোর হাউসের দায়িত্বে যে ছিল সে বলল “ বইটা কে নিবে?’’
দুইজনের একজন অন্যজন কে দেখিয়ে বলল “ও কে দিয়ে দিন।’’
অপরজন বলল “ বইটা তুমি নিতে পারো। No problem’’
– It’s ok, take it please.
– তুমি কি আমাকে দয়া দেখাচ্ছ?
– না,না। আমি তো কথাটা ভদ্রতা করে বললাম।
– থাক আর ভদ্রতা দেখাতে হবে না…
– এটা কি ধরনের কথা হল?
– যে ধরনের কথাই হোক বইটা নাও।
– Is this your order or request?
– তুমি যদি মনে আদেশ তবে হ্যাঁ।
– হাহ… ভুল জায়গায় এসেছ,sorry. স্টোর হাউসের দায়িত্বে যে ছিলেন তার দিকে ঘুরে বলল “আঙ্কেল বইটা ওকে দিয়ে দিন।
এই বলে সে বের হয়ে গেল। তার পেছন পেছন অন্য জন বইটা হাতে বের হয়ে বলল “এই ছেলে এই, তুমি আমাকে চেন? তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জানো না। বইটা নিতে বলছি নাও।’’
– আমার তোমার সম্পর্কে কিছু জানার দরকার নাই। একজন ভদ্র মহিলার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তা আমি জানি বলেই এমন কথা বলেছি।’’
– কি!! আমি ভদ্রমহিলা??
এমনভাবেই রাশেদ আর শান্তার পরিচয় ।
এরপর,একদিন ক্লাসে ওদের ইংরেজী স্যার একটা কনভারসেশন ওদের দুইজনকে অভিনয় করে দেখাতে বলেন।
ওই কনভারসেশনটা ওরা এত সুন্দর ভাবে শেষ করল যে কয়েক মূহুর্ত কেও কোন কথা বলতে পারল না। এরপর পুরা ক্লাস এক
সাথে এত্ত জোরে হাততালি উঠল যেন মনে হলো আশেপাশে কোথাও বাজ পড়েছে।
সেদিন রাশেদ আর শান্তা একে ওপরের সাথে কথা বলে । সেই শুরু এভাবেই তারা একে অপরের সাথে মাঝে মাঝে কথা
বলত। এভাবেই কখন যে ওরা নিজেদের অজান্তে ভালো বন্ধু হয়ে গেল তা ওরাও জানল না।
রাশেদ শান্তার বাসায় যেয়ে শুনল যে শান্তার নাকি জন্মদিন। এমন সময় লোডশেডিং হল। শান্তা তখন রাশেদ কেবলল,চল রাশেদ ছাদে যাই।
আকাশে সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। হাল্কা হাল্কা বাতাস বইছে। আর আকাশে যেন বসেছে হাজার তারার মেলা।
ওরা দুইজন ছাদে হাটছে, রাশেদ এক সময় বলে উঠল, আমি ভুলেই গেছিলাম আজ তোমার জন্মদিন।
-আমি জানতাম তুমি ভুলে যাবে কিন্তু আমি এটা ভুলে যাইনি যে তুমি তুমি ভুলে যাবে।
এইকথা বলেই শান্তা হেসে উঠল।
রাশেদ ওর হাসি শুনে ওর দিকে তাকিয়ে থমকে গেল… শান্তা যে এত সুন্দর তা ও আগে কখনই খেয়াল করে নি। রাশেদের
বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। এমন অনুভুতি আগে কখনই ওর হয়নি।
শান্তা হাসি থামিয়ে বলে উঠল, জ়ানো রাশেদ আমার বাবা মাকে আমি কখনই জন্মদিনে পায় না। তারা নিজেদের নিয়ে এত ব্যস্ত। মাঝে মাঝে নিজেকে এত্ত একা লাগে যে কাও কে আপন করে পাশে পেতে ইচ্ছা করে। যে আমার হাতটা শক্ত করে ধরত আর আমার সুখে দুখে পাশে থাকত। আমার সব কষ্ট ভাগ করে নিত……।
রাশেদ দেখল শান্তা কাঁদছে। শান্তার কাধেঁ হাত রেখে বলল, দেখ শান্তা তোমার তো তাও বাবা মা আছে,কিন্তু আমার দেখো কেও নাই তাহলে আমি কাকে বলব? আমি তো তোমাকে দেখেই নিজেকে বুঝ দেই।
শান্তা বলল,তুমি তো আমার কষ্টটা বুঝ। তুমি কী শক্ত করে ধরবে আমার হাতটা? থাকবে চিরদিন আমার পাশে ?
রাশেদ শান্তার পাশে এসে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে শান্তার হাতটা শক্ত করে ধরল। এত শক্ত করে ধরল শান্তার মনে হলো ওর হাতটা যেন ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু ওর এই কষ্ট কোথায় যেন হারিয়ে গেল নতুন এক অনুভুতির আড়ালে।