ছাড়ো । আমায় ধরবে না “।
-“বললাম তো সরি “।
-” সরি বললেই হবে না। আমার সামনে কান ধরতে হবে “।
-“প্লিজ, শাস্তিটা একটু মাফ করে দেওয়া যায় না “।
-” দেওয়া যায়। তবে তুমি থাকো আমি যায় “।
কথাটি বলেই ইরা হাঁটতে শুরু করলো রেহানের বিপরীতে । রেহান কিছু বোঝে ওঠার আগেই দৌড়ে গিয়ে ইরার সামনে হাঁটুটা ভেঙে বসে কান দুটো ধরে বললো,
-“সরি “।
কথাটি শোনার সাথে সাথেই ইরার মুখ আনন্দে চিকচিক করে উঠলো। ইরা ওর হাসিটা লুকাতে গিয়েও পারলো না ।
পাগল রেহান ওদিকে শেষ বিকেলের নরম বালুর উপরে হালকা উষ্ণতায় এখনও বসে আছে। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ইরা তাঁদের
নীরবতা ভেঙে দিয়ে রেহানকে হাত ধরে দাঁড় করালো । রেহানটা সারাক্ষণ বকা খায় ইরার কাছে।
রেহানের মতো বোঁকা,গাঁধা ছেলে নাকি আর একটাও দেখেনি ইরা। রেহান খুব ভালো স্টুডেন্ট বা মেধাবী না। টেনেটুনে কোনোমতে ফাইনাল পর্যন্ত এগিয়েছে। আর ইরাও তেমন ভালো স্টুডেন্ট না। তবে রেহানের চেয়ে শত গুনে ভালো। দুজনের আকাশ কুসুম ভালবাসাটা এক পশলা বৃষ্টি থেকে শুরু হয়েছে ।
সেদিন বড় রাস্তায় কোনো ভীড় ছিলো না । যে যার মতো চলাচল করছিলো । হঠাৎ কোথায় থেকে যেনো বৃষ্টি এসে সব ভিজিয়ে দিলো। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। শুধু একটি ছেলে খুব শান্ত মনে রাস্তার মাঝখানে সাদা দাগের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে । হঠাৎ
পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে থামলো ছেলেটির সামনে । গাড়ি থেকে অত্যন্ত দামী আর সুন্দর একটা জিনিস নেমে আসলো । এ যেনো মেয়ে নয়। বর্ষা ভেজা প্রথম কদম ফুল । যার আগমনেই এই অবাধ বৃষ্টির সৃষ্টি হয়েছে।
মেয়েটি ছেলেটার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-” এক্সকিউজ মি , আমি কি আপনার সাথে ভিজে ভিজে হাঁটতে পারি “?
ছেলেটি মেয়েটির প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না। কারণ ছেলেটি জানে মেয়েটি প্রচন্ড বড়লোক বাপের একটা পাগলী মেয়ে। এরা যখন তখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারে । তাছাড়াও মেয়েটির সৌন্দর্যের সাথে ছেলেটির কোনো মিল নেই।
তার মাঝে বৃষ্টিতে ভিজে ছেলেটিকে ভেজা কাকের মতো দেখাচ্ছে। কোথায় কদম ফুল আর কোথায় কাক। আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে এদের দুজনের মাঝে।
হঠাৎ করে এক সময় মেয়েটি নিজেই থেকে বলে উঠলো,
-“আমি ইরা । অনার্স ৩য় বর্ষ । আপনি”?
ছেলেটি সৌজন্যতার খাতিরে বললো,
-” আমি রেহান। ফাইনাল ইয়ার “।
মেয়েটি মানে ইরা তখন খুব আল্লাদী স্বরে বলে উঠলো,
-” আচ্ছা আপনি কি জন্ম থেকে গোমড়া “।
ছেলেটি অর্থাৎ রেহান ইরার প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না । ইরা আবারও রেহানকে গায়ে
পড়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” আপনি কি কোনো বিষয়ে চিন্তিত নাকি আমার উপর বিরক্ত হচ্ছেন “?
রেহান এবার মুখে মিথ্যে হাসির প্রলেপ এঁকে বললো,
-” আরে নাহ্ নাহ্। বিরক্ত হবো কেনো । আসলে আমি এমনই । কথা কম বলি “।
-” না না মোটেও না। আপনিও আমার মতো কথা বলেন। কিন্তু এখন খুব টেনশনে আছেন। তাই বুঝি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না “।
-” আপনি খুব জিনিয়াস। তাই সহজেই ধরে ফেললেন “।
-” আরে নাহ্ নাহ্। এটা বুঝতে জিনিয়াস হওয়া লাগে নাকি”।
রেহান তখন প্রথমবার ইরার দিকে গুরুত্ব নিয়ে তাকালো । সত্যি সত্যি মেয়েটি বাইরে থেকে কদম ফুল। ভেতরের মনটা কেমন তা একটু একটু বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু প্রথম দিনেই কাউকে বোঝা যায় না এটা রেহান জানে । প্রথম দিনের বৃষ্টি ভেজা মুহুর্তটা ভালোবাসার না হলেও ওদের পরিচয়টা তো বৃষ্টি দিয়েই হয়েছিলো। আর পরিচয় হওয়াটাও ভালোবাসার একটা অংশ। সেদিনের সেই অদ্ভুত পরিচয়টা আজকে ওদের ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। রেহানের হাত ধরে ইরা হাঁটছে । দুইপাশ কাশবনে ঘেরা জায়গা । বিকেলটা খুব নরম হয়ে এসেছে । দিনের আলোটা আছে কিন্তু সূর্যটা অস্ত গেছে । ইরা রেহানের হাতটা শক্ত করে
ধরে ওর হাতের সাথে মাথাটা লাগিয়ে হাঁটছে আর বলছে,
-” পাগল তোমার মনে আছে আমাদের ঐ দিনের কোথা “?
-” কোন দিনের “?
রেহান খুব স্থির গলায় বললো । ইরা বেশ আশ্চর্য কন্ঠে আবার বললো,
-” তোমার মনে নেই যেদিন তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম সেদিনের কথা। আমার কত শখ ছিলো যে আমার বিএফ আমার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে দুইটা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলবে, ‘জান আই লাভ ইউ’। তে না, তার উল্টাটা করতে হয়েছে আমাকে”।
-” হাহাহাহাহাহা “।
রেহান খুব উদ্ভট একটা হাসি দিলো। ইরা রেহানকে ছেড়ে দিয়ে অভিমান করে বললো,
-” এই হাসবা না। তোমার হাসিটা আমার মতো বেশ সুন্দর নয় “।
-” তাই নাকি। আচ্ছা তোমার আর কি কি আমার চেয়ে সুন্দর শুনি “।
ইরা খুব স্বাভাবিক ভাবে বলতে লাগলো,
-” তোমার থেকে আমার সবকিছুই অনেক সুন্দর।
আমার হাত সুন্দর,নাক,গাল,চোখ,কান,ঠোঁট “……
বলতেই ইরা লজ্জায় দৌড় দিলো। রেহানও ইরার পিছু পিছু ছুটতে লাগলো। দুই ধারের কাশবনের মাঝে মৃদ্যু বাতাসে দুইজন সুখী মানুষ ভালোবাসায় মেতে উঠেছে । এখন রেহান মাল্টি কোম্পানীতে চাকরী করছে । আর ইরা এখন ফাইনাল ইয়ার। ইরার
পরীক্ষাটা শেষ হলেই হয়তো ওরা জীবনের ২য় অধ্যায়ে পদার্পণ করবে । কিন্তু ইরা আর রেহান এখনই তার স্বাধ নিতে শুরু করেছে। ইরাকে রেহান ধরে ফেলেছে । দূরে ওদের গাড়িটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দুজনেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
মাথার উপর নীল আকাশটা আস্তে আস্তে কালো হয়ে যাচ্ছে । চারেদিকে অন্ধকারের জাল ছড়িয়ে পড়ছে। ইরা আর রেহান একে অপরের সাথে ভালোবাসা বিনিময়ে লিপ্ত হয়ে আছে । হঠাৎ করে আবার ইরা রেহানকে মিষ্টি ধাক্কা দিয়ে বললো,
-” এই ছাড়ো। ধরবে না আমায় “।
কথাটি বলেই ইরা দৌড় দিলো গাড়ির দিকে। আর রেহান ইরাকে ধরার জন্য দৌড় দিলো। অভিমানের ভালোবাসাটা শেষটুকু সত্যিই সুমধুর হয় ।